শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস, কৌশল সাজাচ্ছে বিএনপি
Published: 1st, March 2025 GMT
পালাবদলের পর রাজনীতিতে অনেকটা নতুন রূপে ফিরে এসেছে বিএনপির একসময়ের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামী। সেই সঙ্গে নতুন দল নিয়ে এসেছেন গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা শিক্ষার্থীরা। তাই প্রধান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ রাজনীতির মাঠে দৃশ্যমান না থাকলেও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুব সহজ হবে না বলে মনে করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা।
নির্বাচনে বিএনপিকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে—এমনটা ধরেই আগামী দিনের রাজনৈতিক কর্মপরিকল্পনা ঠিক করছে বিএনপি। সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র বলছে, গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হল-সংলগ্ন মাঠে অনুষ্ঠিত বিএনপির বর্ধিত সভায় মূলত এ ধরনের সম্ভাব্য পরিস্থিতিরই পূর্বাভাস দিয়ে তৃণমূল নেতাদের সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। এই পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, তার প্রস্তুতি হিসেবে তৃণমূলের নেতাদের দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু নির্দেশনা।
দিনব্যাপী ওই সভায় বিএনপির তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় ১০৬ জন নেতা বক্তব্য দেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে রাত ১১টায় সমাপনী বক্তব্য দেন। তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের নেতা হিসেবে আমার নির্দেশনা, আজকে এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরে এবং নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যাওয়ার পরে আপনারা উদ্যোগ গ্রহণ করুন। যে উদ্যোগের মাধ্যমে আপনি দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারবেন, খারাপকে যতটুকু সম্ভব দূরে সরিয়ে দিতে পারবেন, আপনি আপনার এলাকার মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারবেন।’
বিএনপির নেতারা বলছেন, বর্ধিত সভায় মূলত তিনটি বার্তা দেওয়া হয়েছে। প্রথমত, দলীয় ঐক্য ধরে রাখা। দ্বিতীয়ত, নেতা-কর্মীদের দখল-চাঁদাবাজিসহ সামাজিক অপরাধ থেকে বিরত থাকা। আর তৃতীয়ত, নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রতিপক্ষের বিষয়ে সতর্কতা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, সম্ভাব্য এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখেই ঘুরেফিরে তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার পরামর্শ এসেছে। বিশেষ করে মানুষ বিরক্ত হয়, এ ধরনের যেকোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে নেতা-কর্মীদের বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
সভায় বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশেও একটি বার্তা দেওয়া হয়েছে। সেটি হলো, অন্তর্বর্তী সরকারকে নিরপেক্ষতার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে জুলাই-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র-তরুণদের নতুন দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’র আত্মপ্রকাশ ঘিরে এ ব্যাপারে বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারা সতর্ক। এই ছাত্র-তরুণদের একটি অংশ অন্তর্বর্তী সরকারে রয়েছে। ফলে সরকার নিরপেক্ষ নয়, এমন কিছু সামনে এলে যেকোনো সময় তা ‘ইস্যু’ হয়ে উঠতে পারে।
বিএনপির বর্ধিত সভার ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী (এ্যানি)। এ সভা নিয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ঐক্যটাকেই বড় করে দেখছি। কারণ, বিগত ১৫-১৬ বছর শেখ হাসিনার অত্যাচার-নির্যাতনের মাত্রা এত বেশি ছিল যে আমরা তেমন সাংগঠনিক তৎপরতা চালাতে পারিনি। ৫ আগস্টের পর আমরা ব্যাপকভাবে তৎপরতা বৃদ্ধি করেছি। এখন ঐক্য সুদৃঢ় করার দিকেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের (তারেক রহমান) নজর।’
তবে বর্ধিত সভার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক নেতা বলেছেন, আগামী নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে এই সভা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তৃণমূল নেতাদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত মতামত আসেনি। সবার জন্য সময় বরাদ্দ ছিল তিন মিনিট। তৃণমূলের বেশির ভাগ নেতাই শীর্ষ নেতার মনোযোগ আকর্ষণে ব্যস্ত ছিলেন। এতে ঢালাও কিছু বক্তব্য ছাড়া নির্বাচনের কৌশল, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার কৌশল সম্পর্কে মতামত আসেনি।
অবশ্য বর্ধিত সভা ধরে রাজপথ থেকে সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপির এই যাত্রাকে একটু ভিন্নভাবে দেখছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য জহিরউদ্দিন স্বপন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জাতি ফ্যাসিবাদের ফয়সালা করেছে রাজপথে। নির্বাচিত সরকার গঠিত হবে জাতীয় নির্বাচনে। আর সংস্কারের চলমান প্রক্রিয়া সচল হবে সংসদে। এই হলো বিএনপির রোডম্যাপ (পথনকশা)। এই লক্ষ্যে রোডম্যাপের জাতীয় ঐক্য তৈরি করেছেন তারেক রহমান। জাতীয় নির্বাচন হওয়া পর্যন্ত এই ঐক্য ধরে রাখতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স থ ত ব এনপ র র জন ত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিট চালু
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিট চালু হয়েছে। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার দিকে এই ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়।
শনিবার (১ মার্চ) বিষয়টি জানিয়েছেন বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবুবকর সিদ্দিক।
এর আগে, গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় কেন্দ্রটির ১ নম্বর ইউনিটে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বয়লারে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয় ১২৫ মেগাওয়াটের ওই ইউনিটটি। বর্তমানে ১ ও ৩ নম্বর ইউনিট থেকে গড়ে ২৫০ মেগাওয়াট ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে।
আরো পড়ুন:
মুন্সীগঞ্জে ফসলি জমির ওপর দিয়ে বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণ বন্ধের দাবি
বিদ্যুৎ খাতে অতিরিক্ত ৩৬৭ কোটি টাকা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক
চালু হওয়া ৩ নম্বর ইউনিটটি ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও তা থেকে প্রতিদিন ১৮০-২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। একই সঙ্গে ১ নম্বর ইউনিটটি ১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতাসম্পন্ন হলেও তা থেকে ৬৫-৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বড়পুকুরিয়া খনি থেকে উত্তোলন করা কয়লা ব্যবহার করে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। বর্তমানে কয়লা মজুত রয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। কয়লাভিত্তিক এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিটে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ৫২৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ১ নম্বর ও ২ নম্বর ইউনিট মিলে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে ২৫০ মেগাওয়াট। ৩ নম্বর ইউনিটটি ২৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতাসম্পন্ন।
বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবুবকর সিদ্দিক বলেন, “গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বয়লারে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ করে দেওয়া ১২৫ মেগাওয়াটের ১ নম্বর ইউনিট। ২২ ফেব্রুয়ারি ইউনিটটি চালু করা হয়। এর আগে ১৫ ফেব্রুয়ারি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সচল ৩ নম্বর ইউনিটটিও একই কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়। মেরামত শেষে গতকাল শুক্রবার রাত ১০টা ৮ মিনিট থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩ নম্বর ইউনিটটি চালু করা হয়েছে। বর্তমানে এ দুটি ইউনিট থেকে গড়ে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে। তাতে লোডশেডিং কমে আসবে।”
ঢাকা/মোসলেম/মাসুদ