ব্যবসায়ী সেজে আমলার সাড়ে ৭ কোটি টাকা ঋণ
Published: 1st, March 2025 GMT
তিনি সরকারের আমলা। তবে সে তথ্য গোপন করে ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে দুই ব্যাংক থেকে নিয়েছিলেন সাড়ে সাত কোটি টাকা ঋণ। কিন্তু ঋণের কিস্তি আর দেননি। সেই ঋণ সুদ-আসলে হয়েছে প্রায় ৯ কোটি টাকা। ঋণখেলাপিকে খুঁজে পেতে হয়রান ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এক পর্যায়ে জানতে পারে, তিনি আসলে ব্যবসায়ী নন, সরকারের আমলা। সেই কর্মকর্তা হলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব (প্রশাসন-২) একরামুল হক চৌধুরী। পরে দুই ব্যাংক কর্তৃপক্ষই জনপ্রশাসন এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়। মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এখন ওই কর্মকর্তা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কাজ থামিয়ে দিতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ।
চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারের পূর্ব অনুমোদন ছাড়া সরকারি কাজ ব্যতিরেকে কোনো ব্যবসায় বা চাকরিতে জড়িত হতে পারবেন না। তবে নন-গেজেটেড সরকারি কর্মচারী সরকারের পূর্ব অনুমোদন ছাড়া তাঁর পরিবারের সদস্যদের শ্রম কাজে লাগিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালাতে পারবেন এবং তা তাঁর সম্পত্তির ঘোষণাপত্রের সঙ্গে দাখিল করতে হবে।
জানা গেছে, উপসচিব একরামুল চৌধুরী নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে মুক্তার এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক দাবি করে ইস্টার্ন ব্যাংক গাজীপুর শাখা থেকে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর দুই কোটি টাকা ঋণ নেন। পরে ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর আরও এক কোটি টাকা ঋণ নেন। এর আগে ২০১৬ সালে একই পরিচয় দিয়ে একই প্রতিষ্ঠানের নামে প্রিমিয়ার ব্যাংক মাওনা শাখা থেকে আরও সাড়ে চার কোটি টাকা ঋণ নেন। ২০২২ সালের ১৮ এপ্রিলের মধ্যে তাঁর প্রিমিয়ার ব্যাংকের প্রথম ঋণ পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু ঋণ নেওয়ার পর তিনি আর কোনো কিস্তি পরিশোধ করেননি। ২০২৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাঁর এই ঋণ সুদসহ দাঁড়ায় ৪ কোটি ৯৮ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। এক পর্যায়ে একরামুল চৌধুরীর পরিচয় জানতে পেরে ২০২৩ সালের ২৮ আগস্ট প্রিমিয়ার ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাঁকে একটি নোটিশ দেয়। তার পরও তিনি কিস্তি পরিশোধ করেননি।
গত সেপ্টেম্বরে প্রিমিয়ার ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়। এর আগে গত বছরের ১১ জানুয়ারি ইস্টার্ন ব্যাংক আরেকটি অভিযোগ দাখিল করে। পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবহিত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একটি চিঠি দেন। তারপর আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এদিকে প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেডের মাওনা শাখার অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মেহেদী হাসান লিখিত অভিযোগ দেন। তাতে বলা হয়, সহকারী সচিব মো.
এ প্রসঙ্গে মেহেদী হাসান বলেন, গাজীপুরের গ্রামীণফোনের ফ্লেক্সিলোডের ডিস্ট্রিবিউটর মুক্তার এন্টারপ্রাইজের মালিক হিসেবে একরামুল হক চৌধুরী ব্যবসার জন্য সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়েছেন। পরে আমরা জানতে পারি, তিনি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব। এ কারণে বিষয়টি লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। এখন মন্ত্রণালয় তাঁর ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কেউ মন্তব্য করতে চাননি। তবে উপসচিব একরামুল হক চৌধুরী সমকালকে বলেন, আমি জমি বন্ধক দিয়ে ঋণ নিয়েছিলাম। এখন কোনো কারণে ঋণ পরিশোধ করতে পারিনি। কিন্তু আপনি জানেন, ব্যাংক থেকে এক টাকা ঋণ নিতে হলে তিন টাকার জমি বন্ধক রাখা লাগে। আমার জমি ব্যাংকের কাছে দেওয়া আছে। এখন ব্যাংক বলছে, আমার জমি বিক্রি করে তারা ঋণের টাকা নিয়ে নেবে। আগামী মাসেই হয়তো ব্যাংক এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দেবে। এ ছাড়া কোনো তথ্য গোপন করার বিষয় এখানে নেই। কিছু লোক আমার সম্পর্কে এগুলো ছড়াচ্ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঋণ স প ট ম বর ব যবস য় সরক র র পর শ ধ
এছাড়াও পড়ুন:
অন্তর্বাস ও পোশাকে ছিল স্বর্ণ, যাত্রী আটক
অভিনব কৌশলেও কাজ হলো না। স্বর্ণসহ ধরা পড়লেন আলীম উদ্দিন (৪০) নামের সিলেটের গোয়াইনঘাটের বাসিন্দা এক বিমান যাত্রী। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাঁকে আটক করে।
বিমানবন্দর কাস্টমস সূত্র জানায়, দুবাই থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের যাত্রী আলীম উদ্দিন ঢাকায় অবতরণের টিকিট করেছিলেন। ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টমস ও এনএসআই সদস্যরা বিমানের ভেতর থেকে তাঁকে বের করে আনেন। স্ক্যানারে তারা নিশ্চিত হন, যাত্রীর পরনের অন্তর্বাস থেকে শুরু করে গেঞ্জিসহ পরিহিত পোশাকে ছিল স্বর্ণের প্রলেপ। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ পরিধেয় কাপড় পুড়িয়ে স্বর্ণের অস্তিত্ব পান। জিজ্ঞাসাবাদে যাত্রীটিও বিষয়টি স্বীকার করেন। এ সময় আলীমের পরা চারটি অন্তর্বাস, দুটি গেঞ্জি, একটি শার্ট, প্যান্টসহ আটটি কাপড় জব্দ করা হয়। ওই ব্যক্তির পরিধেয় একাধিক কাপড়ে মেলে স্বর্ণের অস্তিত্ব। পরে এগুলো জব্দ করা হয়।
কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, সাধারণ চোখে বিষয়টি বোঝার উপায় ছিল না। স্বর্ণ গলিয়ে কাপড়ে লেপে দেওয়া হয়েছিল। স্ক্যানারে পরীক্ষার পর বিষয়টি ধরা পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে ওই ব্যক্তিকে আটক করা হয়। গোয়েন্দা সংস্থার আরেক কর্মকর্তা জানান, আলীমের সঙ্গে একই বিমানে আরেকজন স্বর্ণ চোরাচালানকারী ছিলেন। তাঁকে ঢাকা বিমানবন্দরে আটক করা হয়েছে।
সিলেট কাস্টমসের সহকারী কমিশনার (অতিরিক্ত দায়িত্ব বিমানবন্দর ও এয়ারফ্রেইট বিভাগ) ইনজামাম উল হক বলেন, আলীম উদ্দিনের পরা কাপড়গুলো পুড়িয়ে স্বর্ণগুলো উদ্ধার করা হবে। কাপড় না পোড়ানো পর্যন্ত স্বর্ণের পরিমাণ জানা যাবে না। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পরিধেয় কাপড়ে প্রায় এক কেজি স্বর্ণ তিনি এনেছেন। পরবর্তী কার্যক্রম শেষে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।