‘ডাকাতি’ করে পালানোর সময় শরীয়তপুর সদরের কীর্তিনাশা নদীর দুই পাড় ও নদীতে নেমে সন্দেহভাজন ডাকাত দলকে ধাওয়া দেন স্থানীয় লোকজন। এ সময় ওই দল স্থানীয় লোকজনকে লক্ষ্য করে গুলি ও ককটেল ছোড়ে। পরে স্পিডবোট ফেলে ওই দলের সদস্যরা একটি ইটভাটায় আশ্রয় নিলে স্থানীয় লোকজন তাদের ঘিরে ধরে পিটুনি দেন। এতে দুজনের মৃত্যু হয়।

গতকাল শুক্রবার রাতে উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া এলাকায় কীর্তিনাশা নদীর তীরে এ ঘটনা ঘটে। দিবাগত রাত একটার দিকে পুলিশ দুজনের মরদেহ উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। মরদেহ দুটি শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। এখনো তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

পুলিশ বলছে, ডাকাতি করতে গিয়ে পালানোর সময় স্থানীয় জনতার রোষানলে পড়ে ও পিটুনির শিকার হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। ওই ঘটনায় ডাকাত দলের ছোড়া গুলিতে আটজন আহত হন। গণপিটুনিতে ডাকাত দলের আরও পাঁচ সদস্য আহত হয়েছে। ওই পাঁচজনকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

পালং মডেল থানা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গতকাল রাত সাড়ে নয়টার দিকে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার রাজারচর এলাকায় কীর্তিনাশা নদীতে বালু পরিবহনের নৌযান বাল্কহেডে হানা দেয় ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল। তখন ওই এলাকার নৌযানের শ্রমিকেরা ও স্থানীয় জনতা তাদের ধাওয়া করেন। ওই দলের সদস্যরা গুলি ও ককটেল ছুড়ে স্পিডবোটে করে কীর্তিনাশা নদী দিয়ে পালাতে থাকেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শরীয়তপুরের দাদপুর এলাকা থেকে ডোমসার তেঁতুলিয়া পর্যন্ত কীর্তিনাশা নদীর দুই তীরে ও নদীতে নেমে স্থানীয় লোকজন তাদের ধাওয়া করতে থাকেন। তখন ওই দলের সদস্যরা স্থানীয় মানুষের ওপর গুলি ও ককটেল নিক্ষেপ করেন।

আহতদের শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সদস য ককট ল

এছাড়াও পড়ুন:

অলআউট অ্যাকশনে যাচ্ছে ডিবি 

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক বলেছেন, ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘অলআউট অ্যাকশনে’ যাচ্ছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ছোট-বড় যেকোনো অপরাধ ও অপরাধীর ক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করা হবে।

শনিবার (১ মার্চ) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। পবিত্র রমজান উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে ডিবির কার্যক্রম বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

রেজাউল করিম মল্লিক বলেছেন, “সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজান সমাগত। এ মাসে নগরবাসীর নিরাপত্তার জন্য ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করছে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ। ডিবি বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শনিবার থেকে আমরা ডিবির চলমান কার্যক্রমের পাশাপাশি রমজানকে সামনে রেখে বিশেষ অভিযান শুরু করতে যাচ্ছি। এটা হচ্ছে এক ধরনের বিশেষ গোয়েন্দা অভিযান। যেটাতে ছদ্মবেশে আমাদের সদস্যরা মানুষের মধ্যে থেকে অপরাধীদের শনাক্ত করবেন।”

তিনি বলেন, “রোজার সময় মানুষের কর্মযজ্ঞ বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে আর্থিক লেনদেন বেশি হয়। শপিংমল, ব্যাংক, বীমাগুলোতে মানুষের ভিড় বাড়ে। রেল স্টেশন, বাস টার্মিনাল ও সদরঘাটসহ অন্যান্য জায়গায় মানুষের উপস্থিতি বাড়ে। এসব জায়গায় কেউ যাতে নাশকতা করতে না পারে, সেজন্য আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি দূরের যাত্রাপথ, বিশেষ করে বাসে কোনো দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে, সে লক্ষ্যে আমরা আগে থেকে গোয়েন্দা তৎপরতায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াচ্ছি।”

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, “আমাদের গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলছে, চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির সাথে যারা যুক্ত হচ্ছে, তাদের বেশিরভাগের বয়স ১৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এদের অনেকেই কিশোর গ্যাং। তারা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। আবার পতিত রাজনৈতিক শক্তি তাদের ইন্ধন দিয়ে অপরাধ কার্যক্রমে জড়িয়ে দিচ্ছে।”

তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যৌথ বাহিনী সারা দেশে তৎপরতা বাড়িয়েছে। অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী মাঠে আছে। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। আমরা বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে তাদের সহায়তা করছি, যা ভবিষ্যতে আরো বৃদ্ধি পাবে। ঢাকা মহানগরীতে ধীরে ধীরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। আমাদের কাজ হচ্ছে, গোয়েন্দা নজরদারি শক্তিশালী করা। আমরা সে বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। আশা করি, কিছুদিনের মধ্যে আপনারা আরো ভালো অবস্থা দেখতে পাবেন। জনসাধারণের প্রতি আমাদের আহ্বান— এখন ডিবি পরিচয়ে গোপনে তুলে নেওয়া বা সিভিল পোশাকে তল্লাশি, এ ধরনের কাজ কেউ করলে আমাদেরকে জানান। পাশাপাশি নাশকতা করতে পারে, এমন কোনো তথ্য থাকলে ডিবিকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করুন। আপনাদের পরিচয় গোপন রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

“গুরুত্বপূর্ণ মামলা তদন্ত থেকে আরম্ভ করে চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে ডিবি বদ্ধপরিকর। তারই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছিনতাইকারী, ডাকাত ও অভ্যাসগত অপরাধীকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। গুণগত মান বজায় রেখে এবং অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় ডিবি কাজ করে থাকে। আমাদের কাজে যেমন স্বকীয়তা রয়েছে, তেমনই নিশ্চিত করা হয়েছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। আমরা যেমন সাধারণ মানুষের ভরসার আশ্রয়স্থল হতে চাই, তেমনই অপরাধীদের জন্য হতে চাই আতঙ্ক। সে মূলনীতি নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”

রেজাউল করিম মল্লিক আরো বলেন, “ছোট অপরাধ বড় অপরাধের জন্ম দেয়। তাই যেকোনো অপরাধ ও অপরাধীর ক্ষেত্রে আমরা নিয়েছি জিরো টলারেন্স নীতি। চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি রোধে ডিবির নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। সমাজকে মাদকের থাবা থেকে রক্ষা করতে প্রতিনিয়ত চালানো হচ্ছে মাদকবিরোধী অভিযান। চিহ্নিত সন্ত্রাসী হোক বা যেকোনো অপরাধীই হোক, ডিবির জালে তাদের ধরা পড়তেই হবে। সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করে এদেরকে আমরা বিন্দুমাত্র ছাড় দেব না। রমজান মাসে নগরবাসী যেন নিরাপদে ইবাদত করতে পারেন, সেজন্য ডিবির কার্যক্রম আরো বেগবান করা হয়েছে। আমি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারি, নগরবাসী এ সময় অধিকতর নিরাপদ ও স্বস্তির পরিবেশে থাকবেন। যেকোনো প্রয়োজনে ডিবি আপনাদের পাশে আছে। বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশ মোতাবেক নগরবাসীর শান্তি রক্ষায় আত্মনিয়োগ করব। এ দেশ আপনার, আমার, সকলের। দেশে শান্তি থাকলে শান্তি থাকবে জনমনে। দেশকে নিরাপদ রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি জনসাধারণকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।”

সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অ্যাডমিন অ্যান্ড গোয়েন্দা- দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম, যুগ্ম কমিশনার (গোয়েন্দা- উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া; যুগ্ম কমিশনার (সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড সাপোর্ট সেন্টার- দক্ষিণ) সৈয়দ হারুন অর রশীদ এবং উপ-কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগ) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/এমআর/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ