‘স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়’–এর নাম পরিবর্তন করে ‘জনপ্রতিষ্ঠান ও জনপ্রকৌশল মন্ত্রণালয়’ করার সুপারিশ করতে চান বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ।

আজ শনিবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশে স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় নারী: চ্যালেঞ্জ, সুযোগ এবং করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তোফায়েল আহমেদ এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) ও জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে।

সেমিনারের আলোচনায় উঠে আসে, জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসন নারীর ক্ষমতায়ন করে না; বরং এ কারণে সাধারণ আসনে নারীর অংশগ্রহণ কমছে। একইভাবে স্থানীয় সরকারেও নারীরা অনেকাংশে ‘আলংকরিক’, যেখানে তাঁদের সমসুযোগ, সমক্ষমতা, সমদায়িত্ব থাকে না।

বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের নামের সঙ্গে ‘পল্লী উন্নয়ন’ থাকলেও এর কাজ নেই বলে উল্লেখ করেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় পর্যায়ে কিছু সংস্কার দরকার হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, সব কো–অপারেটিভস ও এনজিওগুলো একসঙ্গে থাকলে কাজ করতে পারবে। চলতি মাসের মাঝামাঝি নাগাদ স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন খসড়া প্রতিবেদন জমা দেবে বলেও জানান তিনি।

এক শিডিউলে (তফসিল) স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে চান বলেও জানান তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, তাহলে স্থানীয় সরকারে পাঁচটা–সাতটা নির্বাচন করতে হবে না। এতে সরকারের নির্বাচনের ব্যয় অনেক কমবে। প্রার্থীর খরচও কমবে।

সংস্কার এত সহজ কাজ নয় বলেও মনে করেন তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, সংস্কার যাঁরা করতে চান, তাঁদের মধ্যে কোনো ঐকমত্য নেই।

‘সংরক্ষিত আসন নারীর ক্ষমতায়ন করে না’

জাতীয় সংসদে নারীর জন্য সংরক্ষিত ৫০টি আসন কোনোভাবেই নারীর ক্ষমতায়ন করে না বলে মনে করেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, এই পদ্ধতি ত্রুটিপূর্ণ। এই পদ্ধতি সত্যিকার অর্থে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন করে না। নারীকে আলংকরিক অর্থে রাখা হয়। এর কারণে সাধারণ আসনে নারীর অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে।

স্থানীয় সরকারেও নারীরা বহুলাংশে আলংকরিক উল্লেখ করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে ১২ জনের মধ্যে ৩ জন নারী। এখানে সরাসরি নির্বাচন আছে, জনগণের কাছে দায়বদ্ধতাও আছে। কিন্তু এখানেও বহুলাংশেও আলংকারিক। কারণ তাঁদের সমসুযোগ, সমক্ষমতা, সমদায়িত্ব থাকে না।

ঘূর্ণমান পদ্ধতিতে নির্বাচন প্রসঙ্গে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এই পদ্ধতিতে অনেক ক্ষেত্রে পুরুষেরা বাধার সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, নারীর জন্য যখন আসনটি সংরক্ষিত হবে, তখন সেখানে পুরুষেরা নির্বাচন করতে পারবে না। তবে এখন এই পদ্ধতি প্রয়োগের সুবর্ণ সুযোগ।

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য মাসুদা খাতুন মনে করেন, স্থানীয় সরকারে নারী প্রতিনিধিরা মূলধারার নন। ইউনিয়ন পরিষদে ৯টি ওয়ার্ড আছে, সেখানে ১২টা (৩টি ওয়ার্ডের জন্য একজন নারী সদস্য) করা হয়। সেই তিনটি ওয়ার্ড তো ওয়ার্ড না, শূন্যস্থান। সে কারণে তাঁদের জন্য নির্ধারিত কোনো কার্যাবলি থাকে না।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দা লাসনা কবির। প্রবন্ধে তিনি বাংলাদেশের স্থানীয় সরকারে নারীদের ৮টি চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন। সেগুলো হলো সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাধা, পুরুষতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ, রাজনৈতিক সহিংসতা ও হুমকি, আর্থিক সীমাবদ্ধতা, দলীয় রাজনীতিতে প্রভাবহীনতা, পারিবারিক ও গৃহস্থালির দায়িত্ব, শিক্ষা ও দক্ষতার ঘাটতি এবং প্রশাসনিক ও কাঠামোগত দুর্বলতা।

লাসনা কবির বলেন, স্থানীয় সরকারের নারীরা অদৃশ্য বাধার সম্মুখীন, যার কারণে তাঁরা সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারেন না।

অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বার্ডের পরিচালক (পল্লী উন্নয়ন ও স্থানীয় সরকার) ফৌজিয়া নাসরিন সুলতানা ও জাইকা বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কো–অর্ডিনেটর (স্থানীয় সরকার) কাশফিয়া তাবাসসুম। গবেষণা প্রবন্ধে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত নারী প্রতিনিধিদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও ক্ষমতায়নের জন্য গঠন করা ‘নারী উন্নয়ন ফোরাম’–এর (ডব্লিউডিএফ) ওপর সমীক্ষা করা হয়। ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে একই বছরের মে মাস পর্যন্ত দুই শ উপজেলায় এই জরিপ করা হয়। ফলাফলে দেখা যায়, ১৭৬টি উপজেলায় এই ডব্লিউডিএফ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং ২৩টিতে করা হয়নি।

আজ এই সেমিনার বাংলাদেশের স্থানীয় সরকারে কীভাবে লৈঙ্গিক সমতা নিশ্চিত করা যায়, তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন জাইকা বাংলাদেশের চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইচিগুচি তোমোহিদে। স্থানীয় সরকার আইনের সংস্কার করার সুপারিশ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন জাইকা সব সময় পাশে ছিল, আছে ও থাকবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বার্ডের মহাপরিচালক সাইফ উদ্দিন আহমেদ, জাইকার স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আকিরা মুনাকাত প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বার্ডের উপপরিচালক রাখি নন্দী ও সহকারী সেমিনার পরিচালক মো.

আমিনুল ইসলাম।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত ফ য় ল আহম দ প রবন ধ র জন য র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

ভাঙন রোধে দ্রুত বাঁধ নির্মাণ করুন

নদীর এক কূল ভাঙে, আরেক কূল গড়ে। শত শত বছর ধরে এ ভূমির মানুষেরা নদীর খেয়ালিপনার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়েই জীবন যাপন করে এসেছেন। আজ যিনি আমির, দেখা যেত, নদীভাঙনে কালকেই তিনি নিঃস্ব হয়েছেন। আবার নতুন জেগে ওঠা চরে বসতি গড়ে নতুন করে জীবন গড়ার স্বপ্ন এঁকেছেন তাঁরা। নদী তাই আমাদের জীবনযাপন ও সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। গত কয়েক দশকে দখল ও দূষণে বাংলাদেশের অনেক নদী যেমন মরে গেছে, আবার মৃতপ্রায় হয়ে যেগুলো এখনো টিকে আছে, সেগুলোও স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে। এ কারণে বর্ষাকালে নদীগুলো যখন ফুলেফেঁপে ওঠে, তখন আমরা ভাঙনটাই বেশি দেখতে পাই। নতুন চর জাগা বা নতুন বসতি গড়ে ওঠার ঘটনা এখন বিরল।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় জলবায়ু পরিবর্তনের যে অভিঘাত, তাতে নদীভাঙনে প্রতিবছর অনেক মানুষ নিঃস্ব হচ্ছেন। সবকিছু হারিয়ে তাঁরা জলবায়ু উদ্বাস্তু হয়ে ঢাকাসহ বড় নগরগুলোয় আশ্রয় নিচ্ছেন। ফলে ধারণক্ষমতার চেয়ে এমনিতেই কয়েক গুণ বেশি জনসংখ্যার নগরগুলোয় আরও চাপ বাড়ছে। নগরমুখী এই জনস্রোত ঠেকাতে গেলে নদীভাঙন রোধের বিকল্প নেই। প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা নদীভাঙনের সঙ্গে টিকে থাকার জন্য রীতিমতো লড়াই করে চলেছেন।

অনেক বছর ধরেই কুশিয়ারা নদীতীরবর্তী এলাকাটি ভাঙছে। নদীভাঙনে বিপন্ন মানুষ নতুন ঠিকানার খোঁজ করেন। অন্য কোথাও গিয়ে ঘরবাড়ি তৈরির সামর্থ্য যাঁদের নেই, তাঁরা ঝুঁকি নিয়ে ভাঙনের কাছাকাছি কোথাও মাথা গোঁজার চেষ্টা করছেন। নদীপারের কালারবাজার-নলুয়ারমুখা বাজারটিও ভাঙনের কবলে পড়েছে। একটা সময় মানুষের জীবন ছিল নিয়তিনির্ধারিত। কিন্তু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশের এই যুগেও কেন মানুষ প্রকৃতির কাছে এতটা অসহায় থাকবে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সিলেটের বালাগঞ্জের দিকে কুশিয়ারা নদীর বুকে একটা চর জেগে আছে। সেই চরে উজান থেকে নেমে আসা পানির স্রোত ধাক্কা খেয়ে রাজনগরের গ্রামগুলোয় আঘাত করছে। সে কারণে ভাঙনটা আরও তীব্র হচ্ছে। চরটি অপসারণে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি।

পাউবো বলছে, কুশিয়ারা নদীর ভাঙন ঠেকাতে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। আমরা আশা করি, কুশিয়ারা নদীর ভাঙন রোধে গড়িমসি না করে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। টেকসই বাঁধ নির্মাণ এই সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ