শিল্পকলা একাডেমির কাজে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও উপদেষ্টার হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের (ডিজি) পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ জামিল আহমেদ। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তৃতার এক পর্যায়ে তিনি পদত্যাগের কথা জানান। শিল্পকলার ডিজির পদত্যাগের ঘোষণার পর বিষয়টি নিয়ে কথা কথা বলেছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুকী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আপাতত বলে রাখি, উনার (সৈয়দ জামিল আহমেদ) বলা অনেকগুলা কথা পুরো সত্য নয়, অনেকগুলা কথা ডাহা মিথ্যা এবং কিছু কথা পরিস্থিতি ডিল (মোকাবিলা) না করতে পারাজনিত হতাশা থেকে বের হয়ে আসা বলে মনে হচ্ছে।’

গতকাল শুক্রবার ‘মুনীর চৌধুরী প্রথম জাতীয় নাট্যোৎসব’—এর সমাপনী অনুষ্ঠানে নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ জামিল আহমেদ.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ম ল আহম দ পদত য গ শ ল পকল

এছাড়াও পড়ুন:

তামহার মালিকদের সম্পত্তি পুনরায় অবরুদ্ধের অনুরোধ বিএসইসির

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের (ট্রেক নম্বর- ০৮১) পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের সম্পত্তি (লালমাটিয়ার জমি-বাড়িসহ অন্যান্য স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ) পুনরায় অবরুদ্ধ করতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির লালমাটিয়ার জমি ও বাড়ি বিক্রির অর্থ আত্মসাৎ রোধ করতে বিএসইসির পক্ষ থেকে দুদককে এ অনুরোধ করা হয়েছে।

সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়ারিজ অ্যাফেয়ার্স ডিভিশনের সহকারী পরিচালক মো. মারুফ হাসান স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি দুদকে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়টি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাইজিংবিডি ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

দুদকে পাঠানো বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেড কর্তৃক বিনিয়োগকারীর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মতিঝিল পুলিশ স্টেশনে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। পরবর্তী সময়ে মতিঝিল পুলিশ স্টেশন তা দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর তামহা সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হারুনুর রশিদসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রতারণামূলক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে একটি জিআর মামলা দায়ের করে, যার নম্বর-৫৩/২০২৩।

দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত ২০২৩ সালের ১৯ জুন তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিচালনা পর্যদের সদস্যদের নামীয় সম্পত্তি (লালমাটিয়ার জমি ও বাড়িসহ অন্যান্য স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ) ক্রোক করার আদেশ দেয়। কিন্তু, সম্প্রতি তামহা সিকিউরিটিজের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা পত্রের মাধ্যমে বিএসইসিকে অবহিত করে যে, পূবালী ব্যাংক পিএলসির শাহবাগ শাখার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেড কর্তৃক গৃহীত ঋণ পরিশোধের নিমিত্তে বিজ্ঞ আদালত প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের নামীয় সম্পত্তি (লালমাটিয়ার জমি ও বাড়ি) ক্রোকাদেশ থেকে অবমুক্ত করেছে।

চিঠিতে আরো উল্লেখ্য করা হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা আরো জানিয়েছেন যে, পূবালী ব্যাংক পিএলসি শাহবাগ শাখার কাছে তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ঋণের পরিমাণ ৫ কোটি টাকা। কিন্তু, সম্পত্তির (লালমাটিয়ার জমি ও বাড়ি) বর্তমান বাজারমূল্য ৩০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা এ সম্পত্তি বিক্রির অবশিষ্ট অর্থ তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের আত্মসাতের আশঙ্কা করছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা এই ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের নামীয় সম্পত্তি বিক্রির অর্থ আত্মসাৎ রোধ করতে এ সম্পত্তি পুনরায় ক্রোক করার অনুরোধ করেছে।

তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিচালনা পর্যদের সদস্যরা ওই সম্পত্তি বিক্রি করে সেই অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীগণের মধ্যে বিতরণ করবে বলে তাদের মধ্যে সম্পাদিত একটি চুক্তিপত্র দুদকে দাখিল করেছিলেন। এমতাবস্থায়, বিনিয়োগকারীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির পরিচালনা পর্যদের সদস্যদের নামীয় সম্পত্তি হিসেবে লালমাটিয়ার জমি ও বাড়ি বিক্রির অর্থ আত্মসাৎ রোধ করতে এই সম্পত্তি পুনরায় অবরুদ্ধ (ক্রোক) করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে দুদককে অনুরোধ করা হলো।

তামহা সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ

২০২১ সালে তামহা সিকিউরিটিজ অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে দুই শতাধিক বিনিয়োগকারীর ৮৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক ডুপ্লিকেট সফটওয়্যার ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীদের সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। ব্রোকারেজ হাউজটি দুটি ব্যাক অফিস সফটওয়্যার ব্যবহার করে গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এর মধ্যে একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের মিথ্যা ও ভুয়া বিবরণী ও পোর্টফোলিও স্টেটমেন্ট দেওয়া হতো। এ হাউজে গ্রহকদের মোট ঘাটতির পরিমাণ ছিল প্রায় ১৩৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে গ্রাহকের সমন্বিত হিসাবে ঘাটতি ৯২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ও শেয়ারের বাজারমূল্যের ঘাটতি ৪৭ কোটি ১১ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে অভিযোগ করা হলে ওই বছরের ৯ ডিসেম্বর বিএসইসি ওই প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন স্থগিত করে। পরে ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি তামহা সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হারুনুর রশিদ ও তার সহযোগীদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। 

এদিকে, গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের দায়ে পুঁজিবাজারে শেয়ার লেনদেন ও ডিপোজিটরি পার্টিসিপেন্ট (ডিপি) স্থগিত হওয়া ব্রোকার হাউজ তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ মোট ১৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে, ব্রোকারেজ হাউজটির একটি সফটওয়্যারে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের প্রকৃত হিসাব রাখা হতো, যা সিডিবিএলের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। ব্যাক অফিস সফটওয়্যারটি সিডিবিএলের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল না। এ ব্যাক অফিস সফটওয়্যারটি বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাতের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলা

অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলার আসামিরা হলেন—তামহা সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ, পরিচালক জাহানারা পারভীন ও ড. শাহনাজ বেগম, চার জন অ্যাকাউন্টস এক্সিকিউটিভ ও অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ (আব্দুর রহমান তালাল, সাঈদ চৌধুরী, মো. দেলোয়ার হোসেন ও মোহাম্মদ সাইদুজ্জামান), অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ মো. গোলাম রসুল, শেরাটন শাখার ইনচার্জ ও অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ এ এম আলমগীর কবীর, শেরাটন শাখার ম্যানেজার ও অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ মো. ওয়ারিছ উদ্দিন, অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ মো. ফায়েজুর রহমান, সেটেলমেন্ট অফিসার (সিডিবিএল অফিসার) ও অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ মো. শাহরিয়ার কবীর, অ্যাকাউন্টস এক্সিকিউটিভ ও অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ জি এম আজাদ হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের গাড়িচালক মো. মামুন হোসেন ও অফিস সহকারী মো. হাসান।

তামহা সিকিউরিটিজ ২০০৫ সালের ১৯ জানুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) নিবন্ধিত হয়।

ঢাকা/এনটি/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ