মধ্যরাতে সড়কে গাছ ফেলে ৪০ গাড়িতে ডাকাতি
Published: 1st, March 2025 GMT
পাবনার সাঁথিয়ায় মধ্যরাতে সড়কে গাছ ফেলে বাস ট্রাকসহ অন্তত ৪০টি গাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে পাবনা-সাঁথিয়া সড়কের ছেচানিয়া ব্রিজের পাশে এ ঘটনা ঘটে। সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, রাত দেড়টার দিকে ছেচানিয়া ব্রিজের পাশে সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে প্রথমে একটি পণ্যবাহী ট্রাক আটকে রাখে ডাকাত দলের সদস্যরা। এতে কিছু সময়ের মধ্যেই বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসসহ প্রায় ৪০টি গাড়ি আটকা পড়ে। এ সময় ৪০ থেকে ৫০ জন হাসুয়া, রামদা, ছুরি, চাকুসহ বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে পর্যায়ক্রমে গাড়িগুলোতে ডাকাতি চালায়। গাড়ির গেট খুলতে দেরি করায় কিছু গাড়ি ভাঙচুর করে তারা। এ সময় পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীদের মারধর করে তাদের সঙ্গে থাকা মোবাইল, টাকা ও অন্যান্য সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এ তাণ্ডব চলে বলে।
ডাকাতির কবলে পড়া আব্দুস সালাম নামে একজন ফেসবুক লিখেছেন, ‘কিছুক্ষণ আগে এই সড়কে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে গাড়িগুলোতে ডাকাতি করেছে। হুট করে আমাদের গাড়িতে আক্রমণ করে ডাকাতদলের সদস্যরা। বারবার গাড়িতে আঘাতের পর আমরা ড্রাইভারকে গেট খুলে দিতে বললে ডাকাতরা ঢুকে ড্রাইভারের গলা ও পেটে চাকু ধরে। একইভাবে অন্যদেরও জিম্মি করে সব লুটে নিয়ে যায়।
তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমরা বলেছি, ভাই যা আছে সব নেন, কিন্তু কাউকে আঘাত কইরেন না। আমাদের গাড়িতে কাউকে আঘাত করেনি। অনুরোধ করায় আমার দুটি মোবাইল দুটি দিয়ে যাও।’
তিনি বলেন, ‘একটা মাইক্রোবাসে করে দেশে ফিরছিলেন এক প্রবাসী। ওই গাড়িতে আক্রমণ করে কয়েকজনকে মারধর করে সব লুটে নিয়ে গেছে। একইভাবে সব গাড়িতে পর্যায়ক্রমে ডাকাতি চালায়। গাড়ি ভাঙচুর ও অনেককেই মারধর করে।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবু বলেন, ‘ঘটনা শুনেছি। এখনও বিস্তারিত জানি না। তবে ওই রাস্তাটি খুব বেশি ব্যস্ত না হলেও বেড়া-বাঘাবাড়ি হয়ে ঢাকায় যাবার জন্য বেশ কিছু গাড়ি ওই রাস্তা দিয়ে যায়। এটি ডাকাতরা জেনেই গাছ ফেলে ডাকাতি করেছে।’
সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুর রহমান বলেন, ‘খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ পাঠানো হয়। সুনির্দিষ্ট করে বলতে না পারলেও কয়েকটি গাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রিকশাভ্যানে শরবত ও পপকর্ন বিক্রি করে সংসার চলছে কাদিরের
জীবন জীবিকার অন্বেষণে শরবত ও পপকর্ন বিক্রিকে এখন পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার মোড়াকরি গ্রামের মো. তনছর আলী ওরফে আব্দুল কাদির।
চার সন্তান, স্ত্রী আর মাকে নিয়ে অভাবের সংসারে উপায়হীন কাদির সৎপথে থেকে শরবত ও পপকর্ন বিক্রি করে স্বচ্ছল জীবন কাটচ্ছেন বলে জানালেন।
তার সঙ্গে দেখা হয় হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ বাজারে। এখানেই আলাপচারিতা হয় কাদিরের সঙ্গে। কাদির জানান তার জীবনের অনেক ঘাতপ্রতিঘাতের কথা। বললেন লেখাপড়া কম থাকায় অনেক দিন বেকার ছিলেন। কষ্টে দিন যাচ্ছিল। জীবিকার প্রয়োজনে কৃষি কাজ শুরু করেন। কিন্তু টানাপোড়েনেই চলছিল জীবন। প্রয়োজনে মাঝেমধ্যে যেতেন হাট-বাজারে। বাজারে মাঝে মধ্যে অ্যালোভেরা ও বেল শরবত, পপকর্ন- এসব কিনে খেতেন। এটা ভালো লাগত তার। একদিন এ বিষয়টিই মাথায় ঢুকে যায় তার। ভাবনা মতেই কাজ। নেমে পড়েন এ ব্যবসায়। অ্যালোভেরা, বেলের শরবত ও পপকর্ন তৈরি করার ওপর প্রশিক্ষণ নেন। বিক্রিও শুরু করেন।
কাদির জানান, প্রথমে চট্টগ্রাম পরে ঢাকা ও সিলেট ভোলাগঞ্জে শরবত ও পপকর্ন বিক্রি করেন। এ ব্যবসা করে সংসারে অনেকটাই সচ্ছলতা ফিরেছে তার। বসবাস করছেন জেলার শায়েস্তাগঞ্জ পৌর শহরের মহলুলসুনাম গ্রামে ভাড়া বাসায়। এভাবে প্রায় ২০ বছর ধরে অ্যালোভেরা ও বেলের শবরত বিক্রি করে আসছেন। আর শীতকালে পপকর্ন (ভুট্টার খৈ) বিক্রি করেন।
তিনি জানান, কিছুটা গরম আসায় পপকর্ন বিক্রি বন্ধ করে প্রতিদিন রিকশাভ্যানে করে শায়েস্তাগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন স্থানে অ্যালোভেরা ও বেলের শরবত বিক্রি করছেন। বেলের শরবত প্রতি গ্লাস ২০ ও অ্যালোভেরা ১০ থেকে ৫০ টাকা। প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা লাভ হয়। সামনে রোজা আসছে। এ রোজায় তার শরবতের চাহিদা বেড়ে যায় বলে জানান কাদির।
কাদির এগুলো বিক্রি করতে করতে এর উপকারিতা নিয়ে অনেক কিছু জেনেছেন। তিনি বলেন, “লোকজন এখন স্বাস্থ্য সচেতন। গরমে অনেকে আমার তৈরি শরবত পান করেন।ভেষজ উদ্ভিদ অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর অনেক গুণ। এটি রস হিসেবে খাওয়া যায়, ত্বকের প্রদাহে প্রতিষেধক হিসেবে লাগান যায়। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, জিংক, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, ফলিক অ্যাসিড, অ্যামিনো অ্যাসিড ও ভিটামিন-এ, বি৬ ও বি২ ইত্যাদি।”
তিনি বলেন, “সারা দিন বাইরের কাজ শেষে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। শরীরে পানিশূন্যতা পূরণে পান করতে পারেন বেলের শরবত। বেলের শরবত খুবই স্বাস্থ্যসম্মত ও শরীর ভালো রাখে। বেলের শরবত হজমশক্তি বাড়ায় এবং তা বলবর্ধক।”
কাদির বলেন, “বর্তমানে নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বি। এখানে শরবত বিক্রির লাভে পরিবারের জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি সন্তানদের পড়াশুনা করাচ্ছি।”
তার তৈরি অ্যালোভেরা ও বেলের শরবতের প্রশংসা করেন শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আ স ম আফজল আলী। তিনি বলেন, “অ্যালোভেরা ও বেল শরবত মাঝে মাঝে খাওয়া হয়। এসব অনেক উপকারী।”
ঢাকা/মামুন/টিপু