বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ মাস পবিত্র রমজান। ইফতার রোজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইফতারে আমরা সাধারণত প্রথমে পানি বা শরবত পান করি। এরপর খেজুর বা সহজপাচ্য শর্করা, যেমন দই-চিড়া, গুড়ের পায়েস, ওটমিল, চিয়া পুডিং (এসব খাবারের সঙ্গে চাইলে পছন্দমতো বিভিন্ন বাদাম, ফল মিশিয়ে) দিয়ে ইফতার করা যেতে পারে। এসব খাবার শরীরে দ্রুত শক্তি জোগায় এবং পেট
ঠান্ডা রাখে।
আমরা অনেকেই ইফতারে পানি খেয়েই ভাজাভুজি, যেমন ছোলা, পিঁয়াজি, বেগুনি খেতে ভালোবাসি। সারা দিন রোজা রাখার পর এসব খাবারে বুকজ্বালা, পেটব্যথা, বুক ধড়ফড় করতে পারে; রক্তে ক্ষতিকর চর্বি বাড়তে পারে। আর ওজন তো বাড়বেই। কারণ, এসব তৈলাক্ত, চর্বিযুক্ত খাবারে প্রচুর ক্যালরি থাকে।
ইফতারে পুষ্টি উপাদানগুলো যেন সহজেই পাওয়া যায়, তেমন খাবার খেতে হবে। নমুনা হিসেবে এনার্জি বুস্ট করে এমন কিছু খাবারের কথা বলা যায়। যেমন ইফতারের শুরুতেই খেতে হবে দই, লাল চিড়া, কলা, বাদাম, খেজুর—সবকিছু একসঙ্গে মিশিয়ে অথবা গ্রহণ করতে হবে সহজে হজমযোগ্য, যেমন তরলজাতীয় খাবার বা ফলের জুস বা স্মুদি।
মাগরিবের নামাজের পর বা এক-দুই ঘণ্টা পর● হালিম খুব পুষ্টিকর খাবার। এটি খাওয়া যায়। কারণ, হালিম কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাটের ভালো উৎস।
● সেদ্ধ ছোলা, মুড়ি, টমেটো, শসার পাশাপাশি পছন্দের ভাজাপোড়ার মধ্যে একটি-দুটি সিলেক্টিভ আইটেম, যেমন পিঁয়াজু, আলুর চপ কম তেলে ভেজে খাওয়া যায়।
● সবজি ও ডিম বা চিকেন স্যুপ খুব স্বাস্থ্যকর। এমন খাবার থেকে প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেলস পাওয়া যায়।
● বিভিন্ন ফল দিয়ে তৈরি ‘সালাদ’ পুষ্টিকর খাবার। এটি শরীরকে হাইড্রেট রাখে।
অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয়। পেটের সমস্যা এড়াতে তোকমা, ইসবগুল ও তাজা ফলের রস এ সমস্যায় সাহায্য করে। শরীরকে যথাসম্ভব হাইড্রেট রাখা দরকার, যেন পানিশূন্যতা না হয়। সারা দিন রোজা রেখে অতিরিক্ত না খেয়ে খেতে হবে ধীরে ধীরে ও ভালোমতো চিবিয়ে। এতে শরীর সুস্থ থাকবে ও পরের দিনের রোজা রাখার জন্য নিজেকে সুস্থভাবে তৈরি করা যাবে।
লাজিনা ইসলাম চৌধুরী, পুষ্টিবিদ, পিপলস হাসপাতাল, মালিবাগ, চৌধুরীপাড়া, ঢাকা
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইফত র
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁদ রাতে শ্রীমঙ্গল রণক্ষেত্র, সাবেক মেয়রসহ আটক ১৪
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ৪ ঘণ্টার সংঘর্ষে শ্রীমঙ্গল আতঙ্কের শহরে পরিণত হয়েছে। চাঁদ রাতের এ ঘটনায় ঈদের জমজমাট বাজার মুহূর্তে সব তছনছ হয়ে যায়। পরে পুলিশ ৫৬ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। এতে জড়িত থাকার অভিযোগে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টা থেকে ভোর রাত ৩টা পর্যন্ত। এ দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে যৌথবাহিনী শহরে টহল দিচ্ছে।
জানা যায়, শ্রীমঙ্গল পৌর এলাকার গদারবাজার এলাকার খাস ভূমিতে জেলা বিএনপি নেতা, সাবেক মেয়র মহসিন মিয়া মধু বিনা লাভের দোকানের নামে ও কয়েকজন ফল ব্যবসায়ী দখলদারিত্ব কায়েমের চেষ্টা করছিলেন। অন্যদিকে একই স্থানে ইজিবাইক চালকরা সেখানে তাদের স্ট্যান্ড গড়ে তোলার লক্ষ্যে যানবাহন থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করাতেন। চাঁদ রাত সাড়ে ১১টার দিকে একজন চালক বিনা লাভের দোকানের পাশে একটি ইজিবাইক রাখেন। এ সময় দোকানের সেলসম্যান বাধা দেন। তখন দুইজনের মাঝে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের আনহার মেম্বার বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে সাবেক মেয়রসহ ৪০-৫০ জন যুবক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ উপস্থিত হলে উপস্থিত সকলের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অপরদিকে ইজিবাইক শ্রমিকদের পক্ষে পশ্চিম ভাড়াউড়া এলাকা থেকে কয়েকশ লোক যোগ দিলে উভয় পক্ষের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। ফলে শ্রীমঙ্গল শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা রাত তিনটা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। পরে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ ৫৬ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ দিকে মৌলভীবাজার জেলার পাইকারি ও সস্তা দরে কেনা-বেচার জন্য শ্রীমঙ্গলের বিপণী বিতান ও মার্কেটের উপচে পড়া ভিড় মুহূর্তে ফাঁকা হয়ে যায়।
পুলিশ জানায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর সাবেক মেয়রের বাসা ও কয়েকটি বাসা-বাড়িতে যৌথ অভিযান চালিয়ে ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে।
ওসি (তদন্ত) মোবারক হোসেন জানান, আহতদের অনেকে শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন। আটককৃতদের মাঝে সাবেক মেয়র মহসিন মিয়া মধু, তার ছেলে মুরাদ হোসেন সুমন, আলকাছ কাউন্সিলর ও মেয়রের চাচাত ভাই সেলিম মিয়া নাম জানা গেছে।
শ্রীমঙ্গল থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) আমিনুল ইসলাম সরকার ১৪ জনকে আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে সোমবার সাড়ে ১১টার দিকে জানান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এখনও কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ দেয়নি।
তিনি আরও জানান, রোববার দিবাগত রাতের সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে ৫৬ রাউন্ড ফাঁকা রাবার বুলেট ছোড়া হয়েছে। অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন তিনি।