রমজানে দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ সরকারের জন্য পরীক্ষা: এবি পার্টি
Published: 1st, March 2025 GMT
পবিত্র রমজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও যানজট নিরসন সরকারের জন্য পরীক্ষা বলেছেন আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। তিনি বলেন, এই পরীক্ষায় সরকারকে পাস করতে হবে। অন্যথায় এই সরকারের দ্বারা একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে অনাস্থা সৃষ্টি হবে।
দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ শনিবার সকালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন মজিবুর রহমান এ দাবি জানান। রমজানে যানজট নিরসনসহ সারা দেশে যোগাযোগব্যবস্থায় জনভোগান্তি দূর করতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ সহযোগিতায় বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন মজিবুর রহমান মঞ্জু।
মজিবুর রহমান মঞ্জু প্রতিবছরের মতো এবারও পবিত্র রমজান মাসে প্রতিদিন কয়েক হাজার ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষের জন্য ইফতারে স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাবার বিতরণের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংলগ্ন বিজয়-৭১ চত্বরে প্রতিদিন এই গণ-ইফতার অনুষ্ঠিত হবে।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘রমজান মাস এলে কৃত্রিমভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির একটা আশঙ্কা তৈরি হয়, অপরাধী চক্র সক্রিয় হয় ছিনতাই, চুরি, ডাকাতিসহ নানা নৈরাজ্য কর্মকাণ্ডে। এসব বিষয়ের পেছনে অতীতে সরকারের মদদপুষ্ট সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজ গ্রুপ ও দলীয় সন্ত্রাসীরা জড়িত থাকত। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নির্দিষ্ট কোনো দলের সরকার না। তাদের মদদপুষ্ট সিন্ডিকেট বা চাঁদাবাজ গ্রুপ নেই। তাহলে কেন এবারের রমজান ভয়, শঙ্কামুক্ত হবে না?’
সংবাদ সম্মেলনে এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান লে.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নির্দেশনার পাশাপাশি তৎপরতাও বাড়াতে হবে
নিরাপদ পরিবেশে ঈদুল ফিতর উদ্যাপনের জন্য এবং ঈদে বাসাবাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানের সার্বিক নিরাপত্তায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) যে ১৪টি নির্দেশনা জারি করেছে, তা গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করি। তারা বাসাবাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, ব্যাংক-বিমাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানে পাহারা জোরদার ও সার্বক্ষণিক নজরদারির ওপর জোর দিয়েছে।
আমরাও মনে করি, জননিরাপত্তার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি নাগরিকদেরও উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে। নাগরিকেরা কোথায় কী মালামাল রেখে যান, সেটা তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর সদস্যদের জানার কথা নয়। কিন্তু ডিএমপি যখন নাগরিকদের এসব নির্দেশনা ও সদুপদেশ দিচ্ছে, তখনই ঢাকা শহরে র্যাবের নামে একের পর এক ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। বুধবার ভোরে র্যাবের নাম করে একদল ডাকাত ধানমন্ডির ৮ নম্বর সড়কে একটি ছয়তলা ভবনে প্রায় সাড়ে ৩৬ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে। এমনকি ঘটনার সময় পুলিশ অভিযান চালাতে গেলে ডাকাতেরা তাদের ওপর হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে আহত করে। পুলিশের ভাষ্য, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয় দিয়ে ডাকাতি করেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এর আগে ৯ মার্চ ও ১২ ডিসেম্বরও র্যাবের পরিচয়ে যথাক্রমে পুরান ঢাকা ও মোহাম্মদপুরে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
আবাসিক এলাকায় একের পর এক ডাকাতির ঘটনা কী বার্তা দেয়? র্যাব গঠিত হওয়ার পর থেকে এর কর্মকাণ্ড নিয়ে দেশের ভেতরে ও বাইরে তীব্র সমালোচনা হয়। যুক্তরাষ্ট্র এই বাহিনীর সাতজন সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। আওয়ামী লীগ সরকার সেই সমালোচনাকে হাওয়ায় উড়িয়ে দিতে গিয়ে নিজেরাই ‘উড়ে’ গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত পুলিশ সংস্কার কমিশন র্যাবের প্রয়োজনীয়তা পুনর্মূল্যায়নের সুপারিশ করেছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন পুরোপুরি বাতিলের কথা বলেছে। অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। বাংলাদেশে কোনো বাহিনী বাতিল বা পরিত্যক্ত ঘোষণার উদাহরণ আছে। পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জাতীয় রক্ষীয় বাহিনী ভেঙে দেওয়া হয়। তাদের সদস্যদের সেনাবাহিনীতে একীভূত করা হয়েছিল।
ঈদে বাড়ি বা সড়কে মানুষ নিজের নিরাপত্তার বিষয়ে অবশ্যই সজাগ থাকবে। এর অর্থ এই নয় যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরও বেশি তৎপর থাকবে না। সাম্প্রতিক কালে ছিনতাই, ডাকাতি, চুরিসহ সব ধরনের অপরাধই বেড়ে চলেছে। তদুপরি যে খবরটি আমাদের বিচলিত করে, সেটি হলো এসব অপরাধের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বর্তমান কিংবা সাবেক সদস্যদের যুক্ত থাকা। যখন রক্ষকই ভক্ষকের ভূমিকায় নামে, তখন আর জনগণ নিজেদের নিরাপদ ভাবতে পারে না।
ডিএমপি ঢাকার বাসিন্দাদের ঈদের সময় সজাগ থাকতে বলেছে। আশা করি, অন্যান্য বড় শহরেও জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঈদের সময় কেবল বাসাবাড়ি বা পর্যটন এলাকা নয়, চলাচলের পথও নিরাপদ রাখতে হবে। বিশেষ করে সড়কপথে ছিনতাই–ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। হাইওয়ে পুলিশকে এখানে আরও তৎপর হতে হবে। ঈদের সময় যানবাহনের অত্যধিক চাপ থাকে এবং কোনো কোনো সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এই সুযোগে ডাকাত ও ছিনতাইকারী চক্র বেপরোয়া হয়ে ওঠে। অনেক সময় পরিবহনকর্মীদের সঙ্গে তাদের যোগসাজশও থাকে। জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও নিজেদের সজাগ রাখুক।