বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন (টুকু) বলেছেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ সন্তান আরাফাত রহমান কোকো বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতন-নিপীড়নের কারণে বিদেশে মৃত্যুবরণ করেছেন। অথচ বাংলাদেশের ক্রিকেট বিশ্বের বুকে যেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার পেছনে মূল অবদান ছিল আরাফাত রহমানের। তিনি ক্রীড়া সংগঠক ছিলেন, কোনো রাজনীতি করতেন না। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার এ মানুষটিকে নির্যাতন থেকে রেহাই দেয়নি।

আজ শনিবার বিকেলে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট-২০২৫ এর চূড়ান্ত পর্বের খেলা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা সুলতান সালাউদ্দিন। মির্জাপুর সরকারি সদয় কৃষ্ণ পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত এ খেলার আয়োজন করে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি সংঘ।

মির্জাপুর পৌর বিএনপির সভাপতি হজরত আলী মিঞার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মো.

সাইদুর রহমান, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব মাহমুদুল হক, উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক মো. জাহাঙ্গীর মৃধা, পৌর কৃষক দলের আহ্বায়ক মান্নান খান, আরাফাত রহমান কোকো সংঘের সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সেলিম হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে দেশ ফ্যাসিস্টমুক্ত হয়েছে মন্তব্য করে সুলতান সালাউদ্দিন বলেন, ‘বিগত ১৭ বছর ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির অসংখ্য নেতা-কর্মী শহীদ হয়েছেন। এম ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ অসংখ্য নেতা-কর্মী গুমের শিকার হয়েছেন। বিএনপির নেতা-কর্মীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সেই নির্যাতন উপেক্ষা করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিয়ে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারেক রহমানের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে। বিগত ফ্যাসিবাদ সরকারের বিরুদ্ধে যাঁরা আন্দোলন করেছেন, তাঁদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত, মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ইনশা আল্লাহ, বিজয় আমাদের হবেই।’

চূড়ান্ত পর্বের খেলায় অংশগ্রহণকারী মির্জাপুর কিংস একাদশ ও মির্জাপুর লিজেন্ড একাদশ অংশ নেয়। খেলা শেষে বিজয়ী মির্জাপুর কিংস একাদশের খেলোয়াড়দের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আর ফ ত রহম ন ক ক ব এনপ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আদিবাসী ভাষা সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

আদিবাসী ভাষা সুরক্ষায় নতুন প্রতিশ্রুতি নিয়ে ঢাকায় দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষাদশক সম্মেলন ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউনেস্কোর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, জাবারাং এবং মালেয়া ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় আয়োজিত এই সম্মেলনে আদিবাসী নেতা, তরুণ প্রতিনিধি, গবেষক, শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা ভাষার বৈচিত্র্য রক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চাকমা সার্কেলের প্রধান ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায়, মং সার্কেলের প্রধান রাজা সাচিং প্রু চৌধুরী, বাংলাদেশ আদিবাসী জনগোষ্ঠী নেটওয়ার্ক অন ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড বায়োডাইভারসিটির মহাসচিব গিডিসন প্রাধান সুচিয়াং, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান এবং ইউনেস্কো বাংলাদেশের প্রধান ড. সুসান ভাইজ।
সম্মেলনে ভাষা সংরক্ষণ, শিক্ষা ও সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা, প্যানেল সেশন এবং মতবিনিময় হয়। সম্মেলনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল অফ রুটস অ্যান্ড হেরিটেজ: টেলস ফ্রম দ্য হিলস বইয়ের মোড়ক উন্মোচন। ইউনেস্কোর হুকড অন পিস প্রকল্পের আওতায় প্রকাশিত এই বইটিতে বিভিন্ন আদিবাসী ভাষায় গল্প তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি আদিবাসী বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে আদিবাসী লেখকদের সাহিত্যকর্ম প্রদর্শন করা হয়। আলোচকরা বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ভাষা সংরক্ষণ সম্ভব। ভাষা শেখা ও সংরক্ষণের জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও অনলাইন টুলস ব্যবহারের পাশাপাশি গল্প বলা, কবিতা ও আদিবাসী গণমাধ্যমকে ভাষাগত ঐতিহ্য রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করার ওপর জোর দেন আলোচকরা। জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় আদিবাসী ভাষার অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিও উঠে আসে আলোচনায়। ভাষা সুরক্ষায় নীতি নির্ধারণ, নতুন নতুন উদ্যোগ, তরুণদের সম্পৃক্ততা এবং বহু ভাষার শিক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা করেন তারা। সম্মেলনে বক্তব্য দেন ল্যাঙ্গুয়েজ রিসোর্স হাবের সামার মাইকেল সরেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাশরুর ইমতিয়াজ ও মং সার্কেল প্রধানের কার্যালয়ের রানী উখেংচিং মারমা, ভারতের টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সের সহকারী অধ্যাপক ড. বিশ্বরঞ্জন ত্রিপুরা, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব গুজরাটের পিএইচডি ক্যান্ডিডেট অমরেশ দেববর্মা, নর্থ ইস্টার্ন হিল ইউনিভার্সিটির পিএইচডি শিক্ষার্থী থমাস মলসম, নওগাঁ সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক যোগেন্দ্রনাথ সরকার, জুম ইসথেটিক্স কাউন্সিল (জাক)-এর সভাপতি ঝিমিত ঝিমিত চাকমা, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নৃত্য ফিফা চাকমা। ইউনেস্কোর প্রতিনিধি লিন আং মোরো ও বারশা লেখি আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বাংলাদেশের আদিবাসী ভাষার বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন।
বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার ৫০টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দিয়েছে, যারা ৪১টি ভাষায় কথা বলে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, দেশের প্রায় ১৫টি ভাষা বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। সম্মেলনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে আদিবাসী ভাষা 
রক্ষায় অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
‘অফ রুটস অ্যান্ড হেরিটেজ: টেলস ফ্রম দ্য হিল’ গ্রন্থটি ইউনেস্কোর দীর্ঘদিনের এক উদ্যোগের ফসল। জাপান সরকারের সহযোগিতায় হুকড অন পিস প্রকল্পের আওতায় ২০ জন চাকমা ও ত্রিপুরা তরুণ গল্পকারকে গল্প বলা ও সম্পাদনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে এই গল্পগুলোকে নিয়ে আরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে ইউনেস্কো। এ প্রকল্পের প্রশিক্ষক লেখক-সম্পাদক সাংবাদিক রিফাত মুনিম মূল প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তী সময়ে রিফাত মুনিম বইটি বাংলাসহ ইংরেজি, ত্রিপুরা ও চাকমা ভাষায় অনুবাদ ও বইটির সম্পাদনার দায়িত্ব নেন। এই ২০ জন গল্পকারকে সঙ্গে নিয়ে তিনি এবং ইউনেস্কো মিলে প্রকাশ করেন বইটি। v

সম্পর্কিত নিবন্ধ