প্রতিষ্ঠানের কাজে উপদেষ্টা ও মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপের অভিযোগ শিল্পকলা একাডেমির ডিজির
Published: 1st, March 2025 GMT
শিল্পকলার কাজে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও উপদেষ্টার হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের (ডিজি) পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ জামিল আহমেদ। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতার এক পর্যায়ে তিনি পদত্যাগের কথা জানান। বক্তৃতার মধ্যেই মঞ্চে তিনি শিল্পকলা একাডেমির সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র হস্তান্তর করেন। পরে তিনি পদত্যাগের কারণ উল্লেখ করে সংবাদ মাধ্যমে লিখিত বক্তব্যে দেন।
লিখিত বক্তব্যে সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘উপদেষ্টা ও মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপ, আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতার জটিলতা, একাডেমির সচিবকে “ফোকাল পারসন” হিসেবে মনোনীত করে মহাপরিচালকের বিধিসম্মত দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান, বাজেট কর্তন, শিল্পকলার ভেতর থেকে ফাইল গায়েব করে দেওয়া, একাডেমির অভ্যন্তরে বিভিন্ন কর্মকর্তাকে প্ররোচিত করে কাজের পরিবেশ ব্যাহত করা এবং দুর্নীতিবাজ চক্রের নানা অপতৎপরতার কারণে আমি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি।
গতকাল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল থিয়েটার মিলনায়তন ‘মুনীর চৌধুরী প্রথম জাতীয় নাট্যোৎসব’–এর সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন জামিল আহমেদ। সেখানে নাট্যশালার অনুষ্ঠানে দায়িত্ব নেওয়ার সময় জামিল আহমেদ শিল্পকলার কাজে সচিবালয় থেকে যেন কোনো হস্তক্ষেপ না করা হয়—এমন কথা বলেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইদানীং ব্যাপকভাবে হস্তক্ষেপ হচ্ছে।
গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর শিল্পকলার মহাপরিচালকের দায়িত্ব নেন নাট্যনির্দেশক ও গবেষক সৈয়দ জামিল আহমেদ। তিনি ১৯৭৮ সালে নয়াদিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা থেকে গ্র্যাজুয়েশন; ১৯৮৯ সালে ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারইক থেকে নাট্যকলা বিষয়ে এমএ এবং ১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট করেন।জামিল আহমেদ বলেন, ‘আমলাতন্ত্রের পেছনে ১০ বার ফোন করে টাকা আদায় করা আমার ব্যক্তিগত কাজে নয়, শিল্পকলা একাডেমির জন্য, সেই কাজটা না করতে পেরে, যদি না করতে দেয়, পদে পদে বাধা দেয়, তাহলে এখানে থেকে লাভ নাই।’
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ আনাসের বাবা সাহরিয়া খান ও মা সানজিদা খান উপস্থিত ছিলেন। আনাসকে স্মরণ করে সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘আনাসের মতো দেড় হাজারের অধিক শহীদের রক্তের জন্য আমি দায়িত্ব নিয়েছিলাম। এ দায়িত্ববোধের জন্য আমি সবকিছু ছেড়ে দিয়েছি। ব্যক্তিগত জীবন ছিল না। শতভাগ সময় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জন্য কাজ করেছি। আমি কোনো জায়গায় কোনো রকম অর্থনৈতিক অনিয়ম বা অনৈতিক কাজ করতে দিতে চাইনি।’
লিখিত বক্তব্যে শিল্পকলা একাডেমিতে মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপের সমালোচনা করেছেন জামিল আহমেদ। তার ভাষ্যে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে মহাপরিচালক পদে আমাকে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তৎকালীন সংস্কৃতি উপদেষ্টার পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হলে আমি বলেছিলাম, শিল্পকলা একাডেমি আইন অনুযায়ী একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাতে কাজ করতে পারে, সেই লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপ রোধ করতে হবে এবং আমি একাডেমির ভিশন ও মিশন–সংবলিত স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করি। তৎকালীন উপদেষ্টা ও সচিবালয়ের সকল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমার সকল প্রস্তাব ও কর্মপরিকল্পনায় তখন সম্মত হয়েছিলেন। তাদের সম্মতি ও প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতেই আমি দায়িত্বভার গ্রহণ করতে সম্মত হই। কিন্তু উপদেষ্টা পরিবর্তনের পর থেকে আমার সকল বিধিসম্মত কাজে নীতিবহির্ভূত পদ্ধতিতে বারংবার হস্তক্ষেপ শুরু হয়। একাডেমির সকল কর্মকাণ্ডকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে শ্লথ করে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হয়।’
উদহারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আইন অনুযায়ী প্রতি তিন মাস অন্তর একাডেমির সভা করার বিধান থাকা সত্বেও পরিষদ সভার কার্যবিবরণী অনুমোদন করতে উপদেষ্টা ৫ সপ্তাহ অহেতুক সময় নেন। অথচ একাডেমির আইন অনুযায়ী প্রতি তিন মাস অন্তর সভা করার বিধান রয়েছে।’
শুক্রবার ‘মুনীর চৌধুরী প্রথম জাতীয় নাট্যোৎসব’—এর সমাপনী অনুষ্ঠানে নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ জামিল আহমেদ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল দ শ শ ল পকল শ ল পকল র এক ড ম র অন ষ ঠ ন পদত য গ উপদ ষ ট র জন য র সকল
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্প-জেলেনস্কির বাকবিতণ্ডায় যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন সম্পর্ক চরম সংকটে
ওভাল অফিসে উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডার আগেই ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির জেলেনস্কির সম্পর্ক ছিল টানাপোড়েনের। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এরই মধ্যে জেলেনস্কিকে স্বৈরশাসক বলে অভিহিত করেছেন। ট্রাম্পের দাবি, ইউক্রেনই যুদ্ধ শুরু করেছিল। ফলে জো বাইডেনের তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন মৈত্রী এখন চরম সংকটে। খবর বিবিসির
শনিবার আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, এই প্রকাশ্য বিরোধ শুধু ওয়াশিংটন ও কিয়েভের মধ্যেই নয়, বরং ইউরোপীয় ন্যাটো সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেও বড় ধরনের সংকেত দিচ্ছে।
ইউক্রেন ছাড়াও ইউরোপীয় দেশগুলোর নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি নিয়েও এখন আরও অনেক সংশয় ও প্রশ্ন দেখা দেবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় যে প্রশ্ন, সেটি হলো, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি তাঁর একসময়ের পূর্বসূরি হ্যারি ট্রুম্যানের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন? ১৯৪৯ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান ঘোষণা দেন, ন্যাটো জোটের কোনো দেশের ওপর হামলা যুক্তরাষ্ট্র নিজের ওপর হামলা বলেই মনে করবে।
এই উদ্বেগের মূলে রয়েছে ট্রাম্পের রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের স্পষ্ট ইঙ্গিত।
তিনি ইউক্রেনের ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করছেন, অন্যদিকে পুতিনের জন্য বড় ধরনের ছাড় দেওয়ার পথ খুলে দিচ্ছেন—যা শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনকেই মানতে হবে।
ফলে ইউক্রেনের নিরাপত্তা এখন দ্বিতীয় অবস্থানে চলে গেছে, আর ইউরোপীয় নেতারাও তাদের নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানানোয় জেলেনস্কির প্রতি আরও ক্ষুব্ধ হয়েছেন ট্রাম্প।
শুধু খনিজসম্পদ চুক্তি স্বাক্ষর না করাই নয়, ইউক্রেনীয়দের বিশ্বাস, তারা জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে রয়েছে এবং যদি পুতিনকে দমানো না যায়, তবে তিনি যেকোনো প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবেন। এ কারণেই জেলেনস্কি বারবার যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা গ্যারান্টির দাবি করেছেন।
তবে বৈঠকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স হস্তক্ষেপ করেন, তখন আলোচনা উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডায় রূপ নেয়।
এখন কূটনৈতিক মহলে সন্দেহ তৈরি হয়েছে যে, এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব আসলে পূর্বপরিকল্পিত রাজনৈতিক চাপে ফেলার কৌশল হতে পারে—অর্থাৎ জেলেনস্কিকে যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত মানতে বাধ্য করা, কিংবা তাকে দোষারোপ করে পরিস্থিতিকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করা।
বিবিসি বলছে, যদি ট্রাম্প এই আলোচনার ব্যর্থতার পর ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা বন্ধ করেন, তবে ইউক্রেন যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কতটা কার্যকরভাবে এবং কতদিন ধরে?
প্রসঙ্গত, গতকাল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ‘উত্তপ্ত’ বৈঠকের পর পূর্ব আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলন না করেই হোয়াইট হাউস থেকে চলে গেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে চুক্তিতে সইও করেননি।
হোয়াইট হাউসে কোনো বিদেশি রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে বৈঠকের পর তাকে নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে জেলেনস্কির উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পরও হোয়াইট হাউস জানায়, দুই রাষ্ট্রনেতা কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি সংবাদ সম্মেলনে আসবেন। সেখানে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে একটি চুক্তিতেও সই করবেন তাঁরা। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পর হোয়াইট হাউস এই সংবাদ সম্মেলন বাতিল করার কথা জানায়। এরপর জেলেনস্কি ও তার সঙ্গে থাকা ইউক্রেনের অন্য কর্মকর্তাদের হোয়াইট হাউস থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।
জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক শেষে ট্রাম্প তার মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া একে পোস্টে লিখেছেন, জেলেনস্কি ‘যুক্তরাষ্ট্র ও এ দেশের শ্রদ্ধার জায়গা ওভাল অফিসকে (হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কার্যালয়) অসম্মান’ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘যেদিন তিনি (জেলেনস্কি) শান্তির জন্য প্রস্তুত হবেন, আবার (হোয়াইট হাউসে) ফিরে আসতে পারেন।’