বগুড়ায় গভীর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় সখিনা বেগম (৩৫) নামের এক নারীকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে দ্বিতীয় স্বামী রুবেল মিয়ার (৪০) বিরুদ্ধে। এ সময় মেয়েকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে সাবেক শাশুড়ি আনোয়ারা বিবিকেও (৫৫) কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আনোয়ারা বিবির মৃত্যু হয়।

শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে বগুড়া সদর উপজেলার সাবগ্রাম মধ্যপাড়ায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। হত্যাকাণ্ডের পর সখিনা বেগমের দ্বিতীয় স্বামী রুবেল মিয়া আত্মগোপন করেছেন। তাঁর বাড়ি বগুড়া শহরের আকাশতারা মধ্যপাড়া এলাকায়।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় ২০ বছর আগে সখিনা বেগমের সঙ্গে সারিয়াকান্দি উপজেলার হাসনাপাড়ার বাদশা মিঞার সঙ্গে বিয়ে হয়। সেই পক্ষে ১৮ বছরের ছেলেসন্তান রয়েছে। বিয়ের কয়েক বছরের মাথায় বাদশা মিঞার সঙ্গে সখিনা বেগমের বিচ্ছেদ হয়। এরপর সখিনা তাঁর প্রথম পক্ষের সন্তান সাব্বির হোসেনকে নিয়ে বগুড়া শহরের সাবগ্রাম এলাকায় বসবাস শুরু করেন। প্রায় সাত বছর আগে আকাশতারা এলাকার রুবেল মিয়ার সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ে হয় সখিনার।

সাব্বির আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, মাদকাসক্তি ও চুরির সঙ্গে জড়িত থাকায় রুবেল মিয়ার সঙ্গে তাঁর মায়ের কলহ লেগেই ছিল। একপর্যায়ে তাঁরা আলাদা থাকতে শুরু করেন। পরে রুবেলের অনুরোধে তাঁর সংসারে ফিরে যান সখিনা। কিন্তু রুবেলের স্বভাব পরিবর্তন না হলে কয়েক মাস আগে তাঁকে ডিভোর্স দিয়ে প্রথম স্বামী বাদশা মিয়ার সংসারে ফিরে যান তাঁর মা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রুবেল মিয়া দুদিন আগে মাকে হত্যার হুমকি দেন।

সাব্বির আহম্মেদ আরও বলেন, ‘শুক্রবার রাতে আমার মা সখিনা বেগম ও নানি আনোয়ারা এক ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। অন্য ঘরে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। রাত আনুমানিক দুইটার দিকে রুবেল মিয়া বাড়িতে এসে আমার ঘুমন্ত মাকে ডেকে তোলেন। শয়নকক্ষের দরজা খোলামাত্র হাতে থাকা দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। এ সময় মায়ের চিৎকারে আমার নানি ঘুম থেকে উঠে তাঁকে রক্ষা করতে এলে তাঁকেও কুপিয়ে আহত করা হয়। একপর্যায়ে আমি জেগে উঠলে দা হাতে আমাকে ধাওয়া করেন রুবেল। এ সময় চিৎকার দিলে প্রতিবেশীরা ছুটে আসে। অবস্থা বেগতিক বুঝে রুবেল মিয়া পালিয়ে যান। পরে মা ও নানিকে উদ্ধার করে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর ভোর চারটার দিকে প্রথমে আমার মা সখিনা বেগমকে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নানি আনোয়ারা বেগমও মারা যান।’

বগুড়া জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, প্রথম স্বামীর কাছে ফিরে যাওয়ার জেরে দ্বিতীয় স্বামী রুবেল মিয়া তাঁর সাবেক স্ত্রী ও শাশুড়িকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে আত্মগোপন করেছেন। ঘটনা ঘটনার পরপরই বাড়ির পাশের বাঁশঝাড় থেকে রক্তমাখা দা উদ্ধার করা হয়েছে। রুবেলকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। নিহত মা-মেয়ের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অবস থ য় প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তরুণ গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে মো. রাব্বি মিয়া (২০) নামের এক তরুণ আহত হওয়ার ঘটনায় ১০ জনের নামে মামলা হয়েছে। গুলির ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার সকালে আহত রাব্বির মা জোহরা খাতুন বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

গুলিবিদ্ধ রাব্বি উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের হেলাল মিয়ার ছেলে। বর্তমানে রাব্বি পরিবারের সঙ্গে নবীনগর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝিকাড়া এলাকায় ভাড়া থাকেন। তিনি পেশায় একজন অ্যাম্বুলেন্সচালক।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নবীনগর উপজেলার টিঅ্যান্ডটিপাড়ার বাসিন্দা মো. আতাউর রহমান (৪৮), জাহিদ মিয়া (১৯), জুবায়েদ মুন্সী (১৯), মো. আহসান উল্লাহ (৪৪) ও মো. জসিম উদ্দিন (৪৪)। তাঁরা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. খুরশিদ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ নভেম্বর টিঅ্যান্ডটিপাড়ার বাসিন্দা মো. সানি (২০) ও একই পাড়ার মো. জিসানের মধ্যে কথা–কাটাকাটি ও তর্ক হয়। একপর্যায়ে ঝগড়ার সময় সানি জিসানকে ছুরিকাঘাত করেন। এ ঘটনার জেরে উভয় পক্ষ সালিস ডাকে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে নবীনগর পৌর এলাকার কালীবাড়ি মোড়ের জমিদারবাড়ির মাঠে সানিসহ তাঁর লোকজন ও জিসানসহ তাঁর লোকজন সালিসে বসেন।

গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত রাব্বি সানির পক্ষের সমর্থক। তবে সালিসের রায়ে সানি ও তাঁর লোকজন সম্মত হননি। সালিস ছেড়ে ওঠার সময় জিসানসহ তাঁর লোকজন সানির লোকজনের ওপর হামলা চালান। একপর্যায়ে জিসান বন্দুক বের করে গুলি করেন। এতে রাব্বি গুলিবিদ্ধ হন এবং প্রতিপক্ষের হামলায় সানি আহত হন।

গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন রাব্বিকে উদ্ধার করে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, তরুণের বুকের বাঁ পাশের পাঁজরে গুলি লেগেছে।

নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল মধ্যরাত পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গুলির ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তরুণ গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ৫
  • মেসিকে দেখতে না পেয়ে কলকাতায় গ্যালারিতে ভাঙচুর, দর্শক নেমে পড়লেন মাঠে
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থী শিক্ষককে হেনস্তা করলেন ডাকসু নেতা