পাবনার সাঁথিয়ায় আঞ্চলিক মহাসড়কে গাছ ফেলে অন্তত ২০টি যানবাহনে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতদল যানবাহন চালক ও যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকাসহ সর্বস্ব লুট করে নিয়ে গেছে।

শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে সাঁথিয়া-বেড়া সড়কের তলট এলাকায় এ ডাকাতি ঘটে বলে অভিযোগ।

ভুক্তভোগীরা জানান, রাতে সাঁথিয়া-বেড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের ছেচানিয়া তলট নামক স্থানে গাছের গুড়ি ফেলে রাত দেড়টার দিকে ডাকাতদল এসব যানবাহন আটকায়। পরে অস্ত্রের মুখে অন্তত ২০টি যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের জিম্মি করে সবার কাছ থেকে নগদ টাকা, মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। 

খবর পেয়ে সাঁথিয়া থানা পুলিশ ও বেড়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে গাছের গুড়ি সরিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করে। 

সাঁথিয়া থানার ওসি সাইদুর রহমান বলেন, “খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে কতগুলো গাড়িতে ডাকাতি হয়েছে তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেয়নি।” 

ঢাকা/শাহীন/টিপু 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

‘মা, বিছানা রেডি করো, আমি ঘুমাব’, মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে আরাফাতের ফোন

ঈদের আগে কয়েক দিন বেচাবিক্রির ব্যস্ততায় একদম ঘুমাতে পারেননি কসমেটিকস দোকানের বিক্রয়কর্মী আরাফাত হোসেন। ভোরে গাড়িতে উঠে মাকে ফোন দিয়ে বলেছিলেন, `মা, বিছানা রেড়ি করো। বাড়িতে এসে ঈদের নামাজ পড়ে ঘুমাব।’ কথামতো মা বিছানা তৈরি করে রেখেছিলেন। কিন্তু চির ঘুমে আচ্ছন্ন আরাফাতকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স এল বাড়ির উঠানে। মায়ের যত্ন করে গুছিয়ে দেওয়া বিছানায় নয়, আরাফাতকে শোয়ানো হলো মাটির বিছানায়।

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নে বান্দরবান জেলার সীমান্তে বিস্তীর্ণ সবুজ ফসলি মাঠ ও পাহাড়ি এলাকার মাঝখানে আধার মানিক গ্রামের অবস্থান। গ্রামের হাঙ্গর খালের কুল ঘেঁষে সেনের চর এলাকায় গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে আরাফাতের লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স এসে পৌঁছায়।

আরাফাতের বাবা ওই এলাকার কৃষক আব্দুল মোতালেব(৫০) ওরফে সোনা মিয়ার বাড়ির সামনে অ্যাম্বুলেন্স থামতেই কয়েক শ মানুষ ছুটে আসেন। তাদের কয়েকজন আরাফাতের লাশ কাঁধে তুলে নিয়ে সরু মেঠো পথ ধরে বাড়ির দিকে হেঁটে চললেন। ৩ মিনিট পর মাটির তৈরি আরাফাতদের বাড়ির উঠানে লাশ পৌঁছাতেই নারীদের কান্নায় আশপাশের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। ঘুমানোর কথা বলে এভাবেই চির দিনের জন্য আরাফাত ঘুমিয়ে পড়বে তা কে জানত?

গতকাল সকাল সোয়া ৭টার দিকে আরাফাত হোসেন (২১) ও রিফাত হোসেন (১৮) নামের লোহাগাড়ার আধার মানিক গ্রামের দুই তরুণসহ সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া উপজেলা অংশের চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও মিনিবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই ৫ তরুণ নিহত হন। আহত হন আরও ৯ জন। নিহত তরুণদের মধ্যে আরাফাতসহ ৪ জন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা এবং ১ জন পাশের সাতকানিয়া উপজেলার।

নিহত তরুণদের সবাই একে অপরের বন্ধু ও পরিচিতজন। তাঁরা কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কোর্টবাজার এলাকায় বিপণিবিতান ও কসমেটিকসের দোকানে চাকরি করতেন। গ্রামে অপেক্ষারত প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়িতে ফিরছিলেন তাঁরা।

পুলিশ জানায়, কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা থেকে চট্টগ্রামগামী একটি মিনিবাসের সঙ্গে কক্সবাজারগামী সৌদিয়া পরিবহনের একটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে হয়। এতে গাড়ি দুটির সামনের অংশ দুমড়ে–মুচড়ে যায়। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় লোহাগাড়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করেন।

আরাফাত ও রিফাত ছাড়া নিহত বাকি তিনজন হলেন লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের বাগমুয়া সগিরা পাড়া এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে নাজিম উদ্দিন (২৮), একই উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সুখছড়ি খলিফার পাড়া এলাকার আমির হোসেনের ছেলে জিসান হোসেন (১৯) এবং সাতকানিয়া উপজেলার কেওচিয়া ইউনিয়নের ডেলিপাড়া এলাকার আবদুস সাত্তারের ছেলে সিদ্দিক আহমদ (১৮)।

গ্রামের দুই তরুণের মৃত্যুর ঘটনায় আধার মানিক গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। ছিল না ঈদের আনন্দ। গতকাল সকাল ৮টার দিকে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন গ্রামের বাসিন্দারা। ৯টায় ওই গ্রামের প্রধান মসজিদে ঈদের নামাজ হওয়ার কথা ছিল। পুরুষরা ততক্ষণে সব প্রস্তুতি সেরে মসজিদে জড়ো হয়েছেন। নারীরাও রান্নার কাজ সেরে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন অতিথি অ্যাপায়নের।

কিন্তু সকাল ৮টায় মুঠোফোনে আসা এক দুর্ঘটনার সংবাদে স্তব্ধ হয়ে যায় আধার মানিক গ্রাম। মুহূর্তেই গ্রামের মানুষের ঈদ আনন্দ পরিণত হয় বিষাদে। থেমে যায় পুরো গ্রামের ঈদ উৎসব।

গতকাল বেলা ১১টার দিকে গ্রামের হাঙ্গর খালের কুল ঘেঁষে সেনের চর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য।

আরাফাতের নিথর দেহ অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে আনা হয় বাড়ির উঠানে। ছেলের লাশ দেখেই আরাফাতের পক্ষাঘাতগ্রস্ত মা খুরশিদা বেগম অজ্ঞান হয়ে যান। উঠানের এককোণে বসে বিলাপ করছিলেন আরাফাতের বাবা আবদুল মোতালেব।

প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘২ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে আরাফাত সবার ছোট। উখিয়ার কোর্ট বাজারে ৭ হাজার টাকা বেতনে একটি কসমেটিকসের দোকানে চাকরি করত সে। এ বছর আমি তরমুজ চাষ করেছিলাম। আরাফাত তরমুজ খেতে ভালোবাসত। সব তরমুজ বিক্রির পর একটি বড় তরমুজ রেখে দিয়েছিলাম তার জন্য।’

আবদুল মোতালেব আরও বলেন,‘ ঈদের আগে কয়েক দিন বেচাবিক্রির ব্যস্ততায় একদম ঘুমাতে পারেনি আরাফাত। ভোরে বাসে উঠে মাকে ফোন দিয়ে বলেছিল, ``মা, বিছানা রেডি করো। বাড়িতে এসে ঈদের নামাজ পড়ে ঘুমাব।" মায়ের পাতানো বিছানায় ঘুমাতে না পারলেও এখন চির ঘুমে আরাফাত।’

আরাফাতের বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে নূর জাহান বিবির পাড়া এলাকায় নিহত আরেক তরুণ রিফাত হোসেনের (১৮) বাড়ি। রিফাতের বাবা বদিউল আলম গরুর ব্যবসা করেন। পরিবার আর্থিকভাবে অসচ্ছল। ৪ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট রিফাত স্থানীয় আধার মানিক পিডিসি উচ্চবিদ্যালয়ের এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মাটি ও টিনের তৈরি রিফাতদের ছোট ঘরে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির বারান্দায় রাখা হয়েছে রিফাতের লাশ। পাশে বসে ডুকরে ডুকরে কাঁদছেন মা নুরুন্নাহার বেগম। প্রতিবেশী স্বজনেরা তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন।

কথা হয় রিফাতের বড় বোন জোবাইদা আক্তারের সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, রমজানে স্কুল ছুটি থাকায় এক মাসের জন্য চাচাতো ভাইয়ের কাপড়ের দোকানে কাজ করতে গিয়েছিল রিফাত। পরিবারের সব সদস্যের জন্য কাপড় কিনে বাড়ি ফিরছিল সে। দুর্ঘটনার ১৫ মিনিট আগেও বোনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়। বলেছিল, ``আপু আর বেশি দূরে নয়, একটু পরই দেখা হবে।'''

শোকের মাতম চলছে নিহত অন্য তিন তরুণের এলাকায়ও। তাঁরা সবাই দোকানের কর্মচারী এবং আর্থিকভাবে অসচ্ছল।

দোহাজারী হাইওয়ে থানার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের দিন ফাঁকা মহাসড়কে বাস দুটির বেপরোয়া গতি ছিল। তা ছাড়া বিপজ্জনক বাঁকের কারণেও দুর্ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে। পুলিশ ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে গিয়ে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটি জব্দ করে এবং লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ