ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের কমিটি গঠন করা হয়েছে। শুক্রবার অফিসার্স ক্লাব ঢাকায় এ সংক্রান্ত এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় সাবেক ছাত্রনেতা মেসবাহ উদ্দিন আলীকে আহ্বায়ক এবং বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য ও স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্মসচিব হাফিজুল্লাহ খান লিটনকে সদস্যসচিব করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এসময় নবনির্বাচিত আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব সকলকে সঙ্গে নিয়ে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে অর্জনে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। সেই সাথে স্বল্প সময়ের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে সভাকে অবহিত করেন।

সবশেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নৈশভোজের মধ্য দিয়ে সভার সমাপ্তি হয়।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

কায়রোতে আরব নেতারা কি সত্যিই গাজার পক্ষে থাকবেন

আরব নেতাদের যাচাইয়ের মুহূর্ত এখন আর মাত্র ১০ দিন দূরে। ৪ মার্চেই সেই গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন কায়রোয় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২১ ফেব্রুয়ারি রিয়াদে এক অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় ‘ফিলিস্তিন সংকট মোকাবিলায় যৌথ প্রচেষ্টা’ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

ওপরের সংবাদটি এসেছে রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে। সঙ্গে একটি গ্রুপ ছবিও ছিল। ছবিতে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের পাশে জর্ডান, মিসর, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), বাহরাইন ও কুয়েতের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানেরা উপস্থিত ছিলেন।

এই সাত দেশের মধ্যে মিসর ও জর্ডান বহু আগেই ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনও ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে আব্রাহাম চুক্তির আওতায় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে।

অন্যদিকে সৌদি আরব ও কাতারও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক বজায় রাখে। তাই এই নেতারা যখন ট্রাম্পের গাজায় জাতিগত নিধনের পরিকল্পনার বিরোধিতা করেন, তখন তাঁদের আন্তরিকতা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেন। অতীতে এ ধরনের অনেক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও কার্যকর পদক্ষেপের অভাব ছিল। এই সন্দেহ আজও রয়ে গেছে।

আগামী কায়রো সম্মেলনে স্পষ্ট হবে, আরব নেতারা কি সত্যিই গাজার পক্ষে কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন? নাকি আগের মতোই কেবল কথার ফুলঝুরি শোনাবেন।

সাম্প্রতিক দিনগুলোয় অনেক বিশ্লেষক আরব দেশগুলোর অবস্থান খতিয়ে দেখার চেষ্টা করেছেন। মিসর ও জর্ডানের ক্ষেত্রে মূল উদ্বেগ হলো গাজার ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বিতাড়ন। এ আশঙ্কা বাস্তব হলে তাদের নিজেদের নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়বে। ইতোমধ্যেই ফিলিস্তিনিরা এই সম্ভাবনাকে ‘নাকবা-২’ (দ্বিতীয় বিপর্যয়) বলে অভিহিত করছে। ঘোষণা দিয়েছে প্রতিরোধের।

কাতার দীর্ঘদিন ধরে গাজাকে বিশাল অঙ্কের অনুদান দিয়ে সহায়তা করে আসছে। অন্যদিকে সৌদি যুবরাজ নাকি বলেছেন, তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে প্রস্তুত। তবে শর্ত হলো ‘দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের’ জন্য একটি স্পষ্ট পরিকল্পনা।

আরব আমিরাত ইতিমধ্যেই আব্রাহাম চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। তারাও ভবিষ্যতে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানকে সমর্থন করার কথা বলেছে। আসলে সৌদি আরব ও আরব আমিরাত বরাবরই চরমপন্থী আরব গোষ্ঠীগুলোকে নিয়ে সতর্ক ছিল। কারণ, এ ধরনের গোষ্ঠীগুলো তাদের নিজস্ব নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পিত ‘জাতিগত নিধন’ বাস্তবায়িত হলে এসব গোষ্ঠী নতুন শক্তি হয়ে উঠতে পারে। তখন মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা আরও নড়বড়ে হবে।

তবে উপসাগরীয় নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের নাজুক সম্পর্ক কীভাবে সামলাতে হয়, তা ভালোই জানেন। যখন সৌদি আরব ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আরব নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছিল, তখন একই সময়ে সৌদির সার্বভৌম সম্পদ তহবিল যুক্তরাষ্ট্রে একটি সম্মেলনের আয়োজন করেছিল। এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার। গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে সেখানে একটি ‘মিডল ইস্ট রিভিয়েরা’ গড়ে তোলার ধারণাটি প্রথম প্রস্তাব করেছিলেন কুশনার। তাঁর সঙ্গেই ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত ও তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী স্টিভ উইটকফ।

এই দুই ব্যক্তি ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছেন। দাবি করেছেন, আসলে তা গাজার ফিলিস্তিনিদের কল্যাণের জন্যই করা হয়েছে। তাঁরা বোঝাতে চেয়েছেন, যদি ফিলিস্তিনিরা গাজায় থেকে যায়, তবে তাদের জীবনযাত্রার মান আরও খারাপ হতে পারে। তবে তারা কখনোই ‘জোরপূর্বক বিতাড়ন’ বা ‘জাতিগত নিধন’ শব্দগুলো ব্যবহার করেননি।

ট্রাম্প ৪ ফেব্রুয়ারি তাঁর জাতিগত উৎখাত ধারণা উত্থাপন করেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দৈনিক দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, তিন থেকে পাঁচ বছরের জন্য একটি পরিকল্পনা করা হয়েছে। ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ বিলিয়ন ডলার। এতে ফিলিস্তিনিদের গাজার ভেতরেই কিছু নিরাপদ অঞ্চলে স্থানান্তরের কথা বলা হয়েছে। সেখানে ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করে নতুন অবকাঠামো ও বসতবাড়ি নির্মাণ শুরু করা হবে।

তবে ট্রাম্পের পরিকল্পনার বহু আগেই ইসরায়েলের নিজস্ব জাতিগত উৎখাতের পরিকল্পনা ছিল। যার কারণে ইসরায়েল গাজার বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, হাসপাতাল ও আবাসিক ভবনগুলোকে নিশানা বানিয়েছে পরিকল্পিতভাবে। ইসরায়েলি বাহিনী পানির সরবরাহ ব্যবস্থা, পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণকেন্দ্রগুলোও ধ্বংস করেছে। আর তা শুধু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলা এবং ফিলিস্তিনে জিম্মি নেওয়ার ঘটনাকে প্রতিহত করার জন্য করা হয়নি; তা বরং দীর্ঘমেয়াদি এক পরিকল্পনার অংশ।

কায়রোয় অনুষ্ঠেয় আরব লিগের সম্মেলনে স্পষ্ট হয়ে যাবে, গাজার পুনর্গঠন ও স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় অর্থায়নে আরব নেতারা কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাঁরা কি কেবল বিবৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবেন, নাকি বাস্তব পদক্ষেপ নেবেন—তা তখনই বোঝা যাবে।

এখন, হামাসের ভবিষ্যৎ কী হবে? যদি কোনো চুক্তি হয়, গাজার শাসনভার কে নেবে? হামাস ইঙ্গিত দিয়েছে যে শান্তি ও দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান নিশ্চিত করতে তারা প্রশাসন থেকে সরে দাঁড়াতে পারে। তবে তাদের জায়গায় কে আসবে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। একই সঙ্গে হামাস জানিয়ে দিয়েছে, তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধের বিকল্পটি ধরে রাখবে।

আরব আমিরাতের ইচ্ছা পশ্চিম তীর শাসনকারী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গাজার শাসনভার নিক। যদিও অন্য আরব দেশগুলো তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি। অন্যদিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্পষ্টভাবে বলেছেন, তিনি গাজায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের শাসন মেনে নেবেন না।

এসব প্রশ্নই প্রমাণ করে, গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যেকোনো আলোচনা অত্যন্ত জটিল, দুরূহ ও অনিশ্চিত। আপাতত শুধু এটাই আশা, আগামী ১৫ মাস গাজার জন্য আগের ভয়াবহ ১৫ মাসের মতো হবে না।

আব্বাস নাসির ডনের সাবেক সম্পাদক

ডন থেকে নেওয়া ইংরেজির অনুবাদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ