সমর্থকদের বাজে আচরণের দায়ে রিয়াল মাদ্রিদকে ৩০ হাজার ইউরো জরিমানা করেছে ইউরোপীয় ফুটবল সংস্থা উয়েফা। পাশাপাশি সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে আংশিক গ্যালারি নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়েছে, যা আপাতত স্থগিত থাকবে। দুই বছরের মধ্যে ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।

উয়েফার শাস্তি বিষয়ক সংবাদবিজ্ঞপ্তিতে কোনো নির্দিষ্ট ঘটনার উল্লেখ না থাকলে এটি পেপ গার্দিওলার সঙ্গে আচরণের জেরে এসেছে জানিয়েছে ইউরোপীয় গণমাধ্যম। গত ২০ ফেব্রুয়ারি বার্নাব্যুতে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হয় ম্যানচেস্টার সিটি।

রিয়াল মাদ্রিদের ৩-১ ব্যবধানে জয়ের ম্যাচটিতে সিটি কোচ গার্দিওলাকে উদ্দেশ্য করে কিছু স্লোগান দেন রিয়াল দর্শকদের একাংশ। যা সমকামিতা সংশ্লিষ্ট। এ ঘটনায় তদন্ত শেষে রায় দিয়েছে উয়েফার আপিল বোর্ড।

২০ ফেব্রুয়ারি সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল দর্শকের অন্যতম লক্ষ্যবস্তু ছিলেন পেপ গার্দিওলা।.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

এটিএম আজহারুলের মামলায় তাজুল ইসলামের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন

বাংলাদেশের আইন অঙ্গনে একটি ‘অভূতপূর্ব’ ঘটনা ঘটছে। ঘটনাটি ঘটছে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের করা রিভিউ আবেদনের শুনানিকে কেন্দ্র করে। জামায়াতের পক্ষ থেকে আজহারুলের মুক্তির দাবির মধ্যে এ ঘটনা নানা প্রশ্ন ও বিতর্ক তৈরি করেছে। 

২৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ আজহারুলের করা রিভিউ আবেদন শুনানির জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন। রিভিউ আবেদন শুনানির বিষয়টি উত্থাপন করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। (প্রথম আলো অনলাইন, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫)

মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আজহারুলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা চলাকালে তাঁর পক্ষের আইনজীবী ছিলেন তাজুল ইসলাম। গত ৫ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার তাজুল ইসলামকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দেয়। এর ফলে আজহারুলের বিরুদ্ধে মামলায় তাজুল ইসলামের সংশ্লিষ্টতা ‘স্বার্থের সংঘাত’ (কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট) তৈরি করেছে কি না এবং তিনি পেশাগত আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন কি না—এমন প্রশ্ন তুলেছেন সুপ্রিম কোর্টের একাধিক আইনজীবী।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি মামলায় একজন আইনজীবী কখনো পক্ষ পরিবর্তন করতে পারেন না। অর্থাৎ কখনো বিবাদীর পক্ষে থাকলে আবার পরে বিবাদীর বিপক্ষে যেতে পারেন না। রাষ্ট্রপক্ষ বা কোনো ট্রাইব্যুনালের আইনজীবীর ক্ষেত্রেও এটা একইভাবে প্রযোজ্য।’

শাহদীন মালিক আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলাগুলো খুবই স্পর্শকাতর। তাই এ মামলায় আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন ছিল। আজহারুলের মামলার ক্ষেত্রে কোনো আইনজীবী পেশাগত আচরণ ও শিষ্টাচারবিধি লঙ্ঘন করেছেন কি না, তা বার কাউন্সিলের যাচাই-বাছাই করে দেখা উচিত।’ 

‘অভিভাবক সংস্থা’ হিসেবে আইনজীবীদের পেশাগত আচরণ ও শিষ্টাচারের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল পেশাগত আচরণ ও শিষ্টাচার বিধিমালার দ্বিতীয় অধ্যায়ের (মক্কেলের প্রতি আচরণ) ২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘বর্তমান মক্কেল কিংবা পুরাতন মক্কেলের মামলা পরিচালনাকালে একজন আইনজীবী যদি মামলা-সংক্রান্ত কোনো গোপনীয় তথ্যাদি সম্বন্ধে অবগত হইয়া থাকেন, তবে উক্ত আইনজীবী উক্ত তথ্য নির্ভর কোনো মামলায় উক্ত মক্কেলের বিপক্ষে আইনজীবী হিসেবে নিয়োজিত হইতে পারিবেন না।...’

একই অধ্যায়ের ৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘একজন আইনজীবী পরস্পরবিরোধী কোনো ব্যাপারে কোনো মক্কেলের প্রতিনিধিত্ব করিতে পারিবেন না।’  

মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আজহারুলকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আপিল করেন আজহারুল। এই আপিলের ওপর শুনানি শেষে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজহারুলের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগ রায় দেন।

লক্ষণীয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলাগুলোর বাদী হিসেবে থাকেন চিফ প্রসিকিউটর। এ কারণে আজহারুলের রিভিউ শুনানিতে তাজুল ইসলাম আনুষ্ঠানিকভাবে অংশগ্রহণ না করলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে তিনি এখন এই মামলার বাদী। অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের যে মামলাগুলোতে তিনি বিবাদীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন, চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর তিনি হয়ে গেছেন বাদীপক্ষের প্রধান আইনজীবী।

আজহারুলের মামলায় তাজুল ইসলামের সংশ্লিষ্টতা একটি ‘অভূতপূর্ব’ পরিস্থিতি তৈরি করেছে এবং তা বার কাউন্সিলের পেশাগত আচরণ ও শিষ্টাচারবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। তিনি প্রথম আলোকে
বলেন, যে বা যাঁরা আগে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবী ছিলেন, তাঁদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় বিষয়টি নানা প্রশ্ন তৈরি করেছে। তাঁদের এই নিয়োগ নৈতিকভাবে সঠিক হবে কি না কিংবা ‘স্বার্থের সংঘাত’ তৈরি করবে কি না, অন্তর্বর্তী সরকারের আগেই তা বিবেচনায় নেওয়া উচিত ছিল।

তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর এ টি এম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এ রায় নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননার অভিযোগ করা হয়েছিল। তবে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে তিনি সেই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়েছিলেন। (প্রথম আলো, ৫ মে ২০১৫)

তাজুল ইসলাম জামায়াতঘনিষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ট্রাইব্যুনালে যেসব জামায়াত নেতার বিচার হয়েছিল, তাঁদের অনেকের আইনজীবী হিসেবে তিনি কাজ করেছেন। ২০১৯ সালে জামায়াতের ‘সংস্কারপন্থীরা’ জন-আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ নামে নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করেন। এক বছর পর ২০২০ সালে এবি (আমার বাংলাদেশ) পার্টি গঠনের ঘোষণা দেন তাঁরা। তাজুল ইসলাম ছিলেন এই দলের যুগ্ম আহ্বায়ক। ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর তিনি দল থেকে পদত্যাগ করেন।

আজহারুলের মামলার ঘটনাক্রম

মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আজহারুলকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আপিল করেন আজহারুল। এই আপিলের ওপর শুনানি শেষে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজহারুলের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগ রায় দেন। 

পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর তা পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগে আবেদন করেন তিনি। ২০২৫ সালের ২৩ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রিভিউ শুনানির জন্য ২০ ফেব্রুয়ারি দিন রাখেন। তবে তাঁর রিভিউ আবেদনের শুনানি শুরু হয় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি। আজহারুল বর্তমানে কারাগারে আছেন।

আজহারুলের মুক্তির দাবি ও ‘আদালত অবমাননা’

আজহারুলের মুক্তির দাবিতে ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে তাঁর দল জামায়াত। একই দাবিতে ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে ‘গণ-অবস্থান’ কর্মসূচি দেয় জামায়াত। এদিকে আজহারুলের মুক্তির দাবিতে সেদিন স্বেচ্ছায় গ্রেপ্তার হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন দলটির আমির শফিকুর রহমান। তবে ২৪ ফেব্রুয়ারি দুটি কর্মসূচিই প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। 

সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন একটি বিষয়ে এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। 

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মো. আবদুল মতিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদালতের রায় নিয়ে কারও অসন্তোষ থাকলে সেটারও আইনি প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। রিভিউ খারিজ হলে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চেয়ে আবেদন করা যায়। কিন্তু সে পথে না গিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া আদালতের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যা আদালত অবমাননার শামিল।’

মনজুরুল ইসলামপ্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রিয়াল মাদ্রিদকে বড় অঙ্কের জরিমানা উয়েফার
  • তরুণদের আমরা দেশের বর্তমান হয়ে উঠতে দিইনি
  • এক হাটের ইজারা মূল্য পৌনে পাঁচ কোটি টাকা
  • বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক লামা
  • ভিকটিম ব্লেমিংয়ের রাজনীতি বনাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
  • এটিএম আজহারুলের মামলায় তাজুল ইসলামের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন
  • চার ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ ফেরত দিল হামাস, ৬০০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি
  • শিশুর অকাল বয়ঃসন্ধি হলে করণীয়