জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে যাতায়াতের জন্য পরিবহন রিকুইজিশন নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের চেতনার পরিপন্থী। সরকারের পাশাপাশি নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপিও এই দায় এড়াতে পারে না।

আজ শনিবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, এনসিপির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন‍্য ঢাকার বাইরে অন্তত একটি জেলা থেকে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম‍্যবিরোধী আন্দোলনের প্রতিনিধিদের জন‍্য কর্তৃত্ববাদের অনুকরণে সরকারিভাবে হুকুম-দখল করে যাত্রী পরিবহন বাস রিকুইজিশন ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে টিআইবি।

এনসিপির জন্মলগ্নেই ক্ষমতার এমন অপব্যবহার এবং অনৈতিকতার দায় অন্তর্বর্তী সরকার এড়াতে পারে না বলে উল্লেখ করে টিআইবি। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ ও ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’র ব‍্যানারে এ ধরনের কর্তৃত্ববাদী পুরোনো চর্চা পরিহার করার জন‍্য এনসিপি ও তার সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মী এবং সমর্থকদের অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া দরকার।

বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব আত্মত্যাগের বিনিময়ে সূচিত ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর অভীষ্ট অর্জনের আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানকারী শিক্ষার্থীদের হাত ধরে নতুন রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব কর্তৃত্ববাদ পতন-পরবর্তী বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী চেতনায় উদ্বুদ্ধ তরুণ নেতৃত্বের হাতে গঠিত নতুন রাজনীতির প্রতি মানুষের প্রত্যাশাও অপরিসীম। এই প্রত্যাশা পূরণের পূর্বশর্ত হিসেবে দলটিকে বাস রিকুইজিশনের এই নজির এবং এর নেতিবাচক প্রভাবকে ‘রেড অ্যালার্ট’ হিসেবে গ্রহণের আহ্বান জানাই। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ জাতীয় আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড ও আচরণ থেকে বিরত থাকারও আহ্বান জানাই।

ইফতেখারুজ্জামানের প্রত্যাশা, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, জনপ্রতিনিধিত্ব এবং সরকার পরিচালনায় একচ্ছত্র আধিপত্যের মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী আচরণের সংস্কৃতির পরিবর্তনে নতুন রাজনৈতিক দল অনুঘটকের ভূমিকা রাখবে। তবে সবকিছুই নির্ভর করবে নতুন দল দেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন লালিত ক্ষমতার অপব্যবহারের চর্চা থেকে কতটুকু দূরে থাকতে পারবে, তার ওপর।

সকল পর্যায়ে যেকোনো রাজনৈতিক মহলকে সব ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া থেকে বিরত থাকা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব বলে মনে করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ট আইব সরক র এনস প

এছাড়াও পড়ুন:

ভালো খাবার শেষে তিমিও গান গায়

ভালো খাবার পেলে মন কার না ভালো থাকে। ভোজনপর্ব শেষে গুনগুন করে অনেকে গানও গাইতে থাকেন। তবে যদি বলা হয়, খাওয়াদাওয়া ভালো হলে তিমিও গান গায়, আর সেই গান পিয়ানোর সুরের মতোই মধুর! অবাক হওয়ার কিছু নেই—এমন ঘটনা যে আদতেই ঘটে, তা দেখা গেছে নতুন এক গবেষণায়।

গবেষণাটি করেছে সংবাদমাধ্যম দ্য কনভারসেশন। ছয় বছর ধরে প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের উপকূলে এ গবেষণা চালানো হয়েছে। এ নিয়ে দিন কয়েক আগে পিএলওএস ওয়ান সাময়িকীতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, তিমিদের বাস্তুসংস্থানে পরিবর্তন হলে, তার আভাস পাওয়া যায় সেগুলোর গানে।

প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর-পূর্বাঞ্চল তিমির জন্য খাবারের দারুণ এক উৎস। বংশবিস্তারের জন্য সেখান থেকে প্রতিবছর বহু দূরে পাড়ি দেয় তিমিরা। পথে বলতে গেলে সেগুলো কিছুই খায় না। তাই যাত্রার আগে পেটপুরে খেয়ে নেয়। এই খাবার থেকে পাওয়া শক্তির সাহায্যেই তিমিরা বহু দূর গিয়ে সন্তান জন্ম দেয়, চলে লালন-পালন। পরে বসন্ত বা গ্রীষ্মের দিকে আবার নিজ ঠিকানায় ফিরে আসে।

গবেষণায় তিন ধরনের তিমির গানের তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো হলো নীল তিমি, হামব্যাক তিমি ও ফিন তিমি। এর মধ্যে নীল তিমি শুধু ‘ক্রিল’ নামে একধরনের চিংড়িজাতীয় মাছ খেয়ে থাকে। হামব্যাক তিমি ক্রিলের পাশাপাশি ‘অ্যাংকোভি’ নামের মাছের ঝাঁক থেকে খাবার সংগ্রহ করে। তবে এই খাবারের প্রতুলতা কিন্তু প্রতিবছর একই রকম থাকে না।

কনভারসেশনের গবেষণাটি শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালে। তখন সমুদ্রে দীর্ঘস্থায়ী তাপপ্রবাহ চলছিল। এতে উত্তর-পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে তিমিসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীর খাবারের সংকট দেখা দিয়েছিল। গবেষণায় দেখা যায়, ওই তাপপ্রবাহের সময় তিন প্রজাতির তিমি সবচেয়ে কম গান গেয়েছিল। আর পরের দুই বছর পরিস্থিতির উন্নতি হলে সেগুলোর গানের পরিমাণও বেড়ে যায়।

এ থেকেই প্রথম জানা যায়, খাবারের সঙ্গে তিমির গানের সম্পর্ক রয়েছে। এরপর বিগত ৫০ বছরে অ্যাংকোভি মাছ বৃদ্ধি পেয়েছে—এমন এলাকায় নজর রাখা হয়। দেখা যায়, সেসব এলাকায় হামব্যাক তিমির গান ব্যাপক হারে বেড়েছে। এই গানের সঙ্গে যে মাছের সম্পর্ক রয়েছে, তার প্রমাণ পাওয়া যায় তিমিগুলোর ত্বক পরীক্ষা করে। ওই মাছ খাওয়ার ফলে সেগুলোর ত্বকে পরিবর্তন এসেছিল। নীল তিমির ওপর একই ধরনের পরীক্ষা চালিয়েও সেগুলোর খাবারের সঙ্গে গানের সম্পর্ক পাওয়া গেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ