বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে আজ শনিবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে স্থলমাইন বিস্ফোরণে একজন আনসার ভিডিপি আহত হয়েছেন। তাঁর হাঁটুর নিচে বাঁ পা ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। তাঁকে স্থানীয় লোকজন ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা উদ্ধার করেছেন। চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে নাইক্ষ্যংছড়ি থানার পুলিশ জানিয়েছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে ২৪ জানুয়ারি থেকে এই পর্যন্ত মাইন বিস্ফোরণে চারজন আহত হয়েছেন। তবে আহতের ঘটনাগুলো সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে ১৫০ থেকে ৩০০ মিটার মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ঘটছে বলে পুলিশের তথ্যে জানা যায়।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের হামিদাপাড়া এলাকায় শূন্যরেখার ওপারে অ্যান্টিপারসোনাল মাইনের বিস্ফোরণ ঘটে। সীমান্তের ৪২ ও ৪৩ নম্বর পিলারের মাঝামাঝি মিয়ানমারের ভূখণ্ডের প্রায় ৩০০ মিটার ভেতরে বিস্ফোরণটি হয়েছে। বিস্ফোরণে হামিদাপাড়ার আনসার ভিডিপির সদস্য মোহাম্মদ নবী হোসেন (৪৮) আহত হয়েছেন। তাঁর বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচের অংশে বারুদের আগুনে ও স্প্লিন্টারের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে।

চাকধালা হামিদাপাড়া এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য শামসুল আলম জানিয়েছেন, পাড়াবাসী লোকজন বিস্ফোরণের শব্দ শোনে খোঁজখবর নিয়ে তাঁকে দ্রুত উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদরের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

মাসরুরুল হক জানিয়েছেন, স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে আনসার ভিডিপি সদস্য মোহাম্মদ নবী হোসেন শিকারের জন্য মিয়ানমারের ভেতরে গিয়েছিলেন। সেখানে সম্ভবত মিয়ানমারের ওপারে সীমান্ত দখলে নেওয়া বিদ্রোহী গোষ্ঠী অ্যান্টি–পারসোনাল মাইন স্থাপন করে। ওই মাইনের বিস্ফোরণে লোকজন আহত হচ্ছেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল কজন সদস য আনস র

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্প-জেলেনস্কি বাগ্‌বিতণ্ডা ও ইউক্রেনের ভাগ্য

কিয়েভের পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। শহর ও দেশজুড়ে এক ধরনের ভয় মিশ্রিত প্রত্যাশা ছিল। সামরিক পদক্ষেপের অবসান কিংবা রাশিয়ার সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর হবে– প্রত্যাশাটি এমন ছিল না। প্রকৃতপক্ষে, আমরা কীসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম তা মোটেও পরিষ্কার ছিল না, তবে এর সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের ব্যাপারে মার্কিননীতি পরিবর্তনের সম্পর্ক ছিল।
গতকাল হোয়াইট হাউসের মঞ্চে উৎকণ্ঠা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। ট্রাম্প ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে খনিজ পদার্থ বিষয়ক চুক্তি নিয়ে আলোচনা করা এবং তাঁকে অপমান করার আগে করমর্দন, সম্মতিজ্ঞাপন বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন ও মার্কিন প্রেসিডেন্টের মুষ্টিবদ্ধ হাতে হাত লাগানো সবই করেছেন। একই সময়ে উত্তর ও পূর্ব ইউক্রেনে বিমান হামলার সাইরেন বাজছিল। ফলাফল, আলোচনা বন্ধ হয়ে গেল এবং জেলেনস্কি বিদায় নিলেন।

টিভি ক্যামেরার সামনে যা দেখা গেল, তা ছিল দারুণ ও অসাধারণ। জেলেনস্কিকে দেখাচ্ছিল গম্ভীর, রাগান্বিত ও বেপরোয়া। কেননা, একজন উপযুক্ত নেতাকে তাঁর জাতির জন্মগত অধিকার নিয়ে দরকষাকষি করতে বাধ্য করা হচ্ছিল। ট্রাম্প নিজেকে একজন সৎ মধ্যস্থতাকারী দাবি করে বলেন, ‘আমি কারও সঙ্গে জোটবদ্ধ নই। আমি বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত।’ তিনি এ সময় জেলেনস্কিকে বলেন, কৃতজ্ঞ হোন। ট্রাম্প এমন এক ব্যক্তিকে বলছেন, যিনি তাঁর লোকদের খুন হতে দেখেছেন, তাঁর এলাকা দখল ও অবরোধ করতে দেখেছেন। ‘চুক্তি করুন, নইলে আমরা বেরিয়ে যাচ্ছি।’
পরিস্থিতি আরও খারাপ হলো। জেলেনস্কি তাঁকে যুদ্ধের নৃশংসতার ছবি দেখান। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমাদের পাশে আছেন।’ কিন্তু বাস্তবে এখন কোনো আশা বা প্রত্যাশার সত্যতা দেখছি না। ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স অসম্মানিত হওয়ায় জেলেনস্কিকে আক্রমণ করেছেন। ট্রাম্প ও ভ্যান্স উভয়েই ক্যামেরার সামনে তাঁকে মৌখিকভাবে তীব্র সমালোচনা করেন। কারণ এটি এখন দরকষাকষির শিল্পের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা এখন পক্ষপাত, ভয় প্রদর্শন, রক্তপাতহীন হলেও নির্মম। 

কিন্তু ইউক্রেনবাসী এখন বিশ্বাস করে, শান্তিচুক্তি নিয়ে প্রেসিডেন্টের এমন কোনো পরিকল্পনা ছিল না; বরং এই অঞ্চলে মার্কিন জড়িত থাকার বিষয়ে অনেকগুলো ভিন্ন ধারণা বিরাজ করছে। এসব ধারণার মধ্যে পারস্পরিক সংঘাত রয়েছে, তবে তা কখনও রাশিয়ান আগ্রাসনের শিকার এমন একটি দেশকে সমর্থন করার দিকে মনোনিবেশ করে না।
গত দুই সপ্তাহে আমরা দেখেছি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তির বিষয়টি এখন বিরল মাটির ধাতু খনির ইস্যুতে রূপান্তরিত হয়েছে। সৌদি আরবে রাশিয়ান-মার্কিন দরকষাকষিতে অংশগ্রহণকারীরাও পৃথিবীর বিরল ধাতু নিষ্কাশন নিয়ে আলোচনা করেছিল। এ সময় তারা কেবল রাশিয়া অঞ্চল ও দখলকৃত ইউক্রেনের অঞ্চলগুলোর সম্পদের ওপর মনোনিবেশ করেছিল। এই পৃথিবীর এ বিরল ধাতুগুলো ইউক্রেন যুদ্ধ ও সামরিক সহায়তার বিষয়টি মিডিয়া মনোযোগের বাইরে ঠেলে দিয়েছে। সেই জায়গা এখন ডলারে পরিপূর্ণ। 

সোভিয়েত ইউনিয়নে বেড়ে ওঠা বয়স্ক ইউক্রেনীয়রা এই পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ঠিকঠাকভাবে চিনতে পেরেছে। সোভিয়েত প্রোপাগান্ডা কার্টুনে তাদের লোভী, দায়িত্বজ্ঞানহীন, দখলদার পুঁজিতান্ত্রিক জাতি হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছিল, যারা জটিল সমস্যা এড়িয়ে গিয়ে শুধু ডলারের অতিলাভের ওপর দৃষ্টিনিবন্ধ করে। 
এটি একটি অস্তিত্বের যুদ্ধ এবং নতুন বাস্তবতা। ট্রাম্প বলেছেন, জেলেনস্কি ‘শান্তির জন্য প্রস্তুত নন’, তবে যে কোনো মূল্যে ইউক্রেনের কাছে যুদ্ধ ছাড়া বিকল্প নেই। যে সহায়তা আগে বিনা মূল্যে দেওয়া হয়েছিল, তা এখন কিনতে হবে। টাকা না থাকলে সম্পদ দিয়ে দিতে হয়। রাশিয়ান আগ্রাসনের তিন বছর পর ইউক্রেনে মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ আর্থিক স্বার্থ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। রাজনীতিবিদ প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পরিবর্তে মাঠে নেমেছেন ব্যবসায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

জেলেনস্কি সাহসী ছিলেন, কিন্তু আমরা এখন সাহায্যপ্রার্থী। ট্রাম্প ও ক্রেমলিন বারবার স্পষ্ট করেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যকার আলোচনায় ইউক্রেনের অংশগ্রহণ প্রয়োজনীয় বা কাম্য নয়। অন্য অনেক কিছুর মতো, বাইডেনের ঘোষিত নীতি বলে, ‘কোনো কারণ ছাড়াই ইউক্রেন নিয়ে আলাপ হচ্ছে না’, এখন যার পায়ের নিচের মাটি সরে যেতে শুরু করেছে। জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউসে সম্পদ হস্তান্তর-সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য ডাকা হয়েছিল, কথা বলার জন্য নয়। 
ট্রাম্প তাঁর পথ পেয়েছেন। তিনি ইউক্রেনকে একটি কর্তা থেকে একটি কর্মে রূপান্তরিত করেছেন। আর এই হোয়াইট হাউসের অবমাননার পরে ইউক্রেনীয় কিছু লোক নিশ্চিত, ট্রাম্পের শর্তে বিরল মাটির ধাতু নিষ্কাশন হলে তাদের দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের একটি ‘উপনিবেশ’-এ পরিণত হবে। তবুও, অনেক ইউক্রেনীয় রাশিয়ান উপনিবেশের চেয়ে মার্কিন উপনিবেশে থাকতে পছন্দ করবে, যদি সেই পরিস্থিতি দেখা দেয়। 

আন্দ্রে কুরকভ: ইউক্রেনীয় ঔপন্যাসিক এবং ডেথ অ্যান্ড দ্য পেঙ্গুইন উপন্যাসের লেখক; দ্য গার্ডিয়ান থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ