অন্য বছরের তুলনায় এবার রোজার আগে বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দাম বলা চলে এক প্রকার স্বাভাবিক। তবে কয়েকটি পণ্যে রোজার আঁচ লেগেছে। বিশেষ করে এ তালিকায় রয়েছে লেবু, বেগুন, শসাসহ ইফতারিতে ব্যবহার হয় এমন পণ্য। চাহিদা বাড়ার সুযোগে পণ্যগুলোর দর কিছুটা বেড়েছে।

গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে কারওয়ান বাজারসহ রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। আজ চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল রোববার থেকে শুরু হবে পবিত্র মাহে রমজান। এর আগে সবাই অগ্রিম বাজার করে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। এর কিছুটা প্রভাবও পড়েছে বাজারে।

খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা বলেন, এখন লেবুর মৌসুম নয়। ফলে প্রায় এক মাস ধরে দর বাড়তি। এ ছাড়া বেগুন, শসাসহ যেগুলোর দাম বেড়েছে তার মূল কারণ ক্রেতাদের বেশি পরিমাণে কেনা। রোজার আগমুহূর্তে প্রতিবছরই এসব পণ্যের দর বাড়ে। তবে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে সামনের দিনগুলোতে দর বাড়ার আশঙ্কা কম বলে মনে করেন তারা। 
শরবত তৈরির অন্যতম উপাদান লেবু। রমজানে ইফতারে কমবেশি সবাই শরবত খাওয়ার চেষ্টা করেন। ফলে লেবুর চাহিদা বেড়ে যায়। আর এ সুযোগে বাড়তি দাম নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে প্রতি হালি শরবতি বা সুগন্ধি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা এবং আকারভেদে অন্য লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। মাসখানেক আগে অন্তত ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে কেনা গেছে লেবুর হালি। তবে এখন বাড়লেও গত বছরের এ সময়ের তুলনায় কিছুটা কম রয়েছে দাম। 

কারওয়ান বাজারের পাইকারি লেবু ব্যবসায়ী জালাল আহমেদ সমকালকে বলেন, লেবুর উৎপাদন কম। কারণ, এখন লেবুর মৌসুম নয়। তাছাড়া অনেক দিন ধরে বৃষ্টিপাত নেই। এ জন্য ফলন ভালো হচ্ছে না। সেজন্য বাজারে লেবু কম আসছে। কিন্তু রোজার কারণে মানুষ আগেভাগে লেবু কিনছেন। মূলত এ জন্য দর বাড়তি।  
বাজারে এখন ভরপুর শসা রয়েছে। হাইব্রিড ও দেশি শসার পাশাপাশি ছোট আকারের খিরাও পাওয়া যাচ্ছে। হাইব্রিড শসা ও খিরার কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেনা গেলেও দেশি জাতের শসা কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। সপ্তাহখানেক আগে এসব শসা অন্তত ১০ থেকে ৩০ টাকা কমে কেনা গেছে। অবশ্য, এ দর গেল রমজানের চেয়ে বেশ কম। গত বছর এ সময় শসার কেজি সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ছুঁয়েছিল। 
এখনও টমেটোর ভর মৌসুম চলছে। ফলে বাজারে দেশি টমেটোর পর্যাপ্ত সরবরাহ দেখা গেছে। সেজন্য দাম এখনও নাগালে। কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৪০ টাকায়।
বেগুনি তৈরি করতে লম্বা বেগুনের দরকার হয়। সেজন্য রোজার সময় লম্বা বেগুনের চাহিদা বেড়ে যায়। যার প্রভাব পড়েছে দামে। পাঁচ-ছয় দিন আগেও প্রতি কেজি লম্বা বেগুন কেনা গেছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। প্রায় দ্বিগুণের মতো দর বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। তবে পাড়া-মহল্লায় ভ্যান থেকে কিনতে গেলে ক্রেতাকে কেজিতে বাড়তি গুনতে হচ্ছে অন্তত আরও ১০ টাকা। বছরের অন্য সময়ে গোল বেগুনের বেশি থাকলেও এখন স্বাভাবিক। প্রতি কেজি কেনা যাবে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। 

কারওয়ান বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা ইয়াকুব আলী বলেন, এখনও শীতের সবজিতে বাজার ভরপুর। লম্বা বেগুনের চাহিদা বেশি। এ কারণে কেউ কেউ দর বেশি নিচ্ছে। তবে অন্য জায়গায় দর বাড়লেও কারওয়ান বাজারে বাড়েনি বলে দাবি করেন এই বিক্রেতা।
গাজরের সরবরাহ রয়েছে বেশ ভালো। ফলে দর বাড়ার তালিকায় উঠতে পারেনি মিষ্টি জাতীয় সবজিটি। প্রতি কেজি গাজর কেনা যাচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। গত বছরের তুলনায় এ বছর কম দরে মিলছে পেঁয়াজ। মানভেদে দেশি প্রতি কেজি পেঁয়াজ কেনা যাচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়।

রমজানে কাঁচামরিচের চাহিদা বেশি থাকে। তবে এবার ঝালজাতীয় পণ্যটির দর নাগালের মধ্যেই রয়েছে। কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। মাস দুই-তিনেক ধরে এ দরের আশপাশেই বিক্রি হচ্ছে মরিচ। 
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ও ঢাকা বিভাগীয় প্রধান বিকাশ চন্দ্র দাস সমকালকে বলেন, রোজা উপলক্ষে রোববার থেকে ঢাকা মহানগরে ১০টি বিশেষ তদারকি দল মাঠে নামবে। তারা বিভিন্ন বাজারে তদারকি করবে। রমজানজুড়ে চলবে এ তদারকি কার্যক্রম। রোববার সকালে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কারওয়ান বাজারে এ তদারকি কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।  

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব জ রদর ক রওয় ন ব জ র ৬০ ট ক ৪০ থ ক দর ব ড় বছর র রমজ ন

এছাড়াও পড়ুন:

বৈশাখজুড়ে শতবর্ষী মেলা

বাঙালির নানা রূপের চিরায়ত লোকজ সংস্কৃতির মধ্যে বৈশাখী মেলা একটি। ঐতিহাসিকভাবে মেলার জন্য বিখ্যাত চলনবিল অধ্যুষিত জনপদ তাড়াশ। তাড়াশের কলেজশিক্ষক মোছা. মাসুমা খাতুন বলেন, ‘যেহেতু এই গ্রামীণ জনপদেই জন্ম, সেহেতু চৈত্রসংক্রান্তিতে শ্মশান থেকে হাজরা ছোটা, বৈশাখী মেলায় গিয়ে নাগরদোলায় দোল খেলা, বায়োস্কোপে বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসির দৃশ্য দেখে কষ্ট পাওয়া, পতুল নাচ, মৃত্যুকূপে মোটরসাইকেল খেলা, জাদু খেলা দেখা বা সার্কাসের ইয়া বড় হাতি দর্শন জীবনের এক বড় অধ্যায় হয়ে রয়েছে। সেই সঙ্গে ছোট ভাইদের জন্য টিন বা কাঠের বন্দুক, বাঁশের বাঁশি, বেলুন, আম কাটার চাকু, নিজের ও বোনদের কাচের লাল চুড়ি, চুল বাঁধার ফিতা, বনানী নামের স্নো কেনাসহ উপভোগ্য বহু ঘটনা এখনও আমায় স্মৃতিকাতর করে।’
স্থানীয় একাধিক প্রবীণ ব্যক্তি জানান, আশি ও নব্বই দশকেও তাড়াশে অনুষ্ঠিত হওয়া বেশ কয়েকটি বড় মেলায় সন্ধ্যারাত থেকে কুপি বাতি, হারিকেন, হ্যাজাক জ্বালিয়ে চলত নানা অনুষ্ঠান, হরেক রকমের পণ্যের বিকিকিনি। এখন তা চলছে বিদ্যুতের বাতিতে। তাড়াশের ২৯টি বার্ষিক মেলার সবই দিনক্ষণ নির্ধারিত হয় চান্দ্রক্ষণের ওপর নির্ভর করে। মূলত সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলায় চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ– এ তিন মাসে ২৯টি মেলার আয়োজন হয় বিভিন্ন গ্রামে; যার অধিকাংশ মেলার স্থান শত বা অর্ধশত বছর আগে নির্ধারিত। এগুলোর মধ্যে উপজেলা প্রশাসন মেলার ব্যাপকতা, লোক সমাগম ও গুরুত্ব বিবেচনা করে শতবর্ষী বা শতবর্ষের কাছাকাছি ১৭টি মেলাকে একদিনের বিশেষ হাট হিসেবে ইজারা দিয়ে রাজস্ব আদায় বা টোল আদায় করে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য– বেহুলার স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে বৈশাখী পূর্ণিমায় বিনসাড়া গ্রামে বসে তিন দিনের বেহুলা সুন্দরীর ‘চাঁদের মেলা’। চৈত্রের পূর্ণিমার রাতে তাড়াশের ‘বারুহাঁসের ভাদাই মেলা’, বৈশাখের তৃতীয় মঙ্গলবার বসা বড় ও ছোট ‘গুড়মা মেলা’ এবং কৃষ্ণা দিঘির ‘কৃষ্ণপুরের মেলা’ অন্যতম। অন্যদিকে জ্যৈষ্ঠের শুরুতে বসে ‘গোনতা মেলা’, ‘মাঝদক্ষিণা মেলা’, ‘রানীর হাট মেলা’, ‘আড়ংগাইল মেলা’, ‘দোবিলা মেলা’, ‘বস্তল মেলা’, ‘কুন্দইল মেলা’, ‘গুড়পিপুলের নিশানের মেলা’ প্রভৃতি।
এসব মেলা ঘিরে রয়েছে বিভিন্ন আঞ্চলিক রেওয়াজ; যা কমবেশি আজও বিদ্যমান। মেলার আগেই ঝি, জামাই, কাছের-দূরের আত্মীয়-স্বজনকে নাইওর আনার প্রচলন রয়েছে এ জনপদে। আজও ‘বারুহাঁস’, ‘গুড়মা’, ‘রানীর হাট’, ‘বেহুলার মেলা’সহ অনেক মেলা বসার আগেই স্থানীয় প্রায় প্রতিটি বাড়িতে মেয়ে জামাই, আত্মীয়-স্বজনে ঠাসা থাকে। এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বৈশাখী মেলার সতেজ আমেজ। সে আমেজে রেওয়াজ মেনে শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে শাশুড়ির হাত দিয়ে নতুন-পুরোনো সব জামাইকে মেলার ‘পরবি’ (নগদ টাকা) এবং মেলা শেষে বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় নতুন পোশাক, বিশেষ করে দামি লুঙ্গি উপহার দেওয়া এবং মেলার ঝুরি, মুড়কি, শাঁস, শুকনা মিষ্টি, রান্না করা খাবার বেঁধে আত্মীয় বাড়িতে পাঠানোর চল এখনও রয়েছে। নাইওরে আসা জামাইদেরও এসব মেলায় বড় অঙ্কের টাকা খরচ হয়। মেলা থেকে হাঁড়িভর্তি মিষ্টি, বড় মাছ, মাংস, শাশুড়ির জন্য পান-সুপারি কিনে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যেতে হয়। সে ক্ষেত্রে অনেক জামাই শ্বশুরের নাম রাখতে প্রতিযোগিতা করে মেলার সবচেয়ে বড় মাছ কিনে থাকেন। এ ছাড়া শ্যালক-শ্যালিকা ও তাদের সন্তানসহ ছোটদের মেলার পরবি দেওয়া বা অন্য উপহারের আবদার মেটানোও জামাইদের পুরোনো রেওয়াজ। তাড়াশের বৈশাখী মেলায় চিনি দিয়ে তৈরি সুস্বাদু হাতি, ঘোড়া, হরিণ, পাখি আকৃতির ছাঁচ, খাগড়াই, বাতাসা, কদমা প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হয়। আরও রয়েছে বাহারি মিষ্টি রসগোল্লা, চমচম, ছানার জিলাপি, রসমালাই, শাহি, ক্ষীরশা দই। এ ছাড়া মেলায় শত শত মণ ঝুরি বিক্রি হয়। বাঁশ-বেতের জিনিস, কাঠের আসবাব, মসলা, শীতলপাটি, মৃৎ পাত্র, খেলনা, কসমেটিক সামগ্রী, কৃষিজ উপকরণ– হরপাট, কারাল, ডালি, টুপরি, চালুন, কুলা এমনকি হাতপাখা, চুন, পান-সুপারি ইত্যাদি তো আছেই। সব মিলিয়ে তাড়াশের ২৯টি মেলায় দুই-আড়াই মাসের মধ্যে কয়েক কোটি টাকার পণ্য কেনাবেচা হয়। তাড়াশের নওগাঁ জিন্দানী ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক সনাতন দাশ বলেন, ‘এটা শুধু অর্থনৈতিক বিষয় নয়। সব বয়সী লাখো মানুষের মেলাকেন্দ্রিক বাঙালি সংস্কৃতির অদৃশ্য খোরাক পূরণ হয় এসব মেলায়। উৎসবের মূল্যের কাছে অর্থের মূল্য অতি নগণ্য।’ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিশ্ব সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন দিবস আজ
  • রাস্তা নির্মাণে নিম্নমানের ইট খোয়া, স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা
  • সুপেয় পানি সংকটের স্থায়ী সমাধানের পথ
  • দিনাজপুরে পথেঘাটে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে কাঁচাপাকা খেজুর
  • শেয়ারবাজারে কাঠামোগত সংস্কারে অগ্রগতি নেই
  • রাউজান কেন এখনও অশান্ত
  • কী হয়েছিল সৃজিতের, জানালেন চিকিৎসক
  • গরমে পানিশূন্যতা দূর করতে কী খাবেন
  • বৈশাখজুড়ে শতবর্ষী মেলা
  • শসা-লেবুর শরবতের রেসিপি