সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য প্রায় চার কোটি টাকা দামের চারটি উন্নত আইসিইউ শয্যা আছে। ভেঙে যাওয়া হাত-পায়ে কৃত্রিমভাবে অস্ত্রোপচার করে রড সংযোজনের জন্য রয়েছে আধুনিক সিআরএম যন্ত্র। চোখের চিকিৎসার জন্য রয়েছে কোটি টাকা মূল্যের অত্যাধুনিক ল্যাসিকস যন্ত্র। কিন্তু এসব চালানোর মতো দক্ষ জনবল নেই। ফলে এমন নানা মূল্যবান যন্ত্রপাতি পড়ে থেকেই নষ্ট হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জে অবস্থিত শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। আধুনিক এই সরকারি হাসপাতালে চিকিত্সক ও দক্ষ জনবলের অভাবে এখনো কয়েকটি বিভাগে যন্ত্রপাতি সচল করা সম্ভব হয়নি। কিছু বিভাগের যন্ত্রপাতি ধার করা জনবল দিয়ে ‘বিকল্প উপায়ে’ চালু রাখা হলেও লেগে থাকে রোগীদের চাপ। ফলে নতুন এই প্রতিষ্ঠানে দিন দিন রোগীর সংখ্যা বাড়লেও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন।

২০১৪ সালে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০২১ সালের আগস্টে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম শুরু হয়। অবশ্য এখনো হাসপাতালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়নি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিদিন এই হাসপাতালের বহির্বিভাগে গড়ে ২ হাজার ৫০০ জন ও অন্তর্বিভাগে ৫৫০ জন রোগী সেবা নিতে আসেন। ৫০০ শয্যার হাসপাতালটি যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য করা অর্গানোগ্রাম (জনবলকাঠামো) এখনো মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন হয়নি। যে কারণে পুরোনো জনবলকাঠামোর ৪৮ জন চিকিৎসক (সহকারী রেজিস্ট্রার) দিয়ে কোনোমতে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম।

পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রপাতি

হৃদ্‌রোগের সমস্যা নিয়ে উল্লাপাড়া উপজেলার লাহিড়ী মোহনপুর গ্রামের বৃদ্ধ রাজিয়া বেগম (৬৫) সম্প্রতি হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি হয়েছিলেন। এই বৃদ্ধার বড় মেয়ে নাজমা আক্তার বলেন, চিকিত্সক তাঁর মায়ের উন্নত চিকিত্সার জন্য এনজিওগ্রাম করাতে বলেছেন। শুনেছেন এই হাসপাতালে এনজিওগ্রাম যন্ত্র আছে, কিন্তু বন্ধ। এই পরীক্ষা বাইরে করাতে ৩০-৪০ হাজার টাকা লাগবে। এত টাকা ব্যবস্থা করা তাঁদের জন্য চরম সমস্যার।

রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগ ঘুরে দেখা যায়, দক্ষ জনবলের অভাবে পড়ে আছে প্রায় সাত কোটি টাকা মূল্যের আধুনিক এনজিওগ্রাম যন্ত্রটি। পাঁচজন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক প্রয়োজন থাকলেও একজনও নেই।

হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য চার শয্যার আইসিইউ ভেন্টিলেটর প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু দক্ষ জনবলের অভাবে সেগুলো এখনো চালু করা যায়নি। এ কারণে প্রায় চার কোটি টাকা দামের আইসিইউ ভেন্টিলেটরের পাশাপাশি প্রিন্টার, কম্পিউটারসহ অন্য ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশগুলোও নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। ৪৫ লাখ টাকা মূল্যের মেমোগ্রাফি যন্ত্র এখনো বন্ধ পড়ে রয়েছে। আইসিইউ সচল রাখতে অন্তত পাঁচজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

হাসপাতালে রোগীর চাপ লেগেই থাকে। সম্প্রতি সম্প্রতি সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিসিইউ ওয়ার্ডে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি চাকরি থেকে এবার কয়েক শ আবহাওয়া বিজ্ঞানী ও গবেষক ছাঁটাই

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইলন মাস্কের ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিশিয়েন্সি’ (ডিওজিই) এর কর্মী ছাঁটাই ও সরকারি ব্যয় হ্রাস কর্মসূচির শিকার হলেন শত শত আবহাওয়া পূর্বাভাসকারী এবং ‘ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (এনওএএ) এর কর্মীরা।

বিপুলসংখ্যক এসব কর্মীকে গতকাল বৃহস্পতিবার বরখাস্ত করা হয় বলে জানান আইনপ্রণেতা ও আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।

চাকরি হারানো কেন্দ্রীয় সরকারের এ কর্মীদের মধ্যে অনেক আবহাওয়াবিদও রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে জাতীয় আবহাওয়া সেবা বিভাগের বিভিন্ন কার্যালয় থেকে স্থানীয় আবহাওয়া নিয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ পূর্বাভাস দিয়ে থাকেন তাঁরা।

এনওএএতে দৃশ্যত দুই দফায় কর্মী ছাঁটাই কার্যকর হচ্ছে। একটি দফায় থাকছেন ৫০০ জন ও আরেকটিতে ৮০০ জন। প্রতিষ্ঠানটির সাবেক মুখ্য বিজ্ঞানী ক্রেগ ম্যাকলিন কিছু সূত্রের কাছ থেকে এ তথ্য পেয়েছেন বলে জানান। ছাঁটাইয়ের শিকার হওয়া কর্মীদের এ সংখ্যা এনওএএ–এর মোট জনবলের প্রায় ১০ শতাংশ।

প্রথম দফায় প্রবেশনাধীনে থাকা কর্মীদের ছাঁটাই করা হচ্ছে জানিয়ে ম্যাকলিন বলেন, জাতীয় আবহাওয়া সেবা বিভাগে প্রায় ৩৭৫ প্রবেশনাধীন কর্মী রয়েছেন। এ বিভাগ থেকে দৈনন্দিন আবহাওয়া ও দুর্যোগ-সংক্রান্ত পূর্বাভাস দেওয়া হয়ে থাকে।

এনওএএতে দৃশ্যত দুই দফায় কর্মী ছাঁটাই কার্যকর হচ্ছে। একটি দফায় থাকছেন ৫০০ জন ও আরেকটিতে ৮০০ জন। প্রতিষ্ঠানটির সাবেক মুখ্য বিজ্ঞানী ক্রেগ ম্যাকলিন কিছু সূত্রের কাছ থেকে এ তথ্য পেয়েছেন বলে জানান। ছাঁটাইয়ের শিকার হওয়া কর্মীদের এ সংখ্যা এনওএএর মোট জনবলের প্রায় ১০ শতাংশ।

ধনকুবের মাস্ক ও তাঁর বিভাগ ডিওজিই–এর নেওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের আকার (জনবল ও খরচ) ছোট করার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ওই কর্মীদের চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফেডারেল সরকারের জনবলকে মাথাভারী ও বিশৃঙ্খল বলে আখ্যায়িত করেছেন। ইতিমধ্যে সরকারি হাজার হাজার প্রবেশনারি কর্মী চাকরিচ্যুত হয়েছেন।

কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য গ্রেস মেং গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘জাতীয় আবহাওয়া সেবা (এনডব্লিউএস) বিভাগের আবহাওয়া পূর্বাভাসকারীদেরসহ ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এনওএএ) শত শত কর্মীকে আজ কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়া বরখাস্তের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এটি অন্যায্য।’

গ্রেস মেং বলেন, ‘এই কর্মীরা নিবেদিতপ্রাণ, পরিশ্রমী মার্কিন নাগরিক। তাঁদের প্রচেষ্টা দেশজুড়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ভয়ানক প্রভাব থেকে মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় সহায়তা করে।’

প্রতিনিধি পরিষদে ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট দলীয় সদস্য জ্যারেড হাফম্যানও বলেন, ‘এনওএএর শত শত বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞকে চাকরি থেকে বিদায় জানানো হয়েছে।’

এই কর্মীরা নিবেদিতপ্রাণ, পরিশ্রমী মার্কিন নাগরিক। তাঁদের প্রচেষ্টা দেশজুড়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ভয়ানক প্রভাব থেকে মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় সহায়তা করে।—গ্রেস মেং, প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য

উল্লেখ্য, বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন আরও বেশি করে কর্মী ছাঁটাইয়ের জন্য গত বুধবার কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে।

এমনিতেই ট্রাম্প–ঘনিষ্ঠ ইলন মাস্কের তথাকথিত ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিশিয়েন্সি কর্তৃক ছাঁটাই ও বিভিন্ন কর্মসূচিতে কাটছাঁটের কারণে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীরা বিপর্যস্ত। এর মধ্যে আবার কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে নতুন একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখানে জনবল উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কমানো–সংক্রান্ত পরিকল্পনা আগামী ১৩ মার্চের মধ্যে দাখিল করতে বলা হয়। তবে নতুন ছাঁটাইয়ের সংখ্যা কত তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি।

এখন পর্যন্ত মূলত শিক্ষানবিশ কর্মী, যাঁদের বর্তমান পদের মেয়াদ ফুরিয়ে আসছে ও চাকরির সুরক্ষাও কম, তাঁদের ছাঁটাইয়ের লক্ষ্যবস্তু করতে দেখা গেছে। পরবর্তী দফায় অভিজ্ঞ সরকারি কর্মচারীদের বিশালসংখ্যক কর্মীকে লক্ষ্য করে ছাঁটাই চালানো হবে।

এদিকে সরকারি কর্মীদের ব্যাপক হারে ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে বুধবার মার্কিন সিনেটের হলগুলোয় ফেডারেল কর্মীদের বিক্ষোভ হয়েছে।

৫০ বছরের মধ্যে সর্বাধিক কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা সিআইএরট্রাম্পের স্বেচ্ছা পদত্যাগ কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন ৭৫ হাজার সরকারি কর্মীস্টারবাকসের ১১০০ কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা সিইওর

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রোগী এলেই সদর হাসপাতালে রেফার
  • এবার ছাঁটাই হলেন শত শত আবহাওয়া বিজ্ঞানী ও গবেষক
  • যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি চাকরি থেকে এবার কয়েক শ আবহাওয়া বিজ্ঞানী ও গবেষক ছাঁটাই
  • যুক্তরাষ্ট্রে আরও বেশি কর্মীকে ছাঁটাইয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের চিঠি, কেন্দ্রীয় কর্মীদের বিক্ষোভ
  • শিক্ষক-জনবল সংকটে ব্যাহত প্রাথমিক শিক্ষা