ভুলে যাওয়া বা মনে রাখতে না পারার বিড়ম্বনায় হয়তো আপনিও পড়েছেন কখনো না কখনো। তা সে লেখাপড়া বা পেশাগত—যে ক্ষেত্রেই হোক, কিংবা হোক গল্প-উপন্যাসের কাহিনির বেলায়। নানাবিধ কারণে মস্তিষ্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় আজকাল অনেকের মধ্যেই ভুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। মনে রাখার সহজ উপায়ও তাই খোঁজেন অনেকে।

সহজে মনে রাখার উপায় কী? একটা বইয়ের কথা ধরা যাক। মনোযোগ দিয়ে বারবার পড়লে বইয়ের অধিকাংশ তথ্য ভালোভাবে মনে রাখতে পারবেন আপনি। বইয়ের একটি অংশ আগে পড়া হয়ে গিয়ে থাকলে পরবর্তী অংশ শুরু করার সময় আগের পড়াটুকু একবার নিজে নিজে ঝালিয়ে নিলে তা মনে রাখা সহজ হবে। আবার এমনটাও বলা হয়ে থাকে, একবার কিছু লিখে ফেলা দশবার পড়ার সমান। অর্থাৎ কোনো বিষয় লিখলে মনে রাখা সহজ হয়। কিন্তু এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ! ফলে বেশি সময় দিতে হবে না, এমন কোনো উপায়ের খোঁজ তাই করতেই পারেন।

আরও পড়ুনস্মৃতিশক্তি বাড়াবে যেসব অভ্যাস১৬ নভেম্বর ২০২৪

মনের রাখার অনেক রকম কৌশলের মধ্যে খুব সহজ এক কৌশল হিসেবে ২-৭-৩০ পদ্ধতির কথা হয়তো শুনেছেন হয়তো। কী সেই পদ্ধতি, এর বিস্তারিত জানেন কি? আর আদতেই কি এই পদ্ধতি কার্যকর? জানালেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী শারমিন হক

২-৭-৩০ পদ্ধতিটি যেমন

২-৭-৩০ হলো মনে রাখার এমন এক পদ্ধতি, যেখানে একটি বিষয় সম্পর্কে জানার পর নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে আপনাকে আবার সেই বিষয়টি নিজে নিজে ঝালিয়ে নিতে হবে। ধরুন, আপনি আজ একটা বই পড়লেন। মনে রাখার জন্য ২-৭-৩০ পদ্ধতি প্রয়োগ করতে চাইলে দুদিন পর আপনাকে বইটির মূল কথাগুলো মনে করার চেষ্টা করতে হবে। আজ থেকে এক সপ্তাহ পরও আপনি একইভাবে বইটির মূলভাব ঝালিয়ে নেবেন। আজ থেকে এক মাস পর আবারও বইটি নিজে নিজে ঝালিয়ে নেবেন। ২, ৭ এবং ৩০ দিন পর নিজের মনে একটি বিষয়কে ফিরিয়ে আনার এই পদ্ধতিতে আপনার মনে সেটির স্থায়িত্ব বাড়বে।

মনের রাখার অনেক রকম কৌশলের মধ্যে খুব সহজ এক কৌশল—২-৭-৩০.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ঘোড়াঘাটে মাজারে হামলা-অগ্নিসংযোগের পর ব্যাপক লুটপাট

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার আফসারাবাদ কলোনি এলাকার ‘রহিম শাহ বাবা ভান্ডারি মাজারে’ হামলা–অগ্নিসংযোগের পর ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার বেলা আড়াইটা পর্যন্ত মাজারের সীমানাপ্রাচীরের খুঁটি, কবরের ঢাকনা, দেয়াল এবং কুঠুরি ঘরের খুঁটি ভাঙচুর ও লুটপাট চলতে দেখা যায়।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে মাজারে ওরসের নামে গান-বাজনা, মাদক সেবনসহ অশ্লীল কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ তুলে হামলা করে অগ্নিসংযোগ করেন স্থানীয় ‘তৌহিদি জনতা’। সিরাতে মুস্তাকিম পরিষদ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে এলাকায় লাঠিমিছিল কর্মসূচির পর ওই হামলার ঘটনা ঘটে।

আজ সকাল থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত মাজারে থেকে দেখা যায়, ২৫–৩০ জন নারী-পুরুষ যে যাঁর মতো মাজার চত্বরে ওরসের জন্য তৈরি করা মঞ্চ, প্যান্ডেলের বাঁশ, কাপড় ও দড়ি খুলে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ মাজারের ভেতরে রহিম শাহ বাবা ভান্ডারির কবরের ঢাকনা (আরসিসি) ও দেয়াল, মাজারের দক্ষিণ, পশ্চিম ও পূর্ব পাশে থাকা কুঠুরির খুঁটিতে হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে রড বের করছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেল পাঁচটায় উপজেলার রানীগঞ্জ বাজারে সিরাতে মুস্তাকিম পরিষদের ব্যানারে মাজার বন্ধের দাবিতে লাঠিমিছিল করা হয়। পরে মিছিল থেকে উত্তেজিত স্থানীয় ‘তৌহিদি জনতা’ আফসারাবাদ কলোনিতে মাজারে হামলা করেন। পরে মাজারে ওরসের জন্য তৈরি করা মঞ্চ ও প্যান্ডেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পাশাপাশি মেহমানদের কুঠুরি ঘরের আসবাব, রান্নার হাঁড়িপাতিলসহ ওরসের জন্য কেনা ৮টি গরু, ১০টি ছাগল লুট করা হয়।

মাজারের ভান্ডারি জয়নাল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, হজরত গাউসুল আজম রহিম শাহ বাবার মৃত্যুর দিনকে স্মরণ করে প্রতিবছর বাংলা সনের ১৮ ফাল্গুন মাজারে ওরস হয়। ওরসে দেশ ও বিদেশ থেকে ১০–১৫ হাজার মেহমান আসেন। ২ থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত বার্ষিক ওরস আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল মাজার কর্তৃপক্ষ। এ জন্য জেলা প্রশাসন থেকে অনুমতিও নেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘গতকাল সকাল থেকে মাজারের ভক্ত নারী-পুরুষেরা মাজারের সাজসজ্জা ও খাবারের আয়োজন করছিলেন। বিকেলে তৌহিদি জনতা মাজারে হামলা করেন। তাঁরা মাজারে আগুন লাগিয়ে সব পুড়িয়ে দেন। মাজারের সব ভেঙে তছনছ করে দিয়েছেন। মাজারে থাকা ওরসের জন্য কেনা গরু-ছাগলসহ তাঁর বাড়ি থেকে দুটি ছাগল নিয়ে গেছেন। এখানকার যে অবস্থা, কার কাছে অভিযোগ দেব।’

সিরাতে মুস্তাকিম পরিষদের কেউই মাজারে হামলা ও আগুন দেওয়ার কথা স্বীকার করেননি। গতকাল বিকেলে সিরাতে মুস্তাকিম পরিষদের ব্যানারে লাঠিমিছিল চলাকালে উত্তেজিত তৌহিদি জনতা মিছিল থেকে বের হয়ে মাজারে হামলা ও আগুন দিয়েছেন বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।

সিরাতে মুস্তাকিম পরিষদের উপদেষ্টা মুফতি মনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রহিম শাহ বাবা মাজারের মুরিদরা ইসলামের মৌলিক কাঠামোগুলো নিয়ে কটূক্তি করেন। এ জন্য এলাকার মানুষ তাঁদের প্রতি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ছিলেন। তাঁরা তাঁদের ধর্ম পালন করলে কোনো বিষয়ই ছিল না। তাঁরা শিরক করুন, বেদাত করুন, কেয়ামতের দিন তাঁদের হিসাব তাঁরাই দেবেন। তিনি বলেন, গতকাল যেটা হয়েছে, সেটিতে স্থানীয় আলেম-ওলামাদের সমর্থন ছিল না। তাঁদের কোনো কর্মসূচিও ছিল না। কিন্তু রমজান মাস আসার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা সেখানে শামিয়ানা টানান। সেখানে সারা রাত মাইক বাজাবেন, নাচবেন, গাইবেন—বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মানুষ বিরক্ত। বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে মানুষ প্রতিবাদ করতে পারেননি, এখন মানুষ সেই জায়গা থেকে ছুটে যান। তবে সেটা করতে গিয়ে গতকাল স্থানীয় মানুষ অতিরিক্ত যেটি করে ফেলেছেন, সেটি নিন্দনীয়। এটিকে কখনো সমর্থন করা যায় না।

আরও পড়ুনঘোড়াঘাটে ওরস আয়োজনের প্রস্তুতির মধ্যে মাজারে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ২২ ঘণ্টা আগে

ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হক বলেন, গতকাল রহিম শাহ বাবা ভান্ডারির মাজারে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার প্রথমে একটি বিক্ষোভ মিছিল করার কথা ছিল। কিন্তু হুট করে তৌহিদি জনতা মাজারে গিয়ে হামলা করেন ও আগুন দেন। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও লোক এত বেশি ছিলেন, তাঁরা কিছুই করতে পারেননি। পরে সবার সঙ্গে আলোচনা করে পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনী, উপজেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিসসহ সবাই গিয়ে আগুন নেভান এবং এলাকা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন। মাজারে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় এখনো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ