কুমিল্লায় দুই দিনের ব্যবধানে মালয়েশিয়া ফেরত এক প্রবাসীর গাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। শনিবার ভোরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম থানার অর্ধ কিলোমিটার দূরে ফাল্গুনকরা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী ওই প্রবাসীর নাম বেলাল হোসেন, তিনি শাহজালাল বিমানবন্দরে নেমে ভাড়া করা প্রাইভেটকারযোগে তার গ্রামের বাড়ি ফেনীর দাগনভূঁইয়ার শরিফপুর গ্রামে যাচ্ছিলেন। ডাকাত দল গাড়ি থেকে নগদ টাকা, মোবাইল সেট, স্বর্ণালংকারসহ প্রায় ৬ লাখ টাকার মালামাল লুটে নিয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। একই স্থানে গত বৃহস্পতিবার ভোরে কুয়েত থেকে ফেরা এক প্রবাসীর গাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল।

পুলিশ জানায়, প্রবাসী বেলাল মালয়েশিয়া থেকে শুক্রবার রাত ১০টায় হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। বিমানবন্দর থেকে ভাড়া করা প্রাইভেটকারে তিনি স্বজনদের নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা করেন। শনিবার ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে মহাসড়কের উপজেলা সদরের ফাল্গুনকরা নামক স্থানে পৌঁছলে অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জনের ডাকাত দল পিকআপে করে এসে প্রবাসীর ভাড়া করা প্রাইভেটকারটিকে ধাক্কা দেয়। এ সময় গাড়ির গতি কমানোর পর ডাকাত দল পিকআপ থেকে নেমে অস্ত্রের মুখে প্রবাসীসহ অপর স্বজনদের জিম্মি করে সব মালামাল লুটে নেয়।

প্রবাসী বেলাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করার জন্য ৩ বছর পর প্রবাস থেকে দেশে আসি শুক্রবার রাতে। বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়ে মহাসড়কের মেঘনা ব্রিজ পার হয়ে যাত্রাবিরতি করি। বিরতি শেষে আবারও রওনা করলে দাউদকান্দি এলাকায় বিশাল যানজটে আটকা পড়ি। এ সময় চালক জাবেদ উল্টো লেন দিয়ে গাড়িটি অনেক দূর নিয়ে আসেন। ভোরে মহাসড়কের ফাল্গুনকরা এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে ত্রিপল মোড়ানো একটি পিকআপ ভ্যান এসে আমাদের বহনকৃত প্রাইভেটকারটিকে ধাক্কা দেয়। এ সময় চালক প্রাইভেটকারটি নিয়ন্ত্রণ রেখে গতি কিছুটা কমালে ডাকাত দল পিকআপ থেকে নেমে ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রাইভেটকারটিতে আঘাত করে ভাঙচুর করে। এ সময় অস্ত্রের মুখে ডাকাত দল গাড়িতে থাকা ৫টি মোবাইল ফোন, ১ ভরি স্বর্ণ, ৩ হাজার মালেশিয়ান রিঙ্গিত এবং ৪টি মালামালের লাগেজ লুটে নেয়। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৬ লাখ টাকা। এসময় তারা আমার পাসর্পোটটিও কেড়ে নেয়, পরে অনুরোধ করলে পাসপোর্টটি ফেরত দেয়। প্রবাসী বেলাল বলেন, ‘বিদেশে অনেক ঘাম ঝরিয়ে অর্থ কামাই করে দেশে ফিরে ডাকাতদের কবলে পড়ে সব হারাতে হলো। মহাসড়ক এমন অনিরাপদ জানলে দেশে আসতাম না।’

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহাসড়কে চলাচলকারী বেশ কয়েকজন মাইক্রোবাসের চালক বলেন, ডাকাত দল কখনও বিমানবন্দর ও কখনও মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে হোটেলে অবস্থান নিয়ে প্রবাসীদের গাড়ি ফলো করে। ভোর ৪টার পর মহাসড়ক যানবাহনের চাপ কম থাকে। পুলিশও টহলে থাকে না। এ সময় তারা ডাকাতির সুযোগ নেয়। গত দুই দিনের ডাকাতির বেলায়ও তাই হয়েছে। রমজানের তারাবি ও সেহেরীর সময় ডাকাতির আশংকা করছেন চালকরা। এর আগে গত বৃহস্পতিবার একই একই স্থানে সশস্ত্র ডাকাত দল হামলা চালিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করে কুয়েত প্রবাসী নাইমুল ইসলামের সর্বস্ব লুটে নেয়। এ ঘটনায় মামলা হলেও কেউ আটক হয়নি।

চৌদ্দগ্রাম থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহাম্মেদ সমকালকে বলেন, এ ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। ভুক্তভোগী ওই প্রবাসীকে অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। ডাকাতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। ওসি দাবি করেন, হাইওয়ে পুলিশের বিষয়টি জানি না, তবে থানা পুলিশ সকাল পর্যন্ত মহাসড়কে টহলে ছিল।

হাইওয়ের পুলিশের কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার খাইরুল আলম বলেন, মহাসড়কে চৌদ্দগ্রামে প্রবাসীর গাড়িতে ডাকাতির সংবাদ পেয়ে আমি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ভিকটিমের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রযুক্তির সহায়তায় ডাকাতদের ব্যবহার করা গাড়ি শনাক্তের চেষ্টা চলছে। রমজানে মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের টহল টিম আরও বৃদ্ধি করা হবে বলেও তিনি জানান।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রব স ড ক ত দল প কআপ এ সময়

এছাড়াও পড়ুন:

মোবাইল চুরির অভিযোগে শ্রমিক দল নেতাকে পিটিয়ে হত্যা, আটক ৪

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় মোবাইল চুরির অভিযোগে গণপিটুনিতে শ্রমিক দলের এক নেতা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।

গতকাল সোমবার দুপুরে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। 

নিহত মো. রাজু (৩৫) সদর উপজেলার চররুহিতা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক দলের দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। তিনি সবুজের গোঁজা এলাকার সফিক উল্যা সবুজের ছেলে।

এ ঘটনায় আটক চারজনের মধ্যে দুজনের নাম জানিয়েছে পুলিশ। তারা হলেন- সবুজের গোঁজা এলাকার মো. হারুনের ছেলে কবির হোসেন এবং একই এলাকার নিজাম উদ্দিনের স্ত্রী রেখা বেগম। সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মোন্নাফ রাত ৮টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার (৩০ মার্চ) রাত আড়াইটার দিকে সবুজের গোঁজা এলাকায় কাজল কোম্পানির ইটভাটার সামনে রাজুকে গণপিটুনি দেওয়া হয়। অভিযোগ ওঠে, তিনি কবির হোসেনের বাড়িতে ঢুকে মোবাইল চুরি করতে গিয়েছিলেন। এ সময় স্থানীয়রা তাকে মারধর করে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত রাজুর পরিবার দাবি করেছে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যা। রাজুর মা নেহার বেগম, ভাই ওহিদ হোসেন, বোন জেসমিন বেগম ও মেয়ে রুবি আক্তার পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন যে, রাতে রাজুর মোবাইল ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেলে তিনি তার ভাতিজা কবিরের ঘরে চার্জ দিতে যান। এ সময় কবির লোকজন ডেকে এনে রাজুকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। রাজুর শরীরে টেঁটা ও ইট দিয়ে আঘাত করা হয়, যা তার মৃত্যুর কারণ হয়েছে।

চররুহিতা ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘রাজু চুরির সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত ছিলেন না। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হতে পারে।’

সদর মডেল থানার ওসি আব্দুল মোন্নাফ বলেন, রাজুকে চুরির অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে। কবির ও রেখাকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হবে। আটক অপর দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ