১০ মিনিটের উত্তাপে কীভাবে ট্রাম্প-জেলেনস্কির আলোচনা ভেঙে গিয়েছিল
Published: 1st, March 2025 GMT
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আশা করেছিলেন, শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইতিবাচকভাবে আলোচনা শেষ করতে পারবেন। তারপর সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে তিনি হোয়াইট হাউস ছাড়বেন।
শেষ পর্যন্ত তা হয়নি; বরং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সামনে খুব বাজেভাবে নাজেহাল হয়েছেন জেলেনস্কি। বৈঠক চলাকালে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে তাঁর ব্যাপক বাগ্বিতণ্ডা হয়।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে জেলেনস্কির আরও বেশি করে কাজ করা উচিত বলে ট্রাম্প ও ভ্যান্স পরামর্শ দিলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট তাতে সায় দেননি। এতে ট্রাম্প ও ভ্যান্স ক্ষেপে গিয়ে বলেন, জেলেনস্কি তাঁদের অসম্মান করছেন।
একপর্যায়ে জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউস থেকে চলে যেতে বলা হয়। বৈঠক শেষে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির যৌথ সম্মেলন করার কথা থাকলেও তা বাতিল করা হয়। দুপক্ষের মধ্যে খনিজ সম্পদ চুক্তিটিও স্বাক্ষর হয়নি। জেলেনস্কি গাড়িতে করে হোয়াইট হাউস থেকে চলে যাওয়ার অল্প কিছুক্ষণ আগে ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তুত হলে ফিরে আসবেন।’
উত্তপ্ত ওই বৈঠকে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত ছিল। এখানে সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ চারটি মুহূর্ত পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
জেলেনস্কি ও ভ্যান্সের মধ্যে উত্তেজনাওভাল অফিসে আলোচনাটা আন্তরিকভাবেই শুরু হয়েছিল। আধা ঘণ্টা ধরে এভাবেই চলেছে। এরপর পাল্টে যেতে থাকে দৃশ্যপট। জেডি ভ্যান্সের একটি কথার সূত্র ধরে উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকে। জেডি ভ্যান্স বলেন, ‘কূটনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত হওয়াটাই হয়তো শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠার পথ। আর সেটাই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করছেন।’
জেলেনস্কি তখন কথা বলে ওঠেন। তিনি ২০১৯ সালে ব্যর্থ যুদ্ধবিরতি চুক্তিসহ তিন বছর আগে ইউক্রেনে রাশিয়ার পুরোদমে যুদ্ধ শুরুর কথা উল্লেখ করেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্পর্কে জেলেনস্কি বলেন, ‘কেউ তাঁকে থামায়নি।’
জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘আপনি কী ধরনের কূটনীতির কথা বলছেন জেডি? আপনি কী বোঝাতে চাইছেন?’
ভ্যান্স তখন বলেন, তিনি সে ধরনের কূটনীতির কথা বলছেন, যা জেলেনস্কির দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাবে।
এরপর দুপক্ষের মধ্যকার উত্তেজনা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট অভিযোগ করেন, জেলেনস্কি অসম্মানজনক আচরণ করছেন এবং মার্কিন গণমাধ্যমের সামনে পরিস্থিতিকে ঘোলা করছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর হোয়াইট হাউস থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন জেলেনস্কি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
হাঁসের মাংসের ‘মোড়কে’ পাখির মাংস বিক্রি, কেন–কীভাবে
পরপর কয়েকটি অভিযানের মুখে সিলেটের জৈন্তাপুরের হরিপুর বাজারে প্রকাশ্যে পাখির মাংস বিক্রি বন্ধ বলা হলেও গোপনে বেচাকেনা চলছে বলে অভিযোগ। সেখানকার রেস্তোরাঁগুলোতে হাঁসের মাংসের আড়ালে চলে পাখির মাংস বিক্রি। সম্প্রতি সেখানকার কয়েকটি রেস্তোরাঁয় ক্রেতা সেজে ঢুঁ মেরে প্রথম আলোর প্রতিবেদক এমনটাই দেখেছেন।
জলাভূমি থেকে রেস্তোরাঁয় পাখিসম্প্রতি পরিচয় গোপন রেখে রেস্তোরাঁর মালিক ও কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফাঁদ পেতে অথবা বিষটোপ দিয়ে শিকারিরা পাখি ধরেন। সিলেটের গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন হাওর ও জলাভূমি থেকে পাখিগুলো ধরা হয়। এরপর পাখি বাড়িতে নেন শিকারিরা। জবাই করে পালক ছাড়িয়ে পলিথিনে মুড়ে নেন। এরপর গোপনীয়তার সঙ্গে সেগুলো পৌঁছে দেন রেস্তোরাঁমালিকদের কাছে।
স্থানীয় কয়েকজনের ভাষ্য, শীতকালে এখানে প্রতিদিন গড়ে কয়েক শ পাখি রান্না হয়। তবে সম্প্রতি প্রশাসন দফায় দফায় এখানে অভিযান চালিয়েছে। এ কারণে পাখির মাংস বিক্রি অনেকটা কমে গেছে, তবে একেবারে বন্ধ হয়নি। হাঁসের মাংসের কথা বলে পাখির মাংস বিক্রির কাজটি চলছে।
পাখির মাংস খেতে এসেছেন, এমন দুজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রেস্তোরাঁ কর্মীরা তাঁদের জানিয়েছেন যে প্রতিদিন সর্বোচ্চ তিন থেকে সাত প্রজাতির পাখির মাংস এখানে মেলে। এর মধ্যে বক, ঘুঘু, বালিহাঁস, ডাহুক, শামুকভাঙা ও কুড়া আছে। যেকোনো প্রজাতির পাখির এক টুকরা মাংসের সঙ্গে ভাত, ডাল ও সালাদ ফ্রি। পাখির প্রজাতি অনুযায়ী দাম ১৩০ থেকে ২০০ টাকা।
আট থেকে নয় বছর আগে সিলেট-তামাবিল আঞ্চলিক মহাসড়কের হরিপুর বাজারে কয়েকটি রেস্তোরাঁ চালু হয়। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০টিতে। চালুর পর থেকেই এসব রেস্তোরাঁয় পাখির মাংস বিক্রি শুরু হয়। মূলত সড়ক দিয়ে চলাচল করা পর্যটক ও ট্রাকচালকেরা এসব মাংসের ক্রেতা। সিলেট শহর থেকেও দলবেঁধে অনেকে পাখির মাংস খেতে যান।
সরেজমিনে দুই ঘণ্টাএই প্রতিবেদক ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত হরিপুর বাজারে কয়েকটি রেস্তোরাঁয় যান। দেখতে পান, রেস্তোরাঁগুলোর ভেতরে ক্যাশ কাউন্টারের সামনে সারি সারি বোল প্লাস্টিকের ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখা। সেসব বোলে নানা আকৃতির মাংস রান্না করে রাখা। ক্রেতা এসে ঢাকনা উল্টে দরদাম করছেন। পছন্দ হলে মাংস নিয়ে রেস্তোরাঁয় বসে খাচ্ছেন।
এই দিন ক্রেতা সেজে কথা বললে সোনার বাংলা রেস্টুরেন্ট, তারু মিয়া রেস্টুরেন্ট ও তানভীর রেস্টুরেন্টের কর্মীরা পাখির মাংস বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করেন। তাঁরা বলেন, স্থানীয় প্রশাসন অভিযান চালাচ্ছে। তাই তাঁরা ভয়ে আছেন। পাখির মাংস বিক্রির বিষয়টি প্রকাশ্যে বলেন না। প্রকৃত ক্রেতা নিশ্চিত হলেই কেবল পাখির মাংস বিক্রির বিষয়টি তাঁরা বলেন। নইলে কেবল হাঁসের মাংস পাওয়া যাওয়ার কথা বলেন ক্রেতাদের।
ফাঁদ পেতে অথবা বিষটোপ দিয়ে শিকারিরা সিলেটের গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরের বিভিন্ন হাওর ও জলাভূমি থেকে পাখিগুলো ধরেন