নকল চার্জার ব্যবহারে আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য মারাত্মক বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘ইলেকট্রিক্যাল সেফটি ফার্স্ট’ জানিয়েছে, বাজারে বিপজ্জনক নকল চার্জিং অ্যাডাপ্টরের ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে। এগুলো বৈদ্যুতিক শক ও অগ্নিকাণ্ডের মতো বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নকল চার্জার অনলাইনসহ স্থানীয় বাজারেও সহজলভ্য হওয়ায় ব্যবহারকারীরা সহজেই প্রতারিত হচ্ছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যাপলের আসল ২০ ওয়াটের ইউএসবি-সি পাওয়ার অ্যাডাপ্টরের মতো দেখতে নকল চার্জারগুলোয় ধাতব বস্তু যোগ করা হচ্ছে। ফলে সেগুলো ওজনে আসল চার্জারের মতো মনে হয়। নকল চার্জারগুলো সাধারণত সস্তা ও নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে তৈরি হওয়ায় ওজনে হালকা হয়। তবে ওজন বাড়ানোর জন্য ভেতরে ধাতব বস্তু ব্যবহার করায় এসব নকল চার্জার আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। এতে ক্রেতারা সহজেই আসল ও নকলের পার্থক্য বুঝতে ব্যর্থ হন এবং বৈদ্যুতিক শকের ঝুঁকিতে পড়েন। ইলেকট্রিক্যাল সেফটি ফার্স্টের উপপ্রযুক্তি পরিচালক লুক অসবর্ন বলেন, ‘অপরাধীরা এখন গ্রাহকদের প্রতারণায় আরও চতুর কৌশল গ্রহণ করছে, যেখানে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে। যতই অপরাধ চক্র স্মার্ট হচ্ছে, ততই বিপজ্জনক নকল পণ্য কেনার আশঙ্কাও বাড়ছে।’

ইলেকট্রিক্যাল সেফটি ফার্স্টের বিশেষজ্ঞরা অ্যাপলের সহযোগিতায় ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যের বাজার থেকে ১১৬টি নকল চার্জার সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছেন। এগুলো বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে অনলাইন বাজার, স্থানীয় খুচরা দোকান ও ডিসকাউন্ট স্টোর।

গবেষণায় দেখা গেছে, ১১৬টির মধ্যে ১০৭টি চার্জার (৯২ শতাংশ) নিরাপত্তা পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। এসব চার্জারে অভ্যন্তরীণ ইনসুলেশনের ঘাটতি থাকায় বৈদ্যুতিক শকের ঝুঁকি অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, পরীক্ষার জন্য ২২টি অ্যাডাপ্টরের অভ্যন্তরীণ অংশ খোলা হলে ১৫টিতে (৬৮ শতাংশ) ধাতব ওজন পাওয়া যায়, যা আগের কোনো পরীক্ষায় দেখা যায়নি। গবেষণায় দেখা গেছে, এসব নকল চার্জারের ৭১ শতাংশই সাধারণ ব্যবহারের সময় বিদ্যুৎ প্লাগের পিন ভেঙে যাওয়ার বা বেঁকে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। বাস্তবে এটি প্লাগের পিন সকেটে আটকে গিয়ে বৈদ্যুতিক শকের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

নকল চার্জারগুলো সাধারণত কিছু সহজ লক্ষণেই শনাক্ত করা যায়। এগুলোর গায়ে থাকা লোগো অস্পষ্ট এবং বানানে ভুল থাকে, যেমন ‘Apple’-এর বদলে ‘Appie’। আসল অ্যাপল অ্যাডাপ্টরে লোগো ও লেখা স্পষ্ট হয়। নকল অ্যাডাপ্টরের গায়ে সাধারণত চকচকে বা অসমান তল দেখা যায়। নকল অ্যাডাপ্টরের প্লাগ পিনগুলোও নিম্নমানের হয়। আসল অ্যাডাপ্টরের প্লাগ পিনের তল মসৃণ ও মানসম্মত হয়।

নকল চার্জারের কারণে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি মারাত্মক দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসে এক কিশোরী তার আইফোন চার্জ দেওয়ার সময় নকল চার্জার থেকে আগুন ধরে অগ্নিদগ্ধ হয়। ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যের ওরচেস্টারশায়ারে নকল চার্জার ব্যবহারের কারণে একটি বাড়িতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

এর আগে ২০১৪ সালে হাডার্সফিল্ডে মাত্র আট পাউন্ড মূল্যের একটি নকল চার্জার বিস্ফোরিত হয়ে পাঁচ সপ্তাহ বয়সী এক শিশু ঝুড়িতে পড়ে। ২০১৩ সালে চীনের এক ২৩ বছর বয়সী বিমানবালা আইফোন ৫-এ নকল চার্জার ব্যবহারের সময় বৈদ্যুতিক শকে মারা যান। চেশায়ারের এক ব্যক্তি জানান, তাঁর মেয়ের আইপ্যাড চার্জার বিস্ফোরিত হয়ে তিনি মারাত্মক বৈদ্যুতিক শকের শিকার হন এবং তাঁর আঙুল পুড়ে যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইলেকট্রনিক পণ্য কেনার সময় শুধু বিশ্বস্ত ও পরিচিত বিক্রেতা থেকে পণ্য কেনাই নিরাপদ। অফিশিয়াল অ্যাপল স্টোর, অ্যাপল অথরাইজড রিসেলার বা পরিচিত খুচরা বিক্রেতা থেকে চার্জার কিনলে প্রতারণার আশঙ্কা অনেক কমে যায়।

লুক অসবর্ন বলেন, ‘ইলেকট্রনিক পণ্য সস্তায় পাওয়ার লোভে পড়া উচিত নয়। শুধু পরিচিত, বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড ও দোকান থেকে পণ্য কিনলেই নিজেকে ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ রাখা সম্ভব।’ অ্যাপল ব্যবহারকারীদের জন্য প্রতিষ্ঠানটির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে আসল ও নকল চার্জার পার্থক্য করার বিস্তারিত নির্দেশিকা রয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে তা অনুসরণ করা যেতে পারে।

সূত্র: ডেইলি মেইল

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নকল চ র জ র ব ব যবহ র পর ক ষ র জন য আইফ ন

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ায় রোজা শুরুর আগেই সবজির বাজার চড়া, লেবুর হালি ৬০ টাকা

রোজা শুরুর আগেই উৎপাদন এলাকা বগুড়ায় পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। বগুড়ার মহাস্থান হাটে পাইকারি পর্যায়ে দুই দিন আগে যে শসার দাম ২০ টাকা ছিল, আজ তা ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ১২ কিলোমিটার দূরে বগুড়া শহরে খুচরা পর্যায়ে সেই শসা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। ৩০ টাকা হালির লেবু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।

একইভাবে পাইকারি পর্যায়ে ৩০ টাকার বেগুন ও করলা ৪৫ টাকা বিক্রি হয়েছে, খুচরা বাজারে যা দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া এক দিনের ব্যবধানে পাইকারি পর্যায়ে দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচ, আলু, টমেটোসহ অন্য সবজির।

শনিবার পাইকারি পর্যায়ে এক কেজি কাঁচা মরিচ ৩০ টাকা, টমেটো ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। রোজা শুরু হতে না হতেই ছোলা বুট, তরমুজ ও খেজুরের দামও বেড়েছে। শনিবার পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি তরমুজ ৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। খুচরা পর্যায়ে তরমুজ বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে।

আরও পড়ুনরংপুরে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ৩৮ টাকা বেশি দামে বিক্রি১২ ডিসেম্বর ২০২৪

শনিবার সকালে দেশের অন্যতম বৃহৎ সবজির পাইকারি মোকাম মহাস্থান হাট ঘুরে দেখা যায়, শীত বিদায় নিলেও হাট এখনো সবজিতে ভরপুর। মুলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শিম, শসা, লেবু, গাজর, করলা, পটোল, টমেটো, পালংশাক, লালশাক, পুঁইশাক, কাঁচা মরিচ, আলুসহ বিভিন্ন সবজির কোনো কমতি নেই। ক্রেতা-বিক্রেতা, আড়তদার ও পাইকারদের হাঁকডাকে সরগরম হাট। কৃষকের এক হাত ঘুরে কিছু সবজি যাচ্ছে স্থানীয় খুচরা বাজারে। বেশির ভাগ সবজি পাইকারি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বড় মোকামে যাচ্ছে।

মোকামে আসা কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানালেন, প্রতি কেজি দেশি পাকড়ি আলু ২০ টাকা, ডায়মন্ড আলু ২০, কাঁচা মরিচ ২৫, করলা ৪৫, বেগুন ৮০, টমেটো ১০, শসা ৪০ ও মাঝারি আকারের প্রতিটি লেবু ১০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। গোল বেগুন বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকা দরে। অথচ এক সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি পাকড়ি আলু ২৫, ডায়মন্ড আলু ২২, কাঁচা মরিচ ৩০, টমেটো ২০ টাকা দরে বিক্রি হয়। রোজায় সবচেয়ে চাহিদা থাকা শসা এক সপ্তাহ আগে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ২৫, কাঁচা মরিচ ২০ ও প্রতিটি লেবু ৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

আরও পড়ুনরোজা শুরুর আগে আবার দাম বাড়ল ০১ এপ্রিল ২০২২

মহাস্থান হাটে ১২ মণ বেগুন বিক্রি করতে এসেছিলেন বগুড়া সদর উপজেলার মোকামতলা এলাকার কৃষক নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ আগেও হাটে প্রতি মণ বেগুন ৯০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। আজ সেই বেগুন বিক্রি করেছেন ১ হাজার ৯০০ টাকা মণ দরে।

মহাস্থান হাটের আড়তদার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রমজান মাস শুরু হতে না হতেই শসা, বেগুন, লেবু, কাঁচা মরিচ, গোল বেগুনসহ বেশ কিছু সবজির দাম পাইকারি পর্যায়ে প্রায় দ্বিগুণ দাম বেড়েছে।

পাইকারি বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খুচরা পর্যায়েও সবজির দাম বেড়েছে। বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজারে এক কেজি শসা খুচরা পর্যায়ে ৬০ টাকা, লেবু প্রতিটি ১৫ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ধনেপাতার কেজিও ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে। রোজাদারদের ইফতারির পদ বেগুনি তৈরিতে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রতি কেজি গোল বেগুন বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে।

ফতেহ আলী বাজারের খুচরা সবজি ব্যবসায়ী মতিউর রহমান বলেন, রোজার এক দিন আগে প্রতি কেজি শসা ৫০, কাঁচা মরিচ ৬০, লেবু প্রতিটি ১৫ টাকা ও গোল বেগুন ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। গত বছর রোজার এক দিন আগে প্রতি কেজি শসা ৪০, কাঁচা মরিচ ৬০, লেবু প্রতিটি ৮ টাকা ও গোল বেগুন ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।

দাম বেড়েছে রোজাদারদের ইফতারির পদ ছোলা বুট ও খেজুরের। এবার প্রতি কেজি ছোলা বুট ১১০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। গত বছর প্রতি কেজি ছোলা বুট ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এ ছাড়া দাম বেড়েছে আমদানি করা সব ধরনের খেজুরের। শহরের সাতমাথা ফলপট্টির ব্যবসায়ী সেকেন্দার আলী বলেন, খুচরা পর্যায়ে এবার এক কেজি মেরজুল খেজুর ১ হাজার ৪০০, মরিয়ম ১ হাজার ১৫০, দাবাস ৪২০, লুলু ৪৮০, মাশকুল ৮০০, তিউনিসিয়ার ডাল খেজুর ৬০০, আজোয়া ১ হাজার ও ইরাকি খেজুর প্রতি কেজি ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ