একটি সুস্থ ধারার মেধা ও মনন এবং দায় ও দরদের রাজনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ যাত্রা শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন সদ্য আত্মপ্রকাশ করা সংগঠনের সদস্য সচিব জাহিদ আহসান।

শনিবার (১ মার্চ) রাজধানীর মোহাম্মদপুরে রায়েরবাজারে কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত হয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের কবর জিয়ারত করে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছে ছাত্র সংগঠনটি। জিয়ারত শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

জাহিদ আহসান বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতিতে একটি শূন্যতা তৈরি হয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর গত ৫৪ বছরে বাংলাদেশে কোন সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি হয়নি। বরং ছাত্র রাজনীতির নামে ক্যাম্পাসগুলোতে ট্যাগিং কালচার, মাদার পার্টির এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য পুরো ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করে রাখার প্রচেষ্টা দেখেছি। এজন্য একটি সুস্থ ধারার মেধা ও মনন এবং দায় ও দরদের রাজনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ যাত্রা শুরু করেছে।”

আরো পড়ুন:

ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের পরিচিতি সভা

রাজধানীর লোকাল বাসে মারধরের শিকার ঢাবি শিক্ষক

জুলাই গণঅভ্যুত্থান নতুন ছাত্র সংগঠনের শক্তি ও ভিত্তি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা মোহাম্মদপুর রায়েরবাজার জুলাই-আগস্টে শহীদ পরিবার ও যাদের পরিবার তাদের লাশ খুঁজে পায়নি, এমন ব্যক্তিদের কবর জিয়ারত করেছি। এ গণঅভ্যুত্থান বাদ দিয়ে বাংলাদেশে আগামীতে কোন রাজনীতি হবে না।"

তিনি আরো বলেন, “মানুষ যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে রাজপথে নেমে এসেছিল, সেই আশা-আকাঙ্ক্ষাই হবে বাংলাদেশের রাজনীতির মূল ভিত্তি। শহীদদের পাশে দাঁড়িয়ে আমরা প্রতিজ্ঞা করছি, যে দায় ও দরদের জন্য তারা জীবন দিয়েছেন, আমরা তা ধারণ করব। আমরা ভুল করলে শুধরে দেবেন, ভালো করলে বাহবা দেবেন।”

এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক আব্দুল কাদের বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও তারুণ্যের স্বপ্ন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ভিত্তি। আমাদের শহীদ ভাই ও সহযোদ্ধারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাসিনার পতন ঘটিয়েছে। একটি গণঅভ্যুত্থানের দুটি শর্ত থাকে। বিদ্যমান ব্যবস্থা উপড়ে ফেলা এবং নতুন বন্দোবস্ত হাজির করা। আমরা প্রথম দায়িত্ব পালন করেছি। এখন আমাদের দায়িত্ব হলো নতুন বন্দোবস্ত হাজির করা।”

তিনি বলেন, “ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তি, দাসত্ব ও জিম্মি করে রাখার যে সংস্কৃতি ছিল, তা উপড়ে নতুন ব্যবস্থা হাজির করতে চায়। ছাত্রদের ব্যবহার করে যেভাবে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে রাখছে, তা আমরা উপড়ে ফেলতে চাই।”

অন্যদের মাঝে আরো বক্তব্য দেন সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব মহির আলম, মুখ্য সংগঠক হাসিব আল ইসলাম প্রমুখ।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গণঅভ য ত থ ন দ য় ও দরদ র র র জন ত র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

পদ বাড়িয়ে সমঝোতার চেষ্টা নতুন দলে

শেখ হাসিনার পতন ঘটানো গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দলে প্রধান সমন্বয়কারী পদ সৃষ্টি করে সমঝোতার চেষ্টা চলছে। এ টানাপোড়েনের মধ্যেই গতকাল বুধবার মারামারিতে আত্মপ্রকাশ করেছে গণঅভ্যুত্থানের সমন্বয়কদের নতুন ছাত্র সংগঠন ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’। নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একচেটিয়া প্রাধান্যে বিক্ষোভ করেন গণঅভ্যুত্থানে প্রতিরোধ গড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

ছাত্র সংগঠনের মতো তরুণদের রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব নিয়েও চলছে বিরোধ। এতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক দুই নেতা নতুন দলে যোগ না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তাদেরসহ বিক্ষুব্ধদের ফেরানোর চেষ্টা করছেন দলের নেতৃত্ব নিতে যাওয়া সদ্য সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।

আগামীকাল শুক্রবার বিকেল ৩টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বড় জমায়েতের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া নতুন দলের আহ্বায়ক হতে যাচ্ছেন নাহিদ; সদস্য সচিব হতে পারেন আখতার হোসেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক দুই সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে মুখ্য সংগঠক ও মুখপাত্র করার কথা রয়েছে।

সপ্তাহখানেক ধরেই শোনা যাচ্ছিল, সদস্য সচিব পদে জাতীয় নাগরিক কমিটির (জানাক) আহ্বায়ক মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে চাচ্ছিলেন তাঁর অনুসারীরা। এতে সমর্থন রয়েছে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের। একই পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সাবেক সভাপতি আলী আহসান জুনায়েদকে চেয়েছিলেন তাঁর অনুসারীরা। গত সোমবার পর্যন্ত আলোচনা ছিল, সব পক্ষের মধ্যে সমঝোতার জন্য জুনায়েদ জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক এবং নাসীরুদ্দীন জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব হবেন।

তবে গতকাল বুধবার জানাক সূত্র জানায়, প্রধান সমন্বয়কারী পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিবের পরই হবে এই পদের মর্যাদা। নাসীরুদ্দীন হবেন প্রধান সমন্বয়কারী। যদিও তিনি তা নিশ্চিত করেননি। জানাকের মুখপাত্র সামান্তা শারমিন সমকালকে বলেন, প্রধান সমন্বয়কারী পদের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। কে পদে আসবেন, তা ঠিক হয়নি। আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, মুখপাত্র, মুখ্য সংগঠকসহ অন্যান্য পদে কারা আসবেন, তাও চূড়ান্ত নয়। শুক্রবার দলের আত্মপ্রকাশের আগে সব ঠিক হবে।

গতকাল রাজধানীর বাংলামটরে জানাক কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এই সংগঠন আর রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে না; প্ল্যাটফর্ম হিসেবে থাকবে। আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, মুখপাত্র ও মুখ্য সমন্বয়ক ছাড়া বাকি সব পদ বিলুপ্ত হবে। সবাই সদস্য হিসেবে গণ্য হবেন।

ঢাবি শিবিরের সাবেক দুই সভাপতি থাকছেন না

সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে প্ল্যাটফর্ম গড়ে গত ১ জুলাই আন্দোলনে নামে। হাসিনা সরকারের নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষও রাজপথে নামেন। আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিলে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতন হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্রশক্তির নেতারা সামনের সারিতে থাকলেও শিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন বাম সংগঠনের নেতাও ছিলেন।

রাজনৈতিক দল গড়তে ৮ সেপ্টেম্বর গঠন করা জানাকেও ছাত্রশক্তি, ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ এবং কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও বাম সংগঠন থেকে আসা নেতা রয়েছেন। সবাই নিজ বলয় থেকে নতুন শীর্ষ নেতৃত্বে জায়গা করার চেষ্টা করছেন।

এ নিয়ে নতুন বিরোধ থেকে গণঅভ্যুত্থানের কৃতিত্ব নিয়ে সপ্তাহ দুই আগে বিরোধে জড়ান ছাত্রশক্তি ও শিবিরের সাবেক নেতারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরস্পরের বিরুদ্ধে লেখেন। অতীতে শিবির-সংশ্লিষ্টতার কারণে নতুন দলের শীর্ষ নেতৃত্বে আনা হচ্ছে না বলে অভিযোগ তোলেন শিবিরের সাবেক নেতারা। একে আওয়ামী লীগ আমলের শিবির ট্যাগ দিয়ে নিপীড়নের ধারাবাহিকতা বলে ভাষ্য তাদের। এর ‘প্রতিবাদে’ জানাক ছেড়েছেন সাবেক শিবির নেতা আরেফিন মুহাম্মদ।

জুনায়েদ এবং ঢাবি শিবিরের আরেক সাবেক সভাপতি রাফে সালমান রিফাত চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে গত সোমবার দেশটিতে গেছেন। অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতা হিসেবে তাদের চীন সফর নিয়ে প্রশ্ন তোলে জানাক। সোমবার মধ্যরাতে বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এ সফরের সঙ্গে জানাকের সম্পর্ক নেই। সংগঠনে থাকা সাবেক শিবির নেতারা সমকালকে জানান, এ বিজ্ঞপ্তির কারণে সমঝোতার সব সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়।

জুনায়েদ ও রিফাত ফেসবুক পোস্টে জানান, নতুন দলে তারা থাকছেন না। জুনায়েদ লেখেন, না থাকার বিষয়টি সপ্তাহখানেক আগেই জানিয়েছিলাম নেতাদের। বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে ও জাতির নজর নতুন দলের ওপর নিবদ্ধ রাখতে নীরবতা বেছে নিয়েছিলাম। তবে চারপাশের গুঞ্জন থামছে না। তাই স্পষ্ট করে রাখছি। দুঃখজনক বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার পরও ট্যাগিং ও ট্যাবুর রাজনীতি থেকে মুক্ত হয়ে নতুন ধারার রাজনীতি এই দলের মাধ্যমে শুরু হোক, এই প্রত্যাশাই করি। 

রাফে সালমান লেখেন, দলে না থাকলেও আমার রাজনৈতিক পথচলা থেমে থাকবে না। অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন রাজনৈতিক সম্ভাবনার যে জোয়ার তৈরি হয়েছিল, তাতে শর্ট টার্মে খুব ভালো কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা রাখি না আপাতত। 

জানাক সূত্র জানিয়েছে, শিবিরের নেতাকর্মীর বড় অংশই জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন না। ‘ইনক্লুসিভ’ রাজনীতির কথা বলায় জানাক এই সাবেক শিবির নেতাদের পছন্দের জায়গা হয়ে উঠেছিল। কিন্তু জুনায়েদ ও রাফে সালমানের এই নেতৃত্বে জায়গা না হওয়ায় শিবিরের সাবেক নেতাকর্মী নতুন দলে আর আসতে চাইবেন না। 

যদিও সাবেক কয়েকজন শিবির নেতা নতুন দলে থাকছেন। একাধিক নেতা সমকালকে বলেন, জুনায়েদ গত রোববার নাহিদ ইসলামকে জানান, শিবির ‘ট্যাগ’ দিয়ে নেতৃত্ব থেকে দূরে রাখার কারণে নতুন দলে থাকবেন না। জুনায়েদ এ সিদ্ধান্ত নিলেও নাহিদ গতকাল পর্যন্ত সব পক্ষকে নতুন দলে রাখার চেষ্টা করছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। বিদেশে থাকায় জুনায়েদ ও রিফাতের সঙ্গে কথা বলতে পারেনি সমকাল।

অভ্যুত্থানে সর্বাত্মক ভূমিকা রাখা কওমি মাদ্রাসার সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদেরও নতুন দলের নেতৃত্বে আনা হচ্ছে না বলে এই বলয়ের নেতারা অভিযোগ করছেন। তাদের ভাষ্য, শীর্ষ নেতৃত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। কওমি ছাত্র পরিষদ থেকে আসা জানাকের যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ মাহাদি সমকালকে বলেন, অভ্যুত্থানের সব অংশীজনের অংশগ্রহণের পথ উন্মুক্ত থাকতে হবে। নইলে দল ইনক্লুসিভ কিনা– এ প্রশ্ন থাকবে।

মারামারিতে আত্মপ্রকাশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের

বিক্ষোভ, মারামারিতে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে আত্মপ্রকাশ করেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ। সংগঠনটির স্লোগান ‘শিক্ষা, ঐক্য, মুক্তি’। তিন ঘণ্টার নাটকীয়তার পর কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

কেন্দ্রীয় কমিটিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার আহ্বায়ক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদ আহসান সদস্য সচিব হয়েছেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের তাহমীদ আল মুদাসসির মুখ্য সংগঠক এবং আশরেফা খাতুন মুখপাত্রের দায়িত্ব পেয়েছেন। সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম। সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিফাত রশীদ মনোনীত হয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিতে আব্দুল কাদের আহ্বায়ক ও মহির আলম সদস্য সচিবের দায়িত্ব পেয়েছেন। সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক লিমন মাহমুদ হাসান, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব আল আমিন সরকার, মুখ্য সংগঠক হাসিব আল ইসলাম এবং মুখপাত্র হয়েছেন রাফিয়া রেহনুমা হৃদি।

ছাত্র সংগঠন ঘোষণার কথা ছিল গত ২২ ফেব্রুয়ারি। পদ নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় তা চার দিন পেছায়। তবে শেষ সময়েও সমঝোতা হচ্ছিল না। গত মঙ্গলবার রাতে কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ চার পদ ঠিক করা হয়। নারী নেতাদের আপত্তিতে রিফাত রশীদকে রাখা হয়নি। 

সূত্র জানায়, এ নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত হয়। বিকেল ৩টায় মধুর ক্যান্টিনের সামনে ছাত্র সংগঠনের আত্মপ্রকাশের প্রস্তুতির সময় উত্তরা এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল শিক্ষার্থী ‘ঢাবির সিন্ডিকেট ভেঙে দাও, সিন্ডিকেটের কমিটি মানি না, মানবো না, ঢাবির কালো হাত ভেঙে দাও, বৈষম্য মানি না’ স্লোগানে মিছিল করেন।

মিছিলকারীদের একজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম আহ্বায়ক ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্রী শাহজাদী ফারহানা সমকালকে বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউকে রাখা হয়নি। আমরা অন্তত রিফাত রশীদকে চেয়েছিলাম। এ বৈষম্য মেনে নেব না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক পরিচয়ে নাহিদ হক নামে একজন বলেন, রিফাত রশীদকে মাইনাস করা হচ্ছে। এর প্রতিবাদ জানাই।

একই সময়ে ছাত্র সংগঠনের নতুন নেতাদের সমর্থকরা ‘শিক্ষা ঐক্য মুক্তি’ স্লোগান দিতে থাকেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে বাইরে সংবাদ সম্মেলন করতে না পেরে মধুর ক্যান্টিনের ভেতরে ছাত্র সংগঠনের আত্মপ্রকাশের অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। হট্টগোলের মধ্যে আবু বাকের মজুমদার কমিটি ঘোষণা করেন। এর পর তারা বের হয়ে মিছিল নিয়ে লেকচার থিয়েটার ভবন হয়ে সামনে গেলে মল চত্বরে দু’পক্ষে মারামারি শুরু হয়। এতে আহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র মিশু আলী ও আকিবুল হাসান হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক ছাত্রীর আহতের খবর পাওয়া গেছে।

মধুর ক্যান্টিনের সামনে ধাক্কাধাক্কির মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়েন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্রী নাফসিন মেহেনাজ আজরিন। পরে সন্ধ্যায় বারডেম হাসপাতালের সামনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, ঢাবির একজন কনুই দিয়ে বুকে আঘাত করলে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। আমরা এ সংগঠন মানি না।

এ সময় ফারাবী নামে একজন সমন্বয়ক পরিচয়ে বলেন, ঢাবির সিন্ডিকেটের এই কেন্দ্রীয় কমিটিকে আমরা অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা ভুল স্বীকার করে কমিটি পুনর্গঠন না করবে, ততক্ষণ তাদের সঙ্গে আমরা নেই। জাহিদ হাসান জেমস নামে আরেকজন বলেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীদারিত্বের জন্য এসেছি। কিন্তু আমাদের ওপর হামলা করে চারজনকে আহত করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সমন্বয়ক নাম না প্রকাশের শর্তে সমকালকে বলেন, রিফাত রশীদ উত্তরা এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উস্কে দিয়ে ঝামেলা করেছেন। এ বিষয়ে রিফাত রশীদের বক্তব্য জানতে পারেনি সমকাল। 

ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, বিক্ষোভকারীরা কমিটি ঘোষণা হওয়ার আগেই বৈষম্যের অভিযোগ তুলে স্লোগান দিচ্ছিল। এতে বোঝা যায়, তাদের অন্য উদ্দেশ্য আছে। যৌক্তিক দাবি থাকলে আলোচনা করে তা সমাধান করব।

এদিকে নতুন ছাত্র সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, মারামারির ঘটনায় তিনি দুঃখিত এবং লজ্জিত।

রাতে ছাত্রদলের নেতারা আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। অন্যদিকে রাতে রাজধানীর বাংলামটর রূপায়ণ টাওয়ারের সামনের সড়ক অবরোধ করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে কারওয়ান বাজার থেকে শাহবাগ অভিমুখী সড়কে ঘণ্টাখানেক যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক এম জে এইচ মঞ্জু সাংবাদিকদের জানান, হামলার বিচার দাবিতে বৃহস্পতিবার বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে। তাতেও সুরাহা না হলে ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘ঢাকা ব্লকেড’ করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিশ্বমিডিয়ায় গুরুত্ব পেয়েছে এনসিপির আত্মপ্রকাশের খবর
  • আ’লীগের জোটসঙ্গীরা অকূল পাথারে
  • ১,৪০১ জন ‘জুলাই যোদ্ধার’ তালিকার গেজেট প্রকাশ
  • নতুন দলের নাম ঘোষণা করবেন কে?
  • নতুন দলের আত্মপ্রকাশ নিয়ে যা বললেন আসিফ নজরুল
  • কবির গ্রামের বাড়ি সংরক্ষণ ও জাদুঘর করবে সরকার
  • শেষ দিনে ফিরে দেখা
  • জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণ
  • পদ বাড়িয়ে সমঝোতার চেষ্টা নতুন দলে