গাজীপুরের টঙ্গীতে তুরাগ নদের ওপর বেইলি সেতু স্থাপনের দাবিতে বিআরটি প্রকল্পের উড়ালসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। আজ শনিবার দুপুরে উড়ালসড়কটির পাশে টঙ্গী বাজার এলাকায় ‘টঙ্গী বাজার ব্যবসায়ীগণ’-এর ব্যানারে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় উড়ালসড়কে প্রায় আধা ঘণ্টা যানবাহন চলাচাল বন্ধ থাকে। এতে ভোগান্তির মধ্যে পড়েন বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা।

বিক্ষোভে টঙ্গী বাজারের ব্যবসায়ীরা ছাড়াও ঢাকার আবদুল্লাহপুর ও আশপাশের এলাকার ব্যবসায়ীরা অংশ নেন। ব্যবসায়ীরা বেইলি সেতু স্থাপনের দাবিতে প্রথমে উড়ালসড়কের ওপর মানববন্ধন করেন। পরে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন টঙ্গী পূর্ব থানা বিএনপির সভাপতি সরকার জাবেদ আহমেদ সুমন, সাবেক সভাপতি রাশেদুল ইসলাম কিরণ প্রমুখ।

বিক্ষোভকারীরা জানান, তুরাগ নদের এক পাড়ে টঙ্গী বাজার, অন্য পাড়ে ঢাকার আবদুল্লাহপুর। বিভিন্ন প্রয়োজনে প্রতিদিন নদের এপার থেকে ওপারে যাতায়াত করেন হাজার হাজার মানুষ। দুই থেকে তিন বছর আগেও নদ পারাপারের প্রধান ভরসা ছিল সেতু (টঙ্গী ব্রিজ)। কিন্তু বিআরটি প্রকল্পের কাজের অংশ হিসেবে সেই সেতু অপসারণ করে সেখানে উড়ালসড়ক নির্মাণ করা হয়। নির্মাণকাজ চলাকালে নদ পারাপারের জন্য উড়ালসড়কের নিচে অস্থায়ীভাবে তিনটি বেইলি সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। এত দিন মানুষ বেইলি সেতু দিয়েই নদ পারাপার হতেন। কিন্তু এখন উড়ালসড়ক চালু হয়ে যাওয়ায় বেইলি সেতুগুলো অপসারণ করা হচ্ছে। এতে মানুষ ঠিকমতো নদ পার হতে পারছেন না। ফলে টঙ্গী বাজারে দিন দিন ক্রেতার সংখ্যা কমছে। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই বাধ্য হয়েই নদের ওপর বেইলি সেতুর দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন তাঁরা।

টঙ্গী বাজারের ব্যবসায়ী ও সাবেক বিএনপি নেতা রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের টঙ্গী বাজারে ২৫ হাজারের বেশি দোকান আছে। মূল সেতু অপসারণের পর মানুষ এত দিন অস্থায়ীভাবে নির্মিত বেইলি সেতু দিয়ে বাজারে যাতায়াত করত। কিন্তু এখন সেই বেইলি সেতুগুলো সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। এ কারণে বেশির ভাগ মানুষ বেকায়দায় পড়েছে। ঠিকমতো বাজারে আসা-যাওয়া করতে পারছে না। আমরা বেইলি সেতুগুলো অপসারণ না করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বহুবার যোগাযোগ করেছি। কিন্তু তাতেও কোনো সমাধান হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই আজকে সব ব্যবসায়ী রাস্তায় নেমেছি।’

দুপুর ১২টার দিকে টঙ্গী বাজারের পাশে উড়ালসড়কে গিয়ে ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। এ সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তির চিত্রও চোখে পড়ে।

বিক্ষোভ চলাকালে ঘটনাস্থলে আসেন গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কে এম শরিফুল আলম। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘নদ পারাপারে জন্য বিআরটি প্রকল্পের অধীনে একটি ও আমাদের (সওজ) পক্ষ থেকে আরও দুটি বেইলি সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারি মাসে অতিরিক্ত ওজন বহনের কারণে একটি সেতু ভেঙে যায়। এখন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) অনুমতি দিলে তুরাগ নদের ওপর আমরা স্থায়ীভাবে দুটি বেইলি সেতু স্থাপনের ব্যবস্থা করতে পারব।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত র গ নদ র নদ প র প র র ব যবস য় ব যবস য় র ল বন ধ

এছাড়াও পড়ুন:

ফতুল্লায় তিতাস গ্যাসের পাইপলাইন ফেটে তীব্র গন্ধ, আতঙ্ক-ভোগান্তি

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পঞ্চবটি এলাকায় উড়ালসড়কের নির্মাণকাজের সময় তিতাস গ্যাসের পাইপলাইন ফেটে গ্যাসের তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। এতে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফেটে যাওয়া পাইপলাইন মেরামতে আজ রোববার বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ। এতে ভোগান্তিতে পড়েন গ্রাহকেরা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও তিতাস গ্যাস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ফতুল্লার পঞ্চবটি বিসিক শিল্পনগর এলাকায় পঞ্চবটি-মুক্তারপুর উড়ালসড়ক নির্মাণকাজের সময় খননযন্ত্র দিয়ে মাটি খোঁড়ার সময় তিতাস গ্যাসের পাইপলাইন ফেটে যায়। খবর পেয়ে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে গিয়ে অস্থায়ীভাবে পাইপলাইনের ছিদ্র মেরামত করে। এরপর শহরের আল্লামা ইকবাল রোড, বাবুরাইল, গলাচিপা, বিসিকসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে গ্যাসের তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে আজ রোববার তিন ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখে ছিদ্রটি মেরামত করা হয়। সন্ধ্যা ছয়টায় গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়।

গ্যাসের গন্ধ ছড়ানোর কথা জানিয়ে শহরের আল্লামা ইকবাল রোডের বাসিন্দা ও নারায়ণগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ রুমন রেজা বলেন, ‘গ্যাসের এমন প্রকট গন্ধ কখনো দেখা যায়নি। এতে বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দ্রুত এ বিষয়ে তিতাসের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’ দক্ষিণ সস্তাপুর এলাকার মার্জিয়া রহমান বলেন, নোটিশ ছাড়াই আজ দুপুর দুইটার পর থেকে হঠাৎ করে চুলার গ্যাস চলে যায়। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আবার গ্যাস এসেছে।

পাইপলাইন ফেটে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে তিতাস গ্যাসের ফতুল্লা আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় পঞ্চবটি এলাকায় উড়ালসড়কের নির্মাণকাজের সময় এ ঘটনা ঘটে। অস্থায়ীভাবে ছিদ্রটি মেরামত করা হয়েছিল। আজ বেলা তিনটার দিকে মেইন পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখে স্থায়ীভাবে মেরামত করা হয়েছে। বিকেল পাঁচটার পর থেকে গ্যাস সরবরাহ চালু করা হয়েছে।

দুর্গন্ধ ছড়ানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে তিতাসের এই কর্মকর্তা জানান, কোথাও গ্যাসের পাইপলাইনে ছিদ্র হলে কেমিক্যাল (অডরেন্ট) ব্যবহার করা হয়, ছিদ্রটি খুঁজে বের করতে সহজ হয়। হয়তো কেমিক্যালটি পরিমাণের চেয়ে বেশি পড়েছে—এ কারণে ছিদ্র থেকে গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে থাকতে পারে। এ কারণে মানুষ ঝাঁজালো গ্যাসের গন্ধ পাচ্ছে। এতে দুর্ঘটনা ও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তিনি জানান, দ্বিতল উড়ালসড়ক নির্মাণকাজের জন্য এ পর্যন্ত ছোট-বড় মিলিয়ে ৩০-৩৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে।

মশিউর রহমান আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জে অধিকাংশ পাইপলাইন বহু বছর আগের। সেখানে ছিদ্র থেকে গন্ধ বের হয়ে থাকতে পারে। একেকটি পাইপলাইনে ২০-২৫ ফুট নিচে। এত নিচের পাইপলাইনের ছিদ্র মেরামত করা কঠিন। নতুন পাইপলাইন স্থাপন না করা হলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।

জানতে চাইলে তিতাস গ্যাসের নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মামুনার রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ছিদ্রটি মেরামত করার পর গ্যাস সরবরাহ চালু করা হয়েছে।

এর আগে গত বছরের ১২ মে ফতুল্লার পঞ্চবটি বিসিক শিল্পনগর এলাকায় পঞ্চবটি-মুক্তারপুর উড়ালসড়কের নির্মাণকাজের সময় মাটি খোঁড়ার সময় তিতাস গ্যাসের মেইন পাইপলাইন ফেটে বিস্ফোরণ থেকে আগুন ধরে গিয়েছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফতুল্লায় তিতাস গ্যাসের পাইপলাইন ফেটে তীব্র গন্ধ, আতঙ্ক-ভোগান্তি