বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা শাখার সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান আলীর বিরুদ্ধে চাঁদা না দেওয়ায় এক তরুণকে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানোর অভিযোগ উঠেছে। পরে ওই তরুণকে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের এম এ রাজ্জাক মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে ভুক্তভোগী তরুণের মা ফরিদা ইয়াসমিন এ অভিযোগ করেন। তবে অভিযুক্ত আসাদুজ্জামান আলী চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পুলিশও প্রভাবিত হয়ে গ্রেপ্তার করার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, তাঁর ছেলের নাম মেজবাউর হক (হৃদয়)। ছেলে যখন খুব ছোট তখন তিনি তাঁর বাবার বাসায় চলে আসেন। ছেলেকে মানুষ করাতে ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখা করান। বর্তমানে তাঁর ছেলে কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ষষ্ঠ সেমিস্টারে লেখাপড়া করছেন। তাঁর স্বল্প আয়ে ছেলের খরচ চালাতে না পেরে কুমারখালী শহরে একটি ক্যাফেতে তাঁর চাকরির ব্যবস্থা করান। বিশ্বস্ততার কারণে ক্যাফের মালিক টাকাপয়সা তাঁর ছেলের কাছে রাখতেন। তাঁর ছেলের সঙ্গে সমন্বয়ক আসাদুজ্জামান আলীর ছোটবেলা থেকেই বন্ধুত্ব। টাকা রাখার বিষয়টি জানতে পেরে আসাদুজ্জামান এক মাস আগে তাঁর ছেলের কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। দিতে অস্বীকার করলে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেওয়াসহ নানা হুমকি–ধমকি দেওয়া হয়।

ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, গত ৯ ফেব্রুয়ারি কয়েকজন পুলিশসহ তাঁর ছেলেকে বাসা থেকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে জানতে পারেন, তাঁর বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা দেওয়া হয়েছে। এর পর থেকে ছেলে কারাগারে আছেন। এরপরই কান্নায় ভেঙে পড়েন ফরিদা।

মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহার সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পদ্মপুকুর ঘাট এলাকায় নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সংবাদের ভিত্তিতে মেজবাউরকে আটক করা হয়। তিনি কুমারখালী পৌর ছাত্রলীগের উপদপ্তর সম্পাদক। পরবর্তী সময়ে তাঁকে নাশকতা ও বিস্ফোরক মামলায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

ফরিদা ইয়াসমিন আরও বলেন, তাঁর ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। আগে কোনো মামলাও ছিল না। টাকা না পেয়ে আসাদুজ্জামান পুলিশকে ব্যবহার করে জেলে পাঠিয়েছে। এর বিচার চান তিনি। তাঁর ছেলেকে ফিরে পেতে চান। চাঁদা দাবির বিষয়টি প্রথমে মজা মনে করে পুলিশকে জানাননি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আলী এত বড় ঘটনা ঘটাবে, তা বুঝতে পারিনি।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমারখালী শাখার সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান আলী বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের লোকজন বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করছে। আমার বিরুদ্ধে তাঁরা যেসব অভিযোগ তুলেছেন, সব মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক। আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করতে ও ফাঁসাতে এসব করা হচ্ছে। চাঁদাবাজির কোনো অভিযোগ যদি প্রমাণ করতে পারে, তবে গলায় জুতার মালা পরে ঘুরব। কুষ্টিয়া তথা বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাব।’

জানতে চাইলে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলায়মান শেখ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিজে অভিযান চালিয়ে মেজবাউরকে গ্রেপ্তার করেছেন। তিনি নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের পদধারী নেতা। কারও দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ন শকত

এছাড়াও পড়ুন:

‘নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে’

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম নগর শাখার আমির শাহজাহান চৌধুরী। আজ রোববার বেলা ১১টায় চট্টগ্রামে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির কাছে ছেড়ে দেওয়ার প্রতিবাদে এবং বন্দরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার দাবিতে নগর জামায়াতে ইসলামী এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

এতে লিখিত বক্তব্যে চট্টগ্রাম নগর আমির শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বিদেশি বিনিয়োগ চাই। দেশের উন্নয়নের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ অপরিহার্য। কিন্তু সেই বিনিয়োগ হোক গ্রিন ফিল্ডে। যেমন দেশের বিভিন্ন স্থানে ইকোনমিক জোনগুলোতে বিদেশিরা এসে বিনিয়োগ করছে। কিন্তু আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে তৈরিকৃত টার্মিনাল, যেখানে কোনো বিনিয়োগের দরকার নেই; কেন বিদেশিদের দেওয়া হবে তা বোধগম্য নয়।’

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই টার্মিনালের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর বিশাল রাজস্ব আয় করছে। চট্টগ্রাম বন্দরের মোট হ্যান্ডলিংয়ের ৫৫ শতাংশ এনসিটি টার্মিনালে হয়। চট্টগ্রাম বন্দর নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক ও উন্নতমানের নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয় করে। যার বর্তমান বাজারমূল্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে এই টার্মিনালে কোনো ধরনের বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নগরের নায়েবে আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, সেক্রেটারি মুহাম্মদ নুরুল আমিন, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি খাইরুল বাশার, মোহাম্মদ উল্লাহ, ফয়সাল মুহাম্মদ, মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান হেলালী, এ কে এম ফজলুল হক প্রমুখ।

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে পাঁচ জেটির এই টার্মিনাল নির্মাণে বন্দরের ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৪৬৯ কোটি টাকা। তবে বারবার আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ও নেতাদের হস্তক্ষেপে টার্মিনালটি আট বছরেও পুরোপুরি চালু করা যায়নি। সব মিলিয়ে এই টার্মিনালে জেটি ও যন্ত্রপাতি খাতে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেরা সব বিনিয়োগের পর এখন দেশি অপারেটর দিয়ে নিউমুরিং টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনা করছে। তবে টার্মিনালে দেশি বিনিয়োগের পর নতুন করে বিদেশি অপারেটরের হাতে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। চট্টগ্রাম বন্দরের চারটি টার্মিনালের মধ্যে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) সবচেয়ে বড়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচন হলে বিএনপি সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পাবে, তাই ষড়যন্ত্র চলছে: সালাউদ্দিন
  • ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতেই সংস্কার চালাচ্ছে সরকার: জি এম কাদের
  • ‘নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে’