ঘোড়াঘাটে মাজারে হামলা-অগ্নিসংযোগের পর ব্যাপক লুটপাট
Published: 1st, March 2025 GMT
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার আফসারাবাদ কলোনি এলাকার ‘রহিম শাহ বাবা ভান্ডারি মাজারে’ হামলা–অগ্নিসংযোগের পর ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার বেলা আড়াইটা পর্যন্ত মাজারের সীমানাপ্রাচীরের খুঁটি, কবরের ঢাকনা, দেয়াল এবং কুঠুরি ঘরের খুঁটি ভাঙচুর ও লুটপাট চলতে দেখা যায়।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে মাজারে ওরসের নামে গান-বাজনা, মাদক সেবনসহ অশ্লীল কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ তুলে হামলা করে অগ্নিসংযোগ করেন স্থানীয় ‘তৌহিদি জনতা’। সিরাতে মুস্তাকিম পরিষদ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে এলাকায় লাঠিমিছিল কর্মসূচির পর ওই হামলার ঘটনা ঘটে।
আজ সকাল থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত মাজারে থেকে দেখা যায়, ২৫–৩০ জন নারী-পুরুষ যে যাঁর মতো মাজার চত্বরে ওরসের জন্য তৈরি করা মঞ্চ, প্যান্ডেলের বাঁশ, কাপড় ও দড়ি খুলে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ মাজারের ভেতরে রহিম শাহ বাবা ভান্ডারির কবরের ঢাকনা (আরসিসি) ও দেয়াল, মাজারের দক্ষিণ, পশ্চিম ও পূর্ব পাশে থাকা কুঠুরির খুঁটিতে হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে রড বের করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেল পাঁচটায় উপজেলার রানীগঞ্জ বাজারে সিরাতে মুস্তাকিম পরিষদের ব্যানারে মাজার বন্ধের দাবিতে লাঠিমিছিল করা হয়। পরে মিছিল থেকে উত্তেজিত স্থানীয় ‘তৌহিদি জনতা’ আফসারাবাদ কলোনিতে মাজারে হামলা করেন। পরে মাজারে ওরসের জন্য তৈরি করা মঞ্চ ও প্যান্ডেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পাশাপাশি মেহমানদের কুঠুরি ঘরের আসবাব, রান্নার হাঁড়িপাতিলসহ ওরসের জন্য কেনা ৮টি গরু, ১০টি ছাগল লুট করা হয়।
মাজারের ভান্ডারি জয়নাল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, হজরত গাউসুল আজম রহিম শাহ বাবার মৃত্যুর দিনকে স্মরণ করে প্রতিবছর বাংলা সনের ১৮ ফাল্গুন মাজারে ওরস হয়। ওরসে দেশ ও বিদেশ থেকে ১০–১৫ হাজার মেহমান আসেন। ২ থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত বার্ষিক ওরস আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল মাজার কর্তৃপক্ষ। এ জন্য জেলা প্রশাসন থেকে অনুমতিও নেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘গতকাল সকাল থেকে মাজারের ভক্ত নারী-পুরুষেরা মাজারের সাজসজ্জা ও খাবারের আয়োজন করছিলেন। বিকেলে তৌহিদি জনতা মাজারে হামলা করেন। তাঁরা মাজারে আগুন লাগিয়ে সব পুড়িয়ে দেন। মাজারের সব ভেঙে তছনছ করে দিয়েছেন। মাজারে থাকা ওরসের জন্য কেনা গরু-ছাগলসহ তাঁর বাড়ি থেকে দুটি ছাগল নিয়ে গেছেন। এখানকার যে অবস্থা, কার কাছে অভিযোগ দেব।’
সিরাতে মুস্তাকিম পরিষদের কেউই মাজারে হামলা ও আগুন দেওয়ার কথা স্বীকার করেননি। গতকাল বিকেলে সিরাতে মুস্তাকিম পরিষদের ব্যানারে লাঠিমিছিল চলাকালে উত্তেজিত তৌহিদি জনতা মিছিল থেকে বের হয়ে মাজারে হামলা ও আগুন দিয়েছেন বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।
সিরাতে মুস্তাকিম পরিষদের উপদেষ্টা মুফতি মনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রহিম শাহ বাবা মাজারের মুরিদরা ইসলামের মৌলিক কাঠামোগুলো নিয়ে কটূক্তি করেন। এ জন্য এলাকার মানুষ তাঁদের প্রতি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ছিলেন। তাঁরা তাঁদের ধর্ম পালন করলে কোনো বিষয়ই ছিল না। তাঁরা শিরক করুন, বেদাত করুন, কেয়ামতের দিন তাঁদের হিসাব তাঁরাই দেবেন। তিনি বলেন, গতকাল যেটা হয়েছে, সেটিতে স্থানীয় আলেম-ওলামাদের সমর্থন ছিল না। তাঁদের কোনো কর্মসূচিও ছিল না। কিন্তু রমজান মাস আসার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা সেখানে শামিয়ানা টানান। সেখানে সারা রাত মাইক বাজাবেন, নাচবেন, গাইবেন—বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মানুষ বিরক্ত। বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে মানুষ প্রতিবাদ করতে পারেননি, এখন মানুষ সেই জায়গা থেকে ছুটে যান। তবে সেটা করতে গিয়ে গতকাল স্থানীয় মানুষ অতিরিক্ত যেটি করে ফেলেছেন, সেটি নিন্দনীয়। এটিকে কখনো সমর্থন করা যায় না।
আরও পড়ুনঘোড়াঘাটে ওরস আয়োজনের প্রস্তুতির মধ্যে মাজারে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ২২ ঘণ্টা আগেঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হক বলেন, গতকাল রহিম শাহ বাবা ভান্ডারির মাজারে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার প্রথমে একটি বিক্ষোভ মিছিল করার কথা ছিল। কিন্তু হুট করে তৌহিদি জনতা মাজারে গিয়ে হামলা করেন ও আগুন দেন। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও লোক এত বেশি ছিলেন, তাঁরা কিছুই করতে পারেননি। পরে সবার সঙ্গে আলোচনা করে পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনী, উপজেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিসসহ সবাই গিয়ে আগুন নেভান এবং এলাকা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন। মাজারে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় এখনো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
মহেশখালী নৌপথে সি-ট্রাকের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার, চূড়ান্ত হলো ভাড়া-সময়সূচি, উচ্ছ্বসিত বাসিন্দারা
কক্সবাজার-মহেশখালী নৌপথে নিয়মিতভাবে সি-ট্রাক চলাচল শুরু হবে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে। নৌপথটিতে প্রতিদিন তিনবার করে যাওয়া-আসা করবে ২৫০ জন যাত্রী ধারণক্ষমতার সি-ট্রাকটি। কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর ৬ নম্বর জেটিঘাট থেকে মহেশখালী যাতায়াতের ক্ষেত্রে একজন যাত্রীকে ভাড়া দিতে হবে ৫০ টাকা। অন্যদিকে কক্সবাজারের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে মহেশখালী যেতে ৪০ টাকা ভাড়া দিতে হবে যাত্রীদের। এরই মধ্যে এসব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
নিয়মিত সি-ট্রাক চলাচল শুরুর ঘোষণায় দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর বাসিন্দারা উচ্ছ্বসিত। এই সেবা চালু হওয়ায় পাহাড়ি দ্বীপটিতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে যাত্রীদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি কমবে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা। একই সঙ্গে বর্ষা মৌসুমে উত্তাল সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির মতো ঘটনাও কমবে বলে আশাবাদী তাঁরা। তবে সি-ট্রাকের ভাড়া আরও অন্তত ১০ টাকা করে কমানোর দাবি তুলেছেন বাসিন্দারা।
কক্সবাজারের পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালীর আয়তন ৩৮৮ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার। উপজেলায় রয়েছে একটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়ন। বাংলাদেশের জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ অনুযায়ী এই দ্বীপের জনসংখ্যা ৩ লাখ ৮৫ হাজারের বেশি। মৈনাক পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত আদিনাথ মন্দিরসহ উপজেলার নানা পর্যটন স্পটের কারণে সারা বছরই উপজেলাটিতে পর্যটকদের আনাগোনা থাকে।
বিআইডব্লিউটিএ জানায়, গত শুক্রবার নৌরুটটিতে পরীক্ষামূলকভাবে সি-ট্রাক চালু করা হয়। এরপর নিয়মিতভাবে সি-ট্রাক চলাচলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সকারের নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন সি-ট্রাকের উদ্বোধন করবেন। সি-ট্রাক চলাচলের সময়ও এর মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা, দুপুর ১২টা এবং সন্ধ্যা ৬টায় মহেশখালীর উদ্দেশে সি-ট্রাক ছেড়ে যাবে। মহেশখালী থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছাড়বে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টা, বেলা ১১টা এবং বিকেল ৫টায়।
কক্সবাজার-মহেশখালী নৌপথে এত দিন ধরে স্পিডবোট, কাঠের নৌকা ও লোহার ‘গামবোট’–এ করে যাত্রীরা যাতায়াত করে আসছেন। এসব নৌযানে যাতায়াতে নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের। নৌপথে যাতায়াতের ক্ষেত্রে মানুষের এসব ভোগান্তি নিরসনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় বাসিন্দা, ছাত্রদের সঙ্গে আন্দোলন করে আসছে মহেশখালী নাগরিক আন্দোলন। এ সংগঠনের নেতৃত্বে থাকা এস এম রুবেল প্রথম আলোকে বলেন, এত দিন নৌপথের নিয়ন্ত্রণ প্রভাবশালী কিছু সিন্ডিকেটের হাতে ছিল। মানুষ বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে স্পিডবোটে যাতায়াত করে আসছেন। সি-ট্রাক চালু হলে এসব সিন্ডিকেটের আধিপত্য কমবে। দ্বীপের বাসিন্দারা স্বস্তিতে যাতায়াত করতে পারবেন। নিরাপদে মহেশখালী ভ্রমণ করতে পারায় পর্যটক সমাগমও বাড়বে।
স্থানীয় সংবাদকর্মী মো. এনামুল হক বলেন, সরকারি গেজেট অনুযায়ী নৌপথে যাত্রীপ্রতি কিলোমিটারে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২ টাকা ৮৫ পয়সা। মহেশখালী থেকে কক্সবাজার নৌপথের দূরত্ব সাড়ে আট কিলোমিটার। এতে ২৫ টাকা ভাড়া এলেও গেজেট অনুযায়ী সর্বনিম্ন ভাড়া হিসাবে ৩০ টাকা নেওয়ার কথা। কিন্তু এই নৌপথে ৪০ থেকে ৫০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে, যা কমানো উচিত। একই দাবি করেন মহেশখালী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সর্বনিম্ন ভাড়া হিসাবে ৩০ টাকা আদায়ের জন্য তাঁরা বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ কক্সবাজার (কস্তুরাঘাট) নদীবন্দরের সহকারী পরিচালক মো. খায়রুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর ৬ নম্বর জেটিঘাটে সি-ট্রাক চলাচলের উদ্বোধন করবেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা। এরপর ওই সি-ট্রাকে করে মহেশখালীতে গিয়ে এক সুধী সমাবেশে অতিথি হিসেবে অংশ নেবেন তিনি। এরপর বেলা দেড়টায় সি-ট্রাকে করে কক্সবাজারে ফিরবেন।
মো. খায়রুজ্জামান আরও বলেন, আপাতত তিনবার করে সি-ট্রাকটি যাওয়া-আসা করবে। সময়সূচিও এরই মধ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে। যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী পরে সময়সূচি পরিবর্তন করা যাবে। ভাড়া কমানোর বিষয়ে যাত্রীদের দাবির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হেদায়েত উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, সি-ট্রাক চলাচল নিয়ে দ্বীপের বাসিন্দা খুবই উচ্ছ্বসিত। যাত্রীদের সুবিধার্থে মহেশখালী জেটিঘাটে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ চলছে। এরই মধ্যে জেটিঘাটের যাত্রীছাউনিতে বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।