Samakal:
2025-04-02@03:20:57 GMT

সে আগুন ছড়িয়ে গেল

Published: 1st, March 2025 GMT

সে আগুন ছড়িয়ে গেল

১ মার্চ, ১৯৭১। জেনারেল ইয়াহিয়া সদ্যগঠিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্ধারিত প্রথম অধিবেশন স্থগিত করার পরপরই সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ২ ও ৩ মার্চ দেশব্যাপী হরতাল আহ্বান করেন। প্রথম দিনের হরতালটি অভূতপূর্ব সাড়া পায়। শহীদজননী জাহানারা ইমাম তাঁর ‘একাত্তরের দিনগুলি’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘হরতালের দিনে ফাঁকা রাস্তার মাঝখান দিয়ে.

.. হাঁটতে হাঁটতে নিউমার্কেটের দিকে চলে গেলাম। কী আশ্চর্য! আজকে কাঁচাবাজারও বসেনি। চিরকাল দেখে আসছি হরতাল হলেও কাঁচাবাজারটা অন্তত বসে। আজ তা-ও বসেনি। শেখ মুজিবসহ সবগুলো ছাত্র, শ্রমিক ও রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে যে সর্বত্র যানবাহন, হাটবাজার, অফিস-আদালত ও কলকারখানায় পূর্ণ হরতাল পালনের ডাক দেওয়া হয়েছে, সবাই সেটা মনে-প্রাণে মেনে নিয়েই আজ হরতাল করছে।’
বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্রলীগ ও ডাকসুর আহ্বানে ডাকা ছাত্র সমাবেশ হয়। ছাত্রলীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে সে সভায় বক্তব্য দেন ডাকসুর ভিপি আ স ম আবদুর রব, জিএস আবদুল কুদ্দুস মাখন, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজসহ অন্য ছাত্রনেতারা। আ স ম রব বক্তব্য রাখার সময় একটি অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে। তখন ছাত্রলীগের নেতা শেখ জাহিদ হোসেন একটি বাঁশের মাথায় পতাকা বেঁধে মঞ্চে আসেন। পতাকাটি ছিল বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত লাল, সবুজ, সোনালি– এই তিন রঙের। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস এটিই বাংলাদেশের জাতীয় পতাকারূপে ব্যবহৃত হয়।

এ বিষয়ে কিছু কথা না বললেই নয়। মূলত ১৯৬২ সাল থেকে একদিকে শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠনের কাজ করছিলেন, অন্যদিকে সিরাজুল আলম খান ছাত্রলীগের মধ্যে একই লক্ষ্যে ‘নিউক্লিয়াস’ গঠন করে একপ্রকার গোপন তৎপরতা চালাচ্ছিলেন। সিরাজুল আলম খানের সঙ্গে শেখ মুজিবের যোগাযোগ তখন থেকেই ক্রমশ নিবিড় হলেও প্রথম পক্ষের সব কাজ দ্বিতীয় পক্ষের জ্ঞাতসারে হতো, এমন প্রমাণ বিরল। বাংলাদেশের পতাকা বানানোর কাজটিও ছিল নিউক্লিয়াসের একক সিদ্ধান্ত। এটিও বলা দরকার, স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের চিন্তা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বড় অংশের মধ্যে অনুপস্থিত ছিল। ফলে দলকে স্বাধীনতার ধারায় রাখার জন্য নিউক্লিয়াসের কর্মকাণ্ড জরুরি ছিল।

এ বিষয়ে একসময়কার আওয়ামী লীগ নেতা, লেখক ও সুদক্ষ কূটনীতিক কামরুদ্দীন আহমদ তাঁর ‘স্বাধীন বাংলার অভ্যুদয় এবং অতঃপর’ বইয়ে লিখেছেন, ‘গান্ধীর কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করে শেখ মুজিব নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন অসহযোগ আন্দোলনের। অন্যদিকে ছাত্র ও যুব সম্প্রদায় নেতাজির (সুভাষ বসু) আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রস্তুত হলো সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য। সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্ব চাচ্ছিল একই পদ্ধতিতে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠন করে পশ্চিমা (পাকিস্তানি) শক্তির সঙ্গে যুদ্ধ করতে এবং স্বাধীনতা অর্জন করতে। এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলই ছিল স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন।’ (পৃ. ১৩৩) 
তিনি আরও লিখেছেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের এ দুটো ধারার খবর সংগ্রহের জন্য বিদেশি সাংবাদিকদের একবার জহুরুল হক হলে, আরেকবার শেখ সাহেবের বাড়িতে ছোটাছুটি করতে হতো। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা প্রথম ওড়ানো হলো সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে। অন্যদিকে তখন আরেক মহড়া। মিছিলে মিছিলে জনতা ছুটে আসতে থাকল শেখ সাহেবের বাসভবনে।’ (পৃ. ১৩৩)

২ মার্চ সচিবালয়েও পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয়েছিল। বিকেলে বায়তুল মোকাররম ও পল্টনেও অনুষ্ঠিত হয় জনসভা। সন্ধ্যার পর হঠাৎ ঢাকা শহরে কারফিউ জারির ঘোষণা আসে। সামরিক জান্তা সেদিন কারফিউ জারি করেছিল রাত ৯টা থেকে পরদিন সকাল ৭টা পর্যন্ত। জনতার বিক্ষোভ দেখে তা অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত দেওয়া হয়। কিন্তু ওই ঘোষণা শুনে বিভিন্ন এলাকায় জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে এসে ব্যারিকেড দেয়। রাত পৌনে ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হলেও ছাত্ররা দমে যাননি। সারারাত বিক্ষোভ চলতে থাকে পাড়া-মহল্লায়। বিভিন্ন স্থানে টহলদার সামরিক বাহিনী মিছিলে গুলিবর্ষণ করে।

এদিন আট ব্যক্তি প্রাণ হারান। আহত হন কয়েকশ মানুষ। রাতে বঙ্গবন্ধু এক বিবৃতিতে নিরস্ত্র জনতার ওপর গুলিবর্ষণের কঠোর নিন্দা করে ৬ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সমগ্র প্রদেশে হরতালের আহ্বান জানান। ৩ মার্চ জাতীয় শোক দিবস পালনের ডাক দেন। একই সঙ্গে ৭ মার্চ জনসভার কর্মসূচিও বহাল রাখেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য প রথম হরত ল

এছাড়াও পড়ুন:

ভাঙন রোধে দ্রুত বাঁধ নির্মাণ করুন

নদীর এক কূল ভাঙে, আরেক কূল গড়ে। শত শত বছর ধরে এ ভূমির মানুষেরা নদীর খেয়ালিপনার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়েই জীবন যাপন করে এসেছেন। আজ যিনি আমির, দেখা যেত, নদীভাঙনে কালকেই তিনি নিঃস্ব হয়েছেন। আবার নতুন জেগে ওঠা চরে বসতি গড়ে নতুন করে জীবন গড়ার স্বপ্ন এঁকেছেন তাঁরা। নদী তাই আমাদের জীবনযাপন ও সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। গত কয়েক দশকে দখল ও দূষণে বাংলাদেশের অনেক নদী যেমন মরে গেছে, আবার মৃতপ্রায় হয়ে যেগুলো এখনো টিকে আছে, সেগুলোও স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে। এ কারণে বর্ষাকালে নদীগুলো যখন ফুলেফেঁপে ওঠে, তখন আমরা ভাঙনটাই বেশি দেখতে পাই। নতুন চর জাগা বা নতুন বসতি গড়ে ওঠার ঘটনা এখন বিরল।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় জলবায়ু পরিবর্তনের যে অভিঘাত, তাতে নদীভাঙনে প্রতিবছর অনেক মানুষ নিঃস্ব হচ্ছেন। সবকিছু হারিয়ে তাঁরা জলবায়ু উদ্বাস্তু হয়ে ঢাকাসহ বড় নগরগুলোয় আশ্রয় নিচ্ছেন। ফলে ধারণক্ষমতার চেয়ে এমনিতেই কয়েক গুণ বেশি জনসংখ্যার নগরগুলোয় আরও চাপ বাড়ছে। নগরমুখী এই জনস্রোত ঠেকাতে গেলে নদীভাঙন রোধের বিকল্প নেই। প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা নদীভাঙনের সঙ্গে টিকে থাকার জন্য রীতিমতো লড়াই করে চলেছেন।

অনেক বছর ধরেই কুশিয়ারা নদীতীরবর্তী এলাকাটি ভাঙছে। নদীভাঙনে বিপন্ন মানুষ নতুন ঠিকানার খোঁজ করেন। অন্য কোথাও গিয়ে ঘরবাড়ি তৈরির সামর্থ্য যাঁদের নেই, তাঁরা ঝুঁকি নিয়ে ভাঙনের কাছাকাছি কোথাও মাথা গোঁজার চেষ্টা করছেন। নদীপারের কালারবাজার-নলুয়ারমুখা বাজারটিও ভাঙনের কবলে পড়েছে। একটা সময় মানুষের জীবন ছিল নিয়তিনির্ধারিত। কিন্তু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশের এই যুগেও কেন মানুষ প্রকৃতির কাছে এতটা অসহায় থাকবে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সিলেটের বালাগঞ্জের দিকে কুশিয়ারা নদীর বুকে একটা চর জেগে আছে। সেই চরে উজান থেকে নেমে আসা পানির স্রোত ধাক্কা খেয়ে রাজনগরের গ্রামগুলোয় আঘাত করছে। সে কারণে ভাঙনটা আরও তীব্র হচ্ছে। চরটি অপসারণে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি।

পাউবো বলছে, কুশিয়ারা নদীর ভাঙন ঠেকাতে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। আমরা আশা করি, কুশিয়ারা নদীর ভাঙন রোধে গড়িমসি না করে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। টেকসই বাঁধ নির্মাণ এই সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ