দুই বন্ধুর একজন বুয়েটে প্রথম, অন্যজন মেডিকেলে দ্বিতীয়
Published: 1st, March 2025 GMT
তাঁদের দুজনের পড়াশোনা একই কলেজে। একই শ্রেণিকক্ষে পাশাপাশি বসেছেন দুই বছর। একসঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছেন চট্টগ্রামে। উচ্চমাধ্যমিকে দুজনই পেয়েছেন জিপিএ-৫। এরপর ভর্তি পরীক্ষায় একজন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) প্রথম, অন্যজন মেডিকেলে দ্বিতীয় হয়েছেন।
বুয়েটে প্রথম হয়েছেন তোফায়েল আহমেদ। আর মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়েছেন সানজিদ অপূর্ব বিন সিরাজ। সানজিদ ভর্তি হয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। এর আগে দুজনই পড়েছেন চট্টগ্রাম কলেজে। কলেজের প্রথম বর্ষ থেকেই তাঁদের বন্ধুত্ব। শুরু থেকে একসঙ্গে থেকেছেন তাঁরা। এখন উচ্চশিক্ষার জন্য আলাদা হলেন। তবে মনে খেদ নেই।
তোফায়েল প্রথম আলোকে বললেন, ‘কলেজে একই বেঞ্চে বসে আমরা পড়েছি। আমাদের অনেক স্মৃতি জমা হয়েছে। কত বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে বিতর্ক হয়েছে। এখন দুজন আলাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলে গেলাম।’
দুজনের প্রস্তুতি, পরিকল্পনা
ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে দুজনের সঙ্গে কথা হলো এই প্রতিবেদকের। শুরুতে সানজিদের গল্পটা শোনা যাক। সানজিদের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের গারাংগিয়া গ্রামে। তাঁরা তিন ভাই। মা খাইরুন্নেছা মোস্তারীসহ থাকেন চট্টগ্রাম নগরের মোহাম্মদপুর এলাকার ভাড়া বাসায়। তাঁর বাবা ছিলেন কলেজশিক্ষক। ২০১৪ সালে কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে বাবার মৃত্যু হয়। বাবার সেই মৃত্যুতে ভেঙে পড়েন সানজিদ। কলেজে ওঠার পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসক হবেন। ক্যানসার নিয়ে কাজ করবেন। এরপর প্রথম বর্ষ থেকেই টুকটাক প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন।
সানজিদ জানালেন, ভর্তি পরীক্ষার আগে গড়ে মাত্র পাঁচ ঘণ্টা ঘুমাতেন। বাকি সময় পড়ার মধ্যে ডুবে থাকতেন। ইংরেজি পড়তে গিয়ে বেগ পেতে হতো। ভয় ছিল, ইংরেজিতে নম্বর তুলতে পারবেন কি না। শেষ পর্যন্ত ভালো ফল করায় সবাই খুশি। ১৯ জানুয়ারি মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। ফল পাওয়ার পর তাঁর মা কান্নায় ভেঙে পড়েন। খুশিতে আত্মহারা হয়ে যান তাঁর দুই ভাই।
২০২২ সালে চট্টগ্রাম নগরের সরকারি মুসলিম উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেন সানজিদ। জিপিএ-৫ নিয়ে ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে। ২০২৪ সালে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি। সানজিদ বলেন, ‘কলেজে ভর্তি হওয়ার পর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। পত্রপত্রিকা পড়ার অভ্যাস রয়েছে। পত্রিকায় চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। এরপর ভর্তি পরীক্ষার জন্য দুটি কোচিংয়ে ভর্তি হই। নিয়মিত ক্লাস শুরু করি। নাওয়া-খাওয়া ভুলে শুধু পড়েছি।’
এবার আসা যাক তোফায়েলের গল্পে। তাঁর বাড়ি কুমিল্লার পূর্ব চান্দিপুরে। মায়ের নাম মিনা বেগম, বাবা মনিরুল ইসলাম। তোফায়েল পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রাম নগরের সরাইপাড়া সিটি করপোরেশন স্কুলে। সেখান থেকে তিনি ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে। তিনিও জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এরপর শুরু হয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি।
তোফায়েল বললেন, ‘ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হব ভাবিনি। কিন্তু শুরুর দিকে থাকার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। আমি প্রস্তুতি নিয়েছি পরিকল্পনামাফিক। প্রতিদিন ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করতাম। সে অনুযায়ী পড়তাম। সময়ের দিকে তাকাইনি। কখনো ১০ ঘণ্টাও লাগত পড়া শেষ করতে। আর প্রকৌশলবিদ্যার দিকে নজর ছিল। তাই গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন—এসব বিষয় অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়ে পড়েছি। এখন কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি হব। ভবিষ্যতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে কাজ করব।’
সানজিদের মতো তোফায়েলও কলেজের প্রথম বর্ষ থেকে প্রস্তুতি নিতে থাকেন। মূলত কলেজে ওঠার পর থেকেই বুয়েটে পড়ার স্বপ্ন বুনতে শুরু করেন তিনি। এ জন্য কলেজের প্রাক্তন যাঁরা বুয়েটে পড়ছেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলেন। পরামর্শ নেন।
‘আমাদের সবকিছুই চলত একসঙ্গে’
দুজনের এখন কলেজে পড়ার অনেক স্মৃতি। উদাহরণ দিয়ে সানজিদ বললেন, ‘আমরা দুজনই একসঙ্গে বসতাম। ক্লাসের পড়া নোট নিতাম। কখনো তোফায়েল সহযোগিতা করত। কখনো আমি করতাম। গণিত আমার পছন্দের বিষয় ছিল। কলেজেই আমরা ঠিক করলাম একজন প্রকৌশলবিদ্যা পড়ব, অন্যজন চিকিৎসা।’
সানজিদ স্মৃতি হাতড়ে জানালেন, ‘এমনও হয়েছে তোফায়েল আমার বাসায় এসে থাকছে। আমরা একসঙ্গে খেলাধুলা করছি। এমনকি নানা জায়গায় ঘুরতেও যেতাম। সর্বশেষ গত ২১ ফেব্রুয়ারি আমরা গিয়েছিলাম কক্সবাজার। দারুণ সময় কাটিয়েছি দুজনে। আসলে আমাদের সবকিছুই চলত একসঙ্গে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ক ষ র একসঙ গ দ জন র আম দ র হয় ছ ন প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
গাঁজা সেবন করে ধর্ষণের পরিকল্পনা, আদালতে স্বীকারোক্তি
প্রবাসী বাবার খালার (দাদি) বাড়ি পাশের গ্রামে হওয়ায় প্রায়ই সেখানে যাওয়া-আসা করতো মেয়েটি। দাদির বাড়িতে মাঝেমধ্যে রাতেও থাকতো। পহেলা বৈশাখের দিন বিকেলেও দাদির বাড়িতে সেমাই খাওয়ার কথা বলে বের হয়। পরদিন সকালে মেয়েকে আনতে যান মা। কিন্তু তাকে আর পায়নি। দাদির ভাষ্য, আগের দিনই সে কিছুক্ষণ থেকে চলে গেছে। এরপরই উদ্বিগ্ন হয়ে মাসহ স্বজনরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন শিশুটিকে। একপর্যায়ে খোঁজ মেলে শিশুটির। কিন্তু ততক্ষণে তাঁর শরীরে প্রাণ নেই। এলাকার একটি ভুট্টা ক্ষেতে মুখ ঝলসানো অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া যায়।
পুলিশ তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, পহেলা বৈশাখের দিন দাদির বাড়ি থেকে ফেরার পথে তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে চার কিশোরসহ পাঁচজন। পরে শ্বাসরোধ করে ঘাড় মটকে হত্যা নিশ্চিতের পর মুখে এসিড নিক্ষেপ করে মরদেহ ফেল চলে যায়। এরপর বাংলা নববর্ষ উদযাপনে মেতে ওঠে তারা।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচজন পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সোহেলসহ চারজন পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেহ ব্যবসা করা মেয়ে এনে আনন্দ-ফুর্তি করবে বলে পরিকল্পনা করেছিল। নিজেরা চাঁদা তুলে গাঁজা কিনে সেবনও করে।
শিশুটির বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রামে। ঘটনাটি ঘটেছে পাবনার চাটমোহরে। দুই উপজেলার দুটি গ্রামই পাশাপাশি। শিশুটির বাবা মালয়েশিয়াপ্রবাসী। সে স্থানীয় একটি ক্যাডেট মাদ্রাসার শিশু শ্রেণির ছাত্রী ছিল। তাকে একটি কলাবাগানে ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করে ভুট্টা ক্ষেতে ফেলে যায় পাঁচজন। ঘটনার পর শিশুটির মা চাটমোহর থানায় মামলা করেন। পাবনার পুলিশ সুপার মোরতোজা আলী খাঁনের নির্দেশে ওসি মনজুরুল আলমে নেতৃত্বে এসআই আওলাদ হোসাইনসহ অন্যরা তদন্ত শুরু করেন। এরই একপর্যায়ে তারা জানতে পারেন শিশুটি হত্যার পেছনের ঘটনা।
আজ রোববার চাটমোহর থানায় সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানান ওসি মঞ্জুরুল আলম। চাটমোহর ও বড়াইগ্রাম থানা এবং ডিবি পুলিশের যৌথ অভিযানে তারা গ্রেপ্তার হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে শিশুটিকে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকারও করেছে। গ্রেপ্তার চার কিশোরের বাড়ি চাটমোহর ও বড়াইগ্রামে। তাদের সবার বয়স ১৩ থেকে ১৬ বছর। অপর আসামি বড়াইগ্রামের তরুণ সোহেল রানা (২৫)।
স্থানীয় এক ব্যক্তি ভুট্টা ক্ষেতে শিশুটির মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে চাটমোহর থানায় খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পরের চারদিনে গ্রেপ্তার পাঁচজন পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সোহেলসহ চারজন পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেহ ব্যবসা করা মেয়ে এনে আনন্দ-ফুর্তি করবে বলে পরিকল্পনা করেছিল। নিজেরা চাঁদা তুলে গাঁজা কিনে সেবনও করে।
এরইমধ্যে অপর এক কিশোর শিশুটির বাড়ির পাশে আমগাছের আড়ালে অপেক্ষায় ছিল। মেয়েটি বাগানে আম কুড়াতে ও খেলতে গেলে তার হাত ধরে পাশের একটি কলাবাগানে নিয়ে যায় সে। সেখানে আগে থেকে অবস্থান করা চারজন তাকে একে একে ধর্ষণ করে। এ সময় শিশুটি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে তাকে পাশের ভুট্টা ক্ষেতে নিয়ে যায়। সেখানে আরেক কিশোর ধর্ষণ করে। এরপর তার পরনে থাকা প্যান্ট গলায় বেঁধে এক কিশোর শ্বাসরোধে হত্যা করে। সোহেল তার ঘাড় মটকে দেয়। অপর কিশোর পা ধরে রাখে। এরপর আরেক কিশোর তার মুখে এসিড জাতীয় পদার্থ নিক্ষেপ করে।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাঁচজনই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত বলে স্বীকার করেছে। ডিএনএ সংরক্ষণ ও পরীক্ষাসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
চাটমোহর থানার ওসি বলেছেন, ঘটনার পর থেকে চাটমোহর ও বড়াইগ্রাম থানার পুলিশ হত্যার কারণ উদঘাটনে কাজ শুরু করে। চার দিনের মধ্যে সবাই গ্রেপ্তার হয়েছে। তাদের রোববার পাবনার আদালতে তোলা হলে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।