নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করতে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে রাজধানীর দনিয়া এলাকার বাসিন্দারা। এ সময়ের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত না হলে রায়েরবাগের আঞ্চলিক অফিস ঘেরাও এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ব্লকেডের হুমকি দেওয়া হয়েছে।

শনিবার (১ মার্চ) রাজধানীর কাজলা এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে মানববন্ধনে এ হুমকি দেওয়া হয়। বসতবাড়িতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের দাবিতে এ মানববন্ধন করেন দনিয়াবাসী।

মানববন্ধনে দনিয়ার বাসিন্দারা বলেন, “আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আমরা এ মানববন্ধন করতে বাধ্য হয়েছি। আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ গ্যাস সরবরাহ-বিড়ম্বনায় ভুগছি। গ্যাস বিতরণ কর্তৃপক্ষের কাছে ধরনা দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। কর্তৃপক্ষ সারা দিন আবাসিক সংযোগে গ্যাস বিতরণ বন্ধ রাখে। গভীর রাতে গ্যাস সরবরাহ করে, যা আমাদের কোনো কাজে আসে না।”

তারা বলেন, “আমরা নিয়মিত গ্যাস বিল পরিশোধ করে আসছি। দুঃখের বিষয়, গ্যাস সরবরাহ কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার কারণে আমাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। আমরা এই ভোগান্তির অবসান চাই। গ্যাস বিতরণ কর্তৃপক্ষের এই অন্যায় কাজের প্রতিবাদ জানাচ্ছি, প্রতিকার আশা করছি। সামনে রমজান মাস, গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত না হলে ধর্ম-কর্ম পালন করা আমাদের পক্ষে কষ্টদায়ক হবে। অতএব, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করে আমাদের বাঁচতে দিন। আমরা গ্যাস চাই, বিদ্যুৎ চাই; বাচাঁর মতো বাচঁতে চাই।”

বিদ্যুতের বিষয়ে তারা বলেন, “বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার ভোগান্তির আরেক খাত। আমরা বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার ব্যবস্থা বাতিল করে পূর্বের বিলিং মিটার ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চাই। এই প্রিপেইড মিটার আমাদের ২৪ ঘণ্টা আতঙ্কে রাখে। অবিলম্বে এই প্রি-পেইড ব্যবস্থা প্রত্যাহার করে পূর্বের ব্যবস্থায় যেতে চাই। আশা করি, জনদুর্ভোগ লাঘবে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে আমাদেরকে শান্তিতে বসবাস করার সুযোগ দেবেন।”

দনিয়াবাসীর পক্ষে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা জাবের আব্দুল্লাহ খান, আমির হোসেন ও হারুন-অর-রশিদ। 

ঢাকা/মামুন/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস থ আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

রোজায় নিত্যপণ্যের বাজার যেমন থাকতে পারে

পবিত্র রমজান মাসকে ঘিরে নিত্যপণ্যের বাজারে কেনাবেচা জমজমাট। ক্রেতাদের কেউ পুরো মাসের জন্য একসঙ্গে বাজার করছেন, কেউ আবার দু-এক সপ্তাহের জন্য কিনছেন তেল, ছোলা, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা ধরনের পণ্য। আজ শুক্রবার ছুটির দিনে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র।

রোজায় দাম বাড়তে পারে—এমন আশঙ্কায় অনেকে আগেভাগে রোজার পণ্য কিনছেন। ক্রেতাদের অনেকেই বিক্রেতাদের কাছে প্রশ্ন রাখছিলেন, রোজার মাসে তেল, ছোলা, পেঁয়াজের দাম বাড়বে কি না।

নগরের বহদ্দারহাট, চকবাজার, কর্ণফুলী কমপ্লেক্সসহ অন্তত পাঁচটি খুচরা বাজারে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বোতলজাত সয়াবিন ছাড়া রোজায় নিত্যপ্রয়োজনীয়। অন্য সব পণ্যের দাম এখন নিম্নমুখী। দামে বড় ধরনের পরিবর্তনের সুযোগ নেই। সরবরাহ ঠিকঠাক হলে সয়াবিন তেলও নির্ধারিত মূল্যে এসে যাবে।

সয়াবিনের হালচাল

গত চার মাসে বোতলজাত সয়াবিনের সংকট বাজারে। গুটিকয়েক দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া গেলেও দাম চাওয়া হচ্ছে লিটারপ্রতি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। আবার এসব তেলের গায়ে নির্ধারিত মূল্যও মুছে দেওয়া হচ্ছে। সরকারিভাবে নির্ধারিত মূল্য ১৭৫ টাকা। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে মিলছে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে তেলের বাড়তি দাম আদায়ের প্রমাণও। এমন অবস্থায় রোজায় সয়াবিন তেলের সরবরাহ ঠিক থাকবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন অনেক ক্রেতার।

সরেজমিন বহদ্দারহাট ঘুরে বোতলজাত সয়াবিন তেল দেখা যায়নি। কয়েকজন দোকানি বলেন, সবশেষ দুই দিন আগে সয়াবিন সরবরাহ হয়েছিল চাহিদার ১০ ভাগের ১ ভাগ। বাজারে খোলা তেলও এখন ১৫০ থেকে ২০০ টাকার আশপাশে। এর মধ্যে খোলা পাম লিটারপ্রতি ১৫৫ থেকে ১৬০ ও সুপারপাম ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বহদ্দারহাট বাজারের দোকানি মুহাম্মদ ফরিদুল হক বলেন, ‘আমরা ২০ কার্টন সয়াবিনের অর্ডার করে পাচ্ছি ২ কার্টন। সয়াবিনের সরবরাহ যদি স্বাভাবিক করা যায়, বাজারও স্বাভাবিক থাকবে।’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বাজারে গিয়ে সয়াবিনের মজুত পেয়েছি বেশ কয়েকটি দোকানে। সংকট অনেকটা কৃত্রিম।’

ছোলা-পেঁয়াজ সরবরাহ পর্যাপ্ত

রমজান মাসের প্রধান পণ্যের একটি ছোলা। এ বছর চাহিদার তুলনায় ছোলা আমদানি হয়েছে বেশি। তবে ডলারের বিনিময়মূল্য বাড়ার কারণে গতবারের তুলনায় এবার একটু বাড়তি দামে কিনতে হবে ছোলা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে গত আড়াই মাসে (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি) ১ লাখ ৬০ হাজার টনের বেশি ছোলা আমদানি হয়েছে। ফলে বাজারে ছোলার সংকট হবে না।

খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ছোলা ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত মাসেও প্রতি কেজিপ্রতি ছোলা ছিল ১১৫ টাকা। ছোলার পাশাপাশি মসুর ও মটর ডালের দামও কিছুটা স্বাভাবিক রয়েছে। ভালো মানের আমদানি করা মসুর বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা দরে। মোটা মসুর বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা দরে। মটর ডাল কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে।

অন্যদিকে খুচরা ও পাইকারি বাজারে বর্তমানে দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ বাজার খাতুনগঞ্জেও পেঁয়াজের দাম বর্তমানে ৩৫ থেকে ৪২ টাকা। অন্যদিকে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬২ টাকা কেজি দরে। খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৫০ টাকার আশপাশে, ভারতীয় পেঁয়াজ গড়ে ৬৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি।

চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, পেঁয়াজের বাজার এখন স্বাভাবিক রয়েছে। ছোলা ও ডালের বাজারও কমতির দিকে। বাজারে বেচাকেনা চলছে। ব্যবসায়ীরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন।

সবজি ও মাংসের দাম যত

এ বছর রবি মৌসুমে ব্যাপক সবজি উৎপাদনের কারণে রমজান মাসে সবজির দাম বাড়বে না বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। বিশেষ করে কাঁচা মরিচ, বেগুন, টমেটো ও ক্ষীরার দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই। এর মধ্যে শীতকাল থেকে এসব সবজির দাম ক্রেতাদের হাতের নাগালে রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছর চট্টগ্রামে রবি মৌসুমে ক্ষীরা, বেগুন, টমেটো ও অন্যান্য সবজির উৎপাদন বেড়েছে। এর মধ্যে শীতের সবজি (বেগুন, টমেটোসহ) উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৫৬ হাজার টন। অন্যদিকে ক্ষীরা ৯৭৮ টন, মরিচ ৫ হাজার ১৭৪ টন ও আলু ৩ হাজার ৬৮৩ টন উৎপাদন হয়েছে।

খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে সব সবজির দাম গড়ে ৪০ টাকার আশপাশে রয়েছে। কেজিপ্রতি বেগুন বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকা দরে। অন্যদিকে ক্ষীরা ৩০ থেকে ৪০, টমেটো ২০ থেকে ৩০, কাঁচা মরিচ ৪০ থেকে ৬০ ও আলু ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। দাম বেড়েছে লেবুর। মাস ব্যবধানে এক হালি (৪টি) লেবুর দাম অন্তত ২০ টাকা বেড়েছে। খুচরা বাজার এক হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে।

মুরগির বাজারে কেজিপ্রতি ব্রয়লার ১৮০ থেকে ১৮৫ ও সোনালি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা গড়ে বিক্রি হয়েছে। দর-কষাকষি করে ৩০০ টাকাতেও সোনালি মুরগি বিক্রি হতে দেখা গেছে। হাড়সহ গরুর মাংস ৭৫০-৮০০ ও শুধু মাংস ৯৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে খাসির মাংস বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা দরে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘রমজানে মাছের ঘাটতি হবে না’
  • বোতলের সয়াবিনের সংকট, চড়া দামে বিক্রি খোলা তেল
  • খাদ্যে ভেজালকারীদের শাস্তি দাবি
  • রোজায় নিত্যপণ্যের বাজার যেমন থাকতে পারে
  • ফতুল্লায় কাস্টমস কর্মকর্তার শাস্তির দাবিতে ঝাড়ু মিছিল, মানববন্ধন
  • দুর্ঘটনায় চবি ছাত্রীর মৃত্যু: বিচার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে মানববন্
  • আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ‘সন্তোষজনক’ হলে মধ্যরাতে ব্রিফিং কেন
  • গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির শুনানিতে তীব্র বিরোধিতা, হট্টগোল
  • পরিবহন প্রশাসক পদ থেকে ইবি উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি