নেত্রকোনায় হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ সংস্কারকাজে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে শহরের ছোট বাজার এলাকায় শহীদ মিনার–সংলগ্ন সামনের সড়কে হাওর বাঁচাও আন্দোলন জেলা কমিটির ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, হাওরে ফসল রক্ষার বিভিন্ন বাঁধ সংস্কারকাজে গঠিত পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) গঠনে নানা অনিয়ম হয়েছে। সাধারণ কৃষকদের নিয়ে কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও ক্ষমতাসীনেরা লাভবান হওয়ার জন্য কৃষকদের নাম ব্যবহার করে পিআইসি গঠন করে যেনতেনভাবে কাজ করছেন। এ ছাড়া অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প তৈরি করে টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে।

আয়োজক সংগঠনটির সভাপতি অহিদুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সুমন আহমেদের সঞ্চালনায় ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন নেত্রকোনা সরকারি মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক খন্দকার অলি উল্লাহ, জেলা কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তরিকুল আলম, স্কুলশিক্ষক শামিম তালুকদার, হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোনায়েম খান, জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফ, লেখক ফজলুল হক, আইনজীবী জহিরুল ইসলাম প্রমুখ। তাঁরা জানান, ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এসব কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো প্রায় ৩৫ শতাংশ বাকি। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় আগাম বন্যা হলে ফসলের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা আছে।

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় কৃষকদের সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ৬টি উপজেলায় ১৪৬ কিলোমিটার অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব বাঁধের ওপর স্থানীয় কৃষকদের প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল নির্ভর করে। বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য ১৯১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করা হয়। বরাদ্দ চাওয়া হয় ৩১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। প্রথম পর্যায়ে ১৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। গঠিত পিআইসির মধ্যে খালিয়াজুরিতে ১২১টি, মদনে ২৩টি, মোহনগঞ্জে ২৭টি, কলমাকান্দায় ১৩টি, বারহাট্টায় ৫টি ও আটপাড়ায় ২টি আছে। নীতিমালায় অনুযায়ী, বাঁধের নির্মাণকাজ ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার কথা। কিন্তু নেত্রকোনায় এখনো প্রায় ৩৫ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে। পাউবোর দাবি, ৯০ শতাংশ বাঁধে মাটি কাটার কাজ শেষ। এখন শুধু স্লোভ ও ঘাস লাগানো বাকি।

স্থানীয় গাগলাজুর এলাকার কৃষক কাজল চৌধুরী জানান, চরহাইজদা বাঁধের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এবার অকালবন্যা হলে ফসল বিপর্যয় ঘটতে পারে। খালিয়াজুরির কীর্তনখোলা হাওরের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাঁধের কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। আগাম বন্যা হলে যেকোনো সময় ফসলহানি হতে পারে। আমাদের ধনুসহ বিভিন্ন নদ-নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় অল্প পানিতেই বন্যা হয়ে যায়। আমরা ফসল নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে খালিয়াজুরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল হোসেন বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হয়নি, কথাটি ঠিক নয়। প্রায় ৯০ শতাংশ প্রকল্পের মাটি কাটার কাজ শেষ। এখন স্লোভ ও ঘাস লাগানো চলছে। আর কয়েকটি প্রকল্পে দেরিতে পানি নামায় কাজ শুরু করতে সময় লেগেছে। আশা করা হচ্ছে আর এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ হবে। একই রকম আশাবাদের কথা জানিয়েছেন মোহনগঞ্জের ইউএনও জুয়েল আহমেদও।

অন্যদিকে জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সারওয়ার জাহান প্রথম আলোকে বলেন, এ বছর পানি নামতে দেরি হওয়ায় কিছু বাঁধে কাজ শুরু ও শেষ করতে সময় লেগেছে। আশা করা যাচ্ছে, এক সপ্তাহের মধ্যে সব প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। আর বাঁধ সংস্কারকাজ ও পিআইসি গঠনে কোনো অনিয়ম হয়নি। উপযুক্ত প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ষকদ র প রকল প গঠন ক ফসল র প আইস

এছাড়াও পড়ুন:

কয়রায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়কের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ, বহিষ্কার দাবি

খুলনার কয়রা উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক গোলাম রব্বানীর চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে তাঁকে বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ রোববার বেলা ১১টায় উপজেলা সদরের তিন রাস্তার মোড় এলাকায় সাধারণ ছাত্র-জনতার ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বক্তারা সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকায় তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।

মানববন্ধনে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দেবব্রত দেবু, খুলনার সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থী আবিদ মাহমুদ, খুলনার বিএল কলেজের শিক্ষার্থী খলিলুর রহমান, জুলাই আন্দোলনে আহত মনিরুল ইসলাম, শিক্ষার্থী একরামুল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আন্দোলনে অংশ না নিলেও গোলাম রব্বানীকে কয়রা উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। এটা আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্রদের সঙ্গে বৈষম্যের শামিল। আহ্বায়ক হয়ে গোলাম রব্বানী জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ব্যানারে ইফতার মাহফিল আয়োজনের নামে ব্যক্তিগতভাবে চাঁদাবাজি করেছেন। তাঁর অনুসারী আবদুর রউফ একটি মাদ্রাসায় চাকরি করলেও ছাত্র সমন্বয়ক বলে দাবি করেন। তাঁর বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারকে ব্যবহার করে তাঁরা দুজন বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ে তদবির করেন।

সম্প্রতি এনসিপির ব্যানারে অনুষ্ঠিত ইফতার মাহফিলের দাওয়াতপত্রে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়কের সঙ্গে আবদুর রউফের মুঠোফোন নম্বর থাকা ও আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে চাঁদা চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ কারণে আহ্বায়কের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয় মানববন্ধনে।

অভিযোগের বিষয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা গোলাম রব্বানীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কয়রায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়কের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ, বহিষ্কার দাবি