জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে মেয়াদোত্তীর্ণ কেক বিক্রি নিয়ে ব্যবসায়ী ও সমন্বয়কদের মারামারির ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সকালে ও শনিবার ভোরে উপজেলার খালকুলায় এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার সমন্বয়কদের মধ্যে মারামারিতে অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন।

ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মারধর করে চার সমন্বয়ককে আটক করে রাখার অভিযোগও উঠেছে। এ সময় একটি দোকান ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ সমন্বয়কদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো.

নাজমুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আহত সমন্বয়করা হলেন– বড়াইগ্রাম উপজেলার আতিকুর রহমান, নুহ হোসেন, হাবিবুর রহমান, নাটোর সদরের আবদুলাহ আল নোমান, হাবিব হোসেন, আমিনুর রহমান ও ছোট হাবিব। তাড়াশে আহত ব্যবসায়ীরা হলেন– মো. সাইদুর রহমান ও ফিরোজ হোসেন।

পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার বড়াইগ্রাম থেকে সমন্বয়করা সাতটি বাসে প্রায় ২৫০ জন লোক নিয়ে ঢাকায় এনসিপির অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। পথে দুটি বাসের কয়েকজন সমন্বয়ক তাড়াশের খালকুলায় নাশতা করতে নামেন। এ সময় সাইদুর রহমান নামে দোকানি মেয়াদোত্তীর্ণ কেক বিক্রি করেন। সমন্বয়করা প্রতিবাদ জানালে তিনি একজনের হাতে রড দিয়ে আঘাত করেন।

এ নিয়ে তারা ধাক্কাধাক্কি ও মারামারিতে জড়িয়ে পড়লে তিনজন আহত হন। স্থানীয় লোকজন তাদের শান্ত করলে সমন্বয়করা ঢাকায় চলে যান। শনিবার ভোরে অনুষ্ঠান শেষে ফেরার পথে কয়েকজন সমন্বয়ক একই স্থানে নাশতা করতে যান। এ সময় কয়েকজন ব্যবসায়ী ও লোকজন তাদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা ও মারামারিতে জড়ান।

এতে সেখানকার আশা হোটেলে ম্যানেজার ফিরোজ হোসেন ও সাইদুর রহমান এবং সমন্বয়ক আবদুলাহ আল নোমান, হাবিব হোসেন, আমিনুর রহমান এবং ছোট হাবিব আহত হন। এ সময় ব্যবসায়ীরা চারজনকে হোটেলে প্রায় দুই ঘণ্টা আটকে রাখেন। খবর পেয়ে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে।

নাটোর জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ ওবায়দুল্লাহ মিম বলেন, খালকুলার ব্যবসায়ীরা কয়েকজন সমন্বয়ককে মারধর করেছেন। তিনজনের মাথা ফেটে গেছে। আশা হোটেলের ম্যানেজার ফিরোজ হোসেনের ভাষ্য, তুচ্ছ ঘটনায় তাদের মারধর ও দোকান ভাঙচুর করেছে। 

তাড়াশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাজমুল ইসলাম বলেন, সমন্বয়ক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে মারপিটের ঘটনা তাড়াশের সমন্বয়কদের মাধ্যমে মীমাংসা হয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সমন বয়ক স র জগঞ জ সমন বয়কদ র সমন বয়ক ব যবস য় র রহম ন এ সময়

এছাড়াও পড়ুন:

জেনে নিন, জান্নাতি ২০ সাহাবির নাম

ইসলামের ইতিহাসে সাহাবিদের অবদান অতুলনীয়। তাঁরা ছিলেন রাসুল (সা.)-এর সবচেয়ে নিকটতম সঙ্গী, যাঁরা ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় অসাধারণ ত্যাগ ও নিষ্ঠা প্রদর্শন করেছিলেন।

তাঁদের মধ্যে কিছু সাহাবি জীবদ্দশায়ই রাসুল (সা.)-এর মাধ্যমে জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন। এই সাহাবিদের মধ্যে ‘আশারায়ে মুবাশশারা’ বা জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ জন সাহাবির নাম সহিহ হাদিসে স্পষ্ট উল্লেখ আছে।

এ ছাড়া বেশ কয়েকজন সাহাবিকে আল্লাহর রাসুল বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন উদাহরণের মাধ্যমে জান্নাতি হওয়ার কথা জানিয়েছেন।

আশারায়ে মুবাশশারা: জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ সাহাবি

‘আশারায়ে মুবাশশারা’ অর্থ সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ জন। এই ১০ জন সাহাবি জীবদ্দশায় রাসুল (সা.) থেকে জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন।

একটি হাদিসে সাঈদ ইবনে জায়িদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘১০ জন জান্নাতে যাবে: আবু বকর জান্নাতি, ওমর জান্নাতি, উসমান জান্নাতি, আলী জান্নাতি, তালহা জান্নাতি, জুবাইর ইবনুল আওয়াম জান্নাতি, আবদুর রহমান ইবনে আউফ জান্নাতি, সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস জান্নাতি, সাঈদ ইবনে জায়িদ জান্নাতি এবং আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ জান্নাতি।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৬৮০)

আরও পড়ুনতিরন্দাজ এক সাহাবী১৩ নভেম্বর ২০২৩

এই ১০ সাহাবিকে ‘আশারায়ে মুবাশশারা’ হিসেবে গণ্য করা হয়। তাঁদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় হলো—

১. আবু বকর আস-সিদ্দিক (রা.): ইসলামের প্রথম খলিফা, রাসুল (সা.)-এর ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী পুরুষ।

২. ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.): দ্বিতীয় খলিফা, যিনি ইসলামি রাষ্ট্রের বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

৩. উসমান ইবনে আফফান (রা.): তৃতীয় খলিফা, যিনি কোরআনের সংকলন ও প্রমিতকরণে অবদান রাখেন।

৪. আলী ইবনে আবু তালিব (রা.): চতুর্থ খলিফা, রাসুল (সা.)-এর চাচাতো ভাই ও জামাতা।

৫. তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ (রা.): প্রথম দিকের ইসলাম গ্রহণকারী ও বদর যুদ্ধের বীর।

৬. জুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা.): রাসুল (সা.)-এর চাচাতো ভাই ও বীর যোদ্ধা।

৭. আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.): প্রথম আটজন ইসলাম গ্রহণকারীদের একজন, দানশীলতার জন্য বিখ্যাত।

৮. সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.): কাদিসিয়া যুদ্ধের নায়ক এবং প্রথম দিকের মুসলিম।

৯. সাঈদ ইবনে জায়িদ (রা.): প্রথম দিকের মুসলিম ও সাহাবিদের মধ্যে বিশিষ্ট।

১০. আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা.): ‘আমিনুল উম্মাহ’ (উম্মাহর বিশ্বস্ত) হিসেবে পরিচিত।

আরও পড়ুনমহানবী (সা.) এবং এক কুস্তিগিরের গল্প১০ এপ্রিল ২০২৫জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত অন্যান্য সাহাবি

আরও কয়েকজন সাহাবি জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন, যদিও তাঁদের নাম একত্রে এক হাদিসে উল্লেখ নেই, তবে বিভিন্ন হাদিসে পৃথকভাবে এসেছে। যেমন

১১. খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ (রা.): রাসুল (সা.)-এর প্রথম স্ত্রী। হাদিসে আছে, জিবরাইল (আ.) তাঁকে জান্নাতে মুক্তার প্রাসাদের সুসংবাদ দিয়েছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩,৮২০)

১২. ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ (রা.): রাসুল (সা.)-এর কন্যা, যিনি জান্নাতি নারীদের সরদার হবেন। (জামে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৭৮১)

১৩. হাসান ইবনে আলী (রা.): রাসুল (সা.)-এর নাতি, জান্নাতের যুবকদের সরদার। (জামে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৭৮১)

১৪. হোসাইন ইবনে আলী (রা.): রাসুল (সা.)-এর নাতি, জান্নাতের যুবকদের সরদার। (জামে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৭৮১)

১৫. আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.): সাবেক ইহুদি পণ্ডিত, যিনি ইসলাম গ্রহণের পর জান্নাতের সুসংবাদ পান। (জামে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৮১৬)

১৬. উক্কাশা ইবনে মুহসিন (রা.): বদর যুদ্ধের সাহাবি, যিনি জান্নাতের সুসংবাদ পান। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৪)

১৭. জায়েদ ইবনে হারিসা (রা.): রাসুল (সা.)-এর পালিত পুত্র, যিনি কোরআনে যার নাম উল্লেখ আছে এবং জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন। (সুরা আহজাব, আয়াত: ৩৭)

১৮. আয়েশা বিনতে আবু বকর (রা.): রাসুল (সা.)-এর স্ত্রী, যিনি জান্নাতি নারীদের অন্যতম। (ফাতহুল বারি, ইবনে হাজার আসকালানি, পৃষ্ঠা: ৭/১২৩, দারুল মা’রিফা, ১৯৮৯)

১৯. আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা.): প্রথম দিকের মুসলিম, যিনি জান্নাতের সুসংবাদ পান। (জামে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৮০০)

২০. বেলাল ইবনে রাবাহ (রা.): মুয়াজ্জিন এবং প্রথম দিকের মুসলিম, যিনি জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৪৫৮)

কিছু সূত্রে হজরত হোসাইন ইবনে হারিস (রা.), আউফ ইবনে উসাসা (রা.) বা ইয়াজিদ ইবনে রুকাইশ (রা.)-এর নামও উল্লেখ করা হয়, কিন্তু সহিহ হাদিসে এই নামগুলোর স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। (মান বুশশিরা বিল জান্নাহ মিন গাইরিল আশারাহ, পৃষ্ঠা: ৫৫, দারুল উলুম প্রকাশনী, ২০১৫)

আরও পড়ুনসাহসী সাহাবি হজরত যুবাইর (রা.)০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ