অপরাধীদের ধরতে ২৫ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে ঢাকায় যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়। সেদিন দুপুরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছিলেন, ‘সন্ধ্যার পর থেকে পরিস্থিতি টের পাবেন।’ গত কয়েক দিনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে কি না, সে বিষয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। তবে এ কথা জোর দিয়ে বলা যায়, অবনতি হয়নি। এর অর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ভাষায়, অপরাধীরা কিছুটা টের পেয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বরাতে প্রথম আলোর খবরে বলা হয়, রাজধানীতে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে পুলিশ ৭৯৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ৬৫টি তল্লাশিচৌকি পরিচালনার পাশাপাশি ৫৫০টি টহল দল দায়িত্ব পালন করেছে। ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পরিচালিত অপারেশন ডেভিল হান্টে ১৯ দিনে ১১ হাজারের বেশি মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছে।
অভিযান শুরুর পর থেকে প্রতিদিনই হালনাগাদ খবর জানাচ্ছে ডিএমপি। এর আগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাত তিনটায় সংবাদ সম্মেলন ডেকে নজির সৃষ্টি করেছিলেন। পরে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও রাতে সাংবাদিকদের ডেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির হালনাগাদ তথ্য জানিয়েছেন।
গত কয়েক দিনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি না হলেও ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা কমেছে। যে অপরাধীরা পাড়ায় পাড়ায় মানুষের আতঙ্কের কারণ ছিল, তারাই এখন আতঙ্কের মধ্যে আছে। অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ হবে অপরাধীরা যেখানেই পালিয়ে থাকুক না কেন, খুঁজে বের করে বিচারে সোপর্দ করা।
পবিত্র রমজান মাস প্রায় সমাগত। রোজার সময় কেনাকাটা ও ইফতার, সাহ্রি উপলক্ষে রাতে মানুষের চলাচল বাড়বে। ফলে ছিনতাই, ডাকাতি ও চুরির আশঙ্কাও বেশি থাকবে। সে ক্ষেত্রে রোজার মাসে রাতে অভিযানও জোরদার করতে হবে।
এখানে আরও একটি কথা জরুরি মনে করি। অপরাধীদের কতজন ধরা পড়েছে, কেবল তা নিয়ে অভিযানের সাফল্য নিরূপণ করা যাবে না। যারা ধরা পড়েনি, তাদেরও খুঁজে বের করতে হবে। কোনো এলাকায় অভিযান জোরদার করে কোনো এলাকায় শিথিল করা যাবে না। দেশের সব এলাকায় একযোগে অভিযান পরিচালিত হলে অপরাধীরা ধরা পড়তে বাধ্য।
অতীতে এ ধরনের অভিযান ব্যর্থ হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। অনেক সময় দেখা গেছে, সরকার অপরাধী হিসেবে যাদের ধরেছে, তারা ক্ষমতাসীন দলের লোক। এরপর নানা প্রভাব খাটিয়ে তাদের বের করে আনা হয়েছে। যেহেতু বর্তমান সরকার পুরোপুরি অরাজনৈতিক, ফলে তাদের ‘নিজস্ব লোক’ থাকার কথা নয়। প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত হতে হবে। দেখতে হবে যাতে নিরীহ কেউ হয়রানির শিকার না হয় কিংবা অপরাধ করে কেউ পার পেয়ে না যায়।
জনগণের জানমালের নিরাপত্তা, অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন জরুরি।
আইনশৃঙ্খলার উন্নতি না হলে অন্তর্বর্তী সরকার যে নির্বাচনের বিষয়ে জনগণের কাছে ওয়াদাবদ্ধ, সেটা বাস্তবায়ন করাও কঠিন হবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাইরে আমরা আরেকজন উপদেষ্টাকেও দেখলাম আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যাঁর যাঁর অবস্থান থেকে সবাই এগিয়ে আসবেন আশা করি। অন্তত ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কেবল নির্দেশ দিয়েই দায়িত্ব শেষ না করে টহল তদারকির কাজটি সরেজমিনে দেখতে পারেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স থ ত র অপর ধ র সরক র ড এমপ
এছাড়াও পড়ুন:
কুষ্টিয়ায় মাজারে মাদক বিরোধী অভিযানে বাধা
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় একটি মাজারে মাদক বিরোধী অভিযানে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পরে প্রশাসনের লোকজন অভিযান না চালিয়ে ফিরে আসেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অভিযানের সময় মাজারের লোকজন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
রবিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরের দিকে ভেড়ামারার সাতবাড়ীয়া বিত্তিপাড়া এলাকার ঘোড়াশাহ বাবার মাজারে ঘটনাটি ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভেড়ামারা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনায় ঘোড়াশাহ মাজারে যান। এসময় তাদের বাধা দেন মাজারে উপস্থিত ভক্ত-অনুসারীরা। তারা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার হোসেন ও অভিযান টিমের সদস্যদের সঙ্গে আক্রমণাত্মক আচরণ শুরু করেন।
আরো পড়ুন:
গোপালগঞ্জে ছাত্র সমন্বয়কদের উপর হামলার ঘটনায় মামলা
গোপালগঞ্জে গোবিপ্রবির ছাত্র অধিকার পরিষদের ২ নেতাকে মারধর
ভেড়ামারা থানার ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, “মাদক বিরোধী অভিযানে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন এসিল্যান্ডসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। মাজারের লোকজনদের বাধার মুখে ফিরে আসেন তারা। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সহকারী কমিশনার (ভূমি) আনোয়ার হোসেন বলেন, “মাদক বিরোধী অভিযানে গেলে মাজারের লোকজন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। যে কারণে অভিযান পরিচালনা করতে না পেরে আমরা ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছি। কারা এই উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে। আপাতত এ বিষয়ে আর কিছু বলা যাচ্ছে না।”
ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল ইসলাম বলেন, “প্রশাসনের লোকজন দেখেই উষ্মা প্রকাশ করেন লাল পোশাক পরিহিত কিছু উচ্ছৃঙ্খল ভক্ত-আশেকান। প্রশাসন কাজ শুরুর আগেই তারা আক্রমণাত্মক আচরণ শুরু করেন। বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের লোকজন ফিরে আসেন।”
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, ““আমিও শুনেছি ঘটনাটি। আমরা রেগুলার মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
ঢাকা/কাঞ্চন/মাসুদ