বগুড়ায় ঘুমন্ত অবস্থায় মা–মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা, অভিযোগ মেয়ের সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে
Published: 1st, March 2025 GMT
বগুড়ায় গভীর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় সখিনা বেগম (৩৫) নামের এক নারীকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে দ্বিতীয় স্বামী রুবেল মিয়ার (৪০) বিরুদ্ধে। এ সময় মেয়েকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে সাবেক শাশুড়ি আনোয়ারা বিবিকেও (৫৫) কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আনোয়ারা বিবির মৃত্যু হয়।
শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে বগুড়া সদর উপজেলার সাবগ্রাম মধ্যপাড়ায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। হত্যাকাণ্ডের পর সখিনা বেগমের দ্বিতীয় স্বামী রুবেল মিয়া আত্মগোপন করেছেন। তাঁর বাড়ি বগুড়া শহরের আকাশতারা মধ্যপাড়া এলাকায়।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় ২০ বছর আগে সখিনা বেগমের সঙ্গে সারিয়াকান্দি উপজেলার হাসনাপাড়ার বাদশা মিঞার সঙ্গে বিয়ে হয়। সেই পক্ষে ১৮ বছরের ছেলেসন্তান রয়েছে। বিয়ের কয়েক বছরের মাথায় বাদশা মিঞার সঙ্গে সখিনা বেগমের বিচ্ছেদ হয়। এরপর সখিনা তাঁর প্রথম পক্ষের সন্তান সাব্বির হোসেনকে নিয়ে বগুড়া শহরের সাবগ্রাম এলাকায় বসবাস শুরু করেন। প্রায় সাত বছর আগে আকাশতারা এলাকার রুবেল মিয়ার সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ে হয় সখিনার।
সাব্বির আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, মাদকাসক্তি ও চুরির সঙ্গে জড়িত থাকায় রুবেল মিয়ার সঙ্গে তাঁর মায়ের কলহ লেগেই ছিল। একপর্যায়ে তাঁরা আলাদা থাকতে শুরু করেন। পরে রুবেলের অনুরোধে তাঁর সংসারে ফিরে যান সখিনা। কিন্তু রুবেলের স্বভাব পরিবর্তন না হলে কয়েক মাস আগে তাঁকে ডিভোর্স দিয়ে প্রথম স্বামী বাদশা মিয়ার সংসারে ফিরে যান তাঁর মা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রুবেল মিয়া দুদিন আগে মাকে হত্যার হুমকি দেন।
সাব্বির আহম্মেদ আরও বলেন, ‘শুক্রবার রাতে আমার মা সখিনা বেগম ও নানি আনোয়ারা এক ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। অন্য ঘরে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। রাত আনুমানিক দুইটার দিকে রুবেল মিয়া বাড়িতে এসে আমার ঘুমন্ত মাকে ডেকে তোলেন। শয়নকক্ষের দরজা খোলামাত্র হাতে থাকা দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। এ সময় মায়ের চিৎকারে আমার নানি ঘুম থেকে উঠে তাঁকে রক্ষা করতে এলে তাঁকেও কুপিয়ে আহত করা হয়। একপর্যায়ে আমি জেগে উঠলে দা হাতে আমাকে ধাওয়া করেন রুবেল। এ সময় চিৎকার দিলে প্রতিবেশীরা ছুটে আসে। অবস্থা বেগতিক বুঝে রুবেল মিয়া পালিয়ে যান। পরে মা ও নানিকে উদ্ধার করে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর ভোর চারটার দিকে প্রথমে আমার মা সখিনা বেগমকে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নানি আনোয়ারা বেগমও মারা যান।’
বগুড়া জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, প্রথম স্বামীর কাছে ফিরে যাওয়ার জেরে দ্বিতীয় স্বামী রুবেল মিয়া তাঁর সাবেক স্ত্রী ও শাশুড়িকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে আত্মগোপন করেছেন। ঘটনা ঘটনার পরপরই বাড়ির পাশের বাঁশঝাড় থেকে রক্তমাখা দা উদ্ধার করা হয়েছে। রুবেলকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। নিহত মা-মেয়ের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আইসক্রিমের লোভ দেখিয়ে শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা, পরে নাক-মুখ চেপে হত্যা
আইসক্রিমের লোভ দেখিয়ে ছয় বছরের শিশুকে আমবাগানে নিয়ে যান বিক্রেতা। সেখানে তিনি শিশুটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। চিৎকার দিলে শিশুটির নাক-মুখ চেপে হত্যা করেন। এরপর সেই লাশ বস্তায় ভরে পুকুরের কচুরিপানার নিচে লুকিয়ে রাখেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ওই আইসক্রিম বিক্রেতা এসব তথ্য জানিয়েছেন। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার একটি গ্রাম থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গত মঙ্গলবার রাত থেকে সে নিখোঁজ ছিল। পরদিন বুধবার অপহরণ মামলা করে শিশুটির পরিবার। ওই মামলায় আইসক্রিম বিক্রেতা সাব্বির হোসেনকে (২৫) গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।
শিশুটির পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার রাতে শিশুটির বাড়ির পাশে ওয়াজ মাহফিল চলছিল। খালাতো বোনের সঙ্গে সেদিন বিকেলে বের হয় সে। মাহফিলকে কেন্দ্র করে পাশেই খেলনা, খাবারসহ বিভিন্ন পণ্যের অস্থায়ী দোকান বসেছিল। খালাতো বোন চলে আসতে চাইলে সেখানে থাকার বায়না করে শিশুটি। একপর্যায়ে তাদের এক বড় ভাইয়ের কাছে শিশুটিকে রেখে চলে আসে তার বোন। সেখান থেকে নিখোঁজ হয় শিশুটি।
খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে শিশুটির স্বজনেরা জানতে পারেন, শেষবার তাকে আইসক্রিম বিক্রেতা সাব্বিরের সঙ্গে দেখা গেছে। মঙ্গলবার রাতেই এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সাব্বির সন্দেহজনক জবাব দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে পিটুনি দেন এলাকার লোকজন। পরে সাব্বিরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
এ বিষয়ে সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহেদ আল মামুন আজ শুক্রবার সকালে বলেন, অপহরণ মামলায় সাব্বিরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের নির্দেশে তাঁকে এক দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। তিনি মাদকাসক্ত ছিলেন। গতকাল তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে শিশুটিকে হত্যা এবং হত্যার পর লাশ গুমের বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেন। আসামির স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে গতকাল রাত দুইটার দিকে একটি পুকুরের কচুরিপানার নিচ থেকে শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সাব্বির ধর্ষণচেষ্টার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়েছে কি না, তা পরীক্ষার জন্য লাশটি মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
সাব্বিরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে শিশুটির চাচা বলেন, ‘শিশুটির বাবা বিদেশে থাকে। ওর মা প্রায় অচেতন হয়ে আছে। বাচ্চা একটা মেয়ের সঙ্গে এমন নির্মমতা হলো। আসামি সাব্বিরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’ এদিকে শিশুটিকে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যার ঘটনাটি জানতে পেরে আজ ভোরে সাব্বিরের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। তাঁর বাড়ি ভাঙচুরের পর ঘরের মালামাল বাইরে নিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।