কাশিয়ানীতে ৫ মাসে ২৩ ট্রান্সফরমার চুরি, সেচ ব্যাহত
Published: 1st, March 2025 GMT
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে একের পর এক পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হচ্ছে। বিশেষ করে সেচ কাজে ব্যবহৃত ট্রান্সফরমার চুরি হচ্ছে। রাতের আঁধারে কে বা করা এ সব ট্রান্সফরমার চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। গত পাঁচ মাসে প্রায় ১৬ লাখ টাকা মূল্যের ২৩টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ায় বিদ্যতিহীন থাকার শঙ্কায় রয়েছেন পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকরা। সেইসঙ্গে সেচ কাজে ব্যবহৃত ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা।
পল্লী বিদ্যুতের কাশিয়ানী জোনাল অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ২৩টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে ১৫ কিলো ভোল্ট অ্যাম্পিয়ার (কেভিএ) ১০টি, ১০ কেভিএ ৯টি ও ৫ কেভিএ ৪টি। যার আনুমানিক মূল্য ১৬ লাখ টাকা। সর্বশেষ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি উপজেলার পোনা গ্রামের সাহেব বাড়ি এলাকার বৈদ্যুতিক খুঁটির ট্রান্সফরমার চুরি করে নিয়ে গেছে চোরেরা। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষ থানায় এজাহার দিলেও চোর ধরা পড়েনি।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিয়মানুযায়ী, প্রথম দফা ট্রান্সফরমার চুরি হলে নতুন ট্রান্সফরমার লাগাতে গ্রাহককে অর্ধেক মূল্য সমিতিকে ভর্তুকি দিতে হয়। আর দ্বিতীয় দফা চুরি হলে ট্রান্সফরমারের মূল্যের সম্পূর্ণ টাকা সমিতিকে দিয়ে গ্রাহককে ট্রান্সফরমার কিনতে হবে। যা দরিদ্র গ্রাহকদের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য।
আরো পড়ুন:
বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিট চালু
মুন্সীগঞ্জে ফসলি জমির ওপর দিয়ে বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণ বন্ধের দাবি
উপজেলার সাজাইল ইউনিয়নের ডাঙ্গা মাজড়া গ্রামের বাসিন্দা মো.
গোপালগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কাশিয়ানী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. গোলাম ফারুক ট্রান্সফরমার চুরির বিষয় নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, প্রতিটি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় থানায় এজাহার দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও কোনো চোরকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। ট্রান্সফরমার চুরি রোধে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
কাশিয়ানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিউদ্দিন খান জানান, ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। চোরদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা/বাদল/বকুল
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ঢেকে রাখা সেই মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরালে শেখ মুজিবের স্মৃতিচিহ্ন ভেঙে ফেলা হলো
লালমনিরহাট শহরের শিশুপার্ক সংলগ্ন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিমঞ্চে স্থাপিত ম্যুরালের কিছু অংশ ভেঙে ফেলেছে জেলা প্রশাসন। ২৬ মার্চ জেলা প্রশাসন ওই ম্যুরালটি কাপড় দিয়ে ঢেকে অনুষ্ঠান পরিচালনা করে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি ও গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কাপড় দিয়ে ম্যুরাল ঢেকে দেওয়ার ঘটনায় মুখোমুখি অবস্থান নেয় জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম পার না হতেই রোববার জেলা প্রশাসন মুক্তিযুদ্বের স্মৃতিচিহ্ন ম্যুরাল ভাঙার কাজে হাত দেয়।
এর আগে শনিবার দুপুুরে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মঞ্চে দু’টি পক্ষ একই সময়ে সংবাদ সম্মেলনের ডাক দিলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দুপুর সাড়ে ১১টায় ওই এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করলেও জাতীয় নাগরিক পার্টি করতে পারেননি।
মুক্তিযুদ্ব স্মৃতি মঞ্চে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লালমনিরহাট শাখার প্রধান সমন্বয়ক হামিদুর রহমান ম্যুরাল অপসারণ ও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরাতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন। এ সময় তিনি দাবি করে বলেন, ‘এই ম্যুরালটি স্বাধীন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস বহন করে না। বাকশাল প্রতিষ্ঠাকারী স্বৈরাচার শেখ মুজিবুর রহমানকে অতিরঞ্জিত উপস্থাপন ও ইতিহাস বিকৃতি করায় এর আগেও ১৬ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসন ম্যুরালটি ঢেকে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫২, ৭১ এর সকল সত্য ইতিহাস অক্ষুণ্ণ রেখে অতিরঞ্জিত অংশ ও স্বৈরাচারের চিহ্ন ঢেকে দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট তা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পুরো দেয়াল ঢেকে দেয়, যা অনাকাঙ্খিত। কিছু স্বৈরাচারের দোসর তাদের ব্যক্তিগত আক্রোশ, স্বার্থ উদ্ধার ও বর্তমান সরকারের কার্যক্রমকে বিতর্কিত করতে জেলা প্রশাসনের কার্যক্রমকে ভুলভাবে প্রচার করতে থাকে এবং বিদ্বেষবশত মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ম্যুরাল ঢেকে দেওয়ার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অবগত ছিল না, তাঁরা এমন কোনো দাবিও করে নাই। স্বৈরাচারের সকল চিহ্ন ও ম্যুরাল অপসারণ ছাত্রজনতার দাবি ও গণআকাঙ্খা।’
সংবাদ সম্মেলন শেষে জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের মুক্তিযোদ্ধারা স্মৃতিসৌধ এলাকায় যান। সেখানে জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি হাফিজুর রহমান হাফিজ জানান, ম্যুরালের মধ্যেই বৈষম্য রয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানে যেমন অবদান রয়েছে তেমনি স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানেরও অবদান রয়েছে। অথচ ম্যুরালে জিয়াউর রহমানের কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই। এটা বৈষম্য। এই ম্যুরাল রাখা ঠিক নয়।
শনিবার জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) রাসেল আহমেদ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে গেলে তোপের মুখে পড়েন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই ম্যুরালে ৫২ ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার গঠন, চরমপত্র পাঠ, ৭১ এর গণহত্যা, বিজয় উল্লাসে মুক্তিযোদ্ধা, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ ও পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্মৃতিচিহ্ন ঢেকে দিয়ে চরম ধৃষ্ঠতা দেখিয়েছেন জেলা প্রশাসন। পরে তাঁরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর দায় চাপিয়েছেন। ৭১ ও ২৪কে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে জাতিকে বিভাজিত করে আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্র চলছে। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ৭১ এর অস্তিত্ব ধরে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাদ দিয়ে অন্যগুলোর সঙ্গে আমাদের কোনো মতানৈক্য নেই।
২৬ মার্চ বুধবার সকালে সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্বাঞ্জলি দিতে গেলে কাপড় দিয়ে মুরাল ঢেকে রাখার বিষয়টি চোখে পড়ে। সনাক সদস্যরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ফিরে যান। পরে লালমনিরহাট রেলওয়ে শহীদ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্বাঞ্জলি দেন তাঁরা। গত ১৬ ডিসেম্বরও একই রকম ঘটনা ঘটায় জেলা প্রশাসন। ১৪০ ফুট দীর্ঘ ওই ম্যুরালে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ, মুজিবনগর সরকার গঠন, চরমপত্র পাঠ, উদিত সূর্য, ৭১ এর গণহত্যা, মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানি, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ ও পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দারের বক্তব্য জানতে তাঁর ফোনে মেসেজ এবং ফোন দিলে কোনো সাড়া মেলেনি।