রাতে স্বামীর জন্মদিন উদযাপন, সকালে নদীতে মিলল মরদেহ
Published: 1st, March 2025 GMT
রাতে শাশুড়ি ও স্বজনদের নিয়ে স্বামীর জন্মদিনের কেক কাটেন তরুণী আঞ্জুমান মায়া (১৬)। এরপর মধ্যরাত থেকে তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরদিন সকালে পদ্মা নদীতে ভাসমান মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে জানায় স্থানীয়রা। খবর পেয়ে শনিবার সকাল ৯টার দিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কয়া ইউনিয়নের কালোয়া এলাকা থেকে মরদেহ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। দুপুরে মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে নৌপুলিশ। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নৌ পুলিশের উপপরিদর্শক মো.
নিহত আঞ্জুমান মায়া ওই এলাকার আজিজ শেখের ছেলে আসিফ শেখের (১৮) স্ত্রী। আসিফ কয়া মহাবিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ও একটি বেসরকারি কোম্পানির খাদ্য পরিবেশক। তিনি কুষ্টিয়া সদরের ত্রিমোহনী বারখাদা এলাকার আজিম উদ্দিনের মেয়ে।
শ্বশুরবাড়ির লোকজনের ভাষ্য, ‘আঞ্জুমানের উপসর্গজনিত রোগ ছিল। উপসর্গ রাতে ঘর থেকে বের করে নিয়ে নদীতে ফেলে মেরেছে।’
তবে বাবার বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, ‘ব্যবসায়ীর টাকা না পেয়ে আঞ্জুমানকে পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করেছে স্বামী আসিফ।’
স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়া ইউনিয়নের রাঁধানগর এলাকায় আঞ্জুমানের নানা বাড়ি। সাত মাস আগে নানাবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে আসিফের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এ সম্পর্কের প্রায় দুই মাস পর ঘর ছেড়ে বিয়ে করে পালিয়ে যান তারা। পরে বউ নিয়ে নিজ বাড়িতে উঠেন আসিফ। দুই বার মিলেমিশে পুনরায় তাঁদের সামাজিকভাবে বিয়ে দেন। এরপর বেশ ভালই চলছিল তাদের দাম্পত্য জীবন।
তারা আরও জানান, শুক্রবার ছিল আসিফের জন্মদিন। বাড়িতে বন্ধু ও স্বজনরা এসেছিলেন। বিকেলে আঞ্জুমান স্বামীকে নিয়ে বাজার থেকে কেক কিনে আনেন। রাত ৮টার দিকে স্বামী ও শাশুড়িকে নিয়ে ধুমধাম করে কেক কাটেন। রাতে স্বজনদের সঙ্গে খেয়ে ১০টার দিকে ঘুমিয়ে পড়েন আসিফ। আঞ্জুমান স্মার্টফোনে ব্যস্ত ছিলেন। রাত ১টার দিকে আসিফ জেগে দেখেন স্ত্রী ঘরে নেই। ঘরের দরজা খোলা। সে সময় তিনি স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিয়ে সম্ভাব্য স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও স্ত্রীকে পাননি। শনিবার সকাল ৬টার দিকে বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে পদ্মা নদীতে ভাসমান মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা।
মরদেহ উদ্ধারের পর আসিফের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, আঞ্জুমানের মরদেহের চারদিকে স্বজন ও প্রতিবেশীদের ভিড়। পাশে পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ছিলেন। ঘরে বসে ছিলেন আসিফ।
আঞ্জুমানের শাশুড়ি ফেরদৌসী খাতুন বলেন, ‘প্রেম করে বিয়ে করলেও সংসারে কোনো অশান্তি ছিল না। শুক্রবার রাতেও সবাই মিলেমিশে জন্মদিন পালন করা হলো। সকলে একসঙ্গেই রাতে খেয়েছিলাম। পরে রাত একটার দিকে ছেলের কাছ থেকে শুনি, বউ ঘরে নেই। এরপর সবাই মিলে সারারাত খুঁজেও কোথাও পাইনি। পরে সকালে নদীতে লাশ পাইছি।’ তার ভাষ্য, ‘আঞ্জুমানের উপসর্গজনিত রোগ ছিল। প্রায়ই ঘর থেকে হারিয়ে যেত। উপসর্গই তাকে মেরেছে।’
প্রেমের সম্পর্কে পাঁচ মাস আগে নিজেরা বিয়ে করেছিলেন বলে জানিয়েছেন আসিফ শেখ। স্ত্র্রীকে হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘সংসার খুব ভালো চলছিল। রাতে ধুমধাম করে আমার জন্মদিন পালন করি। রাত ১০টার দিকে শুয়ে পড়ি আমি। তখনও মায়া (আঞ্জুমান) ফোন চালাচ্ছিল। এরপর রাত ১টার দিকে জেগে দেখি মায়া নেই। রাতে খোঁজাখুঁজি করে না পাইনি। সকালে নদীতে লাশ পেয়েছি।’ তিনিও দাবি করে বলেন, ‘ স্ত্রীর উপসর্গজনিত রোগ ছিল।’
কয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রাতে নিখোঁজ ছিল ওই গৃহবধূ। সকালে স্থানীয়রা নদীতে দেখতে পান মাছধরা জালের সঙ্গে আটকে আছে লাশ। কি ঘটেছে তা ময়নাতদন্ত করলেই জানা যাবে।’
সরেজমিন রাঁধানগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নানা বাড়িতে মেয়ের মৃত্যু শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েন আঞ্জুমানের মা পারভীন খাতুন। এ সময় বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, ‘আসিফ আমার মেয়েকে ছলাকলা করে বিয়ে করেছে। তিনদিন আগে ব্যবসা করার জন্য তিন লাখ টাকা চেয়েছিল। টাকা না পেয়ে মেয়েকে নদীতে ডুবিয়ে হত্যা করেছে। আমার মেয়ের কোনো উপসর্গ ছিল না। আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই।’
কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ বলেন, খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে নৌপুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নৌপুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রেনে যৌন হয়রানির ঘটনার বিবরণ দিলেন অভিনেত্রী
বলিউড, মারাঠি এবং তামিল ছবির পাশাপাশি ওয়েব সিরিজেও নিজের অভিনয়ের ছাপ রেখেছেন অভিনেত্রী অদিতি পোহনকার। ‘লাই ভারি’ ছবিতে রিতেশ দেশমুখের বিপরীতে কাজ করার পর দর্শকের নজরে আসেন তিনি। এরপর ‘শি’ এবং ‘আশ্রম’ ওয়েব সিরিজে তার চরিত্র তাকে নিয়ে যায় নতুন উচ্চতায়।
সম্প্রতি বলিউড বাবলকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে নিজের জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেন অদিতি। সাক্ষাৎকারে মুম্বাই লোকাল ট্রেনের যৌন হয়রানির এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন তিনি।
অদিতি বলেন, ‘যদি কেউ সত্যিকারের জীবনের অভিজ্ঞতা নিতে চায়, তাহলে তাকে মুম্বাই লোকালে তুলে দিন। অভিজ্ঞতা ছাড়া তিনি ফিরে আসবেন কিনা, তার কোনো গ্যারান্টি নেই!’
তিনি জানান, ট্রেনে সফর করার সময় এক কিশোর তাঁকে প্রকাশ্যে শ্লীলতাহানি করে। বিষয়টি একা সামলাননি তিনি—সরাসরি পুলিশ ডেকে অভিযুক্তকে ধরে মারধরও করেন। অদিতির কথায়, ‘সে এতটাই নির্লজ্জ ছিল যে পুলিশের সামনেও নিজের কাজ থামায়নি, ভুল স্বীকারও করেনি।’
তিনি জানান, সেই ছেলেটির বয়স ছিল মাত্র ১৩ বা ১৪ বছর, সম্ভবত সপ্তম বা অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। তবুও অদিতির সাহসিকতা দেখে অনেকেই বিস্মিত। তিনি বলেন, ‘ভয় পেও না, সাহস নিয়ে মোকাবিলা করো। সোজাসাপ্টা কথা বলো।’
তিনি বলেন, একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি একবার ফার্স্ট ক্লাস মহিলা কামরায় যাত্রা করছিলেন। ওই কামরায় ১৮ বছরের কমবয়সী স্কুল ড্রেস পরা ছেলেদেরও ওঠার অনুমতি ছিল। ট্রেনটি যখন দদার স্টেশন থেকে ছাড়ে, তখন তাঁর পাশে দাঁড়ানো এক স্কুলপড়ুয়া ছেলেটি হঠাৎ করেই তাঁর বুকে হাত দেয়। এ ঘটনার পর আমি সম্পূর্ণভাবে হতবাক হয়ে যাই।’
তিনি বলেন, পরের স্টেশনে নেমে বিষয়টি পুলিশকে জানাই। আশ্চর্যের বিষয়, ছেলেটি তখনও সেই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল এবং আরেকজন মেয়ের সঙ্গেও একই কাজ করার চেষ্টা করছিল।
পুলিশ তখন মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করে, ‘তোমার কাছে কী প্রমাণ আছে?” উত্তরে সে জানায়, “আমি বলছি, ও এটা করেছে। আমি কেন মিথ্যা বলব?’
“একজন মহিলা কনস্টেবল আমার সাথে এসে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি কি তার সাথে কিছু করেছ? তিনি তা অস্বীকার করলেন। তারপর, যখন আমি তাকে আঘাত করার মতো অঙ্গভঙ্গি করলাম, তখন সে আতঙ্কিত হয়ে বলল, হ্যাঁ, দুঃখিত, দুঃখিত।’
এরপর অন্য কারো সঙ্গে এমন ঘটনা না ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দেন সেই ছেলেটি।