ঢাকা মহানগরে ‘অলআউট অ্যাকশনে’ যাচ্ছে ডিবি
Published: 1st, March 2025 GMT
ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘অলআউট অ্যাকশনে’ যাচ্ছে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। ছোট-বড় যেকোনো অপরাধ ও অপরাধীর ক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করেছে ডিবি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) রেজাউল করিম মল্লিক আজ শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন। গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের কার্যালয়ে তিনি এসব কথা বলেন। পবিত্র রমজান উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার উদ্দেশে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক বলেছেন, ‘পবিত্র মাহে রমজান মাসে নগরবাসীর নিরাপত্তা বিধানের জন্য ক্লান্তিহীন কাজ করে যাচ্ছে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ। ডিবি বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আজ থেকে আমরা ডিবির চলমান কার্যক্রমের পাশাপাশি রমজানকে সামনে রেখে বিশেষ অভিযান শুরু করতে যাচ্ছি। এটা হচ্ছে একধরনের বিশেষ গোয়েন্দা অভিযান। যেটাতে ছদ্মবেশে আমাদের সদস্যরা মানুষের মধ্যে থেকে অপরাধীদের শনাক্ত করবেন।’
রোজার সময় শপিং মল, ব্যাংক, বীমা, রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল ও সদরঘাটসহ অন্যান্য জায়গায় মানুষের উপস্থিতি বাড়ে। এসব জায়গায় কেউ যাতে নাশকতা করতে না পারে, সে জন্য গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে বলে জানান রেজাউল করিম মল্লিক। দূরের যাত্রাপথ বিশেষ করে বাসে কোনো দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে আগে থেকেই ডিবির তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
চুরি–ছিনতাই ডাকাতির সঙ্গে যারা যুক্ত হচ্ছে, তাদের বেশির ভাগের বয়স ১৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে বলেও জানান রেজাউল করিম মল্লিক। তাদের অনেকেই কিশোর গ্যাং ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে বলেন তিনি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যৌথ বাহিনী সারা দেশে তৎপরতা বাড়িয়েছে জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘ডিবির পাশাপাশি অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীও মাঠে আছে। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। আমরা বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে তাদের সহায়তা করছি। যা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন অ্যান্ড গোয়েন্দা-দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা-উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড সাপোর্ট সেন্টার-দক্ষিণ) সৈয়দ হারুন অর রশীদ ও উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগ) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
ময়মনসিংহে ঈদ ঘিরে দলগুলোর কার কী তৎপরতা
গত ৫ আগস্টের পর ময়মনসিংহের ১১টি সংসদীয় আসনে রাজনীতির মাঠ এখন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর দখলে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এই দুটি দলের তৎপরতাই বেশি। এবারের রোজা ও ঈদ ঘিরে মানুষের ‘আস্থা অর্জনে’ চেষ্টা করছেন আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য (এমপি) প্রার্থীরা।
জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থীরা মাঠে কাজ করলেও বিএনপির একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী আছেন। জেলার ১১টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১০টি আসনে গত ৩১ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামী ১০ প্রার্থীকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে। তবে নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কোনো কমিটি না হওয়ায় তাদের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।
দলের একাধিক প্রার্থীর তৎপরতার বিষয়ে বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের জানিয়েছেন যে এবারের নির্বাচন গণমানুষের নির্বাচন ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার নির্বাচন। অত্যন্ত কঠিন ও সুশৃঙ্খল নির্বাচন হবে। সুতরাং ভালোবাসা দিয়ে ভালোবাসা আদায় করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে। কৌশলগত কারণে একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের একটি আসনে তিন-চারজন প্রার্থী থাকা খুব স্বাভাভিক। কৌশলগত কারণে যদি চারজন প্রার্থী প্রতিযোগিতায় নামেন, তাহলে মানুষ শেষ পর্যন্ত দেখবে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক। বিভক্তির সুযোগ নেই।’
ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসনে কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ (প্রিন্স) ওয়ার্ড পর্যায়ে ইফতার মাহফিল, গণসংযোগ ও ঈদসামগ্রী বিতরণ করে যাচ্ছেন। এ আসনে বিএনপির আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী সালমান ওমর (রুবেল) ইফতার মাহফিল ও প্রায় ১৫ হাজার পরিবারকে ঈদসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম করছেন। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আফজাল এইচ খানও গণসংযোগ ও ইফতার মাহফিলের পাশাপাশি ঈদসামগ্রীও বিতরণ করছেন।
সৈয়দ এমরান সালেহ বলেন, রমজানে ওয়ার্ড পর্যায়ে খোলা মাঠে ইফতার আয়োজন করে দীর্ঘ ১৫ বছরের ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করছেন। নির্বাচন সামনে রেখে তাঁরা জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন, মানুষের কাছে আস্থার জায়গা তৈরি করছেন।
এই আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য একক প্রার্থী হিসেবে জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মাহফুজুর রহমান নিজের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, চাহিদা অনুযায়ী সংসদীয় আসনটিতে ঈদ উপহার বিতরণ করা হচ্ছে।
ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) সংসদীয় আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এলাকায় নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন জেলা উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার, সাবেক এমপি আবুল বাশার আকন্দ, ময়মনসিংহ মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জোবায়েদ হোসেন। ইফতার আয়োজন, ঈদসামগ্রী বিতরণ ও তৃণমূল পর্যায়ে গণসংযোগ কার্যক্রম করছেন তাঁরা। এ ছাড়া বিগত সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে দল থেকে বহিষ্কৃত সাবেক এমপি শাহ শহীদ সারোয়ারও বিএনপির ব্যানারে ইফতার মাহফিল করে নিজের সমর্থকদের চাঙা রাখার চেষ্টা করছেন। জামায়াতের প্রার্থী উপজেলার সাবেক আমির মাহবুব মন্ডল গণসংযোগ, ইফতার আয়োজন ও ঈদসামগ্রী বিতরণ করছেন।
বিএনপি নেতা মোহাতার হোসেন তালুকদার বলেন, অত্যন্ত অসহায় পরিবারগুলোর তালিকা করে প্রায় তিন হাজার পরিবারের মধ্যে ঈদসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখেই এসব কার্যক্রম চলছে।
ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) সংসদীয় আসনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রকৌশলী এম ইকবাল হোসাইন, উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য আহম্মেদ তায়েবুর রহমান, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের বিভাগীয় সহসভাপতি নূরুল হক, উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য হাফেজ আজিজুল হক নানা কার্যক্রম করছেন। পিছিয়ে নেই জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা বরুজ্জামানও।
ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনে বিএনপি থেকে সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রোকনুজ্জামান সরকার কার্যক্রম চালাচ্ছেন। রোকনুজ্জামান সরকার বলেন, ইফতার মাহফিল করার পাশাপাশি ১০ হাজার পরিবারে ঈদ উপহার বিতরণ করা হচ্ছে। আবু ওয়াহাব আকন্দ বলেন, তারেক রহমানের নামেও ঈদসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। প্রায় ২০ হাজার মানুষের মধ্যে সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মহানগর জামায়াতের আমির কামরুল আহসান বলেন, রোজার শুরুতে ও ঈদের জন্য ২০ লাখ টাকার খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।
ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনে জেলা দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক জাকির হোসেন, কেন্দ্রীয় জামায়াতে ইসলামের প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ এবং খেলাফত মজলিসের সম্ভাব্য প্রার্থী মুফতি হাবিবুর রহমান একই ধরনের তৎপরতা চালাচ্ছেন।
ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনে তৎপর বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আখতারুল আলম, বিএনপির সাবেক এমপির ছেলে তানভীর হোসেন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রেজাউল করিম চৌধুরী ও যুবদল নেতা আবদুল করিম সরকার এবং ময়মনসিংহ জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির কামরুল হাসান।
ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনে তৃণমূলের মানুষের মন জয়ে ঈদকেন্দ্রিক তৎপরতা চালাচ্ছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন, জেলা দক্ষিণ বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান, দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শহীদুল আমিন, সাবেক পৌর মেয়র আমিনুল ইসলাম সরকার, ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি মাওলানা ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ ও ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির আসাদুজ্জামান সোহেল।
ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক লুৎফুল্লাহেল মাজেদ ও সাবেক এমপি শাহ নূরুল কবীর কাজ করছেন। লুৎফুল্লাহেল মাজেদ ‘আয়নাঘরে’ বন্দী ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে গণসংযোগ কার্যক্রম অব্যাহত আছে। রমজানে গরিব মানুষকে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়েছে। সুলভ মূল্যে গরুর মাংস বিতরণ করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনে তৎপর আছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইয়াসের খান চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এ কে এম শামছুল ইসলাম। এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রার্থীর নাম জানানো হয়নি। ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) ও ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনেও ঈদকেন্দ্রিক নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন নেতারা।
ময়মনসিংহ জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মোজাম্মেল হক আকন্দ বলেন, ‘ঈদ ঘিরে সংসদীয় আসনগুলোতে প্রার্থীরা শুভেচ্ছা পোস্টার দিচ্ছেন। গণসংযোগ কার্যক্রম চলছে। ইফতার ও ঈদসামগ্রী বিতরণ আমাদের নিয়মিত সামাজিক কার্যক্রমের অংশ।’ আগামী নির্বাচন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীদের মধ্যে হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তা এখনো বলা যাচ্ছে না। নির্বাচনের জন্য আমাদের সব প্রস্তুতি চলছে। জাতীয় স্বার্থে সমমনা ইসলামি দল বা বৈষম্যবিরোধী কোনো দল যদি ঐক্যবদ্ধ জোট হয়, তাহলে আমরা যেকোনো আসন ছেড়ে দেব।’
বিগত সংসদ নির্বাচনগুলোতে ময়মনসিংহের বিভিন্ন আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নেন। দলটির ময়মনসিংহ উত্তর জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা হাদিউল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিটি আসন থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা করে চূড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচনের জন্য আমাদের কার্যক্রম চলছে। নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে ওয়ার্ড পর্যায়ে সভা, মানুষের কাছে গিয়ে আস্থা অর্জনের কার্যক্রম চালু আছে। ঈদ ঘিরে শুভেচ্ছা বিনিময় কার্যক্রম চলছে।’