ইসরায়েলকে ৩০০ কোটি ডলারের গোলা-বুলডোজার দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
Published: 1st, March 2025 GMT
ইসরায়েলের কাছে ৩০০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। গতকাল শুক্রবার এ অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধাস্ত্র, বুলডোজার ও প্রয়োজনীয় সামরিক সরঞ্জাম। এসব অস্ত্র ব্যবহার করে গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ধ্বংসাত্মক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্স সিকিউরিটি কো-অপারেশন এজেন্সি (ডিএসসিএ) জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ২০৪ কোটি ডলারের বোমা, ৬৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার মূল্যের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্রের যন্ত্রাংশ এবং ২৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার মূল্যের বুলডোজার ও সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম বিক্রির অনুমোদন দিয়েছেন।
ডিএসসিএ আরও বলেছে, ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একটি শক্তিশালী ও আত্মরক্ষার সক্ষমতা বজায় রাখতে ইসরায়েলকে সহায়তা করা মার্কিন জাতীয় স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এর আগে গত মাসের শুরুর দিকে ইসরায়েলের কাছে ৭৪০ কোটি ডলার মূল্যের বোমা, ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম বিক্রির অনুমোদন দিয়েছিল ওয়াশিংটন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। ইসরায়েলের দাবি, হামলায় সে দেশে ১ হাজার ১০০ জনের বেশি নিহত হন। প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁদের অনেকে এরই মধ্যে মুক্তি পেয়েছেন। কেউ কেউ হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন।
অন্যদিকে এর জেরে ইসরায়েল গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে ৬১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। হামলায় ১ লাখ ১১ হাজার ৫৮৮ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত সরকার।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শরীরে ছ্যাঁকা দিয়ে হাতের নখ উপড়ে প্রতিবন্ধী বানিয়ে করানো হতো ভিক্ষা
ছয় মাস আগে অপহৃত হয় ৬ বছরের শিশু সোয়াইব হোসেন। এরপর তার উপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। সারা শরীরে সিগারেট আর কয়েলের ছ্যাঁকা দিয়ে, হাতের নখ উপড়িয়ে, না খাইয়ে রেখে বানানো হয় প্রায় প্রতিবন্ধী। রাতে চলতো নির্যাতন আর দিনের বেলায় তাকে দিয়ে করানো হতো ভিক্ষা।
অপহরণের পর তথ্য প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অবশেষে মৃতপ্রায় শিশুটিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে রফিকুল ইসলাম বিপ্লব (৩০) নামে একজনকে।
উদ্ধারের পর প্রথম দেখায় মা সোহানা জাহান চিনতে পারেননি তার আদরের সন্তানকে। যে ছেলে ছিল স্বাস্থ্যবান আর মাথা ভর্তি চুল। মাত্র ৬ মাসে সেই সন্তান এখন কঙ্কালসার। এখন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে ৬ বছরের সোয়াইব।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগে চিকিৎসাধীন সোয়াইব
সোয়াইব পাবনা সদর উপজেলার চক ছাতিয়ানী এলাকার আমিনুল ইসলাম ও সোহানা জাহানের সন্তান। বাবা অন্যত্র বিয়ে করায় মায়ের কাছেই রয়েছে সে। গত বছরের ২ অক্টোবর একই উপজেলার শানির দিয়ার এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে রফিকুল ইসলাম বিপ্লব শিশুটিকে বিস্কুট কিনে দেওয়ার কথা বলে অপহরণ করে।
সন্তানের খোঁজ না পেয়ে ওই বছরের ৭ অক্টোবর পাবনা সদর থানায় একটি জিডি করেন তার মা সোহানা জাহান। আত্মগোপনে থাকা অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম বিপ্লব শিশু সোয়াইবের মাকে ফোন করে অপহরণ করেছে বলে জানিয়েছিল। বেশিরভাগ সময় তার ফোন বন্ধ থাকতো। জিডির পর ফোন নম্বর ট্র্যাক করে তার লোকেশন শনাক্তের চেষ্টা করে পুলিশ। ঘটনার ৬ মাস পর গত ১৮ এপ্রিল খুলনার রুপসা ফেরিঘাট এলাকা থেকে ভিক্ষা করানো অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম বিপ্লবকেও আটক করা হয়।
এরপরই বেরিয়ে আসে শিশুটির উপর বর্বর নির্যাতনের চাঞ্চল্যকর তথ্য। সোয়াইব জানায়, রাতে তাকে একটি কক্ষে বন্দি করে রাখতো রফিকুল। সহজে কিছু খেতে দিতো না। তার শরীরে দাঁতের কামড় বসিয়ে চামড়া তুলে ফেলতো। সারা শরীরে দেওয়া হতো সিগারেট ও কয়েলের আগুনের ছ্যাঁকা। বাম হাতের একটি আঙুলের নখ প্লাস দিয়ে উপড়ে ফেলা হয়েছে। দিনের বেলায় বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে তাকে দিয়ে ভিক্ষা করাতো বিপ্লব।
গ্রেপ্তারকৃত রফিকুল ইসলাম বিপ্লব
সোয়াইবের মা বলেন, “পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে সেদিন বিপ্লব আমার কাছ থেকে ছেলেটাকে নিয়ে যায় বিস্কুট কিনে দেবে বলে। তারপর থেকে ছেলেকে আর খুঁজে পাইনি। পরে সে ফোন করে জানিয়েছিল যে আমার ছেলেকে সে অপহরণ করেছে। তারপর থেকে তার ফোনও বন্ধ। এরপর সদর থানায় গিয়ে ঘটনা জানিয়ে জিডি করি।”
মা বলেন, “উদ্ধারের পর প্রথম দেখায় তো আমার ছেলেকে চিনতেই পারিনি। দিনের পর দিন কিভাবে আমার শিশু সন্তানকে নির্যাতন করেছে ভাবতেই বুকটা ফেটে যায়। প্রায় প্রতিবন্ধী বানিয়ে ফেলেছে আমার ছেলেকে। কঙ্কালসার শরীর নিয়ে ছেলেটা নড়াচড়াও করতে পারছে না। আমি বিপ্লবের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ফাঁসি চাই।”
এ বিষয়ে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের প্রধান ডা. মাসুদুর রহমান প্রিন্স বলেন, “দিনের পর দিন না খাইয়ে রাখায় ও অব্যাহত শারীরিক নির্যাতনের কারণে সোয়াইবের এই অবস্থা। তার শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভাল নয়। তার হাতের একটা আঙুল কেটে ফেলতে হবে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিচ্ছি। ঠিকমতো চিকিৎসা নিশ্চিত করা গেলে আশা করছি দুই মাসের মধ্যে শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠবে।”
পাবনা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এ এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, “মূলত অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে শিশুটিকে এক প্রকার প্রতিবন্ধী বানিয়ে তাকে ভিক্ষা করাতেন অভিযুক্ত বিপ্লব। অমানবিক একটি ঘটনা। আমরা তথ্য প্রযুক্তি ও খুলনার রুপসা ফেরিঘাট ফাঁড়ি পুলিশের সহায়তায় তাকে গ্রেপ্তার এবং শিশুটিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। ইতিমধ্যে এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করে অভিযুক্ত বিপ্লবকে ১৯ এপ্রিল আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর শিশু সোয়াইব হোসাইন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছে।”
ঢাকা/টিপু