২৫ বছরের হেমরঞ্জন ত্রিপুরার পরিবারে মা-বাবা, ভাই-বোনসহ সদস্য আটজনের মতো। পুরো পরিবার থাকে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের লনাথিয়ানপাড়ায়। রুইলুই পর্যটন কেন্দ্রের ছাউনি ইকো রিসোর্টে খণ্ডকালীন চাকরি করতেন হেমরঞ্জন। মাসে ৭-৮ হাজার টাকা পেতেন। গত সোমবারের ভয়াবহ আগুনে অন্যান্য রিসোর্ট-রেস্তোরাঁর মতো পুড়ে গেছে ছাউনি ইকো রিসোর্টও। যে কারণে কাজ হারিয়েছেন হেমরঞ্জন। তাঁর মতো জনপ্রিয় এ পর্যটন কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দুই শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারীর চোখে এখন রাজ্যের হতাশা। ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার পড়েছেন তারা।
শুক্রবার কথা হয় হেমরঞ্জন ত্রিপুরার সঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁর আয় দিয়েই সংসারের খরচ চলে। ছোট ভাই-বোনের পড়াশোনার খরচও দিতে হয়। রিসোর্ট পুড়ে যাওয়ায় কাজ হারিয়ে কী করবেন বুঝতে পারছেন না। 
চিম্বাল রেস্টুরেন্টের কর্মচারী কামনা উদয় চাকমা বলেন, ‘আগুনের হাত থেকে মালপত্র রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা করেছি, পারিনি। আমার কাপড়চোপড়গুলোও পুড়ে গেছে।’ এখন কর্মহীন উদয়ের দুশ্চিন্তা কাজ পাওয়া নিয়ে। 
সাজেক ইউনিয়নের প্রায় ১ হাজার ৮০০ ফুট উঁচুতে রুইলুই পাহাড়ের ওপর মনোরম পরিবেশে কয়েক দশক আগে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে সাজেক-রুইলুই পর্যটনকেন্দ্র। মেঘের রাজ্য আর পাহাড়ঘেরা এই জায়গাটি ভ্রমণপিপাসুদের কাছে জনপ্রিয়। ২০১৪-১৫ সালের দিকে রুইলুই পাহাড়ের দুই পাশে গড়ে ওঠে নান্দনিক নানা কটেজ-রিসোর্ট। সর্বশেষ এ সংখ্যা ছিল ১২৬টি। 

সোমবার দুপুরে ইকো ভ্যালি নামের একটি রিসোর্টে হঠাৎ আগুন লাগে। কিছুক্ষণের মধ্যে সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে। ভয়াবহ আগুন থেকে রক্ষা পায়নি রিসোর্ট-কটেজ, রেস্তোরাঁ-দোকান বা বসতঘর। ৫ ঘণ্টা পর যখন আগুন নেভানো সম্ভব হয়, ততক্ষণে পুড়ে গেছে ১০২টি স্থাপনা। এর মধ্যে কটেজ-রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ-দোকান রয়েছে ৬৪টি; বাকি ৩৮টি বসতঘর। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, ৬৪টি কটেজ-রিসোর্ট পুড়ে ক্ষতি হয়েছে ৩০ কোটি টাকার বেশি। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এসব প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি রেস্তোরাঁ ও দোকানের অন্তত দুইশ কর্মী। নিজ পরিবারকে টাকা পাঠাবেন কীভাবে, নিজেই চলবেন কী করে– এমন দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন তারা।
দুর্ঘটনার পর বুধবার সেখানে পরিদর্শনে যান পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। তিনি সেখানে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৭০ টন চাল সহায়তার আশ্বাস দেন। কিন্তু শনিবার পর্যন্ত সেই চাল পৌঁছায়নি। উপজেলা প্রশাসন মঙ্গলবার ৩৫ পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল, কম্বল, শুকনা খাবার ও ৭ হাজার ৫০০ টাকা করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার সেনাবাহিনীর বাঘাইহাট জোনের পক্ষ থেকে ৫ হাজার টাকা ও শীতবস্ত্র দেওয়া হয়। 

আগুনে কাপড়চোপড় থেকে কিছুই রক্ষা করতে পারেননি চিম্বাল রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘এক কাপড়েই আছি, এখন কী করব বুঝতে পারছি না। সামনে ঈদ, এখানে চাকরিতে যে টাকা আয় করি, তা দিয়েই পরিবারের খরচ চালাই।’ 
মকসে জ্বালা ত্রিপুরার জমি ভাড়া নিয়ে গড়ে তোলা হয় সানচিতা রিসোর্ট। এ জন্য রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ থেকে মাসে তিনি ভাড়া পান ১০-১৫ হাজার টাকা। এই আয় দিয়েই সংসার খরচ চালাতে হয়। মকসে জ্বালা ত্রিপুরা বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পর তিনি ভাড়ার টাকা পাননি। আগামী মাসগুলোতে কীভাবে চলবেন– তাও ভেবে পাচ্ছেন না। 
রুইলুই পাড়া শিবমন্দিরের কাছে অবস্থিত লক্ষণ কটেজ সালকা রিসোর্ট। অনেকের কাছে এটি পরিচিত সালকা ইকো রিসোর্ট হিসেবে। এ রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী রাহুল চাকমা জনের ভাষ্য, আগুনে তাঁর রিসোর্টের পাশাপাশি আরেকটি রেস্তোরাঁ পুরোপুরি পুড়ে গেছে। সব হারিয়েও তিনি ভেঙে পড়েননি। টিকে থাকার লড়াই শুরু করেছেন। রাহুল চাকমা জন দাবি করেন, সরকারের উচিত সাজেক কটেজ অ্যান্ড রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে বিনাশর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া। তাহলেই তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে নিজের প্রতিষ্ঠান পুনর্নির্মাণে হাত দিতে পারবেন। 
সাজেক কটেজ অ্যান্ড রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুপর্ণ দেবর্মন বলেন, আগুনে কটেজ-রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ-দোকান পুড়ে প্রায় দুইশ কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ হারিয়েছেন। যতদিন এসব প্রতিষ্ঠান নতুন করে নির্মাণ না করা যায়, ততদিন পর্যন্ত সহযোগিতার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তারা। 
­বাঘাইছড়ির ইউএনও শিরীন আক্তার শনিবার সন্ধ্যায় সমকালকে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সাজেকের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য যে বরাদ্দ ঘোষণা দেন, তা এখনও পৌঁছায়নি। আসার পরপরই বিতরণ করা হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে বসতঘরে আগুনে পুড়ে বৃদ্ধের মৃত্যু

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একটি বসতঘরে আগুনে পুড়ে আবুল হোসেন (৭০) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের মান্দারীটোলা গ্রামের দাঁড়ালিয়াপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে বৃদ্ধ আবুল হোসেনের কাঁচা বসতঘরটিতে আগুন লাগে।

ঘরের দুটি কক্ষের একটিতে তাঁর স্ত্রী এবং অন্যটিতে তিনি ছিলেন। আগুন লাগার পর স্ত্রী ঘর থেকে দৌড়ে বের হতে পারলেও ঘরের ভেতর আগুনে পুড়ে আবুল হোসেনের মৃত্যু হয়। আগুন লাগার ২০ মিনিটের মধ্যেই ঘরটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আবুল হোসেনের লাশ উদ্ধার করে।

স্থানীয় বাসিন্দা আবুল মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, আগুন যখন লাগে তখন একটি কক্ষে আবুল হোসেন ঘুমাচ্ছিলেন। ঘুমের মধ্যেই আগুনে পুড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ঘরটিতে আবুল হোসেনের আরও দুই ছেলে থাকেন। তবে দুর্ঘটনার সময় দুজন বাড়িতে ছিলেন না।

সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের লিডার মছিন্দ্র লাল ত্রিপুরা প্রথম আলোকে বলেন, রাত ১০টার দিকে ওই বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করেন তাঁরা। এরপর লাশ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সীতাকুণ্ড থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আতিকুর রহমান বলেন, সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট্টগ্রামে বসতঘরে আগুনে পুড়ে বৃদ্ধের মৃত্যু