চাঁদপুরে শুনে শুনে কুরআনের হাফেজ হলেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ২ ভাই
Published: 1st, March 2025 GMT
শুনে শুনেই কুরআনের হাফেজ হয়েছেন চাঁদপুরের একটি এতিমখানায় থাকা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মেধাবী দুই ভাই আল-আমিন (১৪) ও ফয়সাল (১২)।
শনিবার (১ মার্চ) বিকালে ফরিদগঞ্জের ঘনিয়া ছাইয়েদিয়া এতিমখানা ও মাদ্রাসায় গেলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী দুই ভাইয়ের এ প্রতিভার কথা জানা যায়।
জানা গেছে, চাঁদপুরের শাহরাস্তির কেশরাঙ্গা গ্রামের প্রয়াত মোখলেছুর রহমান ও মা রূপবান বেগমের ছেলে আল-আমিন ও ফয়সাল। পাঁচ বছর আগে তাদের বাবা মারা যায়। অভাব অনটনের সংসারে দেখা দেয় বিভীষিকা।
মোখলেছুরের মৃত্যুর পর দুই ছেলেকে ঘনিয়া ছাইয়েদিয়া এতিমখানা ও মাদ্রাসায় ভর্তি করেন মা রূপবান বেগম। এরপর মাদ্রাসা ও দরবার শরীফের পীর হাফেজ মাওলানা মো.
হাফেজ মাওলানা জাকির বলেন, “আল-আমিন ও ফয়সাল পবিত্র কুরআনের ৩০ পারা শুনে শুনেই মুখস্ত করেছেন। পৃথিবীর আলো দেখতে না পারলেও পবিত্র কুরআনের আলোয় আলোকিত তারা। তাদের সুরেলা কণ্ঠের তেলাওয়াত মুগ্ধ করেছে সবাইকে। হাফেজ আল-আমিন গত বছর জাতীয় পর্যায়ে হওয়া অন্ধ হাফেজদের কুরআন প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন।”
মাদ্রাসা ও দরবার শরীফের পীর হাফেজ মাওলানা মো. জুনায়েদুল হক বলেন, “হাফেজ আল-আমিন ও ফয়সালকে মহান আল্লাহপাক বিশেষ রহমত ও মেধাশক্তি দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। হুজুরদের মুখে শুনে শুনে কুরআন মুখস্থ করে ফেলেছেন তারা।”
দুই ভাইয়ের শিক্ষক মাওলানা বজলুল হক আজহারী বলেন, “দুই ভাই আমাদের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মতোই স্বাভাবিক চলাফেরা করে। বাইরের অনেকে বুঝতেও পারে না তারা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। মহান আল্লাহ যেন তাদের বিশেষ রহমতে পবিত্র কুরআনকে তাদের অন্তরে গেঁথে নিয়েছেন।”
দুই সহোদর হাফেজের মা রূপবান বেগম বলেন, “স্বামী হারিয়ে আমি যখন দিশেহারা তখন দুই সন্তানকে ঘনিয়া ছাইয়েদিয়া এতিমখানা ও মাদ্রাসায় দিই। হুজুরেরা আমার সন্তানদের কুরআনে হাফেজ বানিয়েছেন। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।”
ঢাকা/অমরেশ/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ও ফয়স ল র ক রআন ক রআন র
এছাড়াও পড়ুন:
মাহে রমজানের ইবাদতের প্রস্তুতি
পবিত্র রমজান মাস মুমিনদের জন্য আনন্দের; রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। এই মাসে আল্লাহর রহমত ব্যাপকভাবে বর্ষিত হয়। জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। ফলে রোজা, নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দান-সদকা, ফিতরা, জাকাত, জিকির-আসকারের মতো যাবতীয় ইবাদত সহজে তাদিকার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন সম্ভব হয়। পবিত্র কোরআন মজিদে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রমজান মাস! যে মাসে মানুষের জন্য পথনির্দেশ, সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে, তারা যেন রোজা পালন করে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৫)
পবিত্র রমজান মাসে সিয়াম বা রোজা পালন ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত—এই সাক্ষ্য দেওয়া যে আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ বা মাবুদ নাই, আর হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর প্রেরিত রাসুল। সালাত কায়েম করা, জাকাত প্রদান করা, হজব্রত পালন করা এবং রমজান মাসে সিয়াম পালন করা।’ (বুখারি, খণ্ড: ১, হাদিস: ৭)
রমজানকে কেবল ভোজের আয়োজনের উৎসব হিসেবে পরিণত করা উচিত নয়। পানাহারের প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগী না হয়ে যাতে ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবেরমজান মাস তাকওয়া বা সংযম অর্জনের মাস। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির ওপরেও, যাতে তোমরা তাকওয়া লাভ করতে পারো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৩)
সিয়াম পালনের উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন, অর্থাৎ আল্লাহর ভয়ে সব মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা। এই সংযম সব শ্রেণির মানুষের জন্য। ব্যবসায়ী ও বিক্রেতারা মুনাফার অতিরিক্ত লোভ থেকে বিরত থাকবেন, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি থেকে দূরে থাকবেন, ভোক্তা ও ক্রেতারা অহেতুক অধিক পরিমাণে পণ্য ক্রয় থেকে বিরত থাকবেন, এবং সরকার ও প্রশাসন জনকল্যাণে ব্রতী হবে। তবেই রমজানের উদ্দেশ্য সফল হবে। তখন রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভ হবে।
মাহে রমজানে ফরজ সিয়ামের পরিপূরক আমলসমূহ
নিয়মিত ২০ রাকাত তারাবিহর নামাজ পড়া, সাহ্রি খাওয়া, ইফতার করা, কোরআন মজিদ তিলাওয়াত করা এবং রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা। বিশেষভাবে অপ্রয়োজনীয় বাক্যালাপ ও বেহুদা কথাবার্তা থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য।
পবিত্র রমজানে সিয়াম পালনের উদ্দেশ্য হলো, ধনীরা যেন অভাবী মানুষের কষ্ট অনুভব করতে পারেন। তাই রমজানকে কেবল ভোজের আয়োজনের উৎসব হিসেবে পরিণত করা উচিত নয়। পানাহারের প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগী না হয়ে যাতে ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সামর্থ্যবানেরা যেন অতিরিক্ত বাজার না করেন, যাতে গরিব মানুষ কেনার সুযোগ পায়। এসব পবিত্র রমজানের উদ্দেশ্য ও শিষ্টাচারের পরিপন্থী। বরং আমাদের প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজন যাঁরা অভাবী, তাঁদের ইফতার ও সাহ্রির ব্যবস্থা করা আমাদের ইমানি কর্তব্য।
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘সে ব্যক্তি পূর্ণ ইমানদার নয়, যে পেট পুরে আহার করে অথচ তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে।’ (মুসলিম)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভ করবে এবং রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। তবে সেই রোজাদারের সওয়াব কম হবে না।’
সাহাবায়ে কিরাম বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের অনেকেরই রোজাদারকে ইফতার করানোর সামর্থ্য নেই।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘একটা পানিমিশ্রিত দুধের পেয়ালা অথবা একটি খেজুর, অথবা এক ঢোঁক পানি দিয়ে যদি কেউ রোজাদারকে ইফতার করায়, তাতেও সে সমপরিমাণ সওয়াব পাবে।’ আর যে ব্যক্তি রোজাদারকে তৃপ্তিসহকারে ইফতার করাবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশের পূর্ব পর্যন্ত তৃষ্ণামুক্ত করবে। (মুসনাদে আহমাদ)
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
[email protected]