ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহন চলাচলের গতিসীমা ৬০ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৮০ কিলোমিটার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে এই গতিসীমা কার্যকর হয়েছে। এর চেয়ে বেশি গতিসীমায় যানবাহন চালালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) মামলা করবে।

আজ শনিবার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গিয়ে দেখা গেছে, বৈদ্যুতিক বোর্ডে যানবাহন চলাচলের নতুন গতিসীমা জানানো হচ্ছে। রাস্তার পাশে ৮০ কিলোমিটার লেখা সংকেত বসানো হয়েছে। সড়ক বরাবর সামনে বৈদ্যুতিক বোর্ডে ৮০ কিলোমিটার গতিসীমা মেনে চলতে বলা হচ্ছে। তবে এখনো সড়কের পাশে ম্যানুয়াল সংকেতে ৬০ কিলোমিটার লেখা দেখানো হচ্ছে। সেটি সরানো হয়নি।

নতুন গতিসীমা কার্যকর হওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) কোম্পানি লিমিটেডের যান চলাচল, সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক ক্যাপ্টেন (অব.

) হাসিব হাসান খান। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে ৮০ কিলোমিটার গতিসীমা কার্যকর হয়েছে। প্রথমে ডিএমপি এবং পরে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দেওয়ার পর নতুন গতিসীমা কার্যকর করা হয়েছে।

২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর এক্সপ্রেসওয়ে চালুর পর থেকে গতিসীমা ৬০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হলেও কখনো তা মেনে চলতে দেখা যায়নি। যানবাহন দ্রুত চলার জন্য যে পথ তৈরি করা হয়েছে, সেখানে এত কম গতিসীমা নির্ধারণ করা নিয়ে সমালোচনা ছিল। কোনো যানবাহনকেই সেই গতিসীমা মেনে চলতে দেখা যায়নি। কর্তৃপক্ষও এ নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করেনি। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সেন্ট্রাল কন্ট্রোল বিল্ডিংয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে অতিরিক্ত গতিতে যানবাহন চালালে ভিডিও দেখে ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে মামলা দেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এর পর থেকে এক্সপ্রেসওয়ের কয়েকটি স্থানে গতিসীমা নজরদারির যন্ত্র স্পিডগান নিয়ে পুলিশের একাধিক দলকে অবস্থান করে অনেক যানবাহনকে মামলা করতে দেখা গেছে। যদিও ওই সময় ৮০ কিলোমিটার গতিসীমা কার্যকর হয়নি।

ফলে বৃহস্পতিবারের আগে যেসব মামলা হয়েছে সেটা কোন গতিসীমা লঙ্ঘন করলে হয়েছে, তা জানতে চাইলে হাসিব হাসান খান বলেন, ‘আমার জানামতে ওই সময় ৮০ কিলোমিটারের বেশি গাড়ি না চালালে কোনো মামলা দেওয়া হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘ভিডিও ক্যামেরাগুলো আমাদের কেন্দ্রীয় কমান্ড সেন্টারে। কোনো যানবাহন গতিসীমা অতিক্রম করলে মামলা করার জন্য আমরা পুলিশকে বলব। মামলা করবে ডিএমপি। দিনে গড়ে ৪০০ গাড়ি ৮০ কিলোমিটারের বেশি গতিসীমা অতিক্রম করেছে।’

এর আগে সংবাদ সম্মেলনে হাসিব হাসান খান জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় কমান্ড সেন্টারে সার্বক্ষণিক পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকা সম্ভব নয়। সে জন্য তাঁরা একটা কেব্‌লের মাধ্যমে পুলিশের দপ্তরে সংযোগ দেবেন, যাতে পুলিশ সেখানে বসেই তদারক করতে পারেন। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের যাত্রা শুরুর পর থেকে তাঁরা মূলত পাঁচটি সমস্যা মোকাবিলা করছেন। এগুলো হলো ওভারহিট গাড়ি, চাকা পাংচার হওয়া, জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়া, বিমানবন্দরের যাত্রীসেবা, দুর্ঘটনা। চালুর পর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত বড় আকারের ১০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে দিনে গড়ে ৫৫ হাজার গাড়ি চলাচল করে। এর বেশির ভাগ ব্যক্তিগত। এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে কাওলা থেকে রেললাইন ধরে তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর হয়ে যাত্রাবাড়ীর কাছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালীতে গিয়ে শেষ হবে এই সড়ক। পুরো সড়কের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ৮০ ক ল ম ট র ন গত স ম র পর থ ক র গত স ম ক র যকর ড এমপ

এছাড়াও পড়ুন:

ঢেকে রাখা সেই মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরালে শেখ মুজিবের স্মৃতিচিহ্ন ভেঙে ফেলা হলো   

লালমনিরহাট শহরের শিশুপার্ক সংলগ্ন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিমঞ্চে স্থাপিত ম্যুরালের কিছু অংশ ভেঙে ফেলেছে জেলা প্রশাসন। ২৬ মার্চ জেলা প্রশাসন ওই ম্যুরালটি কাপড় দিয়ে ঢেকে অনুষ্ঠান পরিচালনা করে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি ও গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কাপড় দিয়ে ম্যুরাল ঢেকে দেওয়ার ঘটনায় মুখোমুখি অবস্থান নেয় জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম পার না হতেই রোববার জেলা প্রশাসন মুক্তিযুদ্বের স্মৃতিচিহ্ন  ম্যুরাল ভাঙার কাজে হাত দেয়। 

এর আগে শনিবার দুপুুরে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মঞ্চে দু’টি পক্ষ একই সময়ে সংবাদ সম্মেলনের ডাক দিলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দুপুর সাড়ে ১১টায় ওই এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করলেও জাতীয় নাগরিক পার্টি করতে পারেননি। 

মুক্তিযুদ্ব স্মৃতি মঞ্চে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লালমনিরহাট শাখার প্রধান সমন্বয়ক হামিদুর রহমান ম্যুরাল অপসারণ ও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরাতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন। এ সময় তিনি দাবি করে বলেন, ‘এই ম্যুরালটি স্বাধীন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস বহন করে না। বাকশাল প্রতিষ্ঠাকারী স্বৈরাচার শেখ মুজিবুর রহমানকে অতিরঞ্জিত উপস্থাপন ও ইতিহাস বিকৃতি করায় এর আগেও ১৬ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসন ম্যুরালটি ঢেকে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫২, ৭১ এর সকল সত্য ইতিহাস অক্ষুণ্ণ রেখে অতিরঞ্জিত অংশ ও স্বৈরাচারের চিহ্ন ঢেকে দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট তা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পুরো দেয়াল ঢেকে দেয়, যা অনাকাঙ্খিত। কিছু স্বৈরাচারের দোসর তাদের ব্যক্তিগত  আক্রোশ, স্বার্থ উদ্ধার ও বর্তমান সরকারের কার্যক্রমকে বিতর্কিত করতে জেলা প্রশাসনের কার্যক্রমকে ভুলভাবে প্রচার করতে থাকে এবং বিদ্বেষবশত মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ম্যুরাল ঢেকে দেওয়ার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অবগত ছিল না, তাঁরা এমন কোনো দাবিও করে নাই। স্বৈরাচারের সকল চিহ্ন ও ম্যুরাল অপসারণ ছাত্রজনতার দাবি ও গণআকাঙ্খা।’ 

সংবাদ সম্মেলন শেষে জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের মুক্তিযোদ্ধারা স্মৃতিসৌধ এলাকায় যান। সেখানে জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি হাফিজুর রহমান হাফিজ জানান, ম্যুরালের মধ্যেই বৈষম্য রয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানে যেমন অবদান রয়েছে তেমনি স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানেরও অবদান রয়েছে। অথচ ম্যুরালে জিয়াউর রহমানের কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই। এটা বৈষম্য। এই ম্যুরাল রাখা ঠিক নয়।   

শনিবার জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) রাসেল আহমেদ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে গেলে তোপের মুখে পড়েন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই ম্যুরালে ৫২ ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার গঠন, চরমপত্র পাঠ, ৭১ এর গণহত্যা, বিজয় উল্লাসে মুক্তিযোদ্ধা, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ ও পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্মৃতিচিহ্ন ঢেকে দিয়ে চরম ধৃষ্ঠতা দেখিয়েছেন জেলা প্রশাসন। পরে তাঁরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর দায় চাপিয়েছেন। ৭১ ও ২৪কে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে জাতিকে বিভাজিত করে আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্র চলছে। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ৭১ এর অস্তিত্ব ধরে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাদ দিয়ে অন্যগুলোর সঙ্গে আমাদের কোনো মতানৈক্য নেই। 
 
২৬ মার্চ বুধবার সকালে সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্বাঞ্জলি দিতে গেলে কাপড় দিয়ে মুরাল ঢেকে রাখার বিষয়টি চোখে পড়ে। সনাক সদস্যরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ফিরে যান। পরে লালমনিরহাট রেলওয়ে শহীদ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্বাঞ্জলি দেন তাঁরা। গত ১৬ ডিসেম্বরও একই রকম ঘটনা ঘটায় জেলা  প্রশাসন। ১৪০ ফুট দীর্ঘ ওই ম্যুরালে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ, মুজিবনগর সরকার গঠন, চরমপত্র পাঠ, উদিত সূর্য, ৭১ এর গণহত্যা, মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানি, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ ও পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে।  

এ ব্যাপারে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দারের বক্তব্য জানতে তাঁর ফোনে মেসেজ এবং ফোন দিলে কোনো সাড়া মেলেনি।  

সম্পর্কিত নিবন্ধ