গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ডুমরিয়া ইউনিয়নবাসীর এক যুগের দুর্ভোগ অবসান হতে চলেছে। একটি সেতুর সংযোগ সড়ক না থাকায় তাদের এ দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সেই সংযোগ সড়ক নির্মাণ শুরু হয়েছে।
নিম্ন জলাভূমি ও বিলবেষ্টিত ইউনিয়ন ডুমরিয়া। পশ্চাদপদ এ ইউনিয়নে সড়ক সংযোগ ছিল না। উপজেলা ও জেলা সদরের সঙ্গে ডুমরিয়া ইউনিয়নের যোগাযোগ ত্বরান্বিত করতে সড়ক সংযোগের আওতায় আনার পরিকল্পনা করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ডুমরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ অফিস থেকে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা সদর সড়ক নির্মাণের আগেই শৈলদহ নদীর ডুমরিয়া বাজার পয়েন্টে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৩ সালে ১৩০ মিটার সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতুর দুই মাথায় মাটি ফেলে মানুষের চলাচলের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। এ সেতু দিয়ে মানুষ চলাচল করলেও পণ্য পরিবহন ও যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এর মধ্যে ডুমরিয়া ইউনিয়নে সড়ক সংযোগ গড়ে ওঠে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সড়ক সংযোগের সঙ্গে সেতুকে সংযুক্ত করতে ২০২৩ সালে প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০০ মিটার আরসিসি স্লাব ভায়াডাক্ট নির্মাণ শুরু করে। ইতোমধ্যে ভায়াডাক্টের মূল কাজ শেষ হয়েছে। সাটারিংয়ের কাজ গত অক্টোবরে বন্ধ হয়ে যায়। এলাকাবাসী দ্রুত এ কাজ সম্পন্ন করে সেতুটি পুরোপুরি চলাচলের উপযোগী করার দাবি জানিয়েছেন।
ডুমরিয়া বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাধনা মল্লিক জানায়, সেতুতে উঠতে নামতে তাদের খুব কষ্ট হয়। এ কষ্ট লাঘবের ব্যবস্থা দ্রুত করে দিতে হবে।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী দেবাংশু বিশ্বাস জানায়, সাইকেল ঘাড়ে করে তাকে সেতুতে উঠতে ও নামতে হয়। এ সময় একটু অমনোযোগী হলে ঘটে দুর্ঘটনা। এতে তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। তারা দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চায়।
ডুমরিয়া বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোজ কুমার মণ্ডল বলেন, সেতুটির দু’পারেই রাস্তা হয়েছে। রাস্তার সঙ্গে সেতুর সংযোগ স্থাপনের কাজ শুরু হয় প্রায় ২ বছর আগে। গত অক্টোবরে এ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তিনি দ্রুত কাজটি সম্পন্ন করে সেতুটি চলাচলের উপযোগী করার দাবি জানান।
ডুমরিয়া ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সদস্য শ্যামলী গাইন বলেন, সেতু হয়েছে। এতে তাদের দুর্ভোগের অবসান হয়নি। এ সেতু দিয়ে গ্রামের ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিকসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষ চলাচল করতে পারে। সংযোগ সড়কের অভাবে যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এখানে উৎপাদিত ধান, পাট, সবজি, টমেটো, কৃষিপণ্য, খামরের মাছ, গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগিসহ অন্যান্য পণ্য পরিবহন করা যায় না। এতে পণ্য বাজারজাতকরণ ও ন্যায্যমূল্য পাওয়া থেকে তাদের এলাকার কৃষক ও খামারিরা বঞ্চিত হচ্ছেন। সেতুর সংযোগ সড়ক স্থাপন করে এ সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে হবে।
গোপালগঞ্জ এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী এহসানুল হক বলেন, সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ, নকশা ও স্থানীয় আরও কিছু জটিলতার উদ্ভব হয়। তারা স্থানীয় লোকজন ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এসব জটিলতা নিরসন করেছেন। দ্রুতই কাজ শুরু হবে। আগামী জুলাই মাসের মধ্যে সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এরপর এ সেতু দিয়ে মানুষের পাশাপাশি যানবাহন ও পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হবে। এতে প্রায় এক যুগের দুর্ভোগ অবসান হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ত র স য গ সড়ক সড়ক ন র ম ণ স য গ সড়ক ন সড়ক স য গ অবস ন
এছাড়াও পড়ুন:
নলছিটিতে সাব-রেজিস্ট্রারের ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগে দলিল লেখকদের কর্মবিরতি
নলছিটি উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার নাহিদ জাহান মুনার বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে টানা তৃতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করছেন উপজেলার সকল দলিল লেখক। তাদের অভিযোগ, সাব-রেজিস্ট্রার মুনা যোগদানের পর থেকেই দলিল লেখকদের কাছ থেকে শ্রেণিভেদে অতিরিক্ত কমিশনের টাকা আদায় করে আসছেন। এমনকি প্রয়োজনের অতিরিক্ত কাগজপত্র চেয়ে দলিল সম্পাদনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন তিনি।
দলিল লেখকরা আরও দাবি করেন, নিয়ম অনুযায়ী সপ্তাহে পাঁচ দিন অফিস করার কথা থাকলেও সাব-রেজিস্ট্রার মুনা সপ্তাহে মাত্র দুই দিন উপস্থিত থাকেন এবং তাও আবার দুপুরে এসে বিকেলে অফিস থেকে চলে যান। গত ১৩ এপ্রিল এক দলিল লেখকের আইডি সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার পর থেকে তারা দলিল সম্পাদনে বিরত থাকার ঘোষণা দেন।
২০ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এ অনির্দিষ্টকালীন কর্মবিরতির ফলে নলছিটি উপজেলায় জমি ক্রয়-বিক্রয়ের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে কয়েক হাজার জমির ক্রেতা-বিক্রেতা ভোগান্তিতে পড়েছেন এবং সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে। প্রবাসী, দূরদূরান্ত থেকে আসা সেবা প্রত্যাশী ও স্থানীয়রা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন লিটন জানান, সাব-রেজিস্ট্রারের হয়রানিমূলক আচরণের প্রতিবাদে এ কর্মবিরতি চলছে এবং কোনো সমাধান না পাওয়া পর্যন্ত তা চলবে।
অন্যদিকে,অভিযোগ অস্বীকার করে সাব-রেজিস্ট্রার নাহিদ জাহান মুনা বলেন, এক দলিল লেখক এডিটকৃত ভোটার আইডি দিয়ে দলিল করতে চাওয়ায় তাকে শোকজ করা হয়েছে। সেই কারণেই লেখকরা একজোট হয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন।
জেলা রেজিস্ট্রার মো. মহসিন জানান, এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাওয়া যায়নি, তবে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হবে।