বেনুভিটা মানমন্দির থেকে ‘প্ল্যানেটারি প্যারেড’ দর্শন
Published: 1st, March 2025 GMT
চারপাশ নীরব-নিস্তব্ধ। এরই মাঝে রাতের আকাশে তাক করে রাখা টেলিস্কোপ। সেখানে চোখ রেখে কিছু মানুষ দেখছে ‘প্ল্যানেটারি প্যারেড’। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত এ আয়োজন ছিল গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বিন্দুবাড়ী এলাকার বেনুভিটা মানমন্দিরে। সেখানে বিরল মহাজাগতিক এ দৃশ্য দেখতে সমবেত হয়েছিল কিছু বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ। তাদের কেউ পর্বতারোহী, কেউ আবার সংস্কৃতি চর্চায় জড়িত।
নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ছিল খুদে শিক্ষার্থীরাও। আয়োজকরা জানান, পৃথিবী থেকে একসঙ্গে মঙ্গল, বৃহস্পতি, ইউরেনাস, শুক্র, নেপচুন, বুধ ও শনি গ্রহ দেখার জন্য তাদের এ আয়োজন। সৌরজগতের এই সাত গ্রহ এদিন এক কাতারে চলে আসে; যা জোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় ‘প্ল্যানেটারি প্যারেড’ বা গ্রহের কুচকাওয়াজ হিসেবে পরিচিত।
আয়োজক কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী কাবেরী জান্নাত বলেন, অভূতপূর্ব মহাজাগতিক ঘটনার সাক্ষী হয়েছে পৃথিবীর মানুষ। সৌরজগতের সাতটি গ্রহ একসঙ্গে দেখতে পাওয়া গেল। এই দৃশ্য আবার দেখা যাবে ২০৪০ সালে। দিগন্তের নিম্নরেখায় অবস্থান করায় শনি গ্রহটিকে খালি চোখে দেখা যায়নি; টেলিস্কোপের মাধ্যমে দেখা গেছে। ইউরেনাস ও নেপচুন দেখতেও টেলিস্কোপের দ্বারস্থ হতে হয়েছে।
কাবেরী জান্নাত আরও বলেন, বিরল এ দৃশ্য দেখার জন্য সূর্যাস্তের পর কয়েক মিনিট মাত্র সময় পাওয়া যায়। এরপরই গ্রহগুলো দিগন্তে মিলিয়ে যায়। শুক্র, বৃহস্পতি ও মঙ্গল এই তিন গ্রহকে বেশ সময় ধরে দেখা গেছে। মহাজাগতিক পর্যবেক্ষক নূর মুহাম্মদ পরম যত্ন নিয়ে তাদের এই গ্রহের কুচকাওয়াজ দেখিয়েছেন। তিনিই প্রতিটি গ্রহের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। একই সঙ্গে আকাশ পর্যবেক্ষণে সহযোগিতা করিয়েছেন।
পর্বতারোহী ও প্রশিক্ষক মহিউদ্দিন মাহীর সঙ্গে সেখানে ছিলেন তাঁর দলের
সদস্যরাও। বিরল এ দৃশ্য দেখতে আসা কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, খুব আনন্দ পেয়েছে এই প্ল্যানেটারি প্যারেড দেখে। আকাশে যে এত কিছু আছে, সেটা তাদের জানা ছিল না। মহাজগৎ সম্পর্কে তাদের আগ্রহ আরও বেড়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সেই মাহুত বললেন, ‘হাতির কাছে গেলে আমার কইলজা ফাইটা যায়’
গত বছর ঈদুল ফিতরে রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানার মাহুত আজাদ আলী ও তাঁর ছেলে জাহিদ হাসান একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন। পরে একসঙ্গে ভাত খান। খাওয়া শেষে নিজেই ছেলেকে নিয়ে হাতির খাঁচায় যান আজাদ। সেখানে রাজা বাহাদুর নামের হাতির আক্রমণে ছেলের মৃত্যু হয়।
আজ জাহিদ হাসানের মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হয়েছে। মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় গ্রামের বাড়িতে মৃত্যুবার্ষিকীতে ছোট পরিসরে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
মাহুত আজাদ আলীর সঙ্গে আজ মুঠোফোনে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে জানান, ছেলের মৃত্যুর পর থেকে চিড়িয়াখানার হাতি শাখায় কাজ করতে ইচ্ছে করে না তাঁর। তাই অন্য শাখায় স্থানান্তরের জন্য আবেদন করেছেন। তবে কাজ হচ্ছে না।
আজাদ আলী বলেন, ‘প্রতিদিন সকালবেলা আমি হাতির কাছে গেলে আমার কইলজা (কলিজা) ফাইটা টুকরা টুকরা হই যায় ভাই। যে হাতিডা আমার ছেলেরে আছাড়িয়া মারছে, এই জিনিসটা ব্যবহার করিয়া, এই জিনিস পালিয়া আমি ভাত খাইমু ভাই। আল্লায় কি মানুষরে দুনিয়ায় একটাই কর্ম দিছে, আর কোনো কর্ম দেয় নাই?’
অস্থায়ী কর্মচারী হিসেবে আজাদ আলী চিড়িয়াখানায় কর্মরত আছেন। তাঁর দুই-আড়াই লাখ টাকা ঋণ আছে বলে জানান। হাতি শাখায় কাজ করতে ইচ্ছে না করলেও ঋণের কারণে চাকরিও ছাড়তে পারছেন না বলে জানান তিনি।
চিড়িয়াখানায় আগে তিনটি হাতি ছিল। চিড়িয়াখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে রাজধানীর হাতিরঝিলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দুটি হাতি জব্দ করে র্যাব। সেই হাতি দুটি দিয়ে চাঁদাবাজি করা হতো। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জব্দের পর সেই হাতি দুটি চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসেন আজাদ।
সেই হাতি দুটির নাম রাজা বাহাদুর ও পান্না বাহাদুর। এর মধ্যে গত বছর ঈদুল ফিতরের দিন রাজা বাহাদুরের আক্রমণে জাহিদ হাসানের মৃত্যু হয়।
আজাদ আলীর অভিযোগ, অতিরিক্ত দুটি হাতি চিড়িয়াখানায় আনা হলেও তার জন্য পর্যাপ্ত জনবল ছিল না। ফলে ছেলের মৃত্যুর পর থেকে হাতি দুটি সরিয়ে দেওয়ার দাবিও জানান তিনি।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ প্রথম আলোকে বলেছে, মাহুতের ছেলের মৃত্যুর পর হাতি দুটি মূল মালিকের কাছে ফেরত দেওয়া যায় কি না, সেই বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কাছে মতামত চেয়েছিল তারা। মন্ত্রণালয় বলেছিল, বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন থাকায় রায়ের আগে হস্তান্তর করার সুযোগ নেই।
আজাদ আলীকে অন্য শাখায় স্থানান্তর প্রসঙ্গে জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক রফিকুল ইসলাম তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, আজাদ অন্য শাখায় যাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। তবে তিনি প্রশিক্ষিত মাহুত। তাঁর কাজ অন্য কেউ করতে পারে না। তাই তাঁকে অন্য শাখায় দিলে যে শূন্যতা তৈরি হবে, সেই জায়গা পূরণ করা যাচ্ছে না।
তবে আজাদ আলীর দায়িত্বের জায়গায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে জানান রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আজাদের ছেলেকে যে হাতি মেরেছে, সেটির কাছে না গিয়ে অন্য হাতির পরিচর্যা করতে বলা হয়েছে তাঁকে।
যে দুটি হাতি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে চিড়িয়াখানার কাছে এসেছে, সেগুলো হস্তান্তর করা গেলেও চাপ কমে যাবে। তখন আজাদ আলীকে অন্য জায়গায় দেওয়া সম্ভব হবে বলেও জানান জাতীয় চিড়িয়াখানার এই পরিচালক।
দুর্ঘটনা হলে ক্ষতিপূরণ দেয় না চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষজাতীয় চিড়িয়াখানায় এর আগেও এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। ২০২৩ সালের ৮ জুন হায়েনার কামড়ে মো. সাইফ আহমেদ নামে এক শিশুর ডান হাতের কনুই পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সাইফ যখন দুর্ঘটনার শিকার হয়, তখন তাঁর বয়স ছিল দুই বছর তিন মাস। এখন তার বয়স চারের কোঠায়। আজ সে তার বাবা সুমন মিয়ার সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেছে।
সুমন মিয়া আজ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, তিনি ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। ছেলে যখন আক্রান্ত হয়, তখন তিনি পরিবার নিয়ে গাজীপুর থাকতেন। সেখানকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। সংসার ভালোভাবে না চলায় মাসখানেক আগে রংপুরের পীরগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। সেখানে এসে কাঠমিস্ত্রির কাজ করছেন।
আরও পড়ুনজাতীয় চিড়িয়াখানায় হাতির আক্রমণে মাহুতের ছেলের মৃত্যু১১ এপ্রিল ২০২৪সুমন মিয়া বলেন, একদিকে তাঁর সংসার ঠিকমতো চলে না, অন্যদিকে ছেলে প্রতিবন্ধী হয়ে আছে। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চেয়েও পাননি।
মাহুত আজাদ আলী জানান, তিনিও চিড়িয়াখানার কাছে আর্থিক সহযোগিতা চেয়ে পাননি। জাহিদ তাঁর একমাত্র ছেলেসন্তান ছিল। এখন তাঁর দুই কন্যাসন্তান রয়েছে। এ অবস্থায় পরিবারের সুরক্ষার স্বার্থে তাঁর চাকরি রাজস্ব খাতে নেওয়ার দাবিও জানিয়েছিলেন তিনি। তা-ও পূরণ হয়নি।
এ বিষয়ে জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ প্রথম আলোকে বলেছে, চিড়িয়াখানায় কাউকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনো বিধান বা তহবিল নেই। এমনকি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঝুঁকি ভাতা দেওয়ার বিধানও নেই। সে কারণেই কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সহযোগিতা করার সুযোগ থাকে না।
আরও পড়ুনচিড়িয়াখানায় হাতির আক্রমণে মাহুতের ছেলের মৃত্যু, কী ঘটেছিল তখন১২ এপ্রিল ২০২৪