আলেশা অরটিজের বয়স ১৯ বছর। তিনি একদিন গল্প লেখার স্বপ্ন দেখেন। এমনকি একটি বই লেখারও স্বপ্ন আছে তাঁর।

হাইস্কুল শেষ করা একজন তরুণীর এমন স্বপ্ন-ইচ্ছা থাকাটা অযৌক্তিক কিছু নয়। কিন্তু আলেশার জন্য ব্যাপারটি বেশ কঠিনই হয়ে ওঠে।

যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটের হার্টফোর্ডের হার্টফোর্ড পাবলিক হাইস্কুল থেকে গত জুনে পড়াশোনা শেষ করে সনদ পান আলেশা। তিনি কলেজে পড়ার জন্য বৃত্তি পর্যন্ত পেয়েছেন। কিন্তু সমস্যা হলো, হাইস্কুল শেষ করা আলেশা নিরক্ষর রয়ে গেছেন। তিনি বলছেন, তিনি পড়তে বা লিখতে পারেন না।

হাইস্কুলের শেষ পর্যায়ের অনেক শিক্ষার্থী আনুষ্ঠানিক শিক্ষা সনদ (গ্র্যাজুয়েশন) পাওয়ার আগের দিনগুলোতে বেশ উদ্দীপিত থাকেন। সনদ অর্জন করতে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে তাঁরা গর্ববোধ করেন। কিন্তু আলেশা মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেছেন, এই সময়টাতে তাঁর অনুভূতি ছিল ভিন্ন। তিনি বরং ভয়ের মধ্যে ছিলেন।

আলেশা অনার্সসহ হাইস্কুল পর্ব শেষ করেছেন। এই অনার্সের মানে হলো, তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে (একাডেমিক) নৈপুণ্য দেখিয়েছেন।

কিন্তু হার্টফোর্ডের পাবলিক স্কুলে ১২ বছর পড়াশোনা শেষ করার পর আলেশা গত বছরের মে মাসে স্থানীয় নগর কাউন্সিলের সভায় দেওয়া সাক্ষ্যে বলেন, তিনি পড়তে বা লিখতে পারেন না।

আলেশা বলেন, স্কুলের কর্মকর্তারা তাঁকে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ দেওয়ার ব্যাপারে বেশ উদ্বিগ্ন ছিলেন বলে তাঁর মনে হয়েছে।

মার্কিন এই শিক্ষার্থী বলেন, হাইস্কুল শিক্ষা সমাপনীর (গ্র্যাজুয়েশন) দুদিন আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা তাঁকে বলেছিলেন, নিবিড় পরিষেবার বিনিময়ে তিনি সনদ গ্রহণ পিছিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু কর্মকর্তাদের এ কথায় কান দেননি আলেশা।

আলেশা বলেন, তিনি তখন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁকে পড়ানোর জন্য ১২ বছর সময় নিয়েছে। এবার তাঁর কিছু করার পালা।

আলেশা এখন অবহেলার অভিযোগ এনে হার্টফোর্ড বোর্ড অব এডুকেশন এবং সিটি অব হার্টফোর্ডের বিরুদ্ধে মামলা করছেন। একই সঙ্গে তাঁর আবেগপূর্ণ যন্ত্রণার বিষয়টি উপেক্ষা করার অভিযোগে তিনি তাঁর বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থাপক টিল্ডা সান্তিয়াগোর বিরুদ্ধে মামলা করছেন।

বোর্ডের চেয়ারপারসন জেনিফার হকেনহুল মামলার বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

সিটি অব হার্টফোর্ডের প্রধান আইন কর্মকর্তা জোনাথন হার্ডিংও একই কথা বলেছেন। তিনি সিএনএনকে বলেছেন, ‘আমি সাধারণত চলমান মামলা-মোকদ্দমার বিষয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করি না।’

অন্যদিকে সান্তিয়াগোর আইনজীবী (অ্যাটর্নি) মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে সিএনএন। কিন্তু সান্তিয়াগোর কাছ থেকে এ ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।

হার্টফোর্ড পাবলিক স্কুলগুলোর পক্ষে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে সিএনএনকে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা বিচারাধীন মামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারে না। তবে তারা শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূর্ণভাবে মেটানোর ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শিক্ষার্থীদের পূর্ণ সম্ভাবনাময় জায়গায় পৌঁছে দিতে সহায়তা করতে তাঁরা অঙ্গীকারবদ্ধ।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের একজন শিক্ষাবিদ বলেছেন, আলেশার ক্ষেত্রে যে ঘটনা ঘটেছে, তা তাঁকে অবাক করেনি।

সেন্ট্রাল কানেকটিকাট স্টেট ইউনিভার্সিটির লিটারেসি সেন্টার পরিচালনার দায়িত্বে আছেন জেসি টার্নার। তিনি বলেন, সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ শিক্ষার মানে প্রায়ই ভিন্নতা বা বৈসাদৃশ্য দেখা যায়।

টার্নার বলেন, ‘আমেরিকাকে একটি প্রশ্ন করা উচিত: আমরা কি সত্যিই আমাদের বাচ্চাদের, আমাদের সব বাচ্চার বিষয়ে যত্নশীল?’

শিশুকাল থেকে শিক্ষণ সমস্যা

মার্কিন টেরিটোরি পুয়ের্তো রিকোতে জন্মগ্রহণ করেন আলেশা। তিনি বলেন, ক্যারিবীয় দ্বীপ পুয়ের্তো রিকোতে থাকার সময় শিশুকালেই তাঁর শিখন সমস্যা ধরা পড়ে।

আলেশার মা কারমেন ক্রুজ বলেন, তিনি প্রথম থেকেই জানতেন যে তাঁর মেয়ের এই সমস্যার ব্যাপারে সহায়তা দরকার।

সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কারমেন বলেন, তিনি দেখেছিলেন, তাঁর মেয়ের একটি সুনির্দিষ্ট সমস্যা আছে। আর এই সমস্যার মধ্য দিয়ে তাঁকে যেতে হচ্ছিল।

আলেশার বয়স যখন মাত্র ৫ বছর, তখন পরিবারটি যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যে চলে আসে। পরিবারের ধারণা ছিল, কানেকটিকাটে আলেশা তাঁর শিখন সমস্যা মোকাবিলায় আরও ভালো সেবা পাবেন।

কিন্তু এই সমস্যা মোকাবিলায় স্কুলজীবনে আলেশার সংগ্রাম অব্যাহত ছিল।

মামলার তথ্য অনুসারে, স্কুলের ফার্স্ট গ্রেডে আলেশার বর্ণ, বর্ণের উচ্চারণ (সাউন্ড) ও সংখ্যা শনাক্তে সমস্যা ছিল। আলেশার শিখন প্রতিবন্ধকতার সমাধান না হওয়ায় তিনি ক্লাসে অভিনয় করতে শুরু করেন।

আলেশা বলেন, ‘আমি ছিলাম খারাপ শিশু।’

হাইস্কুলের শেষ বর্ষে কিছু শিক্ষক আলেশাকে ‘ডিসলেক্সিয়া’ পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ডিসলেক্সিয়া একধরনের ‘লার্নিং ডিজঅ্যাবিলিটি’ বা শিখন প্রতিবন্ধকতা। যাতে শব্দ শনাক্ত করা এবং এর সঙ্গে অক্ষর ও শব্দের সম্পর্ক তৈরির সামর্থ্য থাকে না।

আলেশা তাঁর হাইস্কুলের শেষ দিকে একটি বিস্ময়কর ঘোষণা দেন: তিনি কানেকটিকাট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। শরৎকালীন শিক্ষাবর্ষে তিনি সেখানে ক্লাস শুরুর পরিকল্পনা করছেন।

আলেশা বলেন, তিনি শব্দ দেখেন, অর্থ বোঝেন না।

গত শরৎকালীন শিক্ষাবর্ষে আলেশা কলেজের পূর্ণকালীন শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হন। সেখানে তিনি দুই ক্লাসেও উপস্থিত ছিলেন। তিনি সরকারি নীতি নিয়ে পড়াশোনা করতে চেয়েছিলেন।

পড়তে বা লিখতে পারেন না—এমন একজন শিক্ষার্থী হাইস্কুল পেরিয়ে কীভাবে কলেজে ভর্তির সুযোগ পেলেন? এ বিষয়ে আলেশা বলেন, তিনি হাইস্কুল পর্ব যেভাবে পার করেছেন, ঠিক একইভাবে কলেজে ভর্তি হয়েছেন। তিনি এমন সব অ্যাপসের ওপর নির্ভর করেছিলেন, যেগুলো ‘টেক্সট’ থেকে ‘স্পিচ’ (লিখিত থেকে বাচনিক রূপ) এবং ‘স্পিচ’ থেকে ‘টেক্সট’ (বাচনিক থেকে লিখিত রূপ) করে দেয়।

কলেজের আবেদনপত্র পূরণসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আলেশা প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিলেন। এই প্রক্রিয়ায় তিনি মানুষেরও সহায়তা নিয়েছেন। কলেজে পড়ালেখার ব্যয় মেটানোর জন্য অনেকে তাঁকে আর্থিক সহায়তারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

আলেশা বলেন, অ্যাপস তাঁকে সেই শক্তি দিয়েছে, যা তাঁর আছে বলে তিনি কখনো ভাবেননি।

আলেশা বলেন, এলিমেন্টারি ও মিডল স্কুল পর্যায়ে তাঁর শিক্ষকেরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁকে পাস করিয়ে দিয়েছেন। এভাবে তিনি এক ক্লাস থেকে আরেক ক্লাসে উঠেছেন। কিন্তু যখন তিনি হাইস্কুলে পড়া শুরু করেন, তখন বুঝতে পারেন, কীভাবে তাঁর অ্যাসাইনমেন্ট করার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হয়।

আলেশা কীভাবে অ্যাপস ব্যবহার করেন, তা সিএনএনকে দেখান। তিনি একটি বই থেকে একটি অনুচ্ছেদ বেছে নেন। তাঁর মুঠোফোনে অনুচ্ছেদটির একটি ছবি তোলেন। তারপর অনুচ্ছেদের বাক্যগুলো অ্যাপসের মাধ্যমে শব্দ করে তাঁকে পড়ে শোনানোর জন্য মুঠোফোনের অডিও চালু করে দেন।

এই মহড়াতে বইয়ের যে অনুচ্ছেদটি আলেশা ব্যবহার করেন, তা তিনি পড়তে পারেন কি না, জানতে চেয়েছিল সিএনএন। জবাবে তিনি বলেন, এটা অসম্ভব। তিনি সর্বত্র এসব বর্ণ দেখেন কেবল, কোনো অর্থই তিনি বোঝেন না।

আলেশা বলেন, কলেজে পড়াশোনার ব্যাপারটি এত সোজা নয়। কানেকটিকাট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে একাডেমিক সহায়তা দিচ্ছে। কিন্তু তিনি গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন না। তিনি মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসার জন্য কিছুটা সময় নিয়েছেন। তবে শিগগিরই ক্লাসে ফেরার পরিকল্পনা করছেন তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর কর মকর ত অন চ ছ দ বল ছ ন আল শ র র জন য শ ষ কর ন আল শ করছ ন সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

হাইস্কুল পাস করলেও তিনি পড়তে বা লিখতে পারেন না

আলেশা অরটিজের বয়স ১৯ বছর। তিনি একদিন গল্প লেখার স্বপ্ন দেখেন। এমনকি একটি বই লেখারও স্বপ্ন আছে তাঁর।

হাইস্কুল শেষ করা একজন তরুণীর এমন স্বপ্ন-ইচ্ছা থাকাটা অযৌক্তিক কিছু নয়। কিন্তু আলেশার জন্য ব্যাপারটি বেশ কঠিনই হয়ে ওঠে।

যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটের হার্টফোর্ডের হার্টফোর্ড পাবলিক হাইস্কুল থেকে গত জুনে পড়াশোনা শেষ করে সনদ পান আলেশা। তিনি কলেজে পড়ার জন্য বৃত্তি পর্যন্ত পেয়েছেন। কিন্তু সমস্যা হলো, হাইস্কুল শেষ করা আলেশা নিরক্ষর রয়ে গেছেন। তিনি বলছেন, তিনি পড়তে বা লিখতে পারেন না।

হাইস্কুলের শেষ পর্যায়ের অনেক শিক্ষার্থী আনুষ্ঠানিক শিক্ষা সনদ (গ্র্যাজুয়েশন) পাওয়ার আগের দিনগুলোতে বেশ উদ্দীপিত থাকেন। সনদ অর্জন করতে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে তাঁরা গর্ববোধ করেন। কিন্তু আলেশা মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেছেন, এই সময়টাতে তাঁর অনুভূতি ছিল ভিন্ন। তিনি বরং ভয়ের মধ্যে ছিলেন।

আলেশা অনার্সসহ হাইস্কুল পর্ব শেষ করেছেন। এই অনার্সের মানে হলো, তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে (একাডেমিক) নৈপুণ্য দেখিয়েছেন।

কিন্তু হার্টফোর্ডের পাবলিক স্কুলে ১২ বছর পড়াশোনা শেষ করার পর আলেশা গত বছরের মে মাসে স্থানীয় নগর কাউন্সিলের সভায় দেওয়া সাক্ষ্যে বলেন, তিনি পড়তে বা লিখতে পারেন না।

আলেশা বলেন, স্কুলের কর্মকর্তারা তাঁকে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ দেওয়ার ব্যাপারে বেশ উদ্বিগ্ন ছিলেন বলে তাঁর মনে হয়েছে।

মার্কিন এই শিক্ষার্থী বলেন, হাইস্কুল শিক্ষা সমাপনীর (গ্র্যাজুয়েশন) দুদিন আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা তাঁকে বলেছিলেন, নিবিড় পরিষেবার বিনিময়ে তিনি সনদ গ্রহণ পিছিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু কর্মকর্তাদের এ কথায় কান দেননি আলেশা।

আলেশা বলেন, তিনি তখন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁকে পড়ানোর জন্য ১২ বছর সময় নিয়েছে। এবার তাঁর কিছু করার পালা।

আলেশা এখন অবহেলার অভিযোগ এনে হার্টফোর্ড বোর্ড অব এডুকেশন এবং সিটি অব হার্টফোর্ডের বিরুদ্ধে মামলা করছেন। একই সঙ্গে তাঁর আবেগপূর্ণ যন্ত্রণার বিষয়টি উপেক্ষা করার অভিযোগে তিনি তাঁর বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থাপক টিল্ডা সান্তিয়াগোর বিরুদ্ধে মামলা করছেন।

বোর্ডের চেয়ারপারসন জেনিফার হকেনহুল মামলার বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

সিটি অব হার্টফোর্ডের প্রধান আইন কর্মকর্তা জোনাথন হার্ডিংও একই কথা বলেছেন। তিনি সিএনএনকে বলেছেন, ‘আমি সাধারণত চলমান মামলা-মোকদ্দমার বিষয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করি না।’

অন্যদিকে সান্তিয়াগোর আইনজীবী (অ্যাটর্নি) মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে সিএনএন। কিন্তু সান্তিয়াগোর কাছ থেকে এ ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।

হার্টফোর্ড পাবলিক স্কুলগুলোর পক্ষে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে সিএনএনকে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা বিচারাধীন মামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারে না। তবে তারা শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূর্ণভাবে মেটানোর ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শিক্ষার্থীদের পূর্ণ সম্ভাবনাময় জায়গায় পৌঁছে দিতে সহায়তা করতে তাঁরা অঙ্গীকারবদ্ধ।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের একজন শিক্ষাবিদ বলেছেন, আলেশার ক্ষেত্রে যে ঘটনা ঘটেছে, তা তাঁকে অবাক করেনি।

সেন্ট্রাল কানেকটিকাট স্টেট ইউনিভার্সিটির লিটারেসি সেন্টার পরিচালনার দায়িত্বে আছেন জেসি টার্নার। তিনি বলেন, সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ শিক্ষার মানে প্রায়ই ভিন্নতা বা বৈসাদৃশ্য দেখা যায়।

টার্নার বলেন, ‘আমেরিকাকে একটি প্রশ্ন করা উচিত: আমরা কি সত্যিই আমাদের বাচ্চাদের, আমাদের সব বাচ্চার বিষয়ে যত্নশীল?’

শিশুকাল থেকে শিক্ষণ সমস্যা

মার্কিন টেরিটোরি পুয়ের্তো রিকোতে জন্মগ্রহণ করেন আলেশা। তিনি বলেন, ক্যারিবীয় দ্বীপ পুয়ের্তো রিকোতে থাকার সময় শিশুকালেই তাঁর শিখন সমস্যা ধরা পড়ে।

আলেশার মা কারমেন ক্রুজ বলেন, তিনি প্রথম থেকেই জানতেন যে তাঁর মেয়ের এই সমস্যার ব্যাপারে সহায়তা দরকার।

সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কারমেন বলেন, তিনি দেখেছিলেন, তাঁর মেয়ের একটি সুনির্দিষ্ট সমস্যা আছে। আর এই সমস্যার মধ্য দিয়ে তাঁকে যেতে হচ্ছিল।

আলেশার বয়স যখন মাত্র ৫ বছর, তখন পরিবারটি যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যে চলে আসে। পরিবারের ধারণা ছিল, কানেকটিকাটে আলেশা তাঁর শিখন সমস্যা মোকাবিলায় আরও ভালো সেবা পাবেন।

কিন্তু এই সমস্যা মোকাবিলায় স্কুলজীবনে আলেশার সংগ্রাম অব্যাহত ছিল।

মামলার তথ্য অনুসারে, স্কুলের ফার্স্ট গ্রেডে আলেশার বর্ণ, বর্ণের উচ্চারণ (সাউন্ড) ও সংখ্যা শনাক্তে সমস্যা ছিল। আলেশার শিখন প্রতিবন্ধকতার সমাধান না হওয়ায় তিনি ক্লাসে অভিনয় করতে শুরু করেন।

আলেশা বলেন, ‘আমি ছিলাম খারাপ শিশু।’

হাইস্কুলের শেষ বর্ষে কিছু শিক্ষক আলেশাকে ‘ডিসলেক্সিয়া’ পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ডিসলেক্সিয়া একধরনের ‘লার্নিং ডিজঅ্যাবিলিটি’ বা শিখন প্রতিবন্ধকতা। যাতে শব্দ শনাক্ত করা এবং এর সঙ্গে অক্ষর ও শব্দের সম্পর্ক তৈরির সামর্থ্য থাকে না।

আলেশা তাঁর হাইস্কুলের শেষ দিকে একটি বিস্ময়কর ঘোষণা দেন: তিনি কানেকটিকাট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। শরৎকালীন শিক্ষাবর্ষে তিনি সেখানে ক্লাস শুরুর পরিকল্পনা করছেন।

আলেশা বলেন, তিনি শব্দ দেখেন, অর্থ বোঝেন না।

গত শরৎকালীন শিক্ষাবর্ষে আলেশা কলেজের পূর্ণকালীন শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হন। সেখানে তিনি দুই ক্লাসেও উপস্থিত ছিলেন। তিনি সরকারি নীতি নিয়ে পড়াশোনা করতে চেয়েছিলেন।

পড়তে বা লিখতে পারেন না—এমন একজন শিক্ষার্থী হাইস্কুল পেরিয়ে কীভাবে কলেজে ভর্তির সুযোগ পেলেন? এ বিষয়ে আলেশা বলেন, তিনি হাইস্কুল পর্ব যেভাবে পার করেছেন, ঠিক একইভাবে কলেজে ভর্তি হয়েছেন। তিনি এমন সব অ্যাপসের ওপর নির্ভর করেছিলেন, যেগুলো ‘টেক্সট’ থেকে ‘স্পিচ’ (লিখিত থেকে বাচনিক রূপ) এবং ‘স্পিচ’ থেকে ‘টেক্সট’ (বাচনিক থেকে লিখিত রূপ) করে দেয়।

কলেজের আবেদনপত্র পূরণসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আলেশা প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিলেন। এই প্রক্রিয়ায় তিনি মানুষেরও সহায়তা নিয়েছেন। কলেজে পড়ালেখার ব্যয় মেটানোর জন্য অনেকে তাঁকে আর্থিক সহায়তারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

আলেশা বলেন, অ্যাপস তাঁকে সেই শক্তি দিয়েছে, যা তাঁর আছে বলে তিনি কখনো ভাবেননি।

আলেশা বলেন, এলিমেন্টারি ও মিডল স্কুল পর্যায়ে তাঁর শিক্ষকেরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁকে পাস করিয়ে দিয়েছেন। এভাবে তিনি এক ক্লাস থেকে আরেক ক্লাসে উঠেছেন। কিন্তু যখন তিনি হাইস্কুলে পড়া শুরু করেন, তখন বুঝতে পারেন, কীভাবে তাঁর অ্যাসাইনমেন্ট করার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হয়।

আলেশা কীভাবে অ্যাপস ব্যবহার করেন, তা সিএনএনকে দেখান। তিনি একটি বই থেকে একটি অনুচ্ছেদ বেছে নেন। তাঁর মুঠোফোনে অনুচ্ছেদটির একটি ছবি তোলেন। তারপর অনুচ্ছেদের বাক্যগুলো অ্যাপসের মাধ্যমে শব্দ করে তাঁকে পড়ে শোনানোর জন্য মুঠোফোনের অডিও চালু করে দেন।

এই মহড়াতে বইয়ের যে অনুচ্ছেদটি আলেশা ব্যবহার করেন, তা তিনি পড়তে পারেন কি না, জানতে চেয়েছিল সিএনএন। জবাবে তিনি বলেন, এটা অসম্ভব। তিনি সর্বত্র এসব বর্ণ দেখেন কেবল, কোনো অর্থই তিনি বোঝেন না।

আলেশা বলেন, কলেজে পড়াশোনার ব্যাপারটি এত সোজা নয়। কানেকটিকাট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে একাডেমিক সহায়তা দিচ্ছে। কিন্তু তিনি গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন না। তিনি মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসার জন্য কিছুটা সময় নিয়েছেন। তবে শিগগিরই ক্লাসে ফেরার পরিকল্পনা করছেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ