ধামরাইয়ে লিকেজ থেকে গ্যাস বিস্ফোরণে স্বামী-স্ত্রী দগ্ধ
Published: 1st, March 2025 GMT
ঢাকার ধামরাইয়ে লিকেজ থেকে গ্যাস বিস্ফোরণে স্বামী ও স্ত্রী দগ্ধ হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে ধামরাই পৌরসভার কুমড়াইল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তাঁদের ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়েছে।
দগ্ধ ব্যক্তিরা হলেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বাসিন্দা আসিফ (২৪) ও তাঁর স্ত্রী শান্তা (২১)। তাঁরা ধামরাই উপজেলার কুমড়াইলে ভাড়া বাসায় থাকতেন। আসিফ রিকশাচালক ও তাঁর স্ত্রী একটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন।
স্থানীয় লোকজন বলেন, রাত পৌনে ১২টার দিকে কুমড়াইল এলাকায় কুববাত হোসেন নামের এক ব্যক্তির দ্বিতল ভবনের নিচতলার বাসার একটি কক্ষে বিকট শব্দে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। দুই কক্ষবিশিষ্ট ওই বাসায় আসিফ ও তাঁর স্ত্রী শান্তা থাকেন। বিস্ফোরণে দুটি কক্ষের তিনটি পাকা দেয়ালের বেশ কিছু অংশ ভেঙে যায়। বিস্ফোরণের পর আগুনে কিছু আসবাব পুড়ে যায়। আগুন লাগার পরপরই কক্ষ থেকে আসিফ-শান্তা দম্পতি বের হয়ে আসেন। এ সময় তাঁদের শরীরের বিভিন্ন অংশ আগুনে ঝলসানো ছিল। পরে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে আগুন নেভান।
একই ভবনের অপর ভাড়াটে রজ্জব আলী বলেন, ‘রাতে বিকট শব্দ শুনে সেখানে গিয়ে আগুন দেখতে পাই। পরে আগুন নিভিয়ে ফেলি। আগুনে দগ্ধ দুজনকে রিকশায় করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
ধামরাই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের কর্মকর্তা সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, বাড়িটিতে তিতাস গ্যাসের সংযোগ আছে। তবে ওই দম্পতি কক্ষে সিলিন্ডার গ্যাসও ব্যবহার করতেন। সিলিন্ডারটি অক্ষত পাওয়া গেছে এবং সিলিন্ডারে গ্যাসও রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিতাসের গ্যাসের সংযোগ লিকেজ থেকে ঘরে জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণে এ দুর্ঘটনা ঘটছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তের পর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। দগ্ধ ব্যক্তিদের ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গ্রিসের পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনির নিচে ঘুমিয়ে আছে ভয়ংকর আগ্নেয়গিরি
গ্রিসের জনপ্রিয় পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনি। যেখানে সাদা-নীল বাড়ি, সূর্যাস্ত আর নীল সমুদ্রের অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্যের টানে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন। কিন্তু অনেকের স্বপ্নের এই দ্বীপের নিচেই লুকিয়ে আছে এক ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি, যা আবারও ভয়াবহ বিস্ফোরণে ফেটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।
প্রায় ৩ হাজার ৬০০ বছর আগে আগ্নেয়গিরির বিশাল এক বিস্ফোরণে সান্তোরিনি দ্বীপের বর্তমান আকৃতি তৈরি হয়। সেই বিস্ফোরণে দ্বীপের মাঝখান দেবে গিয়ে একটি বিশাল গর্ত বা কালডেরা সৃষ্টি হয়। এর পর এই অঞ্চলটিতে বড় আকারের ভূমিকম্প আর দেখা যায়নি।
গত বছরের শুরুর দিক থেকে কয়েকবার ভূমিকম্পে দ্বীপটি কেঁপে ওঠায় নতুন করে সামনে এসেছে দ্বীপটির নিচে ঘুমিয়ে থাকা আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা ও তার ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এ ধরনের ভূমিকম্প ভূগর্ভের ম্যাগমা চেম্বারে চাপ বাড়ার লক্ষণ হতে পারে।
ব্রিটেনের গবেষণা জাহাজ ‘আরআরএস ডিসকভারি’ থেকে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল সান্তোরিনির সমুদ্রতলের আগ্নেয়গিরি ও হাইড্রো-থার্মাল ভেন্ট নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন এখন। চলমান এ গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্রিটেনের ন্যাশনাল ওসিওগ্রাফি সেন্টারের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইসাবেল ইয়ো। তিনি জানান, এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হলো আগ্নেয়গিরির আচরণ বিশ্লেষণ করে কখন বড় বিস্ফোরণের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে তা বুঝতে পারা। সান্তোরিনি দ্বীপের ৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে সাগরের নিচে থাকা আরেকটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি কলোম্বো নিয়েও পর্যবেক্ষণ করছেন তারা।
চলমান এই গবেষণায় রোবটের মাধ্যমে সাগরের ৩০০ মিটার নিচ থেকে গরম পানি, গ্যাস ও আগ্নেয় পাথরের নমুনা সংগ্রহ করছেন তারা। এ ছাড়া ভূকম্পন এবং ভেতরে থাকা জ্বলন্ত লাভার গতিবিধি বোঝার জন্য ভূতাত্ত্বিক মানচিত্রও তৈরি করছেন গবেষকরা। এই গবেষণা শেষে পাওয়া তথ্য গ্রিস সরকারকে সরবরাহ করা হবে। গ্রিসের সিভিল প্রটেকশন এজেন্সি এই গবেষণার ফল বিশ্লেষণ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করছে। অধ্যাপক পারাস্কেভি নোমিকো– যিনি নিজে সান্তোরিনির বাসিন্দা এবং সরকারিভাবে জরুরি পরিকল্পনায় যুক্ত– বিবিসিকে বলেন, ‘এই গবেষণা আমাদের জানাবে, কোথায় কতটা ঝুঁকি এবং কোন এলাকায় আগ্নেয়গিরি জেগে উঠলে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে।’
সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ফলে সান্তোরিনির ১১ হাজার বাসিন্দার প্রায় অর্ধেকই দ্বীপ ছেড়ে চলে গেছেন। পর্যটন খাতেও এর প্রভাব পড়েছে। অনেকেই তাদের পূর্বনির্ধারিত ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। স্থানীয় ফটোগ্রাফার ইভা রেন্ডল বলেন, ‘আমার অনেক ক্লায়েন্ট তাদের শুটিং বাতিল করেছেন। আগে এপ্রিল থেকেই কাজ শুরু হতো; এবার মে পর্যন্ত কেউ আসেনি।’
তবে দ্বীপ ছেড়ে চলে যাওয়া অনেকেই জায়গাটির অতুলনীয় সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে আবার ফিরেও আসছেন। সান্তোরিনিতে বিয়ের ছবি তুলতে আসা এক নবদম্পতি বলেন, ‘আমরা ইচ্ছা করেই আগ্নেয়গিরির পাশে বিয়ে করতে চেয়েছি!’ এখন পর্যন্ত তাৎক্ষণিক বিস্ফোরণের আশঙ্কা না থাকলেও বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এটি ‘শুধু সময়ের ব্যাপার।’ বিবিসি।