তামহার মালিকদের সম্পত্তি পুনরায় অবরুদ্ধের অনুরোধ বিএসইসির
Published: 1st, March 2025 GMT
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের (ট্রেক নম্বর- ০৮১) পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের সম্পত্তি (লালমাটিয়ার জমি-বাড়িসহ অন্যান্য স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ) পুনরায় অবরুদ্ধ করতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির লালমাটিয়ার জমি ও বাড়ি বিক্রির অর্থ আত্মসাৎ রোধ করতে বিএসইসির পক্ষ থেকে দুদককে এ অনুরোধ করা হয়েছে।
সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়ারিজ অ্যাফেয়ার্স ডিভিশনের সহকারী পরিচালক মো.
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাইজিংবিডি ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দুদকে পাঠানো বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেড কর্তৃক বিনিয়োগকারীর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মতিঝিল পুলিশ স্টেশনে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। পরবর্তী সময়ে মতিঝিল পুলিশ স্টেশন তা দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর তামহা সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হারুনুর রশিদসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রতারণামূলক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে একটি জিআর মামলা দায়ের করে, যার নম্বর-৫৩/২০২৩।
দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত ২০২৩ সালের ১৯ জুন তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিচালনা পর্যদের সদস্যদের নামীয় সম্পত্তি (লালমাটিয়ার জমি ও বাড়িসহ অন্যান্য স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ) ক্রোক করার আদেশ দেয়। কিন্তু, সম্প্রতি তামহা সিকিউরিটিজের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা পত্রের মাধ্যমে বিএসইসিকে অবহিত করে যে, পূবালী ব্যাংক পিএলসির শাহবাগ শাখার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেড কর্তৃক গৃহীত ঋণ পরিশোধের নিমিত্তে বিজ্ঞ আদালত প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের নামীয় সম্পত্তি (লালমাটিয়ার জমি ও বাড়ি) ক্রোকাদেশ থেকে অবমুক্ত করেছে।
চিঠিতে আরো উল্লেখ্য করা হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা আরো জানিয়েছেন যে, পূবালী ব্যাংক পিএলসি শাহবাগ শাখার কাছে তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ঋণের পরিমাণ ৫ কোটি টাকা। কিন্তু, সম্পত্তির (লালমাটিয়ার জমি ও বাড়ি) বর্তমান বাজারমূল্য ৩০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা এ সম্পত্তি বিক্রির অবশিষ্ট অর্থ তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের আত্মসাতের আশঙ্কা করছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা এই ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের নামীয় সম্পত্তি বিক্রির অর্থ আত্মসাৎ রোধ করতে এ সম্পত্তি পুনরায় ক্রোক করার অনুরোধ করেছে।
তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিচালনা পর্যদের সদস্যরা ওই সম্পত্তি বিক্রি করে সেই অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীগণের মধ্যে বিতরণ করবে বলে তাদের মধ্যে সম্পাদিত একটি চুক্তিপত্র দুদকে দাখিল করেছিলেন। এমতাবস্থায়, বিনিয়োগকারীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির পরিচালনা পর্যদের সদস্যদের নামীয় সম্পত্তি হিসেবে লালমাটিয়ার জমি ও বাড়ি বিক্রির অর্থ আত্মসাৎ রোধ করতে এই সম্পত্তি পুনরায় অবরুদ্ধ (ক্রোক) করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে দুদককে অনুরোধ করা হলো।
তামহা সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ
২০২১ সালে তামহা সিকিউরিটিজ অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে দুই শতাধিক বিনিয়োগকারীর ৮৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক ডুপ্লিকেট সফটওয়্যার ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীদের সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। ব্রোকারেজ হাউজটি দুটি ব্যাক অফিস সফটওয়্যার ব্যবহার করে গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এর মধ্যে একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের মিথ্যা ও ভুয়া বিবরণী ও পোর্টফোলিও স্টেটমেন্ট দেওয়া হতো। এ হাউজে গ্রহকদের মোট ঘাটতির পরিমাণ ছিল প্রায় ১৩৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে গ্রাহকের সমন্বিত হিসাবে ঘাটতি ৯২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ও শেয়ারের বাজারমূল্যের ঘাটতি ৪৭ কোটি ১১ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে অভিযোগ করা হলে ওই বছরের ৯ ডিসেম্বর বিএসইসি ওই প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন স্থগিত করে। পরে ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি তামহা সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হারুনুর রশিদ ও তার সহযোগীদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
এদিকে, গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের দায়ে পুঁজিবাজারে শেয়ার লেনদেন ও ডিপোজিটরি পার্টিসিপেন্ট (ডিপি) স্থগিত হওয়া ব্রোকার হাউজ তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ মোট ১৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে, ব্রোকারেজ হাউজটির একটি সফটওয়্যারে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের প্রকৃত হিসাব রাখা হতো, যা সিডিবিএলের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। ব্যাক অফিস সফটওয়্যারটি সিডিবিএলের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল না। এ ব্যাক অফিস সফটওয়্যারটি বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাতের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলা
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলার আসামিরা হলেন—তামহা সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ, পরিচালক জাহানারা পারভীন ও ড. শাহনাজ বেগম, চার জন অ্যাকাউন্টস এক্সিকিউটিভ ও অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ (আব্দুর রহমান তালাল, সাঈদ চৌধুরী, মো. দেলোয়ার হোসেন ও মোহাম্মদ সাইদুজ্জামান), অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ মো. গোলাম রসুল, শেরাটন শাখার ইনচার্জ ও অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ এ এম আলমগীর কবীর, শেরাটন শাখার ম্যানেজার ও অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ মো. ওয়ারিছ উদ্দিন, অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ মো. ফায়েজুর রহমান, সেটেলমেন্ট অফিসার (সিডিবিএল অফিসার) ও অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ মো. শাহরিয়ার কবীর, অ্যাকাউন্টস এক্সিকিউটিভ ও অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ জি এম আজাদ হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের গাড়িচালক মো. মামুন হোসেন ও অফিস সহকারী মো. হাসান।
তামহা সিকিউরিটিজ ২০০৫ সালের ১৯ জানুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) নিবন্ধিত হয়।
ঢাকা/এনটি/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সফটওয় য র ব এসইস র অন র ধ স থ বর র ধ কর ধ করত
এছাড়াও পড়ুন:
বিনা মূল্যে মাইক্রোসফট অফিস ব্যবহারের সুযোগ আসছে, তবে...
কম্পিউটারে মাইক্রোসফট অফিস স্যুটের সফটওয়্যার অর্থাৎ ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট বিনা মূল্যেই ব্যবহার করেন অনেকে। তবে সেগুলো যে পাইরেটেড সংস্করণ, তা অনেকে জানেন, আবার অনেকে না জেনেই ব্যবহার করছেন। এবার পরীক্ষামূলকভাবে বিনা মূল্যের একটি অফিস সংস্করণ চালু করেছে মাইক্রোসফট। সংস্করণটি কাজে লাগিয়ে মাইক্রোসফট ৩৬৫ সাবস্ক্রিপশন বা লাইসেন্স কী ছাড়াই ওয়ার্ড, এক্সেল ও পাওয়ার পয়েন্ট-এর মতো জনপ্রিয় সফটওয়্যার ব্যবহার করা যাবে।
নতুন এই সংস্করণে ডকুমেন্ট তৈরি ও সম্পাদনা করা গেলেও তা কেবল মাইক্রোসফটের ক্লাউড স্টোরেজ ওয়ান ড্রাইভে সংরক্ষণ করতে হবে। অর্থাৎ, সরাসরি কম্পিউটারে ফাইল সংরক্ষণের সুবিধা থাকছে না। এ ছাড়া, বিনা মূল্যের এই সংস্করণে প্রতি দুই ঘণ্টা পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১৫ সেকেন্ডের একটি বিজ্ঞাপন দেখানো হবে। একই সঙ্গে এতে অ্যাড-ইন ইনস্টল, ওয়াটারমার্ক যোগ, তথ্য বিশ্লেষণের মতো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাও পাওয়া যাবে না।
বিনা মূল্যে এই অফিস সংস্করণ ব্যবহার করতে হলে মাইক্রোসফটের ওয়েবসাইট থেকে সফটওয়্যারটির সেটআপ ফাইল ডাউনলোড করে ইনস্টল করতে হবে। চালুর পর সাইন-ইন করার অনুরোধ দেখা গেলে ‘স্কিপ সাইন-ইন ফর নাউ’ অপশন নির্বাচন করতে হবে। এরপর ‘কনটিনিউ ফর ফ্রি’ অপশন নির্বাচন করে ‘সেভ টু ওয়ান ড্রাইভ’ অপশন বেছে নিলেই সংস্করণটি ব্যবহার করা যাবে।
সংস্করণটি এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে এবং নির্দিষ্টসংখ্যক ব্যবহারকারীর জন্য সীমিতভাবে চালু করা হয়েছে। প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট পিসি ওয়ার্ল্ডের এক প্রতিবেদনে মাইক্রোসফটের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, সীমিত পরিসরে এই সংস্করণের পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। তবে এটি সবার জন্য উন্মুক্ত করার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।