হোয়াইট হাউজে শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) তীব্র বাগবিতণ্ডার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে বৈঠক। এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা। অনেক বিশ্বনেতা ইউক্রেনের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন। খবর রয়টার্সের।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এক্স পোস্টে বলেন, ‘রাশিয়া অবৈধ এবং অন্যায়ভাবে ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে। তিন বছর ধরে ইউক্রেন সাহস এবং ধৈর্যের সঙ্গে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে। তাদের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এই লড়াই আমাদের সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ইউক্রেনে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় কানাডা সব সময় ইউক্রেন এবং তাদের নাগরিকদের পাশে থাকবে।”     

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেন, “ইউক্রেনের নাগরিকদের চেয়ে বেশি শান্তি আর কেউ চায় না। সেই কারণেই আমরা যৌথভাবে একটি স্থায়ী এবং ন্যায়সঙ্গত শান্তির পথ খুঁজছি। এক্ষেত্রে ইউক্রেন জার্মানি উপর নির্ভর করতে পারে - এবং ইউরোপের উপর।”

আরো পড়ুন:

‘নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক’ সূত্র ব্যবহার করলে মামলার হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের

ইউক্রেনকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প

পর্তুগালে সফররত ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো সংবাদিকদের বলেন, “রাশিয়ার ইউক্রেনের ওপর আগ্রাসী হামলা চালিয়েছে, ফলে দেশটির জনগণ ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে। তিন বছর ধরে আমরা ইউক্রেনকে সাহায্য করে আসছি এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি। আমরা এটা অব্যাহত রাখবো। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, কানাডা, জাপান এবং আরো অনেক দেশ যারা শুরু থেকেই ইউক্রেনের পক্ষে লড়াই ও সাহায্য করে আসছেন তাদেরকে অবশ্যই সস্মান করতে হবে। কারণ এসব দেশ ইউক্রেনের স্বাধীনতা, তাদের সম্মান এবং সন্তানদের নিরাপত্তার জন্য লড়াই করছে। এই বিষয়গুলো মনে রাখা উচিত।”

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেন, “পশ্চিমাদের প্রতিটি বিভাজন আমাদের সবাইকে দুর্বল করে এবং তাদের সুবিধা বাড়ায়, যারা আমাদের সভ্যতার পতন দেখতে চায়। ক্ষমতা বা প্রভাবের নয় বরং সেই নীতিগুলোর— বিশেষ করে স্বাধীনতার। যার ভিত্তিতে আমাদের সভ্যতা গড়ে উঠেছে। এই বিভাজন কারো জন্যই মঙ্গলজনক নয়।’

তিনি আরো বলেন, “এই সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং মিত্রদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করা উচিত। যাতে আজকের বড় চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে মোকাবেলা করতে হবে, সে সম্পর্কে খোলামেলা আলোচনা করা যায়, যার শুরু ইউক্রেন থেকে, যা আমরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একসঙ্গে রক্ষা করেছি এবং ভবিষ্যতে যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হতে হবে।” 

তিনি আরো বলেন, “আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইতালি তার মিত্রদের কাছে এই প্রস্তাবটি দেবে।”

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের মুখপাত্র বলেন, “ইউক্রেনের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যুক্তরাজ্য সব সময় পাশে দাঁড়িয়েছে। শেষ পর্যন্ত কিয়েভের জন্য শান্তির পথ খুঁজে বের করতে আমরা পাশে রয়েছি।”

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবেনিস বলেন, “যতদিন সময় লাগে আমরা ইউক্রেনের পাশে থাকব। কারণ এটি ভ্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বাধীন একটি কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে একটি গণতান্ত্রিক জাতির সংগ্রাম। পুতিনের স্পষ্টতই সাম্রাজ্যবাদী উদ্দেশ্য রয়েছে, কেবল ইউক্রেনের উপর নয়, সমগ্র অঞ্চলে।”

ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোকে রাসমুসেন বলেন, “এটি ইউক্রেনের জন্য একটি ধাক্কা। দৃঢ় কথোপকথনের জন্য পরিবেশ থাকা উচিত- এমনকি বন্ধুদের মধ্যেও। কিন্তু যখন এরকম ঘটনা ক্যামেরার সামনে ঘটে, তখন কেবল একজনই বিজয়ী হন। আর তিনি ক্রেমলিনে বসেন।”

রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডন্ট ও দেশটির নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সঙ্গে এক নৃশংস ব্যক্তি বৈঠক করেছেন।” 

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন বলেন, “আপনার (ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট) মর্যাদা ইউক্রেনীয় জনগণের সাহসিকতাকে সম্মান করে। শক্তিশালী হোন, সাহসী হোন, নির্ভীক হোন। আপনি কখনই একা নন, প্রিয় প্রেসিডেন্ট। আমরা ন্যায়সঙ্গত এবং স্থায়ী শান্তির জন্য আপনার সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব।”

মলদোভার প্রেসিডেন্ট মাইয়া সান্দু বলেন, “সত্যটি সহজ। রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করেছে। রাশিয়া আক্রমণকারী। ইউক্রেন তার স্বাধীনতা রক্ষার লড়াই করছে। আমরা ইউক্রেনের সঙ্গে আছি।”

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেন, “স্পেন সবসময় ইউক্রেনের পাশে থাকবে।” 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশংসা করে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান বলেন, “শক্তিশালী মানুষ শান্তি প্রতিষ্ঠা করে, দুর্বল মানুষ যুদ্ধ করে। আজ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শান্তির পক্ষে সাহসের সঙ্গে দাঁড়িয়েছেন। যদিও অনেকের পক্ষে তা হজম করা কঠিন ছিল। ধন্যবাদ, মি.

 প্রেসিডেন্ট!”

নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গাহর বলেন, “আজ  হোয়াইট হাউজে থেকে আমরা যা দেখলাম তা গুরুতর এবং হতাশাজনক। ইউক্রেনের এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রয়োজন। ইউক্রেনের নিরাপত্তা যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের সম্পর্কের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। প্রেসেডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ইউক্রেনে দৃঢ় সমর্থন রয়েছে, ইউরোপে ব্যাপক সমর্থন রয়েছে এবং তিনি রাশিয়ার হামলার মুখে খুব কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে তার জনগণকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।ট্রাম্প জেলেনস্কির বিরুদ্ধে তৃতীয় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লাগানোর যে অভিযোগ করেছেন তা খুব অযৌক্তিক। স্বাধীনতার সংগ্রামে নরওয়ে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা আশা করি ট্রাম্প প্রশাসনও ইউক্রেনে ন্যায়সঙ্গত এবং স্থায়ী শান্তির গুরুত্ব বোঝে।”

এস্তোনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্গুস তাসাকনা বলেন, “শান্তির একমাত্র বাধা হলো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের আগ্রাসন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। রাশিয়া যদি যুদ্ধ বন্ধ করে, তাহলে কোনো যুদ্ধ হবে না। ইউক্রেন যদি যুদ্ধ বন্ধ করে, তাহলে কোনো ইউক্রেন থাকবে না। ইউক্রেনের প্রতি এস্তোনিয়ার সমর্থন অটল। ইউরোপের এগিয়ে আসার সময় এসেছে।”

পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক বলেন, “প্রিয় জেলেনস্কি, প্রিয় ইউক্রেনীয় বন্ধুরা, তোমরা একা নও।”

ঢাকা/ফিরোজ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউক র ন ইউক র ন র প শ আম দ র র জন য ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

চাঁদপুরে শুনে শুনে কুরআনের হাফেজ হলেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ২ ভাই

শুনে শুনেই কুরআনের হাফেজ হয়েছেন চাঁদপুরের একটি এতিমখানায় থাকা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মেধাবী দুই ভাই আল-আমিন (১৪) ও ফয়সাল (১২)।

শনিবার (১ মার্চ) বিকালে ফরিদগঞ্জের ঘনিয়া ছাইয়েদিয়া এতিমখানা ও মাদ্রাসায় গেলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী দুই ভাইয়ের এ প্রতিভার কথা জানা যায়।

জানা গেছে, চাঁদপুরের শাহরাস্তির কেশরাঙ্গা গ্রামের প্রয়াত মোখলেছুর রহমান ও মা রূপবান বেগমের ছেলে আল-আমিন ও ফয়সাল। পাঁচ বছর আগে তাদের বাবা মারা যায়। অভাব অনটনের সংসারে দেখা দেয় বিভীষিকা।

মোখলেছুরের মৃত্যুর পর দুই ছেলেকে ঘনিয়া ছাইয়েদিয়া এতিমখানা ও মাদ্রাসায় ভর্তি করেন মা রূপবান বেগম। এরপর মাদ্রাসা ও দরবার শরীফের পীর হাফেজ মাওলানা মো. জুনায়েদুল হক এতিম শিশুদের সন্তানের মতো আদর যত্ন করেন। দুজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও তাদের অসম্ভব মেধা দেখে হুজুর তাদেরকে বিশেষভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা চালান। অবশেষে কুরআনের হাফেজ হয়েছেন দুই ভাই।

হাফেজ মাওলানা জাকির বলেন, “আল-আমিন ও ফয়সাল পবিত্র কুরআনের ৩০ পারা শুনে শুনেই মুখস্ত করেছেন। পৃথিবীর আলো দেখতে না পারলেও পবিত্র কুরআনের আলোয় আলোকিত তারা। তাদের সুরেলা কণ্ঠের তেলাওয়াত মুগ্ধ করেছে সবাইকে। হাফেজ আল-আমিন গত বছর জাতীয় পর্যায়ে হওয়া অন্ধ হাফেজদের কুরআন প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন।”

মাদ্রাসা ও দরবার শরীফের পীর হাফেজ মাওলানা মো. জুনায়েদুল হক বলেন, “হাফেজ আল-আমিন ও ফয়সালকে মহান আল্লাহপাক বিশেষ রহমত ও মেধাশক্তি দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। হুজুরদের মুখে শুনে শুনে কুরআন মুখস্থ করে ফেলেছেন তারা।”

দুই ভাইয়ের শিক্ষক মাওলানা বজলুল হক আজহারী বলেন, “দুই ভাই আমাদের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মতোই স্বাভাবিক চলাফেরা করে। বাইরের অনেকে বুঝতেও পারে না তারা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। মহান আল্লাহ যেন তাদের বিশেষ রহমতে পবিত্র কুরআনকে তাদের অন্তরে গেঁথে নিয়েছেন।”

দুই সহোদর হাফেজের মা রূপবান বেগম বলেন, “স্বামী হারিয়ে আমি যখন দিশেহারা তখন দুই সন্তানকে ঘনিয়া ছাইয়েদিয়া এতিমখানা ও মাদ্রাসায় দিই। হুজুরেরা আমার সন্তানদের কুরআনে হাফেজ বানিয়েছেন। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।”

ঢাকা/অমরেশ/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ