আইফোনে নকল চার্জার থেকে বৈদ্যুতিক শক ও অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি
Published: 1st, March 2025 GMT
নকল চার্জার ব্যবহারে আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য মারাত্মক বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘ইলেকট্রিক্যাল সেফটি ফার্স্ট’ জানিয়েছে, বাজারে বিপজ্জনক নকল চার্জিং অ্যাডাপ্টরের ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে। এগুলো বৈদ্যুতিক শক ও অগ্নিকাণ্ডের মতো বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নকল চার্জার অনলাইনসহ স্থানীয় বাজারেও সহজলভ্য হওয়ায় ব্যবহারকারীরা সহজেই প্রতারিত হচ্ছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যাপলের আসল ২০ ওয়াটের ইউএসবি-সি পাওয়ার অ্যাডাপ্টরের মতো দেখতে নকল চার্জারগুলোয় ধাতব বস্তু যোগ করা হচ্ছে। ফলে সেগুলো ওজনে আসল চার্জারের মতো মনে হয়। নকল চার্জারগুলো সাধারণত সস্তা ও নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে তৈরি হওয়ায় ওজনে হালকা হয়। তবে ওজন বাড়ানোর জন্য ভেতরে ধাতব বস্তু ব্যবহার করায় এসব নকল চার্জার আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। এতে ক্রেতারা সহজেই আসল ও নকলের পার্থক্য বুঝতে ব্যর্থ হন এবং বৈদ্যুতিক শকের ঝুঁকিতে পড়েন। ইলেকট্রিক্যাল সেফটি ফার্স্টের উপপ্রযুক্তি পরিচালক লুক অসবর্ন বলেন, ‘অপরাধীরা এখন গ্রাহকদের প্রতারণায় আরও চতুর কৌশল গ্রহণ করছে, যেখানে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে। যতই অপরাধ চক্র স্মার্ট হচ্ছে, ততই বিপজ্জনক নকল পণ্য কেনার আশঙ্কাও বাড়ছে।’
ইলেকট্রিক্যাল সেফটি ফার্স্টের বিশেষজ্ঞরা অ্যাপলের সহযোগিতায় ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যের বাজার থেকে ১১৬টি নকল চার্জার সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছেন। এগুলো বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে অনলাইন বাজার, স্থানীয় খুচরা দোকান ও ডিসকাউন্ট স্টোর।
গবেষণায় দেখা গেছে, ১১৬টির মধ্যে ১০৭টি চার্জার (৯২ শতাংশ) নিরাপত্তা পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। এসব চার্জারে অভ্যন্তরীণ ইনসুলেশনের ঘাটতি থাকায় বৈদ্যুতিক শকের ঝুঁকি অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, পরীক্ষার জন্য ২২টি অ্যাডাপ্টরের অভ্যন্তরীণ অংশ খোলা হলে ১৫টিতে (৬৮ শতাংশ) ধাতব ওজন পাওয়া যায়, যা আগের কোনো পরীক্ষায় দেখা যায়নি। গবেষণায় দেখা গেছে, এসব নকল চার্জারের ৭১ শতাংশই সাধারণ ব্যবহারের সময় বিদ্যুৎ প্লাগের পিন ভেঙে যাওয়ার বা বেঁকে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। বাস্তবে এটি প্লাগের পিন সকেটে আটকে গিয়ে বৈদ্যুতিক শকের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
নকল চার্জারগুলো সাধারণত কিছু সহজ লক্ষণেই শনাক্ত করা যায়। এগুলোর গায়ে থাকা লোগো অস্পষ্ট এবং বানানে ভুল থাকে, যেমন ‘Apple’-এর বদলে ‘Appie’। আসল অ্যাপল অ্যাডাপ্টরে লোগো ও লেখা স্পষ্ট হয়। নকল অ্যাডাপ্টরের গায়ে সাধারণত চকচকে বা অসমান তল দেখা যায়। নকল অ্যাডাপ্টরের প্লাগ পিনগুলোও নিম্নমানের হয়। আসল অ্যাডাপ্টরের প্লাগ পিনের তল মসৃণ ও মানসম্মত হয়।
নকল চার্জারের কারণে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি মারাত্মক দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসে এক কিশোরী তার আইফোন চার্জ দেওয়ার সময় নকল চার্জার থেকে আগুন ধরে অগ্নিদগ্ধ হয়। ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যের ওরচেস্টারশায়ারে নকল চার্জার ব্যবহারের কারণে একটি বাড়িতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
এর আগে ২০১৪ সালে হাডার্সফিল্ডে মাত্র আট পাউন্ড মূল্যের একটি নকল চার্জার বিস্ফোরিত হয়ে পাঁচ সপ্তাহ বয়সী এক শিশু ঝুড়িতে পড়ে। ২০১৩ সালে চীনের এক ২৩ বছর বয়সী বিমানবালা আইফোন ৫-এ নকল চার্জার ব্যবহারের সময় বৈদ্যুতিক শকে মারা যান। চেশায়ারের এক ব্যক্তি জানান, তাঁর মেয়ের আইপ্যাড চার্জার বিস্ফোরিত হয়ে তিনি মারাত্মক বৈদ্যুতিক শকের শিকার হন এবং তাঁর আঙুল পুড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইলেকট্রনিক পণ্য কেনার সময় শুধু বিশ্বস্ত ও পরিচিত বিক্রেতা থেকে পণ্য কেনাই নিরাপদ। অফিশিয়াল অ্যাপল স্টোর, অ্যাপল অথরাইজড রিসেলার বা পরিচিত খুচরা বিক্রেতা থেকে চার্জার কিনলে প্রতারণার আশঙ্কা অনেক কমে যায়।
লুক অসবর্ন বলেন, ‘ইলেকট্রনিক পণ্য সস্তায় পাওয়ার লোভে পড়া উচিত নয়। শুধু পরিচিত, বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড ও দোকান থেকে পণ্য কিনলেই নিজেকে ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ রাখা সম্ভব।’ অ্যাপল ব্যবহারকারীদের জন্য প্রতিষ্ঠানটির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে আসল ও নকল চার্জার পার্থক্য করার বিস্তারিত নির্দেশিকা রয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে তা অনুসরণ করা যেতে পারে।
সূত্র: ডেইলি মেইল
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নকল চ র জ র ব ব যবহ র পর ক ষ র জন য আইফ ন
এছাড়াও পড়ুন:
সাগরতলে তৈরি হচ্ছে গবেষণাগার
চীনের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের একটি বড় ক্ষেত্র দক্ষিণ চীন সাগর। এখানে চীন অন্য কারও উপস্থিতি সহ্য করতে পারে না। জলরাশিতে দাপিয়ে বেড়ায় দেশটির বিশেষ কমান্ডো বাহিনী। যতই দিন যাচ্ছে, এই সাগরকে কেন্দ্র করে ভূরাজনীতি ততই জটিল হচ্ছে। সামরিক শক্তিও বাড়াচ্ছে চীন। এবার দেশটি সমুদ্রতলে নির্মাণ করতে যাচ্ছে ‘ডিপ সি স্পেস স্টেশন’ অর্থাৎ, বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্র। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬ হাজার ৬৫০ ফুট নিচে হবে এর অবস্থান।
ওশানোগ্রাফিক ম্যাগাজিন বলছে, এই স্পেস স্টেশনের মাধ্যমে চীন সামুদ্রিক অনুসন্ধানকে ব্যাপক সম্ভাবনাময় করে তুলতে চায়। স্টেশনটি একটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার অংশ, যার প্রাথমিক নকশা সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এটি নির্মাণ সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ছয়জন বিজ্ঞানী একসঙ্গে মাসব্যাপী অবস্থান করতে পারবেন স্টেশনটিতে।
চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের সাউথ চায়না সি ইনস্টিটিউট অব ওশেনোলজির গবেষকরা জানাচ্ছেন, গবেষণার প্রাথমিক লক্ষ্য হবে ঠান্ডা জলস্রোত কীভাবে বাস্তুতন্ত্রে ভূমিকা রাখছে, তা পর্যবেক্ষণ করা। বিশেষ করে প্রচণ্ড ঠান্ডায় জমে থাকা বরফ প্রাকৃতিক গ্যাসের (মিথেন হাইড্রেট) বড় উৎস, যা থেকে বিপুল জ্বালানি উৎপাদন সম্ভব।
স্টেশনটিতে জীবনযাপনের সব উপকরণ থাকবে, যা বিজ্ঞানীদের মিশন পরিচালনায় সহায়ক হবে। এখানে বসে বিজ্ঞানীরা সমুদ্রের পরিবেশগত পরিবর্তন ও পৃথিবীর গঠন-সংক্রান্ত কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করবেন। স্টেশনটির মাধ্যমে একটি চতুর্মাত্রিক গবেষণা নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে।
দক্ষিণ চীন সাগর ঘিরে ‘ভূরাজনৈতিক বিরোধ’ মোকাবিলা করা এই প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য। বিশেষ করে তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাই এই সাগরে চীনের একক আধিপত্য অস্বীকার করে আসছে। এসব দেশ ও অঞ্চল দক্ষিণ চীন সাগরের কোনো না কোনো অংশে নিজেদের মালিকানা দাবি করে থাকে। মজার ব্যাপার হলো, চীন সম্প্রতি প্রকল্প-সংক্রান্ত ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে তাইওয়ানের আশপাশে ৬২টি চীনা সামরিক বিমান শনাক্ত হয়েছে।
চীনা একাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক ইয়িন জিয়ানপিং বলছেন, সাগরটির অতি শীতল অঞ্চলের বরফে ৭০ বিলিয়ন টন মিথেন হাইড্রেড মজুত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, যার পরিমাণ বর্তমানে চীনের মজুত জ্বালানির অর্ধেক। গবেষণা কেন্দ্রটি সাগরে চীনের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।
দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র একই ধরনের প্রকল্প হাতে নেয়। দেশটির ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অধীনে সমুদ্রের নিচে গবেষণা স্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। যেখানে বিজ্ঞানী, উদ্ভাবক, গবেষক, সাধারণ নাগরিক, আন্তর্জাতিক পর্যটক ও ব্যবসায়ীরা অবাধে যাতায়াত করতে পারবেন। চীনও চাচ্ছে সামুদ্রিক প্রাণ-প্রতিবেশ নিয়ে গবেষণা এগিয়ে নিতে। এ জন্যই সমুদ্রতলের গবেষণাগার তাদের চাই।
চীনের এই প্রকল্পটি সমুদ্র গবেষণায় নতুন দিগন্ত খুলে দেবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। সামুদ্রিক স্পেস স্টেশনটি ঘিরে একটি ‘স্মার্ট টেক প্ল্যাটফর্ম’ গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে। এর মাধ্যমে সামুদ্রিক প্রতিবেশ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত প্রকল্পগুলো যৌথভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। এগুলোর লক্ষ্য থাকবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি কমানো, সমুদ্রের সঙ্গে মানুষের মিথস্ক্রিয়া বাড়ানো এবং টেকসই সামুদ্রিক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম জোরদার করা।