আাগামীকাল পহেলা রমজান থেকে বৈশাখী টিভিতে শুরু হচ্ছে স্থপতি, লেখক, নির্মাতা ও পর্যটক শাকুর মজিদের ৩০ পর্বের প্রামাণ্যচিত্র ইসলামের স্থাপত্যধারা। এটি প্রচার হবে প্রতিদিন ইফতারের পর ।

বিগত ১৪০০ বছর ধরে ইসলামের বিকাশের সাথে সাথে বিশ্বব্যাপী ইসলামী স্থাপত্যধারার যে বিকাশ ও বিবর্তন ঘটেছিল- উমাইদ, আব্বাসী, ফাতেমীয়, মামলুক, আইয়ুবীয়, সুলতানী, তুঘলকী, মুঘল  আমল থেকে শুরু করে বর্তমান আমলের নির্বাচিত স্থাপনাগুলোই স্থান পেয়েছে এ ধারাবাহিক প্রামাণ্যচিত্রে।  

এ প্রামাণ্যচিত্রের পর্বগুলো সাজানো হয়েছে যেভাবে তাহলো- ইসলামি স্থাপত্যের সূচনাকাল-উমাইয়া আমল, ওমর ইবনে আল-আস মসজিদ দিয়ে মিশরে ইসলামি স্থাপত্যের সূচনা, কুব্বাত আস সাখরা: প্রথম গম্বুজের ব্যবহার, উকবা মসজিদ: তিউনিশিয়ায় ইসলামি স্থাপনার সূত্রপাত, করদোবায় মুরিশ স্থাপত্যকৌশলের সূচনা, ৮ম শতাব্দীতে শুরু হয় আব্বাসী রীতির বিশালাকার স্থাপত্য, আব্বাসী রীতির ইবনে তুলন মসজিদ, বাগদাদকেন্দ্রিক আব্বাসী আমলের স্থাপত্য, ১০ম শতাব্দীতে মিশরে শুরু হয় ফাতিমী ধারার স্থাপত্যকৌশল, ১২শ শতাব্দীতে মিশরে শুরু হওয়া আইয়ূবী ধারার দুর্গকেন্দ্রিক স্থাপত্য, ১৪শ শতাব্দীতে স্পেনে গড়ে ওঠে মুরিশধারার প্রাসাদ, ১৪শ শতাব্দী থেকে তুর্কিতে বিকাশ লাভ করে ওসমানী রীতির স্থাপত্য, হাজিয়া সোফিয়ার রূপান্তরের মাধ্যমে সৃষ্টি হলো মসজিদের নতুন ধারা, মামলুক আমল: ইসলামী স্থাপত্যকলার বসন্তকাল, মিশরে যেভাবে ওসমানী রীতির স্থাপত্যকৌশল বিকশিত হল, নিও-বারোক রীতির ওরতাগো মসজিদ, চীনের সিনো-ইসলামিক ধারার স্থাপত্য, মালয়েশিয়ার ইন্দো-মালে রীতির স্থাপত্য, মালয়েশিয়ার আধুনিক মসজিদ, বাংলার মসজিদ স্থাপত্যের সূচনাকাল, মধ্যযুগের প্রাক-সুলতানী আমলের বাংলার স্থাপত্য, সুলতানী আমলে বাংলার মসজিদ, বাংলার প্রাক-মুঘল স্থাপত্য, মুঘল আমলের মসজিদের বিস্তার, বাংলায় মুঘলরীতির স্থাপত্য, বাংলায় মিশ্ররীতির চিনি টিকরির মসজিদ, বাংলায় বৃটিশরীতির মসজিদ স্থাপত্য, বায়তুল মোকাররম, কাবাঘরের স্থাপত্যরীতির প্রতিরূপ, মুরিশরীতির আধুনিক মসজিদ, সর্বশেষ পুত্রা মসজিদ। যেখানে সকল রীতির স্থাপত্যরূপের মিশ্রণ রয়েছে- সেসবই উঠে এসেছে এ প্রামাণ্যচিত্রে। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: রমজ ন শত ব দ ত র মসজ দ আমল র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পের সঙ্গে ঝড় তুলে লন্ডনে জেলেনস্কি, যুদ্ধের পরিণতি কী

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউজের বৈঠকে কথায় কথায় খোটা ও ধমক খাওয়ার মধ্যে নিজের অবস্থানে অটল থেকে বাহাস চালিয়ে বিশ্বজুড়ে ঝড় তোলার পর যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে পৌঁছেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। 

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি করতে ট্রাম্পের সর্বাত্মক চাপের মধ্যে ইউরোপের নেতারা জেলেনস্কির পক্ষে সোচ্চার হয়েছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেকে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী- সবাই জেলেনস্কির পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। জেলেনস্কিও তাদের ধন্যবাদ দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। 

এখন ট্রিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন, ইউরোপ কেন জেলেনস্কিকে সমর্থন করছেন আর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের পরিণতিইবা কী হতে যাচ্ছে। কারণ, জেলেনস্কির সফর সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করে রাশিয়ায় উল্লাস দেখা চলছে। মস্কো বলছে, বিনা যুদ্ধবিরতিতে জিতে গেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

আরো পড়ুন:

ট্রাম্পের সঙ্গে ‘সিংহের মতো লড়েছেন’ জেলেনস্কি

ট্রাম্প-জেলোনস্কি বৈঠকের অপেক্ষা, পর্যবেক্ষণে রাশিয়া

যুক্তরাষ্ট্রের সার্বিক সহায়তা নিয়ে তিন বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়ে আসায় ওভাল অফিসের বৈঠকে বারবার ট্রাম্পের কাছে খোটা শুনতে হয় জেলেনস্কিকে। ট্রাম্পের সঙ্গে যোগ দিয়ে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও জেলেনস্কিকে ধমকাতে থাকেন। ট্রাম্প-ভ্যান্সের যুদ্ধবিরতির চাপের মুখে নিজের জায়গায় অটল ছিলেন জেলেনস্কি। অবশেষে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয় ট্রাম্প-জেলেনস্কির বৈঠক। হয়নি যৌথ সংবাদ সম্মেলনও।

একপর্যায়ে হোয়াইট হাউস থেকে বের করে দেওয়া হয় জেলেনস্কিকে। সেখান থেকে বেরিয়ে সফরসঙ্গীদের নিয়ে রওনা হন যুক্তরাজ্যে। স্থানীয় সময় শনিবার লন্ডনে পৌঁছান তিনি ও তার সফরসঙ্গীরা। 

রবিবার (২ মার্চ) ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে এক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা জেলেনস্কির। সেখানেই ইউরোপের নেতারা তাদের অবস্থান পরিষ্কার করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ট্রাম্পের ‘খোটা’ ও ‘খোঁচা’য় বিদ্ধ জেলেনস্কি ও তার দেশকে রক্ষার জন্য ইউরোপীয় নেতারা কী ধরনের পদক্ষেপ নেবেন, এখন তার ওপর নজর গোটা বিশ্বের।

জেলেনস্কির সমর্থনে ইউরোপের নেতারা কে কী বলছেন
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, “একটি আগ্রাসী শক্তি: রাশিয়া। শিকারে পরিণত একটি দেশ: ইউক্রেন। আমরা তিন বছর আগে ইউক্রেনকে সাহায্য করার এবং রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সঠিক কাজ করেছিলেন এবং তা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ডাচ প্রধানমন্ত্রী ডিক শুফ বলেছেন, “নেদারল্যান্ডস ইউক্রেনকে সমর্থন করে এবং এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি করবে। আমরা একটি স্থায়ী শান্তি চাই এবং রাশিয়ার শুরু করা আগ্রাসনের অবসান চাই। ইউক্রেন ও তার জনগণ এবং ইউরোপের জন্য আমরা তা চাই।”

জার্মানির বিদায়ী চ্যান্সেলর ওলাফ সলৎজ লিখেছেন, “ইউক্রেনের নাগরিকদের চেয়ে কেউ বেশি শান্তি চায় না।” দেশটির নবনির্বাচিত চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ বলেছেন, “আমরা ইউক্রেনের সঙ্গে দাঁড়িয়েছি এবং “আমাদের কখনই এই ভয়ানক যুদ্ধে আক্রমণকারী এবং ভুক্তভোগীর মধ্যে বিভ্রান্ত তৈরি করা উচিত নয়।”

স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেছেন, “জেনে নাও ইউক্রেন, স্পেন তোমাদের সঙ্গে দাঁড়িয়েছে।”

পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক লিখেছেন, “প্রিয় [জেলেনস্কি], প্রিয় ইউক্রেনীয় বন্ধুরা, আপনারা নিঃসঙ্গ নন।”

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন দেয়ার লায়েন এক বার্তা জেলেনস্কিকে বলেছেন, “আপনার মর্যাদা ইউক্রেনের জনগণের সাহসিকতাকে সম্মান করে।”

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, “কানাডা ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তি অর্জনে ইউক্রেন ও ইউক্রেনীয়দের পাশে দাঁড়াবে।”

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ এক পোস্টে লিখেছেন, “আমাদের দেশ ইউক্রেনের সাহসী জনগণকে রাশিয়ার আগ্রাসনের বর্বরতার বিরুদ্ধে এবং আন্তর্জাতিক আইনের সমর্থনে তাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার সংগ্রামে গর্বের সঙ্গে সমর্থন করেছে।”

আরো যেসব দেশ ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছে,তাদের মধ্যে অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ক্রোয়েশিয়া, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, মোল্দোভা, রোমানিয়া, সুইডেন ও স্লোভেনিয়া অন্যতম।

অবশ্য হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়ে লিখেছেন, “শক্তিশালীরা শান্তি স্থাপন করে, দুর্বলরা যুদ্ধ করে। আজ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শান্তির জন্য সাহসী হয়ে দাঁড়িয়েছেন। যদিও এটা অনেকের পক্ষে হজম করা কঠিন ছিল। ধন্যবাদ, মিস্টার প্রেসিডেন্ট!”

ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠকের পূর্বাপর
স্থানীয় সময় শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে জেলেনস্কির বৈঠক বিশ্বগণমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার হয়। আলাপের মধ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কোনো ধরনের অপসের সুযোগ নেই বলে নিজের বক্তব্যে অনড় থাকেন জেলেনস্কি। ট্রাম্প তাকে বোঝাতে ব্যর্থ হলে একপর্যায়ে জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউস ত্যাগ করতে বলা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সার্বিক সহায়তা নিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে কথায় কথায় খোটা দিতে থাকেন ট্রাম্প ও ভ্যান্স। ট্রাম্পের সোজা কথা: যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে তিন দিনও টিকতে পারত না ইউক্রেনের। এ জন্য তার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। একইসঙ্গে ইউক্রেনের জনগণকে রক্ষার জন্য এই যুদ্ধ বন্ধ করতে তার রাজি হওয়া উচিত।

তবে জেলেনস্কি ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার গ্যারান্টি ছাড়া কোনো যুদ্ধবিরতি করবেন বলে তার বক্তব্যে স্থির থাকেন। এ জন্য ট্রাম্প তাকে স্টুপিড বলতেও ছাড়েনি। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুদ্ধে সহায়তা করার জন্য তাকেও তুলাধুনা করেন ট্রাম্প। 

এই বৈঠকের আগে ইউক্রেনের মূল্যবান খনিজ সম্পদ আহোরণে চুক্তির করার প্রস্তাব করেন ট্রাম্প। যুদ্ধে যে বিপুল পরিমাণ সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, তার মূল্য উসুল করতে চাইছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এ নিয়ে একটি সমঝোতার বার্তা পাওয়া গিয়েছিল দুই পক্ষ থেকেই। শুক্রবার হোয়াইট হাউসে খনিজ চুক্তিটি হওয়ার কথা ছিল। তবে তার আগেই যুদ্ধবিরতি নিয়ে বাহাস শুরু হওয়ায় শেষপর্যন্ত সেই চুক্তির বিষয়ে কোনো আলাপই হয়নি।

জেলেনস্কির বিরুদ্ধে অকৃতজ্ঞতার অভিযোগ তুলেছেন ট্রাম্প ও ভ্যান্স। যুক্তরাষ্ট্রে বসেই ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে বাহাসে নিজের অবস্থানকে সমর্থন করে কথা বলেন  জেলেনস্কি। তবে লন্ডনে পৌঁছানোর পর সুর নরম করেছেন তিনি, বলেছেন, সব কিছুর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চান। 

ট্রাম্প-জেলনস্কির বাহাস দুঃখজনক: ন্যাটো মহাসচিব
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুট ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির বাহাসকে ‘দুঃখজনক’ বলে বর্ণনা করেন। ঘটনার পর জেলেনস্কির সঙ্গে দুইবার কথা হয়েছে বলে জানিয়ে রুট বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করে নিতে নিতে আমি তাকে পরামর্শ দিয়েছি।”

“আমি তাকে বলেছি, ইউক্রেনের জন্য টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের একত্রে থাকতে হবে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও ইউরোপকে একসঙ্গে থাকতে হবে।”

এদিকে যুদ্ধক্ষেত্রে তাণ্ডব চলছে। রাশিয়া হামলার তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে। মস্কো দাবি করেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইউক্রেনের আড়াই শতাধিক সেনা নিহত হয়েছেন।

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ