নতুন দলের পরবর্তী কর্মকাণ্ডের দিকে দৃষ্টি সব দলের
Published: 1st, March 2025 GMT
ছাত্র-তরুণদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) রাজনীতিতে স্বাগত জানিয়েছে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। সংশ্লিষ্ট নেতাদের কারও কারও মতে, জুলাই-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের গড়া নতুন দলটি রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত হলো। এখন দলটি কী কর্মকাণ্ড করে, সেদিকেই সবার দৃষ্টি থাকবে। দলটি কী ধরনের ভূমিকা রাখে, তার ওপর নির্ভর করবে এর ভবিষ্যৎ।
গতকাল শুক্রবার এনসিপির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ অন্তত ৩০টি রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
নতুন দল প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রদের রাজনীতিতে আসা দেশের জন্য ইতিবাচক। ছাত্রদের এই যাত্রাকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। আমরা নতুন দলের সাফল্য কামনা করছি।’
তবে বিএনপির এই নেতা নতুন দলটির আত্মপ্রকাশ ঘিরে কিছু প্রত্যাশার কথাও জানান। তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দলকে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, আমাদের কোনো ভুল পদক্ষেপ, বহু সংগ্রাম ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সাফল্যকে বিনষ্ট করতে পারে। আমরা আশা করি, সব রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে এবং গণতন্ত্রের প্রশ্নে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে।’
এনসিপির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ দলের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার দুই আমিরও অংশ নেন। ছাত্রদের সঙ্গে শুরু থেকেই জামায়াতের একটা সুসম্পর্কের কথা সব মহলে আলোচনায় ছিল।
নতুন দল সম্পর্কে জামায়াত নেতা মিয়া গোলাম পরওয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে দলটির আত্মপ্রকাশ হলো, যারা জুলাই-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদেরই অংশ। বিগত ৫৩ বছরে দেশে সন্ত্রাস, দুর্নীতিমুক্ত সুস্থ রাজনীতির সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। সেখানে তারা যদি জুলাই-অভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্য নিয়ে এগোতে পারে, আমাদের রাজনীতির যে তিক্ত অতীত, পরস্পর শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ, বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য, অসত্য তথ্য নিয়ে ঘায়েল করার চেষ্টা—এসব ক্ষেত্রে সুস্থ রাজনীতির চর্চায় অবদান রাখতে পারে; তাহলে জাতি উপকৃত হবে, দেশের রাজনীতির পরিবেশও সমৃদ্ধ হবে।’
এনসিপির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিও।
মাহমুদুর রহমান মান্না প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজনীতির চর্চা এবং এর বিকাশ ও বিস্তার যত বেশি হয়, ততই ভালো। তাদের আত্মপ্রকাশে খুশি হয়েছি, আশাবাদীও হতে চাই। কারণ, তারা সেই শক্তি, যারা চব্বিশে অসাধ্যকে সাধন করেছে।’
তবে ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না নতুন দলের নেতৃত্ব সম্পর্কে নিজের কিছু পর্যবেক্ষণও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সরকার উৎখাতের আন্দোলন ও দেশকে বদলে দেওয়ার আন্দোলন এক জিনিস নয়। এটা অনেক বেশি পরিমাণে জ্ঞানের, অভিজ্ঞতার লড়াই। দেশ বদলে দেওয়ার জন্য সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ১৫টি সংস্কার কমিশন হয়েছে। ছয়টি কমিশন রিপোর্টও জমা দিয়েছে। এই রিপোর্টগুলো পড়লে বোঝা যায়, কতখানি জানতে হবে, কত জ্ঞান দরকার। তিনি বলেন, ‘ছাত্ররা দল করার আগে তাদের গভীর চিন্তার মনে হয়েছিল, এখন অ্যাংগরি ইয়াং ম্যান মনে হয়েছে।’
ছাত্র-তরুণেরা যে ধরনের ঘোষণা দিয়ে সামনে এসেছে, সেটা রক্ষা করতে পারলে তারা একটা গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘তবে, তারা আগামী দিনগুলোতে কী ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করবে, নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণে ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠায় ন্যূনতম যে জাতীয় ঐক্য দরকার, সে ক্ষেত্রে কী ভূমিকা রাখবে, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।’
এদিকে ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর থেকে জামায়াতের ক্ষমতামুখী রাজনৈতিক তৎপরতা, অন্যদিকে জুলাই-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী ছাত্র-তরুণদের নতুন দল; সব মিলিয়ে রাজনীতি ও নির্বাচনে বিএনপির নতুন প্রতিদ্বন্দ্বীর উত্থানের ইঙ্গিত মিলছে। যদিও বিষয়টিকে খুবই স্বাভাবিক বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুধু তারা (জাতীয় নাগরিক পার্টি) কেন, আরও দলও তো আছে। নির্বাচনে-রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বী তো থাকবেই। প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলে তো শেখ হাসিনার (একতরফা) রাজনীতিই হয়ে গেল। যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, তাহলে সবার অধিকার আছে যার যার দাবি-অঙ্গীকার নিয়ে ম্যান্ডেটের জন্য জনগণের কাছে যাওয়ার। জনগণই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক র জন ত র র র জন ত র জন ত ত ব এনপ র বন দ ব এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
চলতি মাসে রোডম্যাপ না দিলে রাজনৈতিক শক্তিগুলো সিদ্ধান্ত নেবে: সালাহউদ্দিন
একমাসের (চলতি মাস) মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ না দিলে রাজনৈতিক শক্তিগুলো বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
শনিবার (১ মার্চ) দুপুরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) মিলনায়তনে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সংগ্রামে খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের ত্যাগ ও নেতৃত্ব’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও ‘নন্দিত নেত্রী খালেদা জিয়া’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
সালাহউদ্দিন বলেন, এই গণ-অভ্যুত্থানের পর সুস্থ ধারার রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ আর কখনও ফিরতে পারবে না। দলটি যদি আবারও রাজনীতির সুযোগ পায়, তবে সেটা আমাদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা।
তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্ট নির্ধারণ হয়ে গেছে দেশে আর মানুষ আওয়ামী লীগের রাজনীতি চায় না। সেই দলটিকে এখনও বিচারের আওতায় আনা হয়নি, শুধু মুখেই বলছে অন্তর্বর্তী সরকার।
অন্তর্বর্তী সরকার ইনিয়ে-বিনিয়ে নির্বাচন দেয়ার কথা বলছে অভিযোগ করে সালাহউদ্দিন বলেন, বিদেশে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের কথা বলেন। যদি সৎ উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে দেশে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনের রোডম্যাপ দিন। আপনাকে অতিশিগগিরই নির্বাচনের রোডম্যাপ দিতে হবে। একমাসের মধ্যে না দিলে রাজনৈতিক শক্তিগুলো বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।
সার্বভৌম স্বাধীন রাষ্ট্রে গণপরিষদ নির্বাচন নয় উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, যারা গণপরিষদের বিষয় সামনে আনছে, দ্বিতীয় রিপাবলিকের কথা আনছে। হয় তারা বোঝে না, নয়তো জেনেশুনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করার ষড়যন্ত্র করছে।
যারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথা বলছেন, তাদের উদ্দেশ্যে সালাহউদ্দিন বলেন, ৫ আগস্ট কি মেম্বার চেয়ারম্যান করার জন্য হয়েছিল। এগুলো মূলত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করতে চায় একটি গোষ্ঠী।
এম জি