রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন কারণে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ১০ জনের বিষপান ও অতিরিক্ত ঘুমের বড়ি সেবনের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৯ জনই বিষ, ঘুমের বড়ি অথবা ড্যামফিক্স পানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। শুক্রবার দুপুর থেকে শনিবার সন্ধ্যার মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে।

এর মধ্যে তিন বছর বয়সী এক শিশু রয়েছে। অজ্ঞতাবশত সে দুইটা ঘুমের ওষুধ সেবন করে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। তাকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থার অবনতি হলে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। শিশুটি উপজেলার বেড়া গ্রামের রেজাউলের ছেলে তানজিমুল।

বিষ পানি অসুস্থ হওয়া দুইজন নারী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মৃত নারীরা হলেন উপজেলার পাইকড়তলী গ্রামের ওয়াশিমের স্ত্রী জান্নাতুন (২৫) ও উপজেলার তেবিলা গ্রামের রেন্টুর স্ত্রী তহমিনা (৩০)।

অন্য যাঁরা বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন, তাঁরা হলেন দেবীপুর গ্রামের মোহনা (১৮), পানানগর গ্রামের আবদুস সাত্তার (৪৫), কাশেমপুর গ্রামের ইরিন খাতুন (২০), বহরমপুর গ্রামের লাবনী (২৯), গোড়খাই গ্রামের নাহিদ (২৫) এবং কানপাড়া গ্রামের বীথি (৩০) ড্যামফিক্স পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। এ ছাড়া সায়বাড় গ্রামের হাবিবা খাতুন (১৫) ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।

এ বিষয়ে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মেহেদী হাসান জানান, বিষপান, ঘুমের ওষুধ সেবন ও ড্যামফিক্স পান করে অসুস্থ অবস্থায় ৯ জন রোগী দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়। এ ছাড়া তিন বছর বয়সী একটি শিশু অজ্ঞতাবশত দুটি ঘুমের বড়ি খেয়ে ফেলেছিল, তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। অন্যদের মধ্যে অবস্থার অবনতি হওয়ায় ৫ রোগীকে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে ও বাকি তিন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তাঁরা সুস্থ্ আছেন।

জানতে চাইলে দুর্গাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইব্রাহীম আলী জানান, বিষপানে আত্মহত্যায় মৃত্যুর ঘটনায় থানায় দুটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। পরে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুরুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ছুটিতে রয়েছেন। তবে যতটুকু খবর পেয়েছেন, তাতে মারা যাওয়া দুজনের ব্যাপারে থানায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা হয়েছে। বাকিদের ব্যাপারে কেউ এখনো লিখিতভাবে পুলিশকে কিছু জানায়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র গ প র উপজ ল অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় জোড়া শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় আশুলিয়ার জোড়া লাগানো শিশু সুমাইয়া ও খাদিজার মৃত্যুর অভিযোগ তুলে দোষীদের বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে আশুলিয়ার জিরানীবাজার এলাকায় নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন শিশু দুটির বাবা-মা।
সংবাদ সম্মেলনে শিশু দুটির বাবা মো. সেলিম জানান, ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর সাভারের একটি ক্লিনিকে জোড়া লাগানো অবস্থায় তাঁর দুটি কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে দীর্ঘদিন রাখা হয় তাদের। পরে ঢাকা শিশু হাসপাতালে এক বছর এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৮ মাস রেখে চিকিৎসা করানো হয়। বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কুড়িগ্রামের জোড়া লাগানো শিশু নুহা ও নাবার সফল অস্ত্রোপচার হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে গত বছরের ৬ এপ্রিল তাঁর দুই শিশুকেও ওই হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক এ কে এম জাহিদ হোসেনের অধীনে ভর্তি করেন। তাঁর দুই শিশুর কোমরের মাঝখানে ইনফেকশন ছিল, যা ওষুধে নিয়ন্ত্রণে আসেনি। দীর্ঘ আট মাস পরে কোমরে অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু দেরি হওয়ায় তাদের দু’জনেরই ব্লাড ক্যান্সার হয়ে যায়। গত ৩১ মার্চ তারা মারা যায়।
সংবাদ সম্মেলনে সেলিম বলেন, গত বছরের ১৬ এপ্রিল হাসপাতালের এক অফিস আদেশে জোড়া লাগানো শিশু দুটির বিষয়টি একাডেমিক ও গবেষণাভিত্তিক হওয়ায় কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে রোগীর কেবিন ভাড়া মওকুফ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধপত্র বিনামূল্যে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অভ্যুত্থানের পর বর্তমানে হাসপাতালের দায়িত্বরত ভিসি শাহিনুল আলম এবং পরিচালক আবু নোমান মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দীন আগের সেই আদেশ মেনে নেননি। যে কারণে চিকিৎসা বাবদ প্রায় ১২ লাখ টাকা খরচ করেও তারা দুই সন্তানকে বাঁচাতে পারেনি। হাসপাতালের ভিসি ও পরিচালকের অবহেলার কারণেই তাদের দুই সন্তানকে হারাতে হয়েছে। তাই বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে হাসপাতালটির বর্তমান ভিসি ও পরিচালকের অবহেলার জন্য উপযুক্ত শাস্তি এবং যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি শাহিনুল আলমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে খুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া মেলেনি।
সংবাদ সম্মেলনে শিশু দুটির মা সাথী আক্তার উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ