সুনামগঞ্জে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ৪৫ ভাগও শেষ হয়নি
Published: 1st, March 2025 GMT
পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে। বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ থেকে জায়গাটির দূরত্ব মাত্র ৩৫ কিলোমিটার। ফলে সুনামগঞ্জ জেলায়ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি। এ কারণে প্রবল বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের জন্য ভাটির জেলা সুনামগঞ্জে দেখা দেয় অকাল বন্যা। আর মার্চের দিকে শুরু হওয়া এই বন্যায় হাওরের বোরো ধান ভাসিয়ে নিয়ে যায়। ফলে ধান রক্ষায় প্রতি বছর সুনামগঞ্জ জেলায় হাওরে নির্মাণ করা হয় ফসলরক্ষা বাঁধ।
এ বছরে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১৫ ডিসেম্বর বাঁধের নির্মাণ ও সংস্কার কাজে শুরু হয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শতভাগ শেষ করার কথা। কিন্তু এই সময়সীমা শেষ হয়ে গেলেও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় বেশিরভাগ বাঁধের কাজ এখনো শেষ হয়নি। ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’ এর নেতা ও কৃষকদের অভিযোগ, এখনো পর্যন্ত মাত্র ৪৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ থেকে শুরু হয় এই বাঁধের কাজ ৮৮ ভাগ শেষ হয়েছে। তবে স্থানীয় কৃষক ও লোকজনের দাবি, অনেক বাঁধে এখনো মাটির কাজই শেষ হয়নি। সঠিক সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ঢলে ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে বোরো ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
আরো পড়ুন:
মনিরামপুরে বাঁধ ভেঙে হাজার বিঘা ফসলি জমি প্লাবিত
দিতিকন্যার ‘মেয়েদের গল্প’ সিনেমায় থাকছেন না বাঁধন
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার ১২টি উপজেলার বিভিন্ন হাওরের ৫৮৮ কিলোমিটার ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ শুরু হয় ১৫ ডিসেম্বর। হাওরের বাঁধের কাজ বাস্তবায়ন করতে ৬৮৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করা হয়েছে। এ জন্য সরকার ১২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
দিরাই উপজেলার চাপতির হাওরের কৃষক সাদ্দাম হোসেন বলেন ‘‘আমরা সাধারণ কৃষক। টাকা-পয়সা ঋণ করে হাওরে ধান চাষ করছি। এখন যদি বাঁধের সঠিক কাজের অভাবে হাওর ডুবে যায়, তবে ঋণের টাকা ফেরত দেবো কীভাবে? পরিবার নিয়ে খাবো কী, আর চলবো কীভাবে? খুব চিন্তায় আছি।’’
আরেক কৃষক মাজিদ মিয়া বলেন, ‘‘হাওরের ধান নিয়ে সময় চিন্তা করতে হয়। বাঁধের এখনো মাটির কাজ চলছে। কোন দিন শেষ হবে এটাও জানি না। ২০২২ সালে পানির চাপে হাওরের বাঁধ ভেঙে সব ধান ধ্বংস হয়ে যায়। এবার সবচেয়ে বড় ভাঙা অংশের কাজ এখনো শেষ হয়নি, জানি না এবার কী আছে কপালে?’’
‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’এর সুনামগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক মিলন বলেন, ‘‘বাঁধের কাজ চলমান রয়েছে। এই কাজের যে অগ্রগতি, এখনো পর্যন্ত ৫৫ ভাগ কাজ শেষ হয়নি। বিভিন্ন উপজেলায় আমরা গিয়ে দেখেছি, বালি মাটি দিয়ে বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে। এখানে কৃষকদের নিয়ে একটা তামাশা শুরু করছে প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। অক্ষত বাঁধের ঘাস কেটে, মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে আবার বাঁধের উপর দিচ্ছে। এটিকেই নতুন বাঁধ দাবি করা হচ্ছে। মুলত এটা শুভঙ্করের ফাঁকি।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘বাঁধের কোনো অগ্রগতি নেই। কয়েকটি বাঁধকে মডেল হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে যে, বাঁধগুলোর মাটির কাজ শেষ কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। বাঁধের উপরের যে মাপ থাকার কথা, বাঁধের কমপেকশন থাকার কথা, বাঁধের গোড়া শক্ত থাকার কথা, আমরা বাস্তবে কোথায় এসব পাইনি। আমরা দেখেছি, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসন দায়সারা কাজ করছে।’’
‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ ১৫ ডিসেম্বর শুরু হয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হওয়ার কথা কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজের কোনো দিক-বেদিক নেই। এবার যদি হাওরের ফসল পানিতে ভেসে যায়, তার দায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিতে হবে।
তিনি বলেন, ‘‘আমরা বার বার তাগিদ দিয়ে আসছি কিন্তু তাদের অবহেলার জন্য এখনো বাঁধের কাজ শেষ হয়নি।’’
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-১ মামুন হাওলাদার বলেন, ‘‘জেলার হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজের ৮৮ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাঁধের কাজের জন্য আমরা আরো ১০ দিন সময় বাড়িয়েছি। আশা করছি, এই সময়ের মধ্যে বাকি কাজ শেষ করতে পারবো।’’
ঢাকা/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ন মগঞ জ ড স ম বর শ ষ হয়ন শ ষ হয় ফসল র র ফসল উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
সুনামগঞ্জে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ৪৫ ভাগও শেষ হয়নি
পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে। বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ থেকে জায়গাটির দূরত্ব মাত্র ৩৫ কিলোমিটার। ফলে সুনামগঞ্জ জেলায়ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি। এ কারণে প্রবল বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের জন্য ভাটির জেলা সুনামগঞ্জে দেখা দেয় অকাল বন্যা। আর মার্চের দিকে শুরু হওয়া এই বন্যায় হাওরের বোরো ধান ভাসিয়ে নিয়ে যায়। ফলে ধান রক্ষায় প্রতি বছর সুনামগঞ্জ জেলায় হাওরে নির্মাণ করা হয় ফসলরক্ষা বাঁধ।
এ বছরে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১৫ ডিসেম্বর বাঁধের নির্মাণ ও সংস্কার কাজে শুরু হয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শতভাগ শেষ করার কথা। কিন্তু এই সময়সীমা শেষ হয়ে গেলেও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় বেশিরভাগ বাঁধের কাজ এখনো শেষ হয়নি। ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’ এর নেতা ও কৃষকদের অভিযোগ, এখনো পর্যন্ত মাত্র ৪৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ থেকে শুরু হয় এই বাঁধের কাজ ৮৮ ভাগ শেষ হয়েছে। তবে স্থানীয় কৃষক ও লোকজনের দাবি, অনেক বাঁধে এখনো মাটির কাজই শেষ হয়নি। সঠিক সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ঢলে ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে বোরো ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
আরো পড়ুন:
মনিরামপুরে বাঁধ ভেঙে হাজার বিঘা ফসলি জমি প্লাবিত
দিতিকন্যার ‘মেয়েদের গল্প’ সিনেমায় থাকছেন না বাঁধন
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার ১২টি উপজেলার বিভিন্ন হাওরের ৫৮৮ কিলোমিটার ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ শুরু হয় ১৫ ডিসেম্বর। হাওরের বাঁধের কাজ বাস্তবায়ন করতে ৬৮৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করা হয়েছে। এ জন্য সরকার ১২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
দিরাই উপজেলার চাপতির হাওরের কৃষক সাদ্দাম হোসেন বলেন ‘‘আমরা সাধারণ কৃষক। টাকা-পয়সা ঋণ করে হাওরে ধান চাষ করছি। এখন যদি বাঁধের সঠিক কাজের অভাবে হাওর ডুবে যায়, তবে ঋণের টাকা ফেরত দেবো কীভাবে? পরিবার নিয়ে খাবো কী, আর চলবো কীভাবে? খুব চিন্তায় আছি।’’
আরেক কৃষক মাজিদ মিয়া বলেন, ‘‘হাওরের ধান নিয়ে সময় চিন্তা করতে হয়। বাঁধের এখনো মাটির কাজ চলছে। কোন দিন শেষ হবে এটাও জানি না। ২০২২ সালে পানির চাপে হাওরের বাঁধ ভেঙে সব ধান ধ্বংস হয়ে যায়। এবার সবচেয়ে বড় ভাঙা অংশের কাজ এখনো শেষ হয়নি, জানি না এবার কী আছে কপালে?’’
‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’এর সুনামগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক মিলন বলেন, ‘‘বাঁধের কাজ চলমান রয়েছে। এই কাজের যে অগ্রগতি, এখনো পর্যন্ত ৫৫ ভাগ কাজ শেষ হয়নি। বিভিন্ন উপজেলায় আমরা গিয়ে দেখেছি, বালি মাটি দিয়ে বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে। এখানে কৃষকদের নিয়ে একটা তামাশা শুরু করছে প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। অক্ষত বাঁধের ঘাস কেটে, মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে আবার বাঁধের উপর দিচ্ছে। এটিকেই নতুন বাঁধ দাবি করা হচ্ছে। মুলত এটা শুভঙ্করের ফাঁকি।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘বাঁধের কোনো অগ্রগতি নেই। কয়েকটি বাঁধকে মডেল হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে যে, বাঁধগুলোর মাটির কাজ শেষ কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। বাঁধের উপরের যে মাপ থাকার কথা, বাঁধের কমপেকশন থাকার কথা, বাঁধের গোড়া শক্ত থাকার কথা, আমরা বাস্তবে কোথায় এসব পাইনি। আমরা দেখেছি, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসন দায়সারা কাজ করছে।’’
‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ ১৫ ডিসেম্বর শুরু হয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হওয়ার কথা কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজের কোনো দিক-বেদিক নেই। এবার যদি হাওরের ফসল পানিতে ভেসে যায়, তার দায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিতে হবে।
তিনি বলেন, ‘‘আমরা বার বার তাগিদ দিয়ে আসছি কিন্তু তাদের অবহেলার জন্য এখনো বাঁধের কাজ শেষ হয়নি।’’
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-১ মামুন হাওলাদার বলেন, ‘‘জেলার হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজের ৮৮ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাঁধের কাজের জন্য আমরা আরো ১০ দিন সময় বাড়িয়েছি। আশা করছি, এই সময়ের মধ্যে বাকি কাজ শেষ করতে পারবো।’’
ঢাকা/বকুল