পরিবার সঞ্চয়পত্র মধ্যবিত্ত নারীদের মধ্যে জনপ্রিয় সঞ্চয় স্কিম। এটা থেকে প্রতি মাসেই মুনাফার টাকা তোলা যায়। মুনাফাও বেশ ভালো। ২০০৯ সালে পাঁচ বছর মেয়াদি এই সঞ্চয়পত্র চালু হওয়ার পর দেড় দশকেই সবচেয়ে জনপ্রিয় সঞ্চয় স্কিমে পরিণত হয়েছে। সবাই এই সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন না। মূলত নারীদের জন্য এই সঞ্চয়পত্র।

এবার দেখা যাক, এই সঞ্চয়পত্র কীভাবে কিনবেন, কোথায় পাওয়া যায়, মুনাফার হার কত ইত্যাদি।

মুনাফা কত

একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা পর্যন্ত একক নামে পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন। অন্য সঞ্চয়পত্র যৌথ নামে কেনার সুযোগ থাকলেও পরিবার সঞ্চয়পত্র যৌথ নামে কেনা যায় না।

এই সঞ্চয়পত্রের মুনাফা দুইভাগে বিভক্ত। যেমন সাড়ে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রথম বছর শেষে ১০ দশমিক ২০ শতাংশ; দ্বিতীয় বছর শেষে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ, তৃতীয় বছর শেষে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, চতুর্থ বছর শেষে ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ ও পঞ্চম বছর শেষে বা মেয়াদ পূর্ণ হলে সাড়ে ১২ শতাংশ মুনাফা মিলবে। চলমান সঞ্চয় স্কিমগুলোর মধ্যে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মুনাফা।

অন্যদিকে সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে মুনাফার হার প্রথম বছর শেষে ১০ দশমিক ১১ শতাংশ; দ্বিতীয় বছর শেষে ১০ দশমিক ৬২ শতাংশ, তৃতীয় বছর শেষ ১১ দশমিক ১৭ শতাংশ, চতুর্থ বছর শেষে ১১ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও পঞ্চম বছর শেষে বা মেয়াদ পূরণ হলে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

মাসিক মুনাফা নেওয়ার পর পাঁচ বছর শেষে মূল টাকা ফেরত পাওয়া যায়। মেয়াদপূর্তির আগে নগদায়ন করলে মাসিক মুনাফা কর্তন করে সরকার বাকি অর্থ ফেরত দেবে। যেমন প্রথম বছর চলাকালে এক লাখ টাকা ভাঙালে মুনাফা পাওয়া যাবে না।

কারা কিনতে পারবেন

এটি বিশেষায়িত সঞ্চয়পত্র। ১৮ ও তদূর্ধ্ব বয়সের যেকোনো বাংলাদেশি নারী এই সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন। যেকোনো বাংলাদেশি শারীরিক প্রতিবন্ধী পুরুষ ও নারী এবং ৬৫ ও তদূর্ধ্ব বয়সের যেকোনো বাংলাদেশি পুরুষ ও নারী চাইলে এই সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন।

কোথায় পাওয়া যায়

জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা, বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা ও ডাকঘর থেকে এই সঞ্চয়পত্র কেনা ও ভাঙানো যায়।

মূল্যমান

১০ হাজার টাকা, ২০ হাজার টাকা, ৫০ হাজার টাকা, ১ লাখ টাকা, ২ লাখ টাকা, ৫ লাখ টাকা ও ১০ লাখ টাকা।

উৎসে কর

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট বলছে, পরিবার সঞ্চয়পত্রে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সর্বমোট বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার ওপর ৫ শতাংশ হারে এবং এর অধিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার ওপর ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তন করা হয়।

অন্য সুবিধা

পরিবার সঞ্চয়পত্রের বেশ কিছু সুবিধা আছে। যেমন প্রতি মাসেই মুনাফার টাকা তোলা যায়। যেকোনো সময় নমিনি বা মনোনীতক নির্বাচন, পরিবর্তন ও বাতিল করা যায়। সঞ্চয়পত্রের ক্রেতার মৃত্যুর পর নমিনি সঙ্গে সঙ্গে সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করে টাকা উত্তোলন করতে পারেন অথবা মেয়াদ পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত যথারীতি মাসে মাসে মুনাফা উত্তোলন করতে পারেন।

হারিয়ে গেলে, পুড়ে গেলে বা নষ্ট হলে গ্রাহকের নামে বিকল্প (ডুপ্লিকেট) সঞ্চয়পত্রও ইস্যু করা হয়।

বিক্রি কমেছে ৩১%

উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন কারণে পরিবার সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক নারী বিনিয়োগকারী পরিবার সঞ্চয়পত্র ভাঙছেন। সেই সঙ্গে বিক্রিও কমেছে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরর প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) পরিবার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ হয়েছে ৮ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। বিক্রি কমেছে ৩১ শতাংশ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত য় বছর শ ষ ১০ দশম ক প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদরা ‘জুলাই শহীদ’ নামে অভিহিত হবেন

জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদরা ‘জুলাই শহীদ’ এবং আহতরা ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামে অভিহিত হবেন।

গত ৯ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।

আরো পড়ুন:

নতুন দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ইউনূসকে আমন্ত্রণ

বিএনপির বর্ধিত সভায় ঐক্যের ডাক, ভোটের জোর প্রস্তুতিতে চোখ

এতে জানানো হয়, ৮৩৪ জন জুলাই শহীদের তালিকা গেজেটে প্রকাশিত হয়েছে। জুলাই শহীদ পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা পাবেন। এর মধ্যে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা এবং ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই, ২০২৫-এ জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকা পাবেন।

শহীদ পরিবারকে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা প্রদান করা হবে। শহীদ পরিবারের সক্ষম সদস্যরা সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন।

জুলাই-২৪ এর যোদ্ধারা তিনটি মেডিক্যাল ক্যাটাগরি যথা- ক্যাটাগরি এ, ক্যাটাগরি বি এবং ক্যাটাগরি সি অনুযায়ী সুবিধা পাবেন। ক্যাটাগরি এ. (অতি-গুরুতর আহত): ক্যাটাগরি এ (অতি-গুরুতর আহত) ৪৯৩ জন জুলাই যোদ্ধা তালিকাভুক্ত হয়েছে। যারা চিকিৎসার পরও শারীরিক অসামর্থ্যতার নিরিখে অন্যের সহায়তা ব্যতীত জীবন যাপনে অক্ষম।

ক্যাটাগরি এ শ্রেণি নিম্নোক্ত প্রক্রিয়ায় আর্থিক অনুদান ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাবেন-তাদের এককালীন ৫ লাখ টাকা দেওয়া হবে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ২ লাখ টাকা দেওয়া হবে। ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ৩ লাখ টাকা দেওয়া হবে। তাদের মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হবে। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আজীবন চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। এছাড়া উপযুক্ত মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে দেশি-বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পাবেন। কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন সুবিধা পাবেন। তারা পরিচয়পত্র পাবেন এবং পরিচয়পত্র দেখিয়ে সরকারের বিভিন্ন সুবিধা পাবেন।

গুরুতর আহত ক্যাটাগরি বি'তে ৯০৮ জন জুলাই যোদ্ধা তালিকাভুক্ত, যারা পর্যাপ্ত চিকিৎসার পর শারীরিক অসামর্থ্যতার নিরিখে অন্যের আংশিক সহায়তায় জীবনযাপনে সক্ষম হবেন বলে প্রতীয়মান। গুরুতর আহত জুলাই যোদ্ধাদের এককালীন ৩ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এর মধ্যে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ১ লাখ টাকা দেওয়া হবে। ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ২ লাখ টাকা দেওয়া হবে। তাদের মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হবে।

কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি অথবা আধা-সরকারি কর্মসংস্থান পাবেন। তারা পরিচয়পত্র পাবেন এবং পরিচয়পত্র দেখিয়ে সরকারের বিভিন্ন সুবিধা পাবেন।

আহত ক্যাটাগরি সি তে ১০ হাজার ৬৪৮ জন জুলাই যোদ্ধা তালিকাভুক্ত হয়েছেন, যারা চিকিৎসার পর বর্তমানে সুস্থ হয়েছেন।

আহত জুলাই যোদ্ধারা নিম্নোক্ত প্রক্রিয়ায় আর্থিক অনুদান ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাবেন- তাদের এককালীন ১ লাখ টাকা দেওয়া হবে, মাসিক ১০ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হবে, পুনর্বাসন সুবিধা পাবেন, পরিচয়পত্র পাবেন এবং পরিচয়পত্র দেখিয়ে সরকারের বিভিন্ন সুবিধা পাবেন।

ঢাকা/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘জুলাই শহীদ’ ও ‘জুলাই যোদ্ধারা’ মার্চ থেকে ভাতা পাবেন: প্রেস সচিব
  • জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদরা ‘জুলাই শহীদ’ নামে অভিহিত হবেন
  • ‘জুলাই শহীদ’ ও ‘জুলাই যোদ্ধা’রা মার্চ থেকে ভাতা পাবেন: প্রেস সচিব
  • ৮৩৪ জন জুলাই শহীদের পরিবার পাচ্ছে ৩০ লাখ টাকা, মাসিক ভাতা ২০ হাজার