১ মার্চ, ১৯৭১। জেনারেল ইয়াহিয়া সদ্যগঠিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্ধারিত প্রথম অধিবেশন স্থগিত করার পরপরই সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ২ ও ৩ মার্চ দেশব্যাপী হরতাল আহ্বান করেন। প্রথম দিনের হরতালটি অভূতপূর্ব সাড়া পায়। শহীদজননী জাহানারা ইমাম তাঁর ‘একাত্তরের দিনগুলি’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘হরতালের দিনে ফাঁকা রাস্তার মাঝখান দিয়ে.
বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্রলীগ ও ডাকসুর আহ্বানে ডাকা ছাত্র সমাবেশ হয়। ছাত্রলীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে সে সভায় বক্তব্য দেন ডাকসুর ভিপি আ স ম আবদুর রব, জিএস আবদুল কুদ্দুস মাখন, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজসহ অন্য ছাত্রনেতারা। আ স ম রব বক্তব্য রাখার সময় একটি অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে। তখন ছাত্রলীগের নেতা শেখ জাহিদ হোসেন একটি বাঁশের মাথায় পতাকা বেঁধে মঞ্চে আসেন। পতাকাটি ছিল বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত লাল, সবুজ, সোনালি– এই তিন রঙের। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস এটিই বাংলাদেশের জাতীয় পতাকারূপে ব্যবহৃত হয়।
এ বিষয়ে কিছু কথা না বললেই নয়। মূলত ১৯৬২ সাল থেকে একদিকে শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠনের কাজ করছিলেন, অন্যদিকে সিরাজুল আলম খান ছাত্রলীগের মধ্যে একই লক্ষ্যে ‘নিউক্লিয়াস’ গঠন করে একপ্রকার গোপন তৎপরতা চালাচ্ছিলেন। সিরাজুল আলম খানের সঙ্গে শেখ মুজিবের যোগাযোগ তখন থেকেই ক্রমশ নিবিড় হলেও প্রথম পক্ষের সব কাজ দ্বিতীয় পক্ষের জ্ঞাতসারে হতো, এমন প্রমাণ বিরল। বাংলাদেশের পতাকা বানানোর কাজটিও ছিল নিউক্লিয়াসের একক সিদ্ধান্ত। এটিও বলা দরকার, স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের চিন্তা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বড় অংশের মধ্যে অনুপস্থিত ছিল। ফলে দলকে স্বাধীনতার ধারায় রাখার জন্য নিউক্লিয়াসের কর্মকাণ্ড জরুরি ছিল।
এ বিষয়ে একসময়কার আওয়ামী লীগ নেতা, লেখক ও সুদক্ষ কূটনীতিক কামরুদ্দীন আহমদ তাঁর ‘স্বাধীন বাংলার অভ্যুদয় এবং অতঃপর’ বইয়ে লিখেছেন, ‘গান্ধীর কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করে শেখ মুজিব নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন অসহযোগ আন্দোলনের। অন্যদিকে ছাত্র ও যুব সম্প্রদায় নেতাজির (সুভাষ বসু) আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রস্তুত হলো সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য। সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্ব চাচ্ছিল একই পদ্ধতিতে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠন করে পশ্চিমা (পাকিস্তানি) শক্তির সঙ্গে যুদ্ধ করতে এবং স্বাধীনতা অর্জন করতে। এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলই ছিল স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন।’ (পৃ. ১৩৩)
তিনি আরও লিখেছেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের এ দুটো ধারার খবর সংগ্রহের জন্য বিদেশি সাংবাদিকদের একবার জহুরুল হক হলে, আরেকবার শেখ সাহেবের বাড়িতে ছোটাছুটি করতে হতো। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা প্রথম ওড়ানো হলো সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে। অন্যদিকে তখন আরেক মহড়া। মিছিলে মিছিলে জনতা ছুটে আসতে থাকল শেখ সাহেবের বাসভবনে।’ (পৃ. ১৩৩)
২ মার্চ সচিবালয়েও পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয়েছিল। বিকেলে বায়তুল মোকাররম ও পল্টনেও অনুষ্ঠিত হয় জনসভা। সন্ধ্যার পর হঠাৎ ঢাকা শহরে কারফিউ জারির ঘোষণা আসে। সামরিক জান্তা সেদিন কারফিউ জারি করেছিল রাত ৯টা থেকে পরদিন সকাল ৭টা পর্যন্ত। জনতার বিক্ষোভ দেখে তা অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত দেওয়া হয়। কিন্তু ওই ঘোষণা শুনে বিভিন্ন এলাকায় জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে এসে ব্যারিকেড দেয়। রাত পৌনে ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হলেও ছাত্ররা দমে যাননি। সারারাত বিক্ষোভ চলতে থাকে পাড়া-মহল্লায়। বিভিন্ন স্থানে টহলদার সামরিক বাহিনী মিছিলে গুলিবর্ষণ করে।
এদিন আট ব্যক্তি প্রাণ হারান। আহত হন কয়েকশ মানুষ। রাতে বঙ্গবন্ধু এক বিবৃতিতে নিরস্ত্র জনতার ওপর গুলিবর্ষণের কঠোর নিন্দা করে ৬ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সমগ্র প্রদেশে হরতালের আহ্বান জানান। ৩ মার্চ জাতীয় শোক দিবস পালনের ডাক দেন। একই সঙ্গে ৭ মার্চ জনসভার কর্মসূচিও বহাল রাখেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আজ টিভিতে যা দেখবেন (২৩ এপ্রিল ২০২৫)
সিলেট টেস্ট–৪র্থ দিন
বাংলাদেশ–জিম্বাবুয়ে
সকাল ৯–৪৫ মি., বিটিভি
আবাহনী–গাজী গ্রুপ
সকাল ৯টা, টি স্পোর্টস
মোহামেডান–গুলশান
সকাল ৯টা, টি স্পোর্টস ইউটিউব চ্যানেল
অগ্রণী ব্যাংক–লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ
সকাল ৯টা, টি স্পোর্টস ইউটিউব চ্যানেল
সানরাইজার্স হায়দরাবাদ–মুম্বাই ইন্ডিয়ানস
রাত ৮টা, টি স্পোর্টস ও স্টার স্পোর্টস ১
মুলতান সুলতানস–ইসলামাবাদ ইউনাইটেড
রাত ৯টা, নাগরিক টিভি
আর্সেনাল–ক্রিস্টাল প্যালেস
রাত ১টা, স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১
হেতাফে–রিয়াল মাদ্রিদ
রাত ১–৩০ মি., স্পোর্টজেডএক্স অ্যাপ